Advertisement
E-Paper

ফিটনেসের এই নতুন মন্ত্রে সুস্থ থাকবে শরীর!

ফিটনেসের এই নতুন মন্ত্রে শরীর থাকবে সুস্থ। আবার বাড়বে কার্যক্ষমতাও

পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৫০

যাঁদের সারা দিনে নড়াচড়া কম করতে হয়, বেশির ভাগ কাজটাই চেয়ারে বসে হয়ে যায়, তাঁদের হাজারো সমস্যা। দৌড়ঝাঁপ কম, ফলে অল্পেই শরীরে মেদের পরত জমে। দুটো সিঁড়ি উঠতে না উঠতেই হাঁপ ধরে। আর খটোমটো নামের বিচিত্র সব রোগের খপ্পরে পড়ে জেরবার হয় জীবন। এরই পোশাকি নাম ‘সেডেন্টারি লাইফস্টাইল’। সোজা কথায়, ব্যবহার হয় না বলে শরীরের নানা কলকবজাগুলোয় মরচে ধরে। সেগুলোকে আবার ঝেড়েমুছে ঠিকঠাক চালানোর কাজটাই করে থাকে কেট‌্লবেল এক্সারসাইজ। এটি একই সঙ্গে স্ট্রেন্থ বাড়ায়, অন্য দিকে আমাদের কার্ডিয়ো ভাস্কুলার সিস্টেমকেও সচল রাখে।

কেট্লবেল কী?

একটি নিরেট লোহার বল, অনেকটা কামানের গোলার মতো দেখতে, যার উপরের দিকে ধরার জন্য একটি হাতল থাকে। দু’হাতে এই হাতলটিকে ধরেই বলটিকে ইচ্ছে মতো ঘোরানো যায়। কেট্লবেলের ওজন নানা রকম হতে পারে। ভারতীয় মেয়েদের ক্ষেত্রে ৭.৫ থেকে ১২.৫ কেজি গড় ওজন তোলাই যথেষ্ট। হাত পাকানোর পর ১৫ কেজি অবধিও তোলা যেতে পারে। ছেলেদের ক্ষেত্রে খুব শক্তিশালীরা ১৫ কেজি নেন। কেউ আবার ২০ কেজিও তুলতে পারেন। কেট্লবেল এক্সারসাইজে রাশিয়ানরা তুখড়। সম্ভবত এর জন্মও ওই দেশেই। তবে তুরস্কের মতো কিছু দেশেও প্রচলন আছে।

ডাম্বেল ও কেট্লবেল

কেট্লবেল এবং ডাম্বেল— দুইই ওজন নিয়ে ব্যায়াম। নতুনদের ক্ষেত্রে শেখার টেকনিকও প্রায় একই রকম। তবে ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায় জানালেন, মূল তফাতটা ভরকেন্দ্রে। কেট্লবেলকে সামনের দিকে দোলানো হয়। দোলানোর জন্য এই ওয়র্কআউট টুল-এ গ্রিপ থাকে। ফলে প্রতি মুহূর্তে ভরকেন্দ্র পরিবর্তিত হতে থাকে। ডাম্বেলকে সাধারণত এ ভাবে দোলানো হয় না। ফলে ভরকেন্দ্র স্থির থাকে। এই কারণেই ডাম্বেল নিয়ে এক্সারসাইজ সহজ। কেট্লবেল এক্সারসাইজ করার পরামর্শ সাধারণত পোড়খাওয়াদেরই দেওয়া হয়।

ডাম্বেল এক হাতে নিয়ে শারীরচর্চা করা হয়। দু’হাতের জন্য দু’টি ডাম্বেল বরাদ্দ থাকতেই পারে। কেট্লবেলে মাত্র একটি নিলেই কাজ হয়ে যায়। দু’হাতে হাতলটি ধরে চলে শারীরচর্চা। তা ছাড়া কেট্লবেল-এর ছিমছাম, স্মার্ট চেহারার জন্য একে দিব্যি ফিটনেস কিট-এ পুরে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া যায়। এই বৈশিষ্ট্যগুলির জন্যই বোধ হয় কাজ প্রায় একই রকম হলেও ডাম্বেলের চেয়ে কেট্লবেল-এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

কার্ডিয়ো-ভাস্কুলার এক্সারসাইজ

কোনও ব্যায়ামে যদি হৃদ্‌যন্ত্রের গতি বাড়ে, তা হলে তাকে বলা হবে কার্ডিয়ো এক্সারসাইজ। চিন্ময়বাবু জানাচ্ছেন, জগিং, রানিং বা শুধু হাঁটাও এই কার্ডিয়ো এক্সারসাইজের গোত্রে পড়বে। কিন্তু এতে স্ট্রেংথ বাড়ে না। স্ট্রেংথ বাড়াতে গেলে কোনও বাধার বিরুদ্ধে কাজ করতে হয়। নির্দিষ্ট পরিমাণ ওজনকে যখন আমরা দোলাচ্ছি বা মাথার উপর তুলছি, তখন পেশি বাধার বিরুদ্ধে কাজ করছে। তাই পেশির জোর বাড়ে। সমতলে হাঁটার ক্ষেত্রে কিছুটা হাঁটুর জোর বাড়লেও তা সামান্যই। কেট্লবেল এক্সারসাইজের জনপ্রিয়তা এই কারণেই যে, এই একই ব্যায়ামে একসঙ্গে কার্ডিয়ো এক্সারসাইজের উপকারিতাও আছে, আবার জোর বাড়ানোর টোটকাও আছে। ধরা যাক, কেট্লবেলে কেউ ১৪-১৫টি স্কোয়াট করছেন। স্কোয়াটের ফলে হাঁটুর জোরও বাড়ল আবার ওজন নিয়ে স্কোয়াটের জন্য কার্ডিয়ো এক্সারসাইজটাও হল।

তবে চিন্ময়বাবুর মতে, পেশির জোর বাড়ানোর সঙ্গে কার্ডিয়ো এক্সারসাইজ ভাল ভাবে করতে হলে কেট্লবেল-এর ওজন কম রাখতে হয়। তার প্রয়োগ বেশি বার করতে হয়। যেমন, কেট্লবেল সুইং জনপ্রিয় এক্সারসাইজ। কেউ যদি কেট্লবেল-এর ওজন ৬ কেজি রাখেন, তা হলে তিনি অনায়াসে ১৫-২০ বার এক্সারসাইজটি করতে পারবেন। কিন্তু ১২ কেজি নিয়ে তিনি ১৫ বার করতে পারবেন না। অন্য দিকে, পেশির জোর বাড়ানো প্রধান উদ্দেশ্য হলে, ওই ১২ কেজি ওজন দিয়েই তাঁকে ১২ বার এক্সারসাইজটি করতে বলা হবে। তার পর তিন মিনিটের বিশ্রাম।

করবেন না কারা

যাঁদের হাঁটু বা কোমরে ব্যথার সমস্যা আছে, তাঁদের কেট্লবেল এক্সারসাইজ না করাই ভাল। এতে স্কোয়াট অ্যান্ড সুইং করতে হয়। অর্থাৎ, ওজন নিয়ে অনেকটা ওঠ-বস করার কায়দায় এক্সারসাইজ করতে হয়। এতে হাঁটুর ব্যথা বাড়ে। আবার, সুইংয়ের সময় ভরকেন্দ্র পালটে যায় বলে কোমরেও চাপ পড়ে। তাই যাঁদের হাঁটু বা কোমরে ব্যথার দীর্ঘ ইতিহাস আছে, তাঁরা আগে সেই ব্যথা ভাল ভাবে সারিয়ে তবে কেট্লবেল এক্সারসাইজ-এর দিকে ঝুঁকলে ভাল। আবার সন্তান জন্মানোর পরই কেট্লবেল না করে কিছু মাস পরে করলেই ভাল। এতে হার্নিয়ার সম্ভাবনাও কমবে।

Health Tips Fitness Kettlebell
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy