নিহত সাংবাদিক রতন সিংহ। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
যোগীর আমলে উত্তরপ্রদেশে ‘জঙ্গলরাজ’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে লাগাতার অভিযোগ করছেন বিরোধীরা। তার মধ্যেই ফের এক সাংবাদিক খুন হলেন সেখানে। পুলিশের নাকের ডগায় তাঁকে গুলি করে খুন করল এক দল দুষ্কৃতী। সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ এবং পুরনো শত্রুতার জেরে তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। কিন্তু নিহত সাংবাদিকের পরিবারের দাবি, সম্পত্তি সংক্রান্ত কোনও ঝামেলাই ছিল না তাঁদের। পুলিশে মিথ্যে গল্প সাজাচ্ছে।
সোমবার রাতে লখনউ থেকে ২৬০ কিলোমিটার দূরে বালিয়া জেলার ফাফনা এলাকায় পুলিশ পোস্ট থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে। ওই এলাকাতেই নিহত সাংবাদিকের বাড়ি। দুষ্কৃতীদের তাড়া খেয়ে তিনি যখন বাড়ির কাছাকাছি, সেইসময় তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে দুষ্কৃতীরা। স্থানীয়রা মিলে তড়িঘড়ি স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁকে। কিন্তু সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
নিহত সাংবাদিকের নাম রতন সিংহ। বয়স ৪২ বছর। স্থানীয় একটি বেসরকারি চ্যানেলে যুক্ত ছিলেন তিনি। খবরের জোগান দিতেন তিনি। তাঁর হত্যার তীব্র নিন্দা করেছে বালিয়া ওয়ার্কিং জার্নালিস্টস ইউনিয়ন। গোটা ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলেছেন তাঁরা। তবে পুলিশের দাবি, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিহতের পেশার কোনও যোগসূত্র নেই। বরং সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরেই তাঁকে খুন করা হয়েছে। অরবিন্দ সিংহ, দীনেশ সিংহ এ বং সুনীল সিংহ-সহ অভিযুক্ত ছ’জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ছ’মাসের মধ্যে নয়া কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচন, আপাতত দায়িত্বে রইলেন সনিয়াই
আজমগঞ্জ রেঞ্জের ডিআইজি সুভাষ দুবে বলেন, ‘‘বালিয়ার শহুরে এলাকায় থাকতেন রতন সিংহ। গ্রামে পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলা চলছিল তাঁদের। পাঁচিল তুলে জমি ঘিরে দিয়েছিল অভিযুক্তরা। জমির দখল পেতে তার উপর খড়ের গাদাও তৈরি করে তারা। নিহত সাংবাদিক গিয়ে তা সরিয়ে দেন। তাতেই দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। তাঁকে তাড়া করতে করতে গুলি করে দুষ্কৃতীরা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই সাংবাদিকের। সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ এবং পুরনো শত্রুতার জেরেই খুন হয়েছেন তিনি। এর সঙ্গে তাঁর পেশার কোনও যোগ নেই।’’
কিন্তু পুলিশের এই দাবি খারিজ করেন নিহতের বাবা। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘জমি নিয়ে কোনও ঝামেলা ছিল না। আর তার জন্য আমার ছেলে খুনও হয়নি। আপনারা গিয়ে দেখে আসতে পারেন। পুলিশ মিথ্যে গল্প সাজাচ্ছে। ফাফনা থানার দায়িত্বে রয়েছেন যিনি, তিনিই আসল অপরাধী। গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েও পালিয়ে যান তিনি। স্থানীয় পুলিশের তরফে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। থানা থেকে ২০ পা দূরত্বে আমার ছেলেকে খুন করা হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: উত্তর ২৪ পরগনায় কোভিডের সংক্রমণ কেন নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না? প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর
এই ঘটনায় নিহতর পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তাঁদের ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছেন। কিন্তু গোটা ঘটনায় ফের রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। রবি ও সোমবার রাজ্যে ঘটে যাওয়া এপরাধমূলক ঘটনার একটি তালিকা তুলে ধরে টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘দু’দিনে উত্তরপ্রদেশে এই হারে অপরাধ ঘটেছে। রাজ্য সরকার পরিস্থিতি আড়াল করার চেষ্টা করছে কিন্তু রাস্তার মোড়ে মোড়ে এখন অপরাধের তাণ্ডব চলছে।’’
তবে উত্তরপ্রদেশে সাংবাদিক হত্যার ঘটনা এই প্রথম নয়। গত মাসেই গাজিয়াবাদে দুই মেয়ের সামনে এক সাংবাদিককে গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। তার চার দিন আগেই একদল যুবক ভাগ্নীকে হেনস্থা করছেন বলে থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy