Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Baba Ka Dhaba

কান্না থেকে হাসি, চোখের জল মুছিয়ে জিতল সোশ্যাল মিডিয়া

সত্যি করেই রাতারাতি বদল এল। তবে এই এক রাতের কাহিনির শেষ এখানেই নয়। 'বাবা কি ধাবা'-র নতুন নতুন ভিডিয়ো তৈরি হচ্ছে আর তা ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

কান্তা প্রসাদ। টুইটার থেকে নেওয়া ছবি।

কান্তা প্রসাদ। টুইটার থেকে নেওয়া ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২০ ২০:৫৮
Share: Save:

সোশ্যাল মিডিয়া অনেক কিছুই করতে পারে। বদলে দিতে পারে কারও ভাগ্য। মুছিয়ে দিতে পারে কারও চোখের জল। হাসি ফোটাতে পারে মুখে।

তেমনই নজির তৈরি করল দিল্লির 'বাবা কা ধাবা' নামে এক অখ্যাত খাবারের দোকান নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার হইচই। বুধবারও কোনওক্রমে দোকান আর সংসার চালানো বৃদ্ধের চোখে ছিল জল। কিন্তু বৃহস্পতিবার তাঁর মুখ ভরা হাসি। দোকান ভরা ক্রেতা।

উত্তর দিল্লির মালভিয়া নগরের শিবালিক কলোনি। এখনেই রয়েছে 'বাবা কা ধাবা'। স্থানীয়রা জানলেও তেমন করে কেউ গুরুত্বই দিত না এক বৃদ্ধ ও বৃদ্ধার চালানো ওই দোকানকে। কিন্তু এখন সেই দোকানেই উপচে ‌পড়ছে ভিড়। সৌজন্যে সোশ্যাল মিডিয়া।

রাতারাতি ভাগ্য ফেরার কাহিনিটা গোড়া থেকে বলা যাক। আশি বছরের কান্তা প্রসাদ স্ত্রী বাদামী দেবীকে নিয়ে এই দোকানটা চালান প্রায় ৩০ বছর ধরে। ভোর থেকে শুরু করেন রান্নাবান্না। সকাল সকাল তৈরি হয়ে যায় ডাল, ভাত, সবজি, পরোটা। মেনু খুব বেশি কিছু নয়। দামও কম। মোটামুটি ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে খাওয়া যায় ছোট্ট এই দোকানে।

আরও পড়ুন: চাকরি নেই রোহিতের, বউয়ের বিরিয়ানি তো আছে, তাতেই বাজিমাত

খাবার বিক্রি করে রোজগার যেটুকু হয় তা দিয়ে কোনওরকমে চলে যাচ্ছিল কম চাহিদার সংসার। সন্তানদের উপরে নির্ভর কর‌তে হত না। দুবেলা ডাল-রুটি বা ভাতের জোগাড় হয়ে যেত দোকানের বিক্রিবাটা থেকেই। কিন্তু লকডাউন মুশকিলে ফেলে দেয়। বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পরে এখন চালু হলেও ধা‌বায় তেমন ক্রেতাই নেই।

'বাবা কি ধাবা'-র মটর পনির নাকি খুব সুস্বাদু। সেটা জানার পরে স্পেশাল সেই মেনু নিয়ে লেখার জন্য গৌরব ভাসান নামে ফুড ব্লগার কান্তা প্রসাদের দোকানে আসেন এবং ভিডিয়ো করেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি বৃদ্ধ। বলেন, এখন সারাদিনে আয় খুব জোর ৫০ টাকা। দেখান, বাক্সে মাত্র কয়েকটা ১০ টাকার নোট।

আরও পড়ুন: স্ত্রীর উদ্দেশে কটূক্তি, যুবককে পিটিয়ে মারলেন স্বামী​

এই কাঁদতে কাঁদতে কথা বলার ভিডিয়োটাই ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা নাগাদ সেই ভিডিয়োটি টুইটারে পোস্ট করেন বসুন্ধরা তনখা শর্মা নামে এক মহিলা। এর পরে সেটা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। শুক্রবার সকাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং হয়ে যায় ভিডিয়োটি। ক্রীড়া থেকে সিনেমা বিভিন্ন জগতের সেলেবরাও শেয়ার করতে শুরু করেন অরেঞ্জ টি-শার্ট পরা কান্তা প্রসাদের ভিডিয়ো। চোখের জল মুছতে মুছতে নিজের দুঃসময়ের কথা বলছেন। সেলেবদের সেই তালিকায় রবিনা টন্ডন, রনদীপ হুড়া, স্বরা ভাস্কর, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, সোনাম কপূর, সুনীল শেট্টি-সহ অনেকে। এর পরে আরও আরও ছড়িয়ে পড়ে। সকলেই সকলকে মালভিয়া নগরের হনুমান মন্দিরের উল্টো দিকে 'বাবা কি ধাবা'-য় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানাতে থাকেন।

বৃহস্পতিবার চমকে যান সোশ্যাল মিডিয়ার আশপাশ দিয়ে না যাওয়া কান্তা প্রসাদ। তাঁর দোকানে ভিড় লেগে যায় সকাল থেকেই। বেলা বাড়লে সেই ভিডও বাড়তে থাকে। সবাই চাইছে মটর পনির। শুধু কি ক্রেতা? সংবাদমাধ্যমেরও ভিড় জমে যায়। ক্রেতা সামলাবেন না কথা বলবেন, ফুরসৎই পাচ্ছেন না কান্তা প্রসাদ। মুখ থেকে মাস্ক নামিয়ে হাসছেন, শুধু হাসছেন। হঠাৎ করেই কাজের চাপ বেড়ে গিয়েছে। তবু এক মুখ হাসি কান্তা প্রসাদের স্ত্রী বাদামীদেবীর মুখেও।

সত্যি করেই রাতারাতি বদল এল। তবে এই এক রাতের কাহিনির শেষ এখানেই নয়। 'বাবা কি ধাবা'-র নতুন নতুন ভিডিয়ো তৈরি হচ্ছে আর তা ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সে সব দেখে এদিন ধাবায় চলে আসেন দিল্লির ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টির বিধায়ক সোমনাথ ভারতী। জানিয়ে গিয়েছেন, খুব তাড়াতাড়ি এই দম্পতির জন্য কিছু করার উদ্যোগ নেবেন তিনি। সোমনাথ নিজেও সোশ্যাল মিডিয়ায় দিল্লিবাসীকে 'বাবা কি ধাবা'-য় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Delhi Viral video Baba Ka Dhaba
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE