Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মোমো, সুপের চিনা প্রাতরাশ

শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, যে কোনও মরসুম নির্বিশেষে আজও তাঁরা হাতে তৈরি খাবার নিয়ে বসেন পথের ধারে। টেরিটি বাজারের চিনা প্রাতরাশে সদ্য তৈরি মোমো, ডাম্পলিং, পাও কিংবা সুপের স্বাদ আজও জিইয়ে রেখেছে কলকাতায় চিনাদের পরম্পরাশীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, যে কোনও মরসুম নির্বিশেষে আজও তাঁরা হাতে তৈরি খাবার নিয়ে বসেন পথের ধারে। টেরিটি বাজারের চিনা প্রাতরাশে সদ্য তৈরি মোমো, ডাম্পলিং, পাও কিংবা সুপের স্বাদ আজও জিইয়ে রেখেছে কলকাতায় চিনাদের পরম্পরা

মোমো বিকিকিনি

মোমো বিকিকিনি

শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৫৬
Share: Save:

গোটা শহরের বেশির ভাগ এলাকাই তখন ঘুমঘুম চোখ মেলতে শুরু করেছে। কিন্তু এই একটা পাড়ায় ঢুকলেই চমকে উঠতে হয়। বয়সের ভারে জীর্ণ হয়েছে, জৌলুস হারিয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখনও যেন কীসের টানে ঠিক এখানে এসে ভিড় করেন ঝাঁকঝাঁক তরুণ-তরুণী। আর তাঁদের জন্যই আজও ডালা সাজিয়ে বসে চিনেপাড়ার প্রাতরাশ। টগবগিয়ে ফুটছে সুপ, মোমো থেকে উঠছে ধোঁয়া। ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে লাল লঙ্কার ঝাল চাটনি।

মধ্য কলকাতার টেরিটি বাজারে সকালবেলা জাঁকিয়ে বসে প্রাতরাশ। সপ্তাহান্তের সকালগুলোয় ভিড় জমে সবচেয়ে বেশি। চিনা পরিবারের সদস্যরা নিজেদের হাতে তৈরি খাবার নিয়ে বসেন ওই এলাকায়। মোমো, সুপ, ডাম্পলিং, ওয়ানটন, সসেজের গন্ধে ভরপুর থাকে গোটা চত্বর। ভোর ছ’টা-সাড়ে ছ’টা থেকেই রমরমিয়ে চালু হয় বিক্রিবাটা। ঘড়ির কাঁটা আটটার ঘরে পৌঁছনোর আগেই প্রায় সব শেষ! হবে না-ই বা কেন। সকালবেলার শিরশিরে হাওয়ায় সদ্য তৈরি ধোঁয়া ওঠা সুপের স্বাদই যে অতুলনীয়!

বাজারের মধ্যেই এক পাশে বসে পশরা। সপ্তাহান্তের বাজার করতে এসে ওই এলাকার চিনারা জমিয়ে দেন আড্ডা। সঙ্গে থাকে প্রাতরাশ। আর শহরের নানা প্রান্ত থেকে এসে ভিড় জমায় খাদ্যরসিক, ব্লগার, আলোকচিত্রীর দল। যাঁরা বছরের পর বছর এই প্রাতরাশের স্বাদ নিতে আসেন, তাঁদের মতে, ধীরে ধীরে কমে গিয়েছে খাবারের স্টল। এই মুহূর্তে হাতে গোনা খান বারো স্টল মিলতে পারে এই চত্বরে। কমে গিয়েছে চিনাদের নিজস্ব স্টলও। ফলে প্রশ্ন ওঠে খাবারের মান নিয়েও। এখনও বেশ কিছু বর্ষীয়ান চিনা খাবার বিক্রি করতে আসেন। আর বেশ কিছু অবাঙালি অবশ্য চিনাদের কাছ থেকে শিখে নিয়েছেন ডাম্পলিং-পাওয়ের রহস্য। তবে স্টলের সংখ্যা কমে গেলেও, পদের সংখ্যা কিন্তু নেহাত কম নয়।

ডাম্পলিং, ওয়ানটন: ফিশ, প্রন, পর্ক, চিকেন... সব ধরনের ডাম্পলিংয়েরই হদিশ মিলবে। হালকা সুপ, ঝাল সসের সঙ্গে পরিবেশন করা হয় মোমো। আবার মশলাহীন সুপে ডাম্পলিং বা ওয়ানটন ফুটিয়ে তৈরি করা হয় ওয়ানটন সুপ। স্টিমড ও ফ্রায়েড— দু’রকমেরই ডাম্পলিং বা মোমো ও ওয়ানটনের সন্ধান মিলবে। অবশ্য প্রত্যেক পদের আকার আলাদা।

পাও: বড় বড় গোল, সাদাটে রঙের পাও একদম নরম তুলতুলে। প্রাথমিক ভাবে স্বাদহীন বা সামান্য মিষ্টির স্বাদ জিভে লাগলেও কামড় দিলেই বেরিয়ে পড়বে আসল রহস্য। ভিতরে ভর্তি রয়েছে মাছ, চিকেন বা পর্কের সুস্বাদু পুর। ছোট ছোট কাগজের টুকরোর উপরে ভাপানো পাও খেতে গেলে জিভ পুড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে পাও খাওয়ার সময়ে সস ছড়িয়ে নিতে ভুলবেন না।

নুডল সুপ: মরসুমি আনাজ, সবুজ সবজিতে ভরপুর নুডল সুপের স্বাদই আলাদা।

খাই চই পান: নিরামিষ প্যানকেকে থাকে আনাজের ছোট ছোট কুচি। স্বাদ নোনতা। তবে সয়া সস ছড়িয়ে নিলে খেতে লাগে অপূর্ব।

রাইস পুডিং: চালের পুডিংয়ের ভিতরে ব্ল্যাক বিন সস দেওয়া থাকে। আর উপরে থাকে সাদা তিলের পরত। প্রাতরাশের নোনতা খাবারের মাঝে স্বাদ বদলাতে এই পুডিংয়ের স্বাদ নিতেই পারেন।

ভাজাভুজি: মোমো, ওয়ানটন ছাড়াও ভাজাভুজির তালিকায় পাবেন পর্ক রোল। ভিতরে তুলতুলে মাংসের পুর ভরা রোল বিস্কিটের গুঁড়ো মাখিয়ে লালচে করে ভাজা। আবার আলু-মাংসের পুর ভরা পটেটো পর্ক চপও পাওয়া যায় এখানে।

শ্রিম্প পুরি: দেখতে একেবারে আমাদের চিরচেনা কচুরি বা পুরির মতো। কিন্তু ভিতর থেকে উঁকি মারছে একটি করে বড় চিংড়ি। ফলে এটাকে আদ্যোপান্ত চিনা খাবার না বলে, ফিউশন বলাই বোধহয় শ্রেয়।

এ তো গেল পদের পর্ব। কমতে থাকা স্টলের সংখ্যার পাশাপাশিই চোখে পড়ে কচুরির ডালা। আবার দু’টি মোমোর স্টলের মাঝেই হয়তো কেউ বসে পড়েছেন ভেটকি-চিংড়ি বিক্রি করতে। নানা ধরনের আনাজ, মাংস, পুরি-তরকারি থেকে শুরু করে জুতো অবধি বিক্রি হয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে। এ সবের মাঝে হত গরিমার কথা ভেবে মন খারাপ হয়ে গেলে হঠাৎ করে আলাপ হয়ে যায় কোনও সুজ়ান বা জনের সঙ্গে। জন যদি চিনা পরিবারের নতুন প্রজন্মের প্রাতরাশের ব্যবসা ছেড়ে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ার দুঃখ করেন, সুজ়ান তা হলে আশাবাদী। তিনি ফিরে ফিরে আসেন। বিদেশে থাকলেও ছুটিতে এখানে এলে সপ্তাহান্তের টেরিটি বাজার তাঁর তালিকায় থাকেই। আড্ডার মাঝে প্রাতরাশ সেরে টুক করে ঢুকে পড়েন চাইনিজ় টেম্পলে, পুরনো স্মৃতি জিইয়ে নিতে!

রূম্পা দাস

ছবি: সুপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

street food Momo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE