Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
TikTok

টিকটক বাতিলে ক্ষতি কত, মাপছে স্টার্ট-আপ

টিকটক ও হ্যালো অ্যাপ নির্মাতা বাইটড্যান্সের একাধিক দফতর রয়েছে ভারতে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২০ ০৪:০১
Share: Save:

মাঝরাস্তায় হঠাৎ শুরু উদ্দাম নাচ। বিচিত্র পোশাকে বেসুরো গান। বালতি খানেক জল মাথায় ঢেলে এক ছুটে পগার পার হওয়ার দৃশ্য। টিকটককে কম সময়ে জনপ্রিয় করে দেওয়া এমন হাজারো অদ্ভুতুড়ে কাণ্ড-কারখানা আপাতত এ দেশের মাটিতে তার ‘পর্দা থেকে’ অদৃশ্য। সৌজন্যে, লাদাখে সীমান্ত-সঙ্ঘর্ষের প্রেক্ষিতে ৫৯টি চিনা অ্যাপকে কেন্দ্রের নিষিদ্ধ করে দেওয়া। কিন্তু তার জেরে ওই সমস্ত সংস্থার ভারতীয় কর্মী, এ দেশের মাটিতে তাদের লগ্নি এবং সার্বিক ভাবে ভারতীয় স্টার্ট-আপ বৃত্তে প্রভাব কী হবে, এখন তারই হিসেব কষতে বসেছে সংশ্লিষ্ট শিল্প।

এর আগেও পর্নোগ্রাফি ছড়ানোর অভিযোগে টিকটকের উপরে কিছু দিনের নিষেধাজ্ঞা চেপেছিল। এ বার ভারত-চিনের এই ‘যুদ্ধং দেহি’ আবহে কেন্দ্রের চাপানো নিষেধাজ্ঞা কত দিনের হতে পারে, সবার আগে তা আঁচ করতে চাইছে ওই সমস্ত অ্যাপের প্রস্তুতকারী সংস্থা। কারণ, ভারতে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ থেকে কর্মী নিয়োগ- সব সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে তার উপরে।

টিকটক ও হ্যালো অ্যাপ নির্মাতা বাইটড্যান্সের একাধিক দফতর রয়েছে ভারতে। অফিস আছে অন্য অ্যাপ-সংস্থারও। সেগুলিতে কাজ করেন বহু ভারতীয়। সব অ্যাপ ধরলে সেই সংখ্যা অনায়াসে হাজার ছাড়াতে পারে। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা চিন্তায়। কেন্দ্রের নির্দেশ নিয়ে বিবৃতি দিলেও আপাতত অ্যাপ বন্ধ থাকার পরিস্থিতিতে সংস্থা কী করবে, সে বিষয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। তারই মধ্যে এক কর্মীর আশা, ‘‘আগেও একাধিক বার অনিশ্চয়তা এসেছে। আশা করছি, দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’’ বিশেষত যেখানে টিকটক দ্রুত বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে, তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত ভারতের সমস্ত আইন মেনে চলবে তারা। কেউ কেউ বলছেন, “মনে হয়, এই নিষেধাজ্ঞা সাময়িক। আমাদের তাই প্রার্থনা, শুধু সীমান্তে পরিস্থিতি ঠান্ডা হোক।”

অ্যাপ অকেজো কী ভাবে

• যে অ্যাপগুলি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল, সেই সংস্থাগুলিকে কেন্দ্রীয় সরকার নির্দেশ দিতে পারে ভারত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার। নির্দেশ মানলে ওই সংস্থা গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপল স্টোরে তাদের অ্যাপের প্রাপ্তিস্থানের তালিকা থেকে থেকে ভারতের নাম মুছে দেবে।

• গুগল ও অ্যাপলের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযোগ জানাতে পারে সরকার। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অ্যাপ শুধু ভারতে নয়, গোটা বিশ্বেই সমস্যার মুখে পড়তে পারে।

• ইন্টারনেট প্রদানকারী সংস্থাগুলিকেও সরকার নির্দেশ দিতে পারে ওই অ্যাপগুলির ডাউনলোড ও ব্যবহার ব্লক করে দিতে। নির্দেশ কেউ না মানলে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।

• সরকার নাগরিকদের নির্দেশ দিতে পারে ওই ৫৯টি অ্যাপ মুছে ফেলার। কিছু চিনা মোবাইল থেকে কয়েকটি নির্দিষ্ট অ্যাপ আনইনস্টল করার অপশন নেই, সে কথা ঠিক। কিন্তু অধিকাংশ অ্যাপই মুছে ফেলা যায়।

মতামত: বিভাস চট্টোপাধ্যায়, সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ

সম্প্রতি শোনা গিয়েছিল, ভারতে আরও ১০০ কোটি ডলার লগ্নি করবে বাইটড্যান্স। এ দেশ-সহ সারা বিশ্বে আরও ১০,০০০ কর্মী নিয়োগ করবে তারা। প্রশ্ন উঠছে, এই দু’দেশের পারস্পরিক বিশ্বাস ধাক্কা খাওয়ার পরে এ দেশে নতুন করে বিনিয়োগের ঝুলি উপুড় করতে কতখানি স্বচ্ছন্দ বোধ করবে বিভিন্ন চিনা সংস্থা? এখন যদিও নিষেধাজ্ঞার কারণেই পরিষেবা আপাতত দেওয়া যাচ্ছে না বলে গ্রাহকদের জানাচ্ছে বাতিল হওয়া চিনা অ্যাপগুলি।

আরও পড়ুন: বিশ্বে ৪১ শতাংশ হ্যাকিং চিন থেকে! চিনা অ্যাপ মানেই কেন সন্দেহজনক

তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের একাংশের মতে, কেন্দ্রের এই নিষেধাজ্ঞার জেরে ৫৯টি অ্যাপের মালিক সংস্থার আর্থিক ক্ষতি হয়তো আকাশছোঁয়া হবে না। কিন্তু এ দেশের মাটিতে নতুন করে টাকা ঢালার ক্ষেত্রে বিশ্বাস টোল খাবে অনেকখানি। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ‘স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া’ স্লোগানও ধাক্কা খাবে কি না, উঠছে সেই প্রশ্নও। কারণ, স্টার্ট-আপে লগ্নির হাত ধরে এ দেশে জীবনযাত্রার প্রায় সর্বত্র সেঁধিয়ে গিয়েছে চিন। অ্যাপে গাড়ি বুক করার ওলা, নেটে টাকা মেটানোর পেটিএম, বাড়িতে বসে খাবারের বরাত দেওয়ার জোম্যাটো কিংবা সুইগি, মাসকাবারির ফর্দ ধরানো বিগ বাস্কেট কিংবা ফ্লিপকার্ট, বাচ্চাদের পড়ার অ্যাপ বাইজ়ু’স থেকে শুরু করে হোটেল বুকিংয়ের মেক মাই ট্রিপ- এমন অজস্র সংস্থায় চিনা সংস্থার মোটা লগ্নি। সেখানে দাপট আলিবাবা, টেনসেন্ট, দিদি, চুক্সিং, ফোসান ক্যাপিটাল, চায়না-ইউরেশিয়া ইকনমিক কোঅপারেশন ফান্ডের মতো চিনা দৈত্যের। প্রশ্ন উঠছে, চিন আর্থিক প্রত্যাঘাতের পথে হাঁটলে এই সমস্ত সংস্থাকে সমস্যার মুখে পড়তে হবে না তো? কারণ, এদের সঙ্গে জড়িয়ে বহু জনের রুজি-রুটি।

আরও পড়ুন: প্রধান থেকে প্রধানমন্ত্রী— কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, করোনা বিধি নিয়ে কড়া বার্তা মোদীর

যদিও এ নিয়ে ভাবনা তো দূর, বরং কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগতই জানিয়েছে পেটিএম। নোটবাতিলের পরে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন করেছিল পেটিএম, যা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক আজও তাড়া করে বিজেপিকে। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা বিজয় শেখর শর্মার দাবি, এই অ্যাপ ব্যান দেশের স্বার্থেই। বিপুল পরিমাণ চিনা লগ্নি থাকায় অ্যাপ-ব্যানের হিড়িকে অনেকেই পেটিএম-ও বন্ধ করার দাবি তুলেছেন। যদিও তা এখনও করেনি মোদী সরকার।

এর মধ্যেও খুচরো ব্যবসায়ীদের সংগঠন সিএআইটি ডাক দিয়েছে, বিভিন্ন স্টার্ট-আপে চিনা সংস্থাগুলির লগ্নির খুঁটিনাটি তদন্ত করুক সরকার। দেখা হোক, তার মালিকানা বদলের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে কি না। আবার নেট-দুনিয়ায় অনেকের আশা, “লাদাখের আঁচ কমলেই ওই সমস্ত অ্যাপ ফিরল বলে! তখন সীমান্তে শান্তি ফেরানোর সাফল্য আবার টিকটকেই না প্রচার করে মোদী সরকার!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TikTok India-China India China Startups
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE