পরিস্ফুট: শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজ।
কার্টুনে বেশ হাত, ক্যারিকেচারও করেন। বিচিত্র সব অভিব্যক্তিময় মুখ পর্যবেক্ষণের পরে রং ও রেখায় স্পষ্ট হয়। পটভূমি থেকে চরিত্রকে কেন্দ্র করে নানা রকম অঙ্গভঙ্গির মধ্যেও পেন্টিংয়ের গুণকে তিনি সচেতন ভাবেই রক্ষা করেছেন। যেখানে ড্রয়িংয়ের জোরালো আবেদন চোখ এড়িয়ে যায় না। একই সঙ্গে এগুলিকে সংগঠিত করতে গিয়ে যে মজাকে প্রাধান্য দিয়েছেন শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সেখানে যৎসামান্য সচিত্রকরণের আভাসও চোখে পড়ে। সামগ্রিক ভাবে তাঁর বিভিন্ন ধরনের পেন্টিং ও সংক্ষিপ্ত ইনস্টলেশনের পরীক্ষামূলক কাজগুলি উজ্জ্বলতার নিদর্শন। আলতামিরা আর্ট গ্যালারিতে শিল্পীর ‘ভয়েস ওভার’ প্রদর্শনীটি শেষ হল।
রেখার সঙ্গে রঙের সমন্বয়ে এক ধরনের কার্টুনধর্মিতার অবলম্বন যে ছিল না, তা নয়। কিন্তু সেই জায়গাকে তিনি আপ্রাণ পরিহার করার চেষ্টা করে পেন্টিংয়ের গুণকে রঙের প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যায় উপস্থাপিত করেছেন। যেখানেই কার্টুনধর্মী স্টাইল তৈরি হতে যাচ্ছে, তখনই তাকে অন্য ভাবে প্রশ্রয় দিয়ে, কম্পোজ়িশনকে অন্য অনুষঙ্গ, বর্ণ ও স্পেস ব্যবহারের বুদ্ধিমত্তায় উতরে দিয়েছেন ছবিকে। ক্যারিকেচারও আছে আলাদা আলাদা ছবি হিসেবে। জলে বেগে সাঁতরানো মাছ, মনুষ্যমুখের উপর গেরুলিন ব্রাশিংয়ে মাছের অর্ধেক শরীরের ড্রয়িং, প্রস্ফুটিত পুষ্পের দিকে উড়ন্ত ভ্রমর, গাঢ় নীল উড়োজাহাজ, কালচে নীল সাঁতারু নারীর শরীর, ভেসে চলা মেঘ, মনুষ্যমুখের এক দিকের চোখের বদলে টুকটুকে লাল মাছের অবস্থান— এই রকম অনেক কিছু রূপারোপের সম্মিলিত অথবা বিচ্ছিন্ন ব্যবহার ছবিকে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় পৌঁছে দিচ্ছে, যেখানে ক্যারিকেচারের চরিত্র অটুট রেখে এবং পেন্টিংয়ের গুণকে রক্ষা করে, সামগ্রিক কম্পোজ়িশনে কমপ্লিট ছবি তৈরির চেষ্টা করেছেন। উল্লেখ করতেই হয় যে, ওঁর শূন্য সাদা স্পেস এবং পটভূমির আপাত-হালকা রঙের স্পেসের ব্যবহার চমৎকার! এই সিরিজ়টি কাগজের উপর অ্যাক্রিলিক, জল রং এবং পেন-ইঙ্ক ছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে সূক্ষ্ম ছুচলো ধাতুর অগ্রভাগ দিয়ে স্ক্র্যাচ করেছেন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
শিল্পীর ছোট্ট ক্যানভাসগুলিতে লাল, কালো, সাদা, ধূসর ও নীলাভ রঙের ব্যবহার যদিও এক ধরনের মোনোটোনি তৈরি করেছে। সলিড বর্ণ, ছায়াতপ, রেখার নির্দিষ্টতার কোথাও কুশলী ব্যবহার নেই। কম্পোজ়িশনের ক্ষেত্রে হয়তো দৃশ্যকল্প দর্শককে ভাবাবে, কিন্তু বড্ড স্থির ছবির মতো রচনাগুলিতে পা ভেঙে, হাত পিছনে ভর দিয়ে বসা অন্ধকার মানুষ, গাছপালা, উড়োজাহাজ কিংবা বাড়ির আংশিক স্থাপত্যে শুধু লালের একটু ব্যবহারই যা ছবিতে বদল আনে। একই ভাবে বিশ্ববিখ্যাত সাঙ্গীতিক বিজ্ঞাপনের সেই নিথর বসে থাকা সারমেয়র ছবিটি— এখানেও লালের ব্যবহার সমান্তরাল সাদা রেখার বিভাজনের জন্য অন্য রকম লাগে। নিঃসন্দেহে পেন্টিং কোয়ালিটিকে সে ভাবে উপলব্ধি করা যায়নি। সামান্য সাদা বার করা পটভূমিতে তৈরি হওয়া সামগ্রিক লাল ও যৎসামান্য কালোর ঘষামাজা ছায়াতপে তৈরি ‘ল্যান্ডস্কেপ ইন দ্য মিস্ট’ কাজটিতে একটি ছোট ও একটি অপেক্ষাকৃত বড় ক্যানভাস। কাজটিকে অযথা ও ভাবে ভাগ করে কী বোঝাতে চাইলেন? কুমির, মানবী, গাছপালা, আধশোয়া মানবশরীর, কিছুটা স্থাপত্যের ফর্ম— সব মিলিয়ে একটু জটিলই হয়েছে। এখানে অ্যারেঞ্জমেন্টে পরিসরকে সে ভাবে ব্যবহার করতে না পারার জন্য মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। ছবিটি যেন এখানে কিছুটা প্রতীকী!
‘ল্যান্ডস্কেপ ইন দ্য মিস্ট’ সিরিজ়টি পোস্টমর্টেমের পরে যা পাওয়া গেল, পরপর সাজালে এই রকম— বিন্যাসের একত্রীকরণে রূপারোপ মার খাচ্ছে। শুধু কালো, নীল, লালের বাহুল্য চোখের পক্ষে আরামদায়ক পরিসর তৈরি করতে পারেনি। নিসর্গ, রূপ, রং, অনুষঙ্গ বড্ড বেশি একে অপরের ঘনিষ্ঠ—যাতে জড়িয়ে যাচ্ছে অনেক জায়গা। স্পেস-পরিসরের কথা না ভেবে সর্বত্র কাজ করার চেষ্টা। ছবি তৈরির সময় বিরতি ও গ্রহণ বর্জনের কথা বিস্মৃত হওয়া। তবু একটা চেষ্টা ছিল।
‘মাই অ্যাকোয়ারিয়াম’ নামে একটি সিরিজ় ছিল প্রদর্শনীতে। কাচের বিভিন্ন ধরনের বোতল ও জারের মধ্যে রঙিন ও লাল-কালো বা হালকা নীল-সাদার চিত্রিতকরণ, যা কাগজে তৈরি করে ভিতরে বিন্যস্ত। এও এক ধরনের ভাল লাগা, তবে গভীরতার জায়গা থেকে খুব স্বস্তিদায়ক নয়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy