Advertisement
E-Paper

‘দাগ’ না রেখেও রইব যে সুন্দরী

সমস্যাও মিটবে অথচ দাগহীন নিখুঁত পেট। কী ভাবে? বলছেন ডা. গৌতম খাস্তগীরমধ্যমগ্রামের শুভ্রা প্রায় তিন বছর ধরে অতিরিক্ত রক্তপাত ও তলপেটের ব্যথায় ভুগছিলেন। বাইরের কোনও কাজই ঠিকমতো হচ্ছিল না। বহু চিকিৎসকের কাছেই তিনি ঘুরেছেন, সবারই এক কথা, পেট কেটে জরায়ু বাদ দিতে হবে।

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৬ ০৮:০৪

মধ্যমগ্রামের শুভ্রা প্রায় তিন বছর ধরে অতিরিক্ত রক্তপাত ও তলপেটের ব্যথায় ভুগছিলেন। বাইরের কোনও কাজই ঠিকমতো হচ্ছিল না। বহু চিকিৎসকের কাছেই তিনি ঘুরেছেন, সবারই এক কথা, পেট কেটে জরায়ু বাদ দিতে হবে। অথচ নৃত্যশিল্পী শুভ্রার কাছে অপারেশন মানেই ছিল শুধু আতঙ্ক। কিন্তু তিনি প্রথম জানলেন যে পেট না কেটে, জরায়ু বাদ না দিয়েও কেবলমাত্র টিউমারটি সরিয়ে দেওয়া সম্ভব। ল্যাপারোস্কোপিক ‘কি-হোল’ সার্জারির মাধ্যমে। নারীত্ব ও সৌন্দর্য বজায় রাখা ছিল তাঁর জীবনের মূল লক্ষ্য। এখন তিনি আগের জীবনে ফিরে গেছেন। পেটে অপারেশনের বিশ্রী দাগ ঢাকবার দুশ্চিন্তাও কেটে গেছে। তা ছাড়া এক সন্তানের জননীর ভবিষ্যতে আবার মা হওয়ারও কোনও বাধা রইল না।

কুড়িতেই বুড়ি নয়

অপারেশনের কথা শুনলেই অনেকে ভাবতেন তাঁরা কুড়িতেই বুড়ি হয়ে যাবেন। অপারেশন মানেই দীর্ঘদিন হাসপাতালে শুয়ে থাকা। ব্যথায় ছটফট করা। গাদা গাদা অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া। কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘ গর-হাজিরা। মেয়েরা যেহেতু সংসারের হাল ধরেন, তাঁদের অবর্তমানে বাড়ির দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং সন্তানদের দেখাশোনা লাটে ওঠা। শুভ্রার মতো অনেকেই এখন সেই সব দুশ্চিন্তার পথে পা বাড়াতে চান না। জীবনের ছন্দ ফিরিয়ে দেওয়া বা নারীত্ব বজায় রাখাই নয়, আজকের আধুনিক প্রজন্মের নারীজীবনের সংসার এবং কাজের সঙ্গে আপস না করে এন্ডোস্কোপিক সার্জারি বেছে নিচ্ছেন।

এন্ডোস্কোপি সার্জারির অন্দরমহল

এন্ডোস্কোপি পদ্ধতিতে আমরা শরীরের বিভিন্ন জায়গার ছবি দেখে সেখানকার রোগ সারাতে পারি। পেটের মধ্যেকার সমস্যার সমাধানে লাগে ল্যাপারোস্কোপি। যার মানে খুব বড় করে পেট কাটার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে। এখন তলপেটে মেয়েদের জননাঙ্গের বিভিন্ন সমস্যা সারানোই বর্তমানে সুপ্রজনন বিশেষজ্ঞদের লক্ষ্য। নাভির মধ্যে ছোট্ট একটা ফুটো করে একটি ক্যামেরা পেটের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। দরকার মতো ছবিটিকে ৪ থেকে ৪০ গুণ বড় করে দেখা যায়। ফলে ছোটখাটো সমস্যাও চোখ এড়াতে পারে না। ভাল করে দেখার জন্য প্রয়োজন গ্যাস দিয়ে পেটটাকে ফুলিয়ে রাখা। তার সঙ্গে ভিতরটাকে আলোকিত করা হয় কোল্ড লাইট-এর মাধ্যমে। পাশ থেকে আরও কয়েকটি ফুটোর মাধ্যমে যন্ত্র প্রবেশ করিয়ে অপারেশন করাও সম্ভব। এ যেন দরজা না খুলেও চাবির ফুটো দিয়ে ঘরে ঢুকে পরা। যার জন্য এই পদ্ধতির নাম হয়েছে ‘কি হোল’ সার্জারি।

নারীত্ব বাঁচিয়ে চিকিৎসা

যে কোনও অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বড় করে দেখার ফলে খুব সূক্ষ্মভাবে অপারেশন করা সম্ভব। এ ছাড়া লেজারের সাহায্যে নিখুঁত ভাবে আশেপাশের কোনও অঙ্গের ক্ষতি না করে সমস্যাটির নিরাময় করা যায়। ফলে রক্তপাত হয় না বললেই চলে। ব্যথা ও সংক্রমণের সম্ভাবনা খুবই কম। জননাঙ্গের কার্যকারিতায় কোনও ক্ষতি না হওয়ায় সন্তানধারণের সম্ভাবনাও অটুট থাকে। পেট কেটে অপারেশনের সময় বাইরের পরিবেশের সংস্পর্শে এসে ভেতরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলি শুকিয়ে যায়। ফলে সংক্রমণের সমস্যা বাড়ে এবং পরবর্তী কালে সব কিছু জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই সমস্যাকে বলা হয় পোস্ট অপারেটিভ অ্যাডহেশন, যা ভবিষ্যতে তলপেটে ব্যথা এবং সন্তানধারণের অক্ষমতার কারণ। ল্যাপারোস্পোকিতে তা এড়ানো সম্ভব।

অ্যাকশন রিপ্লে

এই পদ্ধতি হল, অনেকটা মাঠে না গিয়ে ঘরে বসে টেলিভিশনে খেলা দেখার মতো। যে কোনও ছোট জিনিসকেও অনেক বড় করে দেখা সম্ভব। আবার ছবি রেকর্ড করা থাকে বলে প্রয়োজনে বারবার রিপ্লে করে দেখা যায়। অর্থাৎ ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারিতে কোনও ধাপ ঠিকঠাক হল কি না আবার তা দেখা সম্ভব। অপারেশনের আগে এবং শেষে সমস্যার পরিস্থিতি রেকর্ড করেও রাখা যায়। এই ছবিগুলি রোগী ও তাঁর আত্মীয়রা রেখে দিতে পারেন ভবিষ্যতে চিকিৎসার প্রয়োজনীয়।

বিউটি স্কিন ডিপ

নারীর জীবনে সৌন্দর্য খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। ঠিক যেমন শুভ্রা অপারেশনের নামে পিছিয়ে গেছিলেন পেট কাটা দাগের ভয়ে। অনেকেই চান না সার্জারির ক্ষতজনিত ব্যথা সারাজীবন বয়ে বেড়াতে। পেট কাটার পরে দুই থেকে তিন মাস শুয়ে থাকা অথবা পেটের ব্যথায় কাজকর্ম বন্ধ রাখা কেউই মানতে চান না। আমরা ভেতরে যেমনই অপারেশন করি না কেন রোগী এবং বাড়ির লোক দেখেন বাইরে সেলাইয়ের দাগটা। অর্থাৎ অপারেশন যেন কাটা দাগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি যেমন বাইরের সৌন্দর্য ধরে রাখে, ঠিক একই ভাবে ভিতরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে অটুট রাখে, সংক্রমণ এবং অ্যাডহেশন থেকে বাঁচিয়ে। যে সব মহিলা অবিবাহিতা, সদ্যবিবাহিতা অথবা যাঁদের একটি মাত্র সন্তান আছে তাঁদের পক্ষে যে কোনও কারণেই জননাঙ্গ বাদ দিয়ে দেওয়া কল্পনার অতীত। তাই হঠাৎ করে যে কোনও জননাঙ্গ বাদ দিলে মানসিক অবসাদ নেমে আসে। পাশাপাশি নারীর জননাঙ্গগুলি থেকে এমন কিছু হরমোন বের হয় যা হার্ট, ব্রেন ও হাড় সুস্থ রাখার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনী।

অর্থনৈতিক বৈষম্য নেই

এখনও অনেকের ধারণা ল্যাপারোস্কোপি হচ্ছে ধনী ও সেলিব্রিটিদের বিলাসিতা মাত্র। হোক না পেটে কাটা দাগ, ভারতীয় নারীদের বেশভূষায় তা তো ঢাকাই থাকে। আর যাঁদের বাইরে বেরোতে হয় না তাঁরা না হয় কিছু সময় বিশ্রামেই থাকলেন। সারা পৃথিবীতে ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারিতে বেশি উপকৃত হয়েছেন গরিব মানুষেরাই। ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারির সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকার গরিব বড়লোক সবারই সমান।

( পরবর্তী সংখ্যায় পেট না কেটেও কী ভাবে বন্ধ্যত্ব সমস্যা মেটানো যায়।)

glamour stretchmarks
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy