Advertisement
E-Paper

জাপানি হানা এ বার খাস কলকাতাতেও

শহরের উপকণ্ঠ নয়, খাস কলকাতাতেও এ বার জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের রোগী মিলল। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের পরে কলকাতাও যে আর নিরাপদ নয়, সেই বিষয়টি সামনে আসায় উদ্বেগে রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা। আর সংক্রমণের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে রোগ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ ও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৪ ০২:৩৬

শহরের উপকণ্ঠ নয়, খাস কলকাতাতেও এ বার জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের রোগী মিলল। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের পরে কলকাতাও যে আর নিরাপদ নয়, সেই বিষয়টি সামনে আসায় উদ্বেগে রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা। আর সংক্রমণের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে রোগ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ ও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে (জেই) আক্রান্ত ওয়াটগঞ্জের বাসিন্দা মহম্মদ এহসান আলি (৫৮) নামে ওই প্রৌঢ় আপাতত আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবারই তাঁর রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে জেই নিশ্চিত হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তি কলকাতা পুলিশের গরফা থানার অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর। কর্মসূত্রে তাঁকে কলকাতা শহরেরই বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। ঠিক কোথা থেকে তাঁর এই সংক্রমণ হল, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না স্বাস্থ্য দফতর।

তবে এহসান আলির এই সংক্রমণ নতুন না পুরনো, তা নিয়ে এখনও ধন্দ রয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “সেরিব্রাল অ্যাটাক নিয়ে ওই ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর ফুসফুসেও সংক্রমণ ছিল। এনসেফ্যালাইটিসের কোনও উপসর্গ ওঁর মধ্যে পাওয়া যায়নি। তাই ওঁর শরীরে এই সংক্রমণ নতুন না আগে কখনও আক্রান্ত হওয়ায় শরীরে অ্যান্টিবডি রয়ে গিয়েছে, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।”

স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানান, আজ, শুক্রবার ওয়াটগঞ্জে এহসান আলির পাড়ায় যাবে স্বাস্থ্য দফতরের পরিদর্শক দল। ওঁর পরিবার এবং আশপাশের বাসিন্দা কয়েক জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে। বিশ্বরঞ্জনবাবু বলেন, “যদি তাঁদেরও জেই পজিটিভ হয়, তা হলে ধরে নিতে হবে, সত্যিই এহসান আলি জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত। কারণ বিজ্ঞানের নিয়মেই কোনও এলাকায় এক জনের যদি ওই অসুখ হয়, তা হলে আরও অন্তত ২৫০-৩০০ জনের রক্তে তা পাওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে কেন ওই এলাকায় রোগটা ছড়াচ্ছে, তা খুঁজে বার করতে হবে।”

আর যদি পরিবার বা এলাকায় আর কারও রক্ত পরীক্ষায় জেই না মেলে? স্বাস্থ্য অধিকর্তার ব্যাখ্যা, “সে ক্ষেত্রে আমাদের বুঝে নিতে হবে অতীতে কখনও ওঁর এই ধরনের সংক্রমণ হয়েছিল। তাই শরীরে অ্যান্টিবডি থেকে গিয়েছে।” কলকাতা পুলিশের ওই অফিসারের কলকাতার বাইরে যাওয়ার কোনও তথ্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে নেই।

কলকাতা পুরসভা অবশ্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বক্তব্য মানছে না। রোগের উৎস হিসেবে তারা অন্য ব্যাখ্যা দিচ্ছে। পুরসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ বলেন, “ওই ব্যক্তির বাড়ি উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুরে। তিনি ১০ মাস ধরে ছুটিতে ছিলেন। সেই সময়ে বাড়ি গিয়েছিলেন এহসান। সপ্তাহ দু’য়েক আগে তিনি জ্বর নিয়েই উত্তরপ্রদেশ থেকে কলকাতায় ফেরেন। তার পর থেকে আর কাজে যোগ দিতে পারেননি।” মেয়র পারিষদ বলেন, “আমরা ওঁর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। ওই ব্যক্তি যেখানে থাকেন, সেই এলাকাতেও আমরা গিয়েছি। ওই রোগটি যে উনি উত্তরপ্রদেশ থেকে নিয়ে এসেছেন, সে বিষয়টা নিশ্চিত।”

এনসেফ্যালাইটিসের তথ্য গোপন করায় উত্তরবঙ্গের চার জন স্বাস্থ্যকর্তাকে সাসপেন্ড করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তা থেকে কলকাতা পুরসভা বা স্বাস্থ্য দফতর যে কোনও শিক্ষা নেয়নি, এহসান আলির জেই ধরার পড়ার ঘটনায় তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর এবং কলকাতা পুরসভার মধ্যে কেন সমন্বয় থাকবে না, তা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন দু’পক্ষই। জীবাণু বিজ্ঞানীরা বলছেন, “যে কোনও সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ এবং রোগ নির্ণয় পদ্ধতি চিকিৎসার মূল ভিত্তি। সে ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব পুরো প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।”

সব সময়ে সব খবর যে স্বাস্থ্য ভবনে ঠিকঠাক পৌঁছচ্ছে না, তা স্পষ্ট হয়েছে মঙ্গলবার কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত এসমা খাতুনের (১০) ক্ষেত্রেও। স্বাস্থ্য ভবন থেকে বুধবার জানানো হয়েছিল, এসমার জেই ধরা পড়েছে। এ দিন ভুল সংশোধন করে তাঁরা জানান, জেই নয়, এসমার অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিক সিনড্রোম ছিল।

japanese encephalitis encephalitis first case kolkata patient
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy