কথিত আছে, চন্দন দিয়ে রূপচর্চা করার সময় মা দুর্গার গায়ের মৃত কোষ ঝরে পড়ে। সেই মৃত কোষের সঙ্গে মাটি মিশিয়ে একটি মানুষের মূর্তি গড়ে তুলে, তাতে প্রাণ দিলেন তিনি। জন্ম হল গৌরীপুত্র গণেশের। ভারতীয় সংস্কৃতি, পূজার্চনা এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় চন্দন অপরিহার্য। পাশাপাশি সেই কোন প্রাচীন কাল থেকে রূপচর্চার অন্যতম প্রধান উপাদান চন্দন। আজও বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী ও সুগন্ধি তৈরিতে চন্দন ব্যবহার করা হচ্ছে। আজও দেশে ও বিদেশে চন্দনের কদর অপরিসীম। চন্দনের গুণের শেষ নেই। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় বা উজ্জ্বলতা বাড়াতে চন্দনের জুড়ি মেলা ভার।
তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যায়
যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত, তাঁরা স্নানের আগে বা রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে গোলাপজল দিয়ে চন্দন বেটে বা গুঁড়ো চন্দন গোলাপজল দিয়ে পেস্ট করে দশ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। তার পর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কয়েক দিনের মধ্যেই ত্বকের পরিবর্তন চোখে পড়বে।
ব্রণ ও র্যাশের উপশমে
ব্রণর সমস্যার মোক্ষম দাওয়াই চন্দন। চন্দনের সঙ্গে টম্যাটো পেস্ট ত্বকের তেলতেলে ভাব কমিয়ে ব্রণ ও র্যাশ কমাতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত ব্রণর সমস্যা থাকলে, চন্দনের সঙ্গে বিউলির ডাল ও গোলাপজলের প্যাক আধঘণ্টা মুখে লাগিয়ে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ট্যান দূর করতে
রোদে পোড়া ত্বক মেরামতেও চন্দনের বিকল্প নেই। গোলাপজল, অল্প টকদই, শসার রসের সঙ্গে চন্দন মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে, ২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সাত দিনের মধ্যে পোড়া ভাব কমে ত্বকের আসল রং ফিরে আসবে। রোদে পোড়ার জ্বালা ভাবটাও উধাও হয়ে যাবে।
বলিরেখা ও ডার্ক সার্কল দূর করতে
মুখের বলিরেখা ও চোখের তলার ডার্ক সার্কল সৌন্দর্যের একটা বড় অন্তরায়। চন্দন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপাদানে ভরপুর। আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টই বয়স ধরে রাখতে বা অ্যান্টিএজিংয়ের কাজে সাহায্য করে। চোখের তলার কালো দাগ ভ্যানিশ করার জন্য চন্দনের সঙ্গে গোলাপজল মিশিয়ে মিনিট পাঁচ-সাত রাখুন। তার পর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এক সপ্তাহের মধ্যে ফলাফল দেখে আপনি নিশ্চিত খুশি হবেন। মুখে কালো দাগ দূর করার জন্য চন্দনের সঙ্গে নারকেল তেল ও লেবুর রস মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন। তবে খুব বেশি সেনসিটিভ ত্বক হলে, লেবুর রস ব্যবহার না করাই ভাল।
মেকআপের আগে
মেকআপ করার আগে এক চা-চামচ চন্দনগুঁড়োর সঙ্গে আধ চা-চামচ হলুদ গুঁড়ো, দু’ চা-চামচ মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। প্যাকটি ২০ মিনিট লাগিয়ে জল দিয়ে ভাল করে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বক উজ্জ্বল হবে।
শুষ্ক ত্বকের জন্যও চন্দন
সাধারণত দেখা যায়, যাঁদের ত্বক শুষ্ক তাঁরা চন্দন থেকে দূরে থাকেন, পাছে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যায়। কিন্তু শুষ্ক ত্বকেও চন্দন ব্যবহার করা যায়। কী ভাবে?
এক চা-চামচ চন্দনের সঙ্গে দুই টেব্ল-চামচ নারকেল তেল ভাল করে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে কুড়ি মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এ ছাড়া দুধ, মধু ও চন্দনের মিশ্রণ হাত ও পায়ের জন্য ব্যবহার করলেও ভাল ফল পাবেন।
সেনসিটিভ ত্বকের জন্য
যাঁদের ত্বক বেশ অনুভূতিপ্রবণ, তাঁরা নিশ্চিন্ত মনে চন্দনের সঙ্গে মধু মিশিয়ে স্ক্রাবারের মতো ব্যবহার করুন। মিশ্রণটি তোলার জন্য জল ব্যবহার না করে, অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
লাল চন্দনের গুণ
সাদা চন্দনের পাশাপাশি লাল চন্দনের গুণও অনেক। এটি সবচেয়ে উপকারী ব্রণ, র্যাশ ও চুলকানির সমাধানের জন্য। লাল চন্দনের সঙ্গে গোলাপজল মিশিয়ে মুখে সারা রাত লাগিয়ে রাখলে, কয়েক দিনের মধ্যেই সমস্যা গায়েব। এক চা-চামচ লাল চন্দনের সঙ্গে দু’-টেব্ল চামচ পাকা পেঁপের মিশ্রণ বা দই ও দুধের মিশ্রণ কিংবা মধু ও হলুদের মিশ্রণ মুখে ও হাতে পায়ে লাগালে, মৃত কোষ ঝরে গিয়ে ত্বকে ঔজ্জ্বল্য বাড়ে। দু’ টেব্ল-চামচ আমন্ড অয়েলের সঙ্গে চার টেব্ল-চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে তার মধ্যে দিন চার চা-চামচ লাল চন্দন গুঁড়ো। এটি প্রতিদিন ব্যবহার করুন, বিশেষ করে শীতকালে। এতে শীতের শুষ্ক আবহাওয়াতেও ত্বক থাকবে কোমল ও উজ্জ্বল।
অনেকেই গায়ের ব্যথা বা সংক্রমণ বা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য চন্দন দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খান। কিন্তু নিয়মিত চন্দন খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চন্দন কাঠ বা গুঁড়ো কেনার আগে, তা আসল কি না হাতে নিয়ে গন্ধ শুঁকে পরখ করে দেখুন। চন্দন দামি জিনিস, তাই খুব সস্তায় পাওয়া মানে তা নকল হতে পারে। চন্দনের সঙ্গে ব্যবহার করার জন্য মধু, নারকেল তেল, অলিভ অয়েলও যাতে বিশুদ্ধ হয়, তার দিকেও খেয়াল রাখুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy