Advertisement
E-Paper

‘ফেলুদা’র দৌলতে দেশীয় কিট তৈরি দুই বাঙালির

কিটের প্রশ্নে বিদেশের উপরে নির্ভরতা কমাতে এই দেশীয় কিট বানিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনস্থ ইনস্টিটিউট অব জেনোমিক্স এবং ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজির বিজ্ঞানী সৌভিক মাইতি ও দেবজ্যোতি চক্রবর্তী।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৪০
দেবজ্যোতি চক্রবর্তী, সৌভিক মাইতি-সহ গবেষক দলের অন্যান্যরা (বাঁ দিক থেকে)। —নিজস্ব চিত্র

দেবজ্যোতি চক্রবর্তী, সৌভিক মাইতি-সহ গবেষক দলের অন্যান্যরা (বাঁ দিক থেকে)। —নিজস্ব চিত্র

নোভেল করোনাভাইরাস পরীক্ষার প্রশ্নে দিশা দেখালেন দুই বাঙালি বিজ্ঞানী। বিদেশি কিটের অভাব দূর করতে নিজেরাই দেশীয় প্রযুক্তিতে বানিয়ে ফেলেছেন নতুন ধরনের কিট। যাতে কম খরচে ও কম সময়ে সংক্রমণ পরীক্ষা সম্ভব হবে। দেশীয় এই প্রযুক্তির পুরো নামটি বেশ খটমট (FnCas9 Editor Linked Uniform Detectio• Assay)। তবে এর সংক্ষিপ্ত নামটি কিন্তু বাঙালির একান্তই পরিচিত, ফেলুদা (FELUDA)!

করোনা পরীক্ষার কিটের হাহাকার রয়েছে শুরু থেকেই। ফলে যথেষ্ট পরীক্ষা হচ্ছে না বলে অভিযোগে সরব রয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মী ও বিরোধীরা।

তাই কিটের প্রশ্নে বিদেশের উপরে নির্ভরতা কমাতে এই দেশীয় কিট বানিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনস্থ ইনস্টিটিউট অব জেনোমিক্স এবং ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজির বিজ্ঞানী সৌভিক মাইতি ও দেবজ্যোতি চক্রবর্তী। এতে সময় ও অর্থ দুই-ই বাঁচবে। বিদেশি কিটের মাধ্যমে পরীক্ষায় যেখানে প্রায় ৪৫০০ টাকা ও এক দিন সময় লেগে যায়, সেখানে দেশীয় প্রযুক্তির এই কিটে এক ঘণ্টায় ফল জানা সম্ভব। খরচ মাত্র ৫০০ টাকা। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী সাত দিনের মধ্যে বাণিজ্যিক ভাবে বাজারে আসতে চলেছে এই দেশীয় কিট। ফলে বাছবিচার না-করে জনগোষ্ঠীর মধ্যে পরীক্ষা করা সম্ভব হবে কেন্দ্রের পক্ষে। বোঝা যাবে, দেশে ইতিমধ্যেই গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে কি না।

কিটের কামাল

• পরীক্ষার খরচ মাত্র
৫০০ টাকা, বিদেশি কিটে যা ৪৫০০ টাকা
• ফল জানা যায় এক ঘণ্টায়, বিদেশি কিটে লাগে এক দিন
• লাগে পেপার স্ট্রিপ আর ছোট ‘পিসিআর’, যা দামে কম ও ছোট

কী ভাবে কাজ করে ‘ফেলুদা’ প্রযুক্তিতে তৈরি এই কিট?

দেবজ্যোতিরা জানাচ্ছেন, কোভিড-১৯ ভাইরাসে আরএনএ থাকে। প্রথমে সেই আরএনএ-কে ডিএনএ-তে পরিবর্তন করা হয়। তার পর পলিমারেজ় চেন রিঅ্যাকশন চেন (পিসিআর) মেশিনের সাহায্যে একটি ডিএনএ থেকে তার অসংখ্য কপি (ডিএনএ) তৈরি করা হয়। পরবর্তী ধাপে এর সঙ্গে ক্রিসপার-ক্যাস-৯ বলে ব্যাকটেরিয়া প্রোটিনের লিঙ্ক করানো হয়। যা ভাইরাল ডিএনএ-কে চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। এর পর ওই নমুনা কাগজের স্ট্রিপে ফেলা হয়। নমুনা ফেলার পর এই স্ট্রিপে প্রথমে একটি লাইন ফুটে ওঠে। এতে বোঝা যায় স্ট্রিপটি ঠিক মতো কাজ করছে। এর পরে দ্বিতীয় একটি লাইন ফুটে উঠলে, বুঝতে হবে সেই নমুনা পজিটিভ। অর্থাৎ যাঁর নমুনা তিনি করোনা সংক্রমিত। স্ট্রিপে দ্বিতীয় লাইন ফুটে না-উঠলে সেই ব্যক্তি করোনা সংক্রমিত নন।

আরও পড়ুন: লকডাউনে নেই দূষণ, পরিষ্কার আকাশে বহু অচেনা তারার খোঁজ পেলেন বাঙালি বিজ্ঞানীরা

বিদেশি কিটের জন্য আকারে বড় ও দামি পিসিআর মেশিন লাগে। সেখানে দুই বঙ্গ সন্তানের আবিষ্কৃত পদ্ধতিতে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মহল্লা ক্লিনিকেও এর পরীক্ষা হতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন কেবল ছোট পিসিআর মেশিন। দেবজ্যোতি বলেন, ‘‘ছোট পিসিআর মেশিনের দাম অনেক কম। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়, প্যাথোলজিক্যাল ল্যাব, এমনকি অনেক স্কুলেও ওই পিসিআর মেশিন থাকে। ফলে খুব সামান্য খরচে ওই পরীক্ষা হতে পারে।’’

পরীক্ষামূলক ভাবে এই পদ্ধতি ইতিমধ্যেই অনেক করোনা সংক্রমিত রোগীর উপরে ব্যবহার করা হয়েছে। দেবজ্যোতি বলেন, ‘‘প্রাথমিক পরীক্ষার ফলাফল খুব ইতিবাচক। বাণিজ্যিক ভাবে এক সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষার ওই পদ্ধতি বাজারে চলে আসবে বলে আশা করছে সিএসআইআর। এতে পরীক্ষার সংখ্যা এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যাবে বলে আশাবাদী দুই বঙ্গসন্তান ও তাঁদের গোটা দল।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

Coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy