Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
National News

ছোট্ট ‘মোদী’কে নিয়ে ঝামেলায় মেহনাজ, এ বার নাম রাখতে চান আফতাব!

মেহনাজের বাড়িতে মিডিয়ার লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়। তবে কোনও ভাবে আসল সত্যিটা ফাঁস হয়ে যায়।

মেহনাজ বেগম। ছবি: সংগৃহীত।

মেহনাজ বেগম। ছবি: সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
লখনউ শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৯ ১৫:১৫
Share: Save:

মাসখানেক আগে মোদী-ঝড়ের মধ্যেই শিরোনামে উঠে এসেছিল উত্তরপ্রদেশের এক অখ্যাত গ্রাম। খবর এসেছিল, লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার দিন, ২৩ মে পুত্রসন্তান প্রসব করেছেন ওই গ্রামের মেহনাজ বেগম। তার দিন কয়েক পরে মোদীর জয়জয়কারের খবরের মাঝেই কাগজের পাতায় জায়গা করে নিয়েছিল মেহনাজের শিশুপুত্রও। কারণ, তার নাম রাখা হয়েছিল নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। তবে মাসখানেক কেটে যাওয়ার পর এখন ছেলের নাম বদলাতে চান মেহনাজ। নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী নয়, বরং আফতাব আলম মহম্মদ মোদী সংক্ষেপে আফতাব নামেই পরিচিত হোক তাঁর ছেলে— এমনটাই ইচ্ছে মেহনাজের।

কিন্তু, হঠাৎ কেন এই মতবদল? তা খোলসা করেছেন বছর পঁচিশের মেহনাজ। গোণ্ডা জেলার পরসাপুর মাহরৌর গ্রামে দোতলা বাড়ি তাঁর। দেওয়ালে রং তো দূরের কথা, প্লাস্টারই নেই। সেই বাড়ির দাওয়ায় বসে মেহনাজ জানিয়েছেন, ছেলের নাম নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী রেখে এখন পস্তাতে হচ্ছে তাঁকে। জানিয়েছেন, আসলে ২৩ মে নয়, ১২ মে জন্ম হয়েছিল তাঁর ছেলের। মেহনাজের দাবি, জ্যাঠার ছেলের কথাতেই এমন কাজ করেছেন। গোণ্ডা জেলার একটি সংবাদপত্রে সাংবাদিক হিসাবে কাজ করেন তাঁর জ্যাঠার ছেলে মুস্তাক আহমেদ। এখন ছেলের নাম বদলানোর জন্য ডিএম-এর কাছে হলফনামাও দায়ের করেছেন মেহনাজ। তিনি জানিয়েছেন, মুস্তাকই তাঁকে বোঝান যে ১২ মে নয়, তাঁর ছেলের জন্ম ২৩ মে-তে হয়েছে— সকলকে এমনটাই বলতে হবে। মুস্তাকের কথা মতোই নাকি তেমনটা করেন মেহনাজ। এর দু’দিন পরেই ওই সংবাদপত্রের লখনউ সংস্করণে ওই খবরটি প্রকাশিত হয়। মুস্তাকের সঙ্গে তাতে কলম ধরেন ওই কাগজের ব্যুরো চিফ কামার আব্বাস।

সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরই হইচই পড়ে যায়। মেহনাজের বাড়িতে মিডিয়ার লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়। তবে কোনও ভাবে আসল সত্যিটা ফাঁস হয়ে যায়। এর পর থেকেই নাকি মেহনাজদের প্রায় একঘরে করে দেওয়া হয়েছে। মেহনাজ জানিয়েছেন, এ বারে ইদেও পড়শিদেরও ভিড় হয়নি তাঁদের বাড়িতে। তিনি বলেন, ‘‘আমি কি জানতাম, এমন ঝামেলা হবে! আমি তো জেঠুর ছেলের কথায় ভুলে এ সব করেছি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘মিডিয়ার সামনে কী বলতে হবে তা পাখিপড়ার মতো করে বলে দিয়েছিল মুস্তাক। আমার ছেলে ২৩ মে জন্মেছে। আর সে জন্যই আমি তার নাম প্রধানমন্ত্রীর নামে রেখেছি। আমি তো লেখাপড়া কিছুই জানি না। এমনকি নরেন্দ্র মোদীর সম্পর্কেও বেশি কিছু জানি না।’’

আরও পড়ুন: বিপন্ন ধর্ম-বিশ্বাস! অভিনয় ছাড়লেন দঙ্গল-কন্যা জায়রা, ঘোষণা ইনস্টাগ্রামে

তবে মেহনাজের এই দাবি অস্বীকার করেছেন মুস্তাক। তাঁর কথায়, ‘‘নাম রাখা ব্যাপারে আমি কিছুই বলিনি। ও (মেহনাজ) আমাকে বলেছিল, ছেলের নাম নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী রাখবে। আর আমি তা নিয়ে খবরের কাগজে লিখতে রাজি হয়েছিলাম। আমি কি জানি যে, সে মিথ্যে কথা বলেছে!’’

মেহনাজের বাড়ির থেকে কিছুটা দূরে ওয়াজিরগঞ্জে এক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জন্ম হয়েছিল তাঁর ছেলের। সেখানকার চিকিৎসক আশুতোষ শুক্ল জানিয়েছেন, ১২ মে একটি পুত্রসন্তান প্রসব করেন মেহনাজ।

আরও পড়ুন: কলকাতায় চলন্ত বাসে শ্লীলতাহানি, ১০০ ডায়ালে ফোন পেয়ে ৭ মিনিটেই এক অভিযুক্তকে ধরল পুলিশ

তবে গোটা বিতর্কে অন্য একটি প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন লখনউয়ের ওই সংবাদপত্রের সিনিয়র রিপোর্টার কামার আব্বাস। তাঁর দাবি, ‘‘মিডিয়ায় এটা নিয়ে হইচই হওয়ার পর থেকেই বোধহয় নিজের সম্প্রদায়ের থেকে ওই মহিলার উপর চাপ বাড়ছিল। হয়তো তাঁর ছেলেকে একঘরে করে দেওয়া হবে এমনটাই ভয় পাচ্ছেন তিনি। এ কারণেই এত দিন পরে এ সব বলছেন।’’

মেহনাজের স্বামী মহম্মদ মুস্তাক আহমেদ রাজমিস্ত্রির কাজ করেন দুবাইতে। গোটা ঘটনা শোনার পর রাগে ফেটে পড়েছেন তিনি। মেহনাজ জানিয়েছেন, প্রতি মাসে তাঁকে ৪ হাজার টাকা করে পাঠান তাঁর স্বামী। অসহায়ের মতো মেহনাজ বলেন, ‘‘এ মাসে কোনও টাকা পাঠাননি তিনি। আমার আর কোনও আয় নেই।’’ আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে শুনেছেন, ছেলের জন্মতারিখ ভুল বলার জন্য তাঁর নাকি জেলও হতে পারে। তবে জেল হলে তাঁর সন্তানদের কে দেখবে, তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত মেহনাজ। কাঁদোকাঁদো মুখে ছোট্ট ‘মোদী’কে কোলে নিয়ে মেহনাজ জানিয়েছেন, যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়! এ বার হলফনামা দায়ের করে নাম পাল্টাতে চান ছেলের। মোদী নয়, তাঁর ছেলের নাম হবে আফতাব!

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE