Advertisement
E-Paper

মাইগ্রেন পুষে রাখবেন না, ঠিকমতো চিকিৎসা না হলে স্ট্রোকও হতে পারে

চলতে ফিরতে প্রায়ই কথাটা কানে আসে, ‘আমার মাথার এক দিকে খুব ব্যথা হচ্ছে’। কারও বা আবার হঠাৎই মাথা ঘুরে যায়। দৌড়ঝাঁপ, অফিস বাড়ি সবই চলছিল ঠিকঠাক, কিন্তু কয়েক দিন ধরে টানা ব্যথার জন্য সব কাজই ভণ্ডুল হয়ে যাচ্ছে।

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৭ ১২:৫০
মডেল: দিব্য, মেকআপ: অভিজিৎ পাল, ছবি : শুভজিৎ শীল শুটিং কো-অর্ডিনেটর: ঈপ্সিতা বসু

মডেল: দিব্য, মেকআপ: অভিজিৎ পাল, ছবি : শুভজিৎ শীল শুটিং কো-অর্ডিনেটর: ঈপ্সিতা বসু

চলতে ফিরতে প্রায়ই কথাটা কানে আসে, ‘আমার মাথার এক দিকে খুব ব্যথা হচ্ছে’। কারও বা আবার হঠাৎই মাথা ঘুরে যায়। দৌড়ঝাঁপ, অফিস বাড়ি সবই চলছিল ঠিকঠাক, কিন্তু কয়েক দিন ধরে টানা ব্যথার জন্য সব কাজই ভণ্ডুল হয়ে যাচ্ছে।

হ্যাঁ, এটাই মাইগ্রেন। কারও আবার আলো একদম সহ্য হয় না। অন্ধকারে শুয়ে থাকতে ভাল লাগে।

কেন এমন হয়?

চিকিৎসার ভাষায় বলা হয়, ‘প্রাইমারি হেডেক ডিসঅর্ডার’। এটা একবার হয়েই ইতি টানল, তা নয়। বারবার হতেই থাকে। আর দ্বিতীয়টি ধরা দেয় যাকে বলা হয় ‘হেডেক মডারেট টু সিভিয়ার’। যার ফলে কোনও কাজই করা যায় না।

মাইগ্রেন মানেই ৪ ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টা। দীর্ঘ সময় এর প্রতিক্রিয়া চলতেই থাকে। অর্থাৎ ব্যথা সইতে হবে ওই সময়সীমা পর্যন্ত। ব্যথা দেখা দিলে অনেকে ওষুধ কিনে নিজেরাই খেয়ে নিচ্ছেন। কমে গেল তো ভাল, নইলে ক্ষতি হতে পারে।

মাইগ্রেনের চরিত্র

এরা দু’ রকমের হয়। একটি হল ‘মাইগ্রেন উইথ অরা’ (AURA)। এটিই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। দ্বিতীয়টি হল ‘মাইগ্রেন উইদাউট অরা’। অর্থাৎ সরাসরি মাথাব্যথা। রোগী এসে যখনই বলেন তার সমস্যা, তখনই বোঝার চেষ্টা করা হয়, মাইগ্রেন সেই রোগীর কোন পর্যায়ে রয়েছে। কারও চোখের সামনে আলো ঝিকমিক করে। কারও বা হঠাৎ চোখে সর্ষেফুল দেখা দেয়। মানে চোখের সামনে ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইটে আবছা রেখা ঘুরে বেড়ানো। এগুলি বেশির ভাগ রোগীরই হয়ে থাকে। মনে রাখবেন, এগুলি মাইগ্রেনের কমন লক্ষণ। পরবর্তী পর্যায়ে ব্যথার পর্ব শুরু। ব্যথা সাধারণত এক দিকে হয়। পরে ব্যথা হয় পুরো মাথা জুড়ে।

এর সঙ্গে বমি-বমি ভাব থাকে। বমি হয়ে গেলে হালকা বোধ হয়। তখন কথা বলতেও ইচ্ছে করে না।

চিকিৎসা

এর চিকিৎসা দু’ ধরনের পদ্ধতিতে হয়। তবে প্রচলিত পদ্ধতি ‘রেকারেন্ট হেডেক’। কারও যদি ওই সমস্যা মাসে একবার বা দু’বার হয়, তাঁকে সতর্ক থাকতে হবে। ওষুধও খেতে হতে পারে। যাঁরা শুরু থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলেন তাঁদের পরে আর কোনও সমস্যা থাকে না।

মাইগ্রেন পুষে রাখলে পরবর্তী কালে ওষুধে ঠিক মতো কাজ হতে চায় না। দেরি হওয়ার কারণে যে কোনও মানুষের স্টমাক বা খাদ্যনালীতে তার প্রভাব পড়তে শুরু করে। তার ফলে ওষুধ খেলেও বমি হতে পারে। মাইগ্রেনের প্রভাবে স্টমাকও ঠিকঠাক কাজ করতে চায় না। সেই সব ক্ষেত্রে কিছু ওষুধ আছে যা নাকের মাধ্যমে দেওয়া হয়।

যাঁদের মাইগ্রেন সমস্যা প্রায়ই হচ্ছে, মাসে তিন থেকে চার বারও হচ্ছে, তখন দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার কথা ভাবতে হয়। টানা ৬ মাস থেকে প্রায় এক বছর।

মাইগ্রেন এড়াতে

• অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম এড়িয়ে চলুন

• ব্যথা শুরু হলেই অন্ধকার ঘরে বেশ কিছুক্ষণ শুয়ে থাকুন

• ব্যথার সময়ে কোনও কিছু খাবেন না। খেলেও খুব অল্প পরিমাণে।

• চকোলেট এড়িয়ে চলুন।

• সাধারণ খাবার বেশি খান। যেমন ভাত-ডাল-শাকসবজি ও মাছ।

• চাইনিজ ফুড খেতে পারেন কিন্তু আজিনা মোটো একদম নয়।

• ইচ্ছে মতো ওষুধ কিনে খাওয়া পরবর্তীতে বড় বিপদ ডেকে আনে।

• অ্যালকোহল পুরোপুরি বাতিল।

মাইগ্রেনের পরিণতি

অনেকেই জানেন না, চিকিৎসা ঠিক মতো না হলে মাইগ্রেন থেকে স্ট্রোকও হতে পারে। যাকে বলা হয় হেমি-প্যারালিসিস। যে কোনও সুস্থ মানুষেরও দু’ চোখের মাসল নষ্ট হতে পারে। মাইগ্রেন পুষে রাখলে ভার্টিগোরও সূত্রপাত হতে পারে। তখন বমির সঙ্গেই মাথা ঘোরাও চলতে থাকে। আরও একটি বড় কারণ, ওবেসিটি। ওজন না কমালে মাইগ্রেন ক্রনিক পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

মাইগ্রেন কি বংশগত?

বংশগত তো বটেই। বিশেষ করে যে সমস্যা ‘মাইগ্রেন উইথ অরা’। অর্থাৎ যাঁদের শুধু মাথা ঘোরাই সমস্যা। সঙ্গে অন্য লক্ষণও থাকে। যেমন হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে ওঠা। আবার কখনও ডিপ্রেশনে ভোগা। আবার বিপরীত ছবিও দেখা যায়। রোগীর হঠাৎ ভাল লাগার বোধ আসে। নানা রকম খাবারও খেতে ইচ্ছে করে। সবারই যে বংশগত কারণে হয়, তা নয়। কারও কারও পরিবেশগত কারণেও মাইগ্রেন সমস্যা হয়। কারও খুব গরমে মাথাযন্ত্রণা শুরু হয়, আবার খুব ঠান্ডাতেও হয়।

মহিলাদের সমস্যাই বেশি

পুরুষদের চেয়ে মহিলারাই এই সমস্যায় বেশি ভোগেন। তার কারণ একটাই। মহিলারা মাইগ্রেন সমস্যা শুরু থেকেই আড়াল করে রাখেন। এ ছাড়া হরমোনাল কারণেও মহিলাদের বেশি হয়। পিরিয়ড্‌স শুরুর সময় প্রথম মাইগ্রেনের সূত্রপাত। তবে মেনোপজের সময় সেই সমস্যা থাকে না। মাঝখানে শুধু পিরিয়ড্‌সের সময়েই কারও কারও এই লক্ষণ দেখা দেয়। প্রেগন্যান্সির প্রথম পর্যায়ে মাইগ্রেনের প্রভাব থাকলেও পরে অবশ্য তা থাকে না।

অনুলিখন:বিপ্লবকুমার ঘোষ

তথ্য: ডা. তৃষিত রায়

মডেল: দিব্য, মেকআপ: অভিজিৎ পাল, ছবি : শুভজিৎ শীল শুটিং কো-অর্ডিনেটর: ঈপ্সিতা বসু

Migraine Health Tips
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy