শিল্পীর আঁকা ছবি
নাটকের শিকড়ের ভাষা পর্যন্ত আত্মস্থ করার প্রবল ঝোঁক ছিল। অভিনয় দেখতেন গভীর পর্যবেক্ষণ দিয়ে। বুঝেছিলেন তখনকার নাটক থিয়েটারের নার্ভকে। ‘আলিবাবা’ তো আরব্য উপন্যাসের কাহিনি, তাকে ও ভাবে বাংলার ছাঁচে ফেলে, যা ওঁরা করেছিলেন, অবিশ্বাস্য। যামিনী রায় বলেছিলেনও সে কথা। শিশির ভাদুড়ী সম্পর্কে তাঁর আগ্রহ, এমনকি শ্রদ্ধা ছিল সাংঘাতিক। চাকরি ছেড়ে থিয়েটারে আসা শিশিরবাবুর নাটক দেখতে যে কী পরিমাণ ভিড় হত, যামিনী রায় জানতেন। পরে হীরা দত্ত, তারাসুন্দরী, কাশীনাথরাও শিশিরবাবুর সঙ্গেই যোগ দিলেন অন্য দল ছেড়ে। আর্ট থিয়েটারের ‘কর্ণার্জুন’ও তিনি দেখেছেন। আবার ইম্প্রেসারিয়ো হরেন ঘোষের ব্যবস্থাপনায় উদয়শঙ্করের নাচও দেখেছেন। অবাক হলেও খুঁত ধরতেও ছাড়েননি। হরেন ঘোষকে পরে বলেছিলেনও, ‘‘নাচে যাবতীয় কৃতিত্ব তো পায়ের, মহাদেবরূপী উদয়শঙ্কর যা নেচেছিলেন সেদিন, সে হল প্রিমিটিভ।’’ বিশ্বাস করতেন শেষ পর্যন্ত যে, পুরাণেই ফিরতে হবে। সেটাই যে ছবির ক্ষেত্রে জরুরি ও দরকারি, সে কথাই বলতেন। হয়তো সেই বিশ্বাসের জোরেই ভালবেসে এঁকেছেন বহু ছবি, প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরাণকে প্রাধান্য দিয়ে।
এ কথা ঠিক যে, বুদ্ধদেব বসুর মতো অনেকেই ছিলেন তাঁর ছবির তীব্র সমালোচক, এমনকি বিরোধীও। সে ভাবনা, স্টাইলাইজ়েশন, এমনকি ট্রিটমেন্ট নিয়েও নানা কথা শোনা গিয়েছে। সমালোচনায় জর্জরিত তো কম হননি। অনেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও বহু জনের বিবিধ প্রশংসাও সুবিদিত। বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় বা ও সি গঙ্গোপাধ্যায় (অর্ধেন্দ্রকুমার) যে তাঁর কাজ নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন, তা নয়। এ বিষয়ে আরও উল্লেখযোগ্য আলোচনা আছে। আগে আরও প্রয়োজনীয় একটি অংশ জানতেই হবে।
অবনীন্দ্রনাথ ও গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে জোড়াসাঁকোয় সাদর আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের প্রতিকৃতির অনুকৃতি করার বরাত তো তিনি অবন-গগন মারফতই পান। আসলে শশী হেশের আঁকা দেবেন্দ্রনাথের প্রতিকৃতিটি নষ্ট হয়ে আসছিল, ওটিরই অনুকৃতির কাজ। ঠাকুরবাড়িতে তাঁর যাতায়াতের ও যোগাযোগের ফলেই তিনি অবন- গগনের ভগিনী সুনয়না দেবীর ছবি দেখতে পান। সুনয়নার ছবি তাঁকে সেই সময়ে নিশ্চিত ভাবেই প্রভাবিত করেছিল। একে একজন মহিলা চিত্রকর, তার উপরে শিল্পশিক্ষার ধারাবাহিক সিলেবাসগত চর্চার বাইরে এমন সুচারু-নিবিড় বিন্যাস তিনি কী ভাবে চিত্রায়িত করেছেন, যামিনী রায়কে তা ভাবিয়েছিল। সে দিক থেকে সুনয়নী দেবীর ছবিতেই প্রথম তিনি পরিচয় পেয়েছিলেন লোকশিল্পের অনুষঙ্গকে ব্যবহার করার অমন ঐকান্তিক প্রয়াস সম্পর্কে। রেখা ও রঙের সাযুজ্য ও রূপবন্ধের সহজাত বিন্যাস আর বিশেষ করে এক ধরনের স্বাধীন স্বতঃস্ফূর্ততা সুনয়নীর ছবিকে মহার্ঘ করেছিল। কারও কাছ থেকেই তিনি শেখেননি। বরং সুনয়নী একটি অতি মহান পরিবারের মধ্যে প্রায় অন্তরীণ থেকেও যা যা করেছিলেন ছবিতে, যামিনী সে তুলনায় গ্রামীণ সারল্যের ভূমিজ শিল্পের আঘ্রাণ ততোধিক পেয়েও তা কাজে লাগিয়েছেন অনেক দেরিতে। তা সত্ত্বেও বলতেই হবে, যামিনী রায়ের ছবির অন্তরালে কোথাও নিবিড় ভাবেই জাগ্রত সুনয়নী দেবী।
গাঁধীজির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন
আপাতত ছবির জায়গা থেকে একটু সরে আসা যাক আর এক উল্লেখযোগ্য দিকে। তখন চরম অসুস্থ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। যামিনীরা তাঁর জন্য অর্থসংগ্রহ করেছিলেন একটি নাটক মঞ্চস্থ করে। ওই নাটকের শিল্প নির্দেশনায় ছিলেন যামিনী নিজেই। ওই যে কমিউনিস্টদের কাছে তিনি ছিলেন ‘পিপলস আর্টিস্ট’। ও ভাবে বিশ্বাসের কথা ব্যক্ত না করলেও তাঁদের প্রতি যামিনী রায়ের কিছুটা ঝোঁক ছিল, যদিও তত্ত্ব নিয়ে তাঁর মনে নানা প্রশ্নও ছিল। আর হীরেন মুখোপাধ্যায় (বিশিষ্ট কমিউনিস্ট নেতা) যখন তাঁর বাড়িতে বিষ্ণু দের সঙ্গে এসেছিলেন, তখন তো পুলিশের টুপি, পাগড়ি, পোশাকআসাক কেমন হবে, জানতে চেয়েছিলেন যামিনী রায়। কারণ তিনি চেয়েছিলেন, এ সব ব্যাপারে একটি নির্দিষ্ট পোশাক বিধি, পরিচ্ছদ বিধি থাকুক। অনেক দিকেই ছিল শিল্পীর এই অনুসন্ধানী দৃষ্টি ও প্রশ্ন। কিছু ব্যাপারে সাংঘাতিক দৃঢ় ছিলেন। প্রতিবাদ বা তুমুল তর্কে কখনওই যাননি। মহাত্মা গাঁধীর আহ্বানও প্রত্যাখ্যান করেন। আসলে গাঁধীর আদর্শকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করলেও, তাঁর শিল্পকর্ম দেখতে গাঁধীজির আগ্রহ সত্ত্বেও দেখাতে যাননি যামিনী রায়। হরিপুরা কংগ্রেসের পোস্টার আঁকার জন্য নন্দলাল বসুর সঙ্গে তিনি গাঁধীজির ডাকেই যান। ছবি দেখাতে যাওয়ায় শিল্পীর আপত্তির কারণ একটিই—‘‘গাঁধীজি যদি ছবিই দেখতে চান, আমার স্টুডিওতে আসবেন। এটুকু সম্মান কি শিল্পী হিসেবে আশা করা যায় না?’’ বলেছিলেন তিনি।
যামিনী রায়ের ছবি ভীষণ ভাবে আকৃষ্ট করেছিল ব্রিটিশ লেখক অস্টিন কোটকে। তিনি শিল্পীর বন্ধুও ছিলেন খুব। কোট বলতেন, ‘‘যামিনীবাবু এশিয়ায় আমার জনক।’’ তবে তাঁর ছবি সম্পর্কে তৎকালীন দুই রাজনৈতিক দল দুটি মত ব্যক্ত করেছিলেন এবং এক দিক থেকে দুটি মতকেই ঠিক বলে মনে করা হত। কংগ্রেস দলের মত ছিল, ‘যামিনী রায় ন্যাশনাল আর্টিস্ট’। আর কমিউনিস্টরা বলতেন, ‘যামিনী রায় হলেন পিপলস আর্টিস্ট’। সমালোচনা ও প্রশংসার এক ধারাবাহিক বিশ্লেষণ তাঁকে তেমন ভাবে বিষণ্ণ বা আপ্লুত করেনি কখনও। প্রশংসার ভার বেশি হলেও বিপরীতধর্মী সমালোচনার বেশ কিছু উদাহরণের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতিও উন্মোচিত। কী রকম সেগুলি? ‘অবনীন্দ্রনাথ টেগোর অ্যান্ড দি আর্ট অব হিজ় টাইমস’-এ জয়া আপ্পাস্বামী যামিনী রায়ের শিল্পকে গুরুত্ব দিতে চাননি। যামিনী রায়ের খ্রিস্ট বিষয়ক ছবি অনেকে প্রশংসা করলেও অজিতকুমার দত্ত বলেছিলেন, ‘‘যামিনী রায় বাইবেলের কাহিনী জানতেন না।’’
আগেই উল্লেখিত যে, যামিনী রায়ের কবিবন্ধু সুধীন্দ্রনাথ দত্তেরও অভিযোগ ছিল তাঁর ছবি নিয়ে। কিন্তু তিনি তাঁর শিল্পের যথেষ্ট গুণগ্রাহী হয়েও, বিশিষ্ট আলোচনা করেও বলেছিলেন বিস্ময়কর কথা। ছন্দোময় কোনও কিছুতে যামিনী রায়ের পক্ষপাত নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি অভিযোগ করে বসেন, ‘‘নামাজরত মুসলিমদের ছবিও আঁকেন আবার দাঙ্গার উন্মাদনাকে উপেক্ষা করেন।’’ আবার এও বললেন, ‘‘নৃত্যরত সাঁওতালদের প্রতি তিনি আকৃষ্ট, অথচ তাদের মত্ত অবস্থা, বিপর্যয়ের জীবন বিষয়ে তীব্র বিরাগ।’’
শিল্পী অতুল বসুর বাড়িতেও বেশ যাতায়াত ছিল যামিনী রায়ের। যামিনীবাবু এক আলোচনায় বলেছিলেন যে, ‘‘সতীশ, যোগেশ, অতুল, আমি বেস্পতিবার নানা বিষয়ে আলোচনা করতুম। মুড়ি, ছানার গজা, চা-ই ছিল আড্ডার প্রধান খাবার। কিন্তু বৌদিকে আমি কুকারে মাংসের স্টু রাঁধা শিখিয়েছিলুম, কুকার সঙ্গে নিয়েই আমি গিয়েছিলুম ওখানে। তারপর থেকেই মাঝেমাঝেই পাঁউরুটি আর মাংসের স্টু ছিল মাস্ট। ছানার গজা তো থাকবেই।’’ এ ছাড়া যতীন বাগচী, প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, নলিনী সরকার, নরেন্দ্র দেব ও অন্যান্যরা আসতেন আর এক আড্ডায়, সেখানেও যেতেন যামিনী রায়। সেটা ছিল চারু রায়ের আস্তানা। ‘জহর’ সিনেমা হলের বাড়ি ছিল, আগে নাম ছিল ‘কীর্তি’। অতুল বসু ১৯১৬-য় যখন আর্ট স্কুলে ভর্তি হন, ক্লাসে ঢুকেই তাঁর নজরে পড়ে গিয়েছিল দেওয়ালে ঝোলানো ‘যামিনী রায়ের কয়েকটি প্রাণবন্ত স্কেচ’। যদিও তখন যামিনী রায় স্কুল ছেড়েছেন। পরে শিল্পী হেমেন্দ্রনাথ মজুমদারের ২৪ নম্বর বিডন স্ট্রিটের শিল্পীচক্রে (যা হেমেনবাবুর স্টুডিয়ো ও বাড়ি), ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ আর্টে হেমেন্দ্রনাথের মাধ্যমেই অতুল বসুর সঙ্গে পরিচয় হয় যামিনী রায়ের। অতুল বসুর মতে, যামিনী রায় ছিলেন ‘‘পুরোপুরি স্বাধীন জাতের শিল্পী। যেন স্ট্রংগেস্ট মাইনরিটি অফ ওয়ান কথাটি তাঁর উদ্দেশ্যেই উদ্ভূত। যামিনী রায় কখনও আর্ট ফর আর্টস সেক-এ বিশ্বাস করেননি। বেভরলি নিকলস তো তাঁর ‘ভার্ডিক্ট অফ ইন্ডিয়া’য় দু’জন মহাপুরুষের সন্ধান দিয়েছিলেন। একজন মহম্মদ আলি জিন্নাহ, অপর জন যামিনী রায়। বইটি যুদ্ধের বাজারে লাখে নয়, কোটিতে বিক্রি হয়।’’ অতুল বসুর এমন সব আলোচনার অংশ ১৯৭২-এ অমৃতবাজার পত্রিকায় ‘যামিনী রায়: লার্জার দ্যান লাইফ’ নামে প্রকাশিত হয়েছিল।
ছেলের মৃত্যু তাঁকে পুরো তছনছ করে দিয়েছিল
অন্তত এ বার যামিনীবাবুর দুই ছেলের সংক্ষিপ্ততম কথা জানাতে হয়, যেহেতু দু’জনেই ছবি আঁকতে জানতেন। জীমূত ওরফে ‘বোতল’ খুব কম বয়সে মারা যান। এই অকালমৃত্যু শিল্পী মেনে নিতে পারেননি। ভয়ঙ্কর আঘাত ছিল তাঁর কাছে বোতলের অকস্মাৎ চলে যাওয়া। ধর্ম আর জীমূতকে বাগবাজারে তিনি দোকানও করে দিয়েছিলেন। শুধু ছবি বিক্রির উপরে ভরসা ছিল না বলেই কি? জ্যেষ্ঠপুত্র ধর্ম দোকান মেনে নিলেও জীমূত পারেননি। সেনসিটিভ জীমূতের প্রতি ওঁর যে আরও নজর দেওয়া উচিত ছিল, যামিনীবাবু বুঝেছিলেন সে কথা। জীমূত চাপা স্বভাবের একটু বিষণ্ণ ধরনের ছিলেন।
জীমূতের মৃত্যুর পর ভিতরে ভিতরে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিলেন। ছবি আঁকতে পারতেন না সে সময়ে। শোনা যায়, আর এক পুত্র অমিয় ওরফে পটল নাকি যামিনীর মতো হুবহু এঁকে, বাবার নাম সই করে বিক্রি করতেন। শিল্পী নিজেও সে সম্পর্কে বলেছেন—অনেকেই মনে করতেন, পটল নয়, যামিনীই নাকি ছেলেকে দিয়ে আঁকিয়ে নিজে নাম সই করতেন। যদিও এ সব আলোচনা নিজেই এক বাক্যে উড়িয়ে দিতেন যামিনী। পটল তাঁর সঙ্গী হিসেবে কাজ করেছিলেন নিঃসন্দেহে। বিশ্বখ্যাত ফ্রান্সিসকো গোইয়ার দত্তক কন্যাও তো তাঁর ছবি এঁকে দিতেন। পটচিত্র দেখলে বুঝবেন, পরিবারসুদ্ধ আঁকছে আর সই থাকছে একজনেরই। বিক্রিও হচ্ছে। এতে তিনি কোনও অন্যায় দেখেননি। পটলের আঁকা ছবিতে যামিনীর ফিনিশিং বা সই করা প্রসঙ্গে শিল্পীর পৌত্র দেবব্রত রায় বলেছিলেন, ‘‘এটা সত্যি কথাই, যা আমি দেখেওছি। তবে কারণ সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়, যেহেতু তা আমি জানি না। বিষ্ণু দে, অশোক মিত্ররাও যে বিদেশে এ রকম হওয়ার যুক্তি দিয়েছিলেন, তাও তিনি বলেছেন এ প্রসঙ্গে। যেখানে গুরুদের সই থাকত।’’
এ ক্ষেত্রে একটি নামের পক্ষে- বিপক্ষে তখন অনেক তোলপাড় হয়েছিল। মেদিনীপুরের বসন্ত জানাও নাকি নিজের কিছু ছবি এঁকে যামিনী রায়কে দেখাতে যেতেন। যামিনী নাকি তাতে স্বাক্ষর করতেন। দেবব্রতবাবু এ বিষয়েও বলেছিলেন, ‘‘ঠাকুর্দা যামিনীবাবু এ সব ছবি সংশোধন করে দিতেন। বসন্ত জানা অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। ঠাকুর্দাকে পিতা সম্বোধন করতেন। ঠাকুর্দাও তাঁকে স্নেহ করতেন খুব। যামিনীবাবুর সঙ্গে তাঁর চিঠিপত্রে নিয়মিত কথা হতো।’ এই বসন্ত জানার কাজ কিন্তু বেশ কিছু ক্ষেত্রে হুবহু যামিনী রায়ের ছবির মতো। এই অনুসরণের ক্ষেত্রে তিনি কখনও কখনও যামিনীর মূল রচনাটিকে রেখেও কিছুটা বদলে ফেলেছিলেন। শিল্পীর লেখা বহু পোস্টকার্ড বসন্ত জানার নামে আছে।
তাঁর শিল্পকলা নিয়ে আরও বহু কথাই উহ্য থেকে গেল। তবুও কিছু অতি উল্লেখযোগ্য অংশ সরিয়ে রেখেও, তাঁর জীবনের আর এক দিকের উন্মোচনেই বা কম ঔজ্জ্বল্য কোথায়? তাঁর ছবি সম্পর্কে বিস্তারিত বিবিধ বক্তব্যের বিন্যাসই তো বহু বই ও বর্ণমালার বৈভব।
এই ভার্সেটাইল শিল্পীর তুলিকলম তাঁর শরীরের সঙ্গেই নিথর হয়ে গিয়েছিল ১৯৭২-এর ২৪ এপ্রিল। ইউরেমিয়া কেড়ে নিয়েছিল লেখনী-সহ তাঁর বর্ণবহুল ক্যানভাস, বোর্ড, কাগজ, রং, তুলি, প্যালেট এবং তাঁর এক অসমাপ্ত ছবি ‘লাস্ট সাপার’। ছবিটি আঁকতে আঁকতেই চলে গেলেন সদ্য ৮৫ বছর অতিক্রান্ত শিল্পী যামিনী রায়। যদিও তাঁর আঁকা একটি বড় ছবি ‘লাস্ট সাপার’ আছে রাজধানীর ন্যাশনাল গ্যালারি অব মডার্ন আর্টে।
তাঁকে নিয়ে নস্ট্যালজিয়ার প্রচুর দিক। কিন্তু যে দিকগুলোয় শুধু তিনি যামিনী রায় হয়ে বেঁচে থাকবেন, যে প্রতীকী তাৎপর্যে তিনি যামিনী রায় হয়ে থেকে যাবেন, যে শিল্প-গুণান্বিত মহাকাশে তিনি অন্যতম এক নক্ষত্ররূপে জ্বলজ্বল করবেন— সে সবই তাঁর ছবি সংক্রান্ত। কিন্তু মহাকাশের বাকি দিকগুলি? পৃথিবীর বহু দেশে বড় বড় মিউজ়িয়ম-গ্যালারিতে আছে তাঁর সৃষ্টিকর্ম। কাব্য, নাটক, থিয়েটার, সাহিত্য, শিল্প, আড্ডা, রাজনীতি অথবা বিশুদ্ধ জাতীয়তাবাদ—কোন দিকে তাঁর অনুপুঙ্খ দৃষ্টি, ভাবনাচিন্তা ছিল না? শুধুই শিল্প নয়, তাঁকে জানতে সে সব ঐতিহাসিক-অনৈতিহাসিক খনিই সমুজ্জ্বল কাহিনিতে পুষ্ট। অনুধ্যানে, পাঠে চিনে নিতে হবে তাকে। এখানে অতি সংক্ষেপে তারই কিছু বর্ণমালা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা মাত্র।
ঋণ: ড. প্রকাশ কেজরিওয়াল, দেবব্রত রায় (পৌত্র, যামিনী রায়), ডা. সঞ্জয় ঘোষ, সঞ্জিত বসু ও উত্তরা বসু (পুত্র ও পুত্রবধূ, অতুল বসু)