Advertisement
E-Paper

সময় ও পরিসর: মন্দ-ভালর দ্বন্দ্বে মেশা ছবি-ভাস্কর্য

অনেকেই এখানে দায়সারা কাজ করেছেন। ভাল কাজও দেখা গিয়েছে।

কালক্রম: চারুকলা গ্যালারি আয়োজিত প্রদর্শনীর কাজে মৃণাল সেন

কালক্রম: চারুকলা গ্যালারি আয়োজিত প্রদর্শনীর কাজে মৃণাল সেন

অতনু বসু

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২০ ০০:০১
Share
Save

ধীরে ধীরে অতিক্রান্ত হচ্ছে এই দুঃসময়ও। উৎসবের আতিশয্যে এ বার ভাটা। উৎসবোত্তর পর্বে এর বিপরীত অবস্থার আশঙ্কাও করছেন অনেকে। তবু সৃষ্টি অবিরত। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির উন্মেষ স্তব্ধ হতে পারে না। নিরন্তর নির্মাণ সে প্রমাণ রেখে চলেছে। বারাসত চারুকলা গ্যালারি আয়োজন করেছিল ‘সময় ও পরিসর’ নামে তাদের চতুর্থ বার্ষিক প্রদর্শনীর। ৩১জনের ৪৪টি কাজ নিয়ে প্রদর্শনীটি সম্প্রতি শেষ হল।

অনেকেই এখানে দায়সারা কাজ করেছেন। ভাল কাজও দেখা গিয়েছে। একটি ছোট কাজের জন্যও যে নিষ্ঠা, পরিশ্রম ও চিন্তাভাবনা থাকা উচিত ছিল, তা যেন বেশ কিছুটা অনুপস্থিত। সিরিয়াস কাজও ছিল, যা যথেষ্টই দৃষ্টিনন্দন। ‘টাইম অ্যান্ড স্পেস’-এর তাৎপর্য কোথায়? এই দুঃসহ সময়ের প্রতিফলন কিন্তু সে অর্থে কোনও কাজেই উপলব্ধি করা যায় না। শিল্পী নিজের মতো তাঁর স্টাইল ও টেকনিককে প্রাধান্য দিয়েছেন। সে যত দুর্বলতরই হোক বা যথেষ্ট মুনশিয়ানাসম্পন্ন হোক না কেন! যদিও বলতেই হবে, বারাসতের চারুকলা গ্যালারির উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা, বেশ কিছু প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন এবং শিল্পী-ভাস্কর-দর্শক-রুচিবানদের এক জায়গায় সংগঠিত করার এই প্রয়াসের সাধুবাদ প্রাপ্য।

বিকাশ দাস ছোট ছোট কাগজ ছিঁড়ে, অপেক্ষাকৃত বড় একটি বোর্ডের মাঝখানে মৃণাল সেনের চমৎকার প্রতিকৃতি করেছেন। কোলাজের এই কাজটিতে যথেষ্ট পেন্টিং কোয়ালিটি দৃশ্যমান। কোথাও পেন্টিং ব্রাশিংয়ের বিভ্রম জাগায়।

স্বপনকুমার রায়ের টেরাকোটা বড় মনোগ্রাহী। আধা-বর্তুল দু’পাশের হাতলসহ সোফার সমগ্র সাপোর্টটির উপরে এক নারী কাগজ পড়ছে। অনাবৃত বক্ষ-উদর। চোখ যেন কাগজে ও তা থেকে দূরে। তার হেলান দেওয়ার ভঙ্গি ও বসে থাকা সমতল পরিসরের সঙ্গে মিশে গিয়েছে অদ্ভুত ভাবে। দু’দিক থেকে দেখলে দু’রকম দৃশ্য অনুভূত হয়। নারী পৃথুলা, হাতে ধরা চায়ের কাপ, পাশে ছোট্ট টি-পট। বাঁ হাতে ধরা কাগজ। নেমে আসা দীঘল চুল ভূমি স্পর্শ করছে। কাজটি কিছুটা প্রত্নভাস্কর্য ও লোকশিল্পের আঙ্গিককে উপলব্ধি করায়।

দীপক বর্মনের কাজে দশভুজার রৈখিক বিন্যাসে দু’পাশের আটটি হাতের মুদ্রার সমন্বয়। অর্ধেক দেবীমুখ, ছোট্ট দু’টি পা, পত্রসম শরীরী অবয়ব। মহিষের দু’পাশে বাঁকানো শিঙের ফর্মেশনে দাঁড়ানো এই দেবী শিল্পীর পৌত্তলিক ভাবনাকে প্রসারিত করেছে। পটভূমির প্রায়ান্ধকার দু’পাশের ঔজ্জ্বল্যের মাঝে মৃণাল-পত্রে পল্লবিত আবহ ছবিকে প্রাঞ্জল করেছে। লৌকিক সারল্যে শুভ্র দেবী বিরাজমান।

প্রকাশ রায়ের লাল-কালোর ‘ক্রুসেড ২০২০’ রচনাটিতে ভঙ্গুর ঝলসানো রুটি ও কালো ব্রাশিংয়ের টানাপড়েনের মাঝে দেশলাই কাঠির বিন্যাস। এক অমোঘ ধ্বংস, খাদ্যাভাব ও নিয়তির কথাই যেন বিচ্ছিন্ন ভাবে আরোপিত এই আধাবিমূর্ত কাজে।

প্রদর্শনীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাজ দেবব্রত দের ব্রোঞ্জের ‘নিউজ়’। একগুচ্ছ মানুষ কৌতূহলী হয়ে দেওয়ালে আটকানো কোনও সংবাদ প্রত্যক্ষ করছে। ভাস্কর্যের সমুন্নতি গুণ, রচনাবিন্যাস, অনুপুঙ্খময়তা এবং সংগঠন যথেষ্ট চিত্তাকর্ষক। যদিও আংশিক রিলিফ, সকলেরই শরীরের পিছনের দিকটি পরিস্ফুট।

বাবলু ভৌমিকের এচিং-টি যথাযথ। ইন্দ্রজিৎ বেরার মিশ্র মাধ্যমের কাজগুলি নস্ট্যালজিয়া-নির্ভর। শিপ্রা পাল বেরার গণেশ নিয়ে গোলাকার রচনাটি অন্যান্য সরাচিত্রের তুলনায় কিছুটা গ্রামীণ আবহে আলঙ্কারিক। চৈতালী চন্দ একটু বড় ক্যানভাসে প্রচুর লোকজন-সংবলিত এক গ্রাম্য বাজারের ছবি এঁকেছেন। মিশ্র মাধ্যম, ড্রয়িং শিশুসুলভ, অ্যারেঞ্জমেন্ট মন্দ নয়। বাজারের রঙিন দৃশ্যটি জমজমাট। তবে বড্ড বেশি সচিত্রকরণের মতো, কালো রেখা, পাতলা বর্ণ। ক্যানভাসে দুই বাঘের রূপকথাসদৃশ সচিত্রকরণের মতো রচনাটিতে ডিজ়াইন, লালচে বর্ণ, দ্বৈত ভঙ্গির বর্তুল ছন্দোময় আবহ ও ফুলেল পরিমণ্ডল নিয়ে অরূপ দের কাজটি অন্য রকম।

সুশান্ত সরকারের লালচে ‘ভালবাসা’র দুই নারীর অ্যাক্রিলিক, স্বপন রায়ের দ্রুত রেখা ও অত্যল্প বর্ণ সমন্বয়ে নারী-পুরুষ, প্রদীপ মৈত্রর বুদ্ধের মুখ, তন্ময় রায়চৌধুরীর খাঁচাবদ্ধ কৃষ্ণপক্ষী, বরুণ রায়ের পদ্মমালিকা-আবৃত নারী বা দেবীরূপ যথাযথ। শম্ভু চক্রবর্তী, সৌমেন কর, শ্যামল সোম প্রমুখের কাজ মন্দ নয়। এ ছাড়াও ছিলেন বিভাবসু, সৌহার্দ্য ঘোষ, কাঞ্চন মিস্ত্রি, দীপঙ্কর বিশ্বাস প্রমুখ।

Charukala Gallery Exhibition

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}