Advertisement
E-Paper

বয়স যখন বাধা নয়

সন্তান আসুক কোলে। কিন্তু কী ভাবে? বলছেন ডা. গৌতম খাস্তগীর। শুনলেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়সন্তান আসুক কোলে। কিন্তু কী ভাবে? বলছেন ডা. গৌতম খাস্তগীর।

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০৫

মেয়ের জামাই শাশুড়িকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে ডাক্তারের চেম্বারে। শাশুড়ি সরলা সেনগুপ্ত। বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। ভদ্রমহিলা ৩২ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা! গর্ভে বেড়ে উঠছে দু-দুটি ভ্রূণ। আগে মেয়ে নিয়ে আসতেন মা’কে। কিন্তু সম্প্রতি মেয়ের একটি শিশুপুত্র জন্মানোয় জামাই নিয়ে এসেছেন শাশুড়িকে দক্ষিণ কলকাতায় ডাক্তারের চেম্বারে!

ব্যাপারটা আজব ঠিকই। কিন্তু নিখাদ সত্যি!

এর শুরুটা বছর দুয়েক আগে। ২৫ আর ২৭ বছরের দুই ছেলে-মেয়ে সরলাদেবীর। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। হঠাৎই এক দিন পেটে ব্যথা উঠে ছেলে মারা যান। জলজ্যান্ত ছেলের মৃত্যুতে দিশেহারা বাবা-মা। তার ওপর পুরো পরিবারে ওই একটিই ছেলে।

ফলে ভেঙে পড়ল গোটা পরিবার। মাস দুয়েক কাটার পর সব্বাই সরলাকে পরামর্শ দিতে থাকেন আবার সন্তানের চেষ্টা করতে। যদি-বা সেই ছেলে আবার ফিরে আসে, সেই আশায়।

ব্যাপারটা অবাস্তব। কারণ ইতিমধ্যেই তাঁর পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তা-ও হারানো সন্তান ফিরে পাওয়ার আশায় আবার ডাক্তারের কাছে যাওয়া। জানা গেল, উপায় একটাই। আইভিএফ পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া। অন্যের কাছ থেকে ডিম্বাণু ধার করে মা হতে পারেন সরলাদেবী। সেই ভাবে এগিয়ে দু’টি সন্তানের জন্ম দিতে চলেছেন তিনি।

এমনটা আজকাল আকছাড় হচ্ছে। চল্লিশের ঊর্ধে এমনকী পঞ্চাশ পেরিয়েও অনেকে আসছেন মা হতে। তাঁদের অনেকেরই মা হওয়ার কারণ বেশি বয়সে সন্তানের মৃত্যু। সে ক্ষেত্রে বাবা-মায়েরা ডিপ্রেশনে না গিয়ে আবার নতুন করে শুরু করতে চাইছেন। তা ছাড়া আজকাল ডিভোর্সের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় অনেক মহিলাই মা হতে আসছেন বেশি বয়েসে। আবার কেউ কেউ আসছেন একাকীত্ব ঘোচাতে। বছরখানেক আগে এক তরুণী তার মা’কে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি চাকরি সূত্রে বেঙ্গালুরু থাকেন। বাবা ব্যবসার কাজে ব্যস্ত। বাড়িতে মা একা। তাই মায়ের একাকীত্ব ঘোচাতে মেয়ে মা’কে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন। মায়ের আর একটি সন্তান চাই!

বয়স যখন চল্লিশের ঊর্ধ্বে

কিন্তু চল্লিশ পেরিয়ে সন্তান কি সত্যিই সম্ভব?. আসলে চল্লিশ পেরোলে প্রেগন্যান্সিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ডিম্বাণু। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এর সংখ্যা ও গুণমান কমতে থাকে। এই সময় অনেকের ওভারিতে পড়ে থাকে খারাপ ডিম্বাণু। তাই সহজে সন্তান আসতে চায় না। বা সন্তান এলেও কিছু ক্ষেত্রে তাঁদের নানা রকম শারীরিক সমস্যাও থাকতে পারে। তাই চল্লিশের ঊর্ধ্বে চাইলেন আর মা হয়ে গেলেন ব্যাপারটা খুব একটা জলভাত নয়।

তা হলে উপায়

প্রথমত, পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে হরমোন চিকিৎসার মাধ্যমে সেটি আবার শুরু করা হয়। সহজে প্রেগন্যান্সি না এলে সাহায্য নেওয়া হয় সহায়ক চিকিৎসার। এতে ডোনারের কাছ থেকে ডিম্বাণু নেওয়া হয়। সেই ডিম্বাণুর সঙ্গে শুক্রাণুর মিলন ঘটিয়ে ভ্রূণ গর্ভে রোপণ করা হয়। এতে বাবার শুক্রাণু নেওয়া হচ্ছে। আর মা-ই বাচ্চাকে গর্ভে ধারণ করছেন। মা’র রক্ত-মাংসে সন্তান বড় হওয়ায় দুজনের ভূমিকাই থাকছে। তা ছাড়া সুবিধে হল ডিম্বাণু নেওয়া হয় কমবয়সি মহিলাদের কাছ থেকে। ফলে ডিম্বাণুর গুণমান ভাল হওয়ায় গর্ভপাত ও বিকলাঙ্গ সন্তানের সম্ভাবনা কমে। দাতা ডিম্বাণুর সাহায্য নেওয়ায় যাঁরা বেশি বয়সে মা হচ্ছেন, তাঁদের যে সব সমস্যা আসতে পারে, তার অনেকগুলিই সরিয়ে রাখা যায়। তা ছাড়া এগ ডোনেশন খুব সহজ। এতে কোনও ম্যাচিং দরকার হয় না। আর ডিম্বাণু ভাল হলে অনেক সমস্যাই এড়ানো যায়।

ডিম্বাণু ধার নিলে না চাইলে

বয়সকালে ডিম্বাণুর মান খারাপ হওয়ার পেছনে রয়েছে ডিএইচএও নামের একটি হরমোনের খেল। এই হরমোনটি ডিম্বাণুকে ভাল রাখে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এই হরমোনের পরিমাণ মেয়েদের শরীরে ক্রমশ কমতে থাকে। ফলে পাল্লা দিয়ে কমে ডিম্বাণুর গুণমান। তাই এখন কৃত্রিম ভাবে ডিএইচএও ওষুধ আবিষ্কার করা হয়েছে। আগে থেকেই যে সব মেয়ে ভেবে রেখেছেন বেশি বয়েসে মা হবেন, তাঁরা হরমোন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে পারেন। এর সে রকম কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। ত্বক তৈলাক্ত, মুখে কিছু ব্রণ বা অবাঞ্ছিত লোমের সমস্যা হতে পারে। আর এই ওষুধের গুণেই মেয়েরা এখন নিজের ডিম্বাণু দিয়েই মা হতে পারেন।

ধকল সামলানোর উপায়

চল্লিশ পেরিয়ে মাতৃত্বের কথা ভাবতে গিয়ে সব মিলিয়েই অতিরিক্ত একটা ভয় কাজ করে। প্রেসার, সুগার সহ নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তবে আধুনিক চিকিৎসায় সে সবের মোকাবিলা সম্ভব। তা ছাড়া আজকাল অনেকেই স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন। নিয়ন্ত্রিত খাওয়া দাওয়া, এক্সারসাইজ, হেল্থ চেকআপ-এর জন্য পঞ্চাশেও অনেকেই সুস্থ থাকেন। তা ছাড়া বেশি বয়সে মাতৃত্বের ক্ষেত্রে সব দিক ভাল করে খতিয়ে দেখে তবেই এগোনো হয়। ব্যাপারটা এমন নয়, যে আপনি এসে চাইলেন, আর সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তার উঠেপড়ে লেগে পড়লেন। হবু মায়ের হার্ট, লাং, কিডনির কার্যকারিতা সহ অন্য শারীরিক অবস্থা খতিয়ে দেখে তবেই এগোনো হয়।

তবে

প্রশ্ন থাকছেই। চল্লিশের ঊর্ধ্বে যে মহিলা সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন, তার ভবিষ্যৎ? কারণ বাচ্চাটি কৈশোর পেরোনোর আগে মা-বাবা পঞ্চাশের কোঠায়। তা ছাড়া সন্তান বড় হওয়ার আগেই বাবা-মা বার্ধক্যে পৌঁছে যাবেন। এমনকী তাঁদের মৃত্যুও হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এমন যে হয় না, তা নয়। তা ছাড়া ঝোঁকের বশে বেশি বয়সে মা হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলেও কেউ কেউ পরে সন্তানকে বড় করতে গিয়ে নাজেহাল হয়ে পড়েন। এই যদি হয় মুদ্রার এক পিঠ, তবে উল্টো দিকও রয়েছে। এখানে মা’র বয়স বেশি হওয়ায় তিনি অনেক বেশি ম্যাচিওরড হন। এই সব মায়েদের অনেকেই খুব অভিজ্ঞ হন। তা ছাড়া বেশি বয়সে যে সব দম্পতি সন্তানের জন্য আসেন, তাঁদের অনেকেই সচ্ছল থাকেন। এ জন্য ক্লিনিকগুলোতে আগে কাউন্সেলিং করা হয়। দম্পতির মানসিক ও আর্থিক অবস্থা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি আরও এক বার মনে করিয়ে দেওয়া হয়, কী ধরনের গুরুদায়িত্ব তাঁরা নিতে চলেছেন। পাশাপাশি বাবা-মায়ের স্বাস্থ্যের দিকটিও খতিয়ে দেখা হয়। এ সব দিক বিবেচনা করে তবেই দম্পতিকে সাহায্য করা হয়, ও পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। নতুবা নয়। তবে এমন ঘটনা সবাই কি সামাজিক ভাবে মেনে নেন? না, কোনও কোনও ক্ষেত্রে অনেকে মানতে পারেন না। তবে অবস্থা দ্রুত বদলাচ্ছে।

যোগাযোগ- ৯৮৩০৬৬৬৬০৬

dr. gautam khastagir patrika health rumi gangopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy