Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Babri Masjid Demolition Case

রায় ঘিরে সাজো-সাজো অনাদরের এজলাসেই

পুলিশি পাহারার মধ্যেই সকাল সকাল ফটকের কাছে পৌঁছে গেলেন কিছু মানুষ। স্লোগান তুললেন, “জয় শ্রীরাম।” 

লখনউয়ে পুরোনো হাইকোর্ট ভবনেই হয়েছে বাবরি ধ্বংসের রায়দান।—ছবি পিটিআই।

লখনউয়ে পুরোনো হাইকোর্ট ভবনেই হয়েছে বাবরি ধ্বংসের রায়দান।—ছবি পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
লখনউ শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২০ ০৫:০৪
Share: Save:

কিছু দিন আগেও নিতান্ত অনাদরে শুনানি চলেছে এখানে। প্রয়োজন ছাড়া খুব বেশি কেউ ঘেঁষতেন না এ দিকে। সেখানেই ক’দিন ধরে সাজো-সাজো রব। সম্প্রতিই সিসিটিভির ক্যামেরা, ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের আয়োজন সারা হয়েছে এখানে। নতুন চেয়ার আনা হয়েছে আদালত-কর্মী ও অন্যদের বসার জন্য। এজলাসের বাইরে সর্বক্ষণের জন্য মোতায়েন হয়েছে পুলিশ। বাতাসে নতুন রং আর সদ্য ছড়ানো ব্লিচিং পাউডারের গন্ধ। পুলিশি পাহারার মধ্যেই সকাল সকাল ফটকের কাছে পৌঁছে গেলেন কিছু মানুষ। স্লোগান তুললেন, “জয় শ্রীরাম।”

রায় দেবে বিশেষ সিবিআই আদালত। এজলাস বসেছে লখনউয়ে পুরোনো হাইকোর্ট ভবনে। মূল ফটকের বাইরে ও আশপাশের প্রতিটি রাস্তার মোড়ে কাঠের ব্যারিকেড বসে গিয়েছে কাল থেকেই। নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে চার পাশ। সকাল থেকে নিয়ন্ত্রিত যান চলাচল। আদালতের আশপাশের সব দোকানপাট বন্ধ। লখনউয়ের পুলিশ কমিশনার সুজিৎ পাণ্ডে দেখে গেলেন বন্দোবন্ত।

ঘণ্টা খানেক আগেই কোর্টে পৌঁছে গিয়েছেন বিশেষ সিবিআই বিচারক সুরেন্দ্রকুমার যাদব। কর্মজীবনের শেষ দিনে রায় দেবেন ২৮ বছরের পুরনো মামলার। গত কিছু দিন তিনি মগ্ন থেকেছেন যার প্রস্তুতিতে। গত কালও রায়ের প্রতিটি খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখেছেন বারবার। ডিকটেশন দিয়েছেন রায়ের কিছু ‘পয়েন্টার’-এর। প্রবল মানসিক চাপ সামলেও সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে তাঁর শান্ত-স্থির চেহারা।

আরও পড়ুন: বিশ্বাস ও দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠিত: আডবাণী

বাবরি ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের এই মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে অশোক সিঙ্ঘল, বাল ঠাকরে, পরমহংস রামচন্দ্র দাসের মতো ১৭ জন মারা গিয়েছেন আগেই। বাকি ৩২ অভিযুক্তের মধ্যে লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশী, কল্যাণ সিংহ, সতীশ প্রধান, মহন্ত নৃত্যগোপাল দাস এবং ঋষিকেশ এমসে ভর্তি উমা ভারতী— এই ৬ জন প্রবীণ আদালতে আসবেন না সেটা স্পষ্ট হয়েছে আগেই। জোশী বাদে বাকিরা ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দিয়েছেন আদালতে। একে একে এলেন সাধ্বী ঋতম্ভরা, চম্পত রাই, বিনয় কাটিয়ার, ব্রিজভূষণ, শরৎ সিংহ, সাক্ষী মহারাজ-সহ বাকি ২৬ জন অভিযুক্ত। যোগীরাজ্যে গেরুয়াধারী সাধু-সাধ্বীরা, তিলকধারী মহন্তরা আদালতে ঢুকলেন পরিচয়পত্র দেখিয়ে। ঢোকার আগে প্রায় সকলেই তুললেন ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি। আত্মবিশ্বাসী হাত নাড়লেন সমর্থক ও সাংবাদিকদের উদ্দেশে। জানিয়ে গেলন, রায় পক্ষে না গেলেও শ্রীরামের সেবা করে যাবেন। না, অভিযুক্তদের সমর্থক বা রামভক্তদের, এমনকি সাংবাদিকদেরও ঢুকতে দেওয়া হয়নি আদালত ভবনে। পুলিশ মাইকে আবেদন জানিয়েেছ, সাংবাদিকরা যেন ভিতরে ঢোকার চেষ্টা না-করেন।

আরও পড়ুন: নিশানায় ‘তোতা’ সিবিআই

এজলাসে অধীর অপেক্ষা কিছু ক্ষণের। উদগ্রীব হয়ে বসে সাধু-সাধ্বী-সহ অভিযুক্তরা। রামলালার জমি তাঁদের হাতে এসেছে বছর খানেক আগেই। মন্দিরের ভূমিপূজাও সারা। মন্দির নির্মাণের হর্তার্কাতারা বসে রয়েছেন বাবরি ধ্বংসের মামলায় তাঁদের ভাগ্য জানতে।

রায় পড়তে শুরু করলেন বিচারক। প্রথমেই জানালেন ৩২ অভিযুক্তের বেকসুর মুক্তির কথা। স্বস্তি ও তৃপ্তির হাসি অভিযুক্তদের মুখে। ভিতরের অস্ফূট ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি বাইরে পরিণত হল হর্ষধ্বনিতে। রায়দানের বাকি পর্ব যত এগিয়েছে, ততই নিশ্চিন্ত বোধ করেছেন আদালতে হাজির ২৬ ও নেট-যোগে যুক্ত বাকি অভিযুক্তরা।

এর পরে বিচারক জানালেন, বাবরি ধ্বংস পূর্ব পরিকল্পিত ছিল, এমন প্রমাণ মেলেনি। জমায়েত হয়েছিল। আচমকাই ঘটেছে ঘটনা। বিচারক পড়তে থাকেন, “প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে এই ঘটনায় আরএসএস এবং ভিএইচপি-র কোনও ভূমিকা ছিল না। পিছন থেকে অজ্ঞাতপরিচয় লোকজনই পুলিশকে নিশানা করে ইট ছোড়েন। বাবরি ধ্বংসের ভিডিয়ো-ছবি বিকৃত করা হয়েছে। যে ছবি তোলা হয়েছে, তার নেগেটিভ নেই সিবিআইয়ের কাছে।”

রায়দান শেষ। উল্লাস ও ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে আদালত থেকে দেশের নানা প্রান্তে। এ বার প্রতিক্রিয়া জানানোর পালা।

আদালত-পর্ব আপাতত শেষ। আইনি যুদ্ধের নতুন পর্ব শুরু হবে উচ্চতর আদালতে, জানিয়েছে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Babri Masjid Demolition Case Lucknow Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE