Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
NASA

সৌরমণ্ডলের শেষ প্রান্তে অচেনা বন্ধুকে কাল হ্যাপি নিউ ইয়ার জানাবে নাসার যান

অচেনা বন্ধুর থেকে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দূরে কক্ষপথে ছুটতে ছুটতে ঝপাঝপ আল্টিমা টুলির ছবি তুলবে নাসার মহাকাশযান।

আল্টিমা টুলির কাছে নাসার মহাকাশযান নিউ হরাইজন। ছবি নাসা নিউ হরাইজন টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে।

আল্টিমা টুলির কাছে নাসার মহাকাশযান নিউ হরাইজন। ছবি নাসা নিউ হরাইজন টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১২:০৭
Share: Save:

সাড়ে ৬০০ কোটি কিলোমিটার দূরে গিয়ে এ বার এক ‘অচেনা বন্ধু’কে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ জানাবে মানব সভ্যতা, আগামিকাল। সেই বন্ধুর নাম আল্টিমা টুলি। সে রয়েছে আমাদের সৌরমণ্ডলের প্রাচীরের কাছে। এর আগে সৌরমণ্ডলে এত দূরের কোনও মহাজাগতিক বস্তুর কাছে পৌঁছতে পারে নি কোনও মহাকাশযান। যে জায়গাটায় রয়েছে এই আল্টিমা টুলি তার নাম কুইপার বেল্ট। সেই জায়গায় আল্টিমা টুলির মতো বহু মহাজাগতিক বস্তু রয়েছে। সেই সবগুলিই আসলে বিশাল বিশাল বরফের খণ্ড। কাল ৩০ কিলোমিটার চওড়া আল্টিমা টুলির মুলুকে ঢুকে পড়বে নাসার মহাকাশযান ‘নিউ হরাইজন’। তখন তাঁর গতিবেগ থাকবে সেকেন্ডে ১৪ কিলোমিটার। অচেনা বন্ধুর থেকে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দূরে কক্ষপথে ছুটতে ছুটতে ঝপাঝপ আল্টিমা টুলির ছবি তুলবে নাসার মহাকাশযান। সেখান থেকে পৃথিবীতে ছবি পাঠাতে লাগবে ছ’ঘণ্টা সময়। গোটা মহাকাশযান আর তার ক্যামেরা চালাতে খরচ হবে মাত্র ১৯০ ওয়াট বিদ্যুত শক্তি। যা দিয়ে তিনটি বাল্ব জ্বালানো যায়।

২০০৬ সালের জানুয়ারিতে পৃথিবী থেকে যাত্রা শুরু করে নাসার মহাকাশযান নিউ হরাইজন। মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন পেরিয়ে ২০১৫ সালের জুলাইয়ে সে পৌঁছয় বামন গ্রহ প্লুটোর কাছে। সে সময় প্লুটো থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে বিজ্ঞানীদের পাঠিয়েছিল। যার জেরে প্লুটো সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য বিজ্ঞানীদের হাতে আসে। প্লুটো থেকে আরও ১৫০ কোটি কিলোমিটার যাত্রা করে মঙ্গলবার নিউ হরাইজন থাকবে আল্টিমা টুলির পিঠ থেকে মাত্র ৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরে।

কী করবে নিউ হরাইজন?

আল্টিমা টুলির কাছে পৌঁছনোর পর সেখানকার ছবি তুলে নিজের মেমরিতে রাখবে। ওই মহাজাগতিক বস্তু থেকে যত বেশি সম্ভব তথ্যও জোগাড় করবে সে।

নিউ হরাইজনের পাঠানো তথ্য থেকে কী জানা যাবে?

ট্রান্স নেপচুনিয়ান রিজিয়ন, অর্থাত্ নেপচুনের পর সৌরমণ্ডলের বাকি এলাকা সম্পর্কে এখনও স্পষ্ট ধারণা নেই বিজ্ঞানীদের। নিউ হরাইজনের পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে সেই ধারণা আরও মজবুত হবে। কুইপার বেল্টে থাকা অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তু সম্পর্কেও অবহিত হবেন বিজ্ঞানীরা। পাশাপাশি সৃষ্টির সময় (৪৬০ কোটি বছর আগে) কেমন ছিল সৌরমণ্ডল, তাও জানা যাবে।

সৌরমণ্ডলের শেষ প্রান্ত যেখানে পৌঁছবে নাসার মহাকাশযান নিউ হরাইজন। গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।

কেন আল্টিমা টুলির কাছে গেল নিউ হরাইজন?

প্লুটোর পর কী রয়েছে সৌরজগতে, তা জানতে আগ্রহী নাসা। চার বছর আগে হাবল স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্যে প্লুটো পরবর্তী এই মহাজাগতিক বস্তুরই সন্ধান পেয়েছিলেন নাসার বিজ্ঞানীরা। তখন এর নাম দেওয়া হয়েছিল ২০১৪ এমইউ৬৯। সাধারণ মানুষের বোঝার জন্য কুইপার বেল্টের এই মহাজাগতিক বস্তুর নাম দেওয়া হয় আল্টিমা টুলি। লাতিন ভাষায় আল্টিমা কথার অর্থ, জানা দুনিয়ার বাইরের এলাকা।

টেলিস্কোপের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন আল্টিমা টুলি দেখতে অনেকটা আকাবাঁকা আলুর মতো। এর পৃষ্ঠভাগ বেশ অন্ধকারাছন্ন। কারণ এই বস্তুর উপর যে সূর্যের আলো পড়ে, তার ১০ শতাংশ প্রতিফলিত হয়. বাকিটা শোষিত হয়ে যায়। বিজ্ঞানীদের অনুমান, ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার চওড়া আল্টিমা টুলি দুটি বস্তু নিয়ে তৈরি।

তাই আল্টিমার আকার, ঘূর্ণনের গতি, পরিবেশ, কী পদার্থে দিয়ে তৈরি। এই সকল রহস্য উন্মোচনের জন্যই এত দূরে পাড়ি দিয়েছে নাসার এই মহাকাশযান।

আল্টিমা টুলি দেখতে কেমন?

আকাবাঁকা আলু বা বৃন্তসহ মটরবীজের মতো দেখতে লাগে আল্টিমাকে। বিজ্ঞানীদের টেলিস্কোপে ধরা পড়েছে সে রকমই ছবি। কিন্তু এই মহাজাগতিক বস্তু গোটাটাই একটি খণ্ড না দুটি খণ্ড মিলে তৈরি হয়েছে, সে ব্যাপারে জানতে নিউ হরাইজনের পাঠানো তথ্যের উপরই ভরসা করতে হবে বিজ্ঞানীদের।

নিউ হরাইজনের কাছ থেকে বিজ্ঞানীদের এত আশা কেন?

যে মনের মতো কাজ করে, তার উপরেই মানুষ বেশি ভরসা করে। নিউ হরাইজনের ক্ষেত্রেও এটা ব্যতিক্রম নয়। এর আগে প্লুটোর কাছে গিয়ে মূল্যবান অনেক তথ্য ও ছবি পাঠিয়েছিল। যার জেরে প্লুটো নিয়ে নতুন দিগন্ত খুলে যায় বিজ্ঞানীদের সামনে। আল্টিমা টুলির ক্ষেত্রেও সেই আশা করছেন তাঁরা।

তবে এ বারে তাঁদের আশা একটু বেশিই। কারণ, প্লুটোর উপরিভাগ থেকে সাড়ে ১২ হাজার কিলোমিটার দূরে ছিল নিউ হরাইজন। আর আল্টিমা থেকে এই মহাকাশযানের দূরত্ব থাকবে সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার। তাই আরও কাছ থেকে আল্টিমার ছবি তুলতে পারবে নিউ হরাইজন। দূরত্ব কম হওয়ায় তথ্য সংগ্রহেও এ বার বাড়তি সুবিধা পাবে নিউ হরাইজন। কুইপার বেল্টের রহস্য ভেদ করতে নিউ হরাইজনই বিজ্ঞানীদের একমাত্র ভরসা।

আরও পড়ুন: অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলে ফের হবে মহাপ্লাবন! হুঁশিয়ারি বিজ্ঞানীদের

আরও পড়ুন: ভয়াল ভূমিকম্পের ভয় নিয়ে দাঁড়িয়ে পার্ক স্ট্রিট, সল্টলেক, রাজারহাট... বলছে আইআইটি-র রিপোর্ট

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE