Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
National News

নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে আগুন জ্বলছে দুই রাজ্যে, ত্রিপুরায় পুলিশের গুলি, গুয়াহাটিতে কার্ফু

সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘ডিব্রুগড়ের লাহোওয়ালে সেনা নামানো হয়েছে। তারা পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে সহায়তা করবে। শান্তি বজায় রাখতে বাহিনী এলাকায় ফ্ল্যাগ মার্চ করবে।’’

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে অসমের তিনসুকিয়ায় পড়ুয়াদের বিক্ষোভ। ছবি: পিটিআই

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে অসমের তিনসুকিয়ায় পড়ুয়াদের বিক্ষোভ। ছবি: পিটিআই

সংবাদ সংস্থা
গুয়াহাটি ও আগরতলা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৫:৪৭
Share: Save:

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে অগ্নিগর্ভ অসম ও ত্রিপুরা। সংসদে যখন এই বিল পাশ করাতে তৎপর শাসক বিজেপি তথা এনডিএ তখন বিজেপি শাসিত দুই রাজ্যেই একাধিক বাস ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ত্রিপুরায় গুলি চালিয়েছে পুলিশ। গুয়াহাটিতে জারি হয়েছে কার্ফু। বহু জায়গায় বন্ধ করে ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। দুই রাজ্যেই নেমেছে আধাসেনা।

রাজ্যসভায় যখন শাসক ও বিরোধী দলের বাগযুদ্ধ চলছে সিএবি নিয়ে, তখনও দিনভর প্রতিবাদ বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠল উত্তর-পূর্বের দুই রাজ্য অসম ও ত্রিপুরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে দুই রাজ্যেই আধাসেনা নামানো হয়েছে। ত্রিপুরায় নামানো হয়েছে বিএসএফ অসম রাইফেলস-এর জওয়ানদের। প্রশাসন সূত্রে খবর, আধাসেনা মোতায়েন করা হয়েছে ত্রিপুরার কাঞ্চনপুর ও মনু এলাকায়। অসমের বঙ্গাইগাঁও ও ডিব্রুগড়েও আধাসেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

উত্তর ত্রিপুরা জেলার কাঞ্চনপুরে উন্মত্ত বন্‌ধ সমর্থকদের হঠাতে পুলিশকে শূন্যে ১০ রাউন্ড গুলি ছুড়তে হয় বলে জানান এসডিএম অভেদানন্দ বৈদ্য। কাঞ্চনপুরের আনন্দবাজার এলাকায় আতঙ্কিত অ-জনজাতি বাসিন্দারা বাড়ি ফিরতে না পেরে থানায় এসে আশ্রয় নেন। দশদা স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন ৭০টি পরিবার। তাঁদেরকে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

বিলের প্রতিবাদে গুয়াহাটিতেও পথে নেমে পড়েছেন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ ও অসম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ-সহ বেশির ভাগ কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। দিসপুরে যাওয়ার পথে মূল সড়ক গুয়াহাটি-শিলং রোড অবরোধ করেছেন তাঁরা। অবরোধ ওঠাতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে পুলিশ। ডিব্রুগড়ের চাউলধোওয়ায় পুলিশের লাঠিতে গুরুতর জখম হয়েছেন জনাকয়েক ছাত্র। বিক্ষোভের জেরে ডিব্রুগড় ও গুয়াহাটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যাবতীয় পরীক্ষা অর্নির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। রাতের দিকে একাধিক গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।

অসমের জেলায় জেলায় বিক্ষোভ। ছবি- পিটিআই

উত্তর ত্রিপুরার ধলাই জেলার মনুঘাট এবং ৮২ মাইল বাজারে একের পর এক দোকানে আগুন লাগায় বিক্ষোভকারীরা। ভাঙচুর করে লুটপাট চালানো হয়। তাঁদের আক্রমণে কৃপাসিন্ধু চক্রবর্তী নামে এক ব্যবসায়ী জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ শতাধিক অবরোধকারীকে গ্রেফতার করেছে। গুজব ছড়ানো আটকাতে ত্রিপুরায় মোবাইল, ইন্টারনেট এবং এসএমএস পরিষেবা আগামী ৪৮ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। দক্ষিণ ত্রিপুরার সিপাহিজলায় বন্‌ধ সমর্থকরা রাস্তা অবরোধ করে রাখায় দু’বছর বয়সী একটি অসুস্থ শিশুর মৃত্যু হয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে।

আরও পড়ুন: রাজ্যসভায় আজ বিল পাশের পরীক্ষা অমিত শাহদের, লড়াইয়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত বিরোধীরাও

আরও পড়ুন: লাইভ: মুসলিমদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই: অমিত || এই বিল হিন্দুত্বের অ্যাজেন্ডা: কংগ্রেস

ধলাই জেলার লংতরাই ভ্যালির ৮২মাইল বাজারে ব্যবসায়ীদের দোকানপাট বন্ধ করার জন্য প্রথমে হুমকি দেওয়া বলে জানান এক ব্যবসায়ী। পরে তারা ৩২টি দোকানে ভাঙচুর চালায়। বাজারে আগুন লাগায়। প্রাণ বাঁচাতে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। আগুন লাগানো হয় একাধিক মোটরসাইকেলে। পুলিশ জানিয়েছে, বেশ কিছু মোটরসাইকেল ভাঙচুরও করা হয়। ফল ব্যবসায়ী কৃপাসিন্ধু চক্রবর্তীকে বন্‌ধ সমর্থকরা প্রচণ্ড মারধর করে। তাঁর মাথায় দায়ের কোপ মারা হয়। অন্য দিকে, মনুঘাট বাজারেও বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জখম হন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পরে হামলাকারীদের হঠাতে পুলিশ লাঠি চালায় বলে জানান ধলাইয়ের এসপি কিশোর দেববর্মা।

কাঞ্চনপুরে এসডিএম অফিসের সামনে পথ অবরোধ করে বন্‌ধ সমর্থকরা। বেলা ২টো পর্যন্ত অফিসে কেউ ঢুকতে পারেননি। লালঝুরি, দশদা এবং আনন্দবাজার থেকে কাঞ্চনপুরমুখী সমর্থকদের পুলিশ বাধা দেয়। এরপরেই তারা লাঠি, টাঙি, দা’ নিয়ে নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। কাঞ্চনপুর, দশদা ও আনন্দবাজার এলাকায় তাণ্ডব শুরু করে তারা। দোকানপাট, গাড়ি ভাঙচুর করে। বাজারে ঢুকে তারা সমস্ত দোকানপাট তছনছ করে দিয়েছে। তাদের আক্রমণে ১৩ জন জখম হয়। কয়েকটি গাড়িতেও তারা আগুন ধরায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ, টিএসআর এবং কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী নিয়ে রাস্তায় নামেন কাঞ্চনপুরের এসডিএম অভেদানন্দ বৈদ্য। নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে তারা ইট, পাটকেল, পেট্রল বোমা ছুড়তে শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ শূন্যে দশ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। কাঞ্চনপুর এবং আনন্দবাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। পাশাপাশি, সিপাহিজলা জেলার দেওয়ানবাজারে বন্‌ধ সমর্থকদের ছোড়া কাঁচের বোতল, গুলতি এবং ইটপাটকেলের আঘাতে তিনজন পুলিশ কর্মী জখম হন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE