Advertisement
E-Paper

এক পুরনো বাড়িতে

ইন্টিরিয়ারের মূল কথা স্পেস। তা যেন ব্যকরণসম্মত ভাবে মনে রেখেছে দেবিকা দত্ত ডানকানের পরিবার। তাই বহু ধরনের জিনিসেও স্টাফি নয় তাঁদের আবাস। সব কিছু এত সুন্দর ভাবে পরম্পরাকে ধরে রেখেছে যে, দেখে বিস্মিত হতে হয়ইন্টিরিয়ারের মূল কথা স্পেস। তা যেন ব্যকরণসম্মত ভাবে মনে রেখেছে দেবিকা দত্ত ডানকানের পরিবার। তাই বহু ধরনের জিনিসেও স্টাফি নয় তাঁদের আবাস। সব কিছু এত সুন্দর ভাবে পরম্পরাকে ধরে রেখেছে যে, দেখে বিস্মিত হতে হয়

পারমিতা সাহা

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৭ ০৯:০০

জৈষ্ঠ্যের পিচগলা এক দুপুরে পৌঁছেছিলাম ৬ নম্বর বিশপ লেফ্রয় রোডে। স্বাধীনতা-পূর্ব ভারতের স্বাক্ষর সে বাড়ির গায়ে। তার উলটো পারে সগৌরব দাঁড়িয়ে সেই বিখ্যাত বাড়ি। যাঁর নামে এই রাস্তাটিও আপামর বাঙালির কাছে পরিচিত। সে দিক থেকে চোখ সরিয়ে, এ বাড়ির চওড়া লোহার গেট খুলে ভিতরে ঢুকতেই সূর্যের মুখ যেন একটু ভার হল। আমাদের জন্য বাইরেই অপেক্ষা করছিলেন কর্ত্রী দেবিকা দত্ত ডানকান। বয়স ষাটের সিঁড়ি ভাঙছে। কিন্তু ব্যক্তিত্বের স্নিগ্ধতা তাঁর সর্বাঙ্গে।

ব্রিটিশ স্থাপত্যের নিদর্শন বহন করা পাঁচতলা কোলাপসিব্‌ল গেট ঠেলে ঢুকতে-ঢুকতে তিনি বললেন, আমাদের বাড়িতে এসি নেই। চল্লিশ ডিগ্রি পার করা গরম সাবেক স্থাপত্যের মুনশিয়ানাকে কাবু করতে পারেনি। এ বাড়ির গ্রাউন্ডফ্লোর তাঁদের। ফ্ল্যাটে ঢোকার মুখেই রয়েছে লিভার টানা লিফ্‌ট, গত শতকের গরিমা, এ বাড়িতে বহাল তবিয়তে চলমান। ভিতরে পা দিতেই টেম্পারেচারের তফাতটা বুঝলাম। কড়ি-বরগার সিলিং, তাতে ঝুলন্ত ফ্যান, লাল মেঝে, দেরাজ, ড্রেসিংটেব্‌ল, চেয়ার, সাবেকি আরামকেদারা, ল্যাম্পশেড। পুরো বাড়িতেই শতাব্দী-পুরনো চার্ম তুলোয় মুড়ে রাখা।

সময়ের পলি পড়লেও যত্নে-আদরে রাখা হয়েছে পুরনো ফার্নিচার

ঢুকতেই ড্রয়িং কাম ডাইনিং রুম। আয়তনে সে ঘরে দু’ কামরার ফ্ল্যাট ঢুকে যাবে। তার শেষ প্রান্তে দেবিকার নিজস্ব একফালি জায়গা। তাঁর লেখালেখি এবং ট্যুরিজম ব্যবসার কাজ সারেন। সেখানে নিয়ে বসালেন আমাদের। ‘‘বাইরে ঝড় উঠেছে বুঝতে পারছেন?’’ নাহ, সত্যিই তো বুঝতে পারিনি। এ বাড়ি এমনিতেই এত ঠান্ডা। প্রকাণ্ড জানালা খুলে দিতেই ঝড়ের আগমন বুঝতে পারলাম। এবং সময় বুঝেই লোডশেডিং! এ রকম উপলব্ধি সচরাচর হয় না। তাকে অনুভবে ধরে রাখতে চাইছিলাম। এহেন পুরনো বাড়িতে, ঝড়ের সন্ধেয় লোডশেডিংয়ের অন্ধকারে বসে, তারিণীখুড়োর গা-ছমছমে ভূতের গল্প...

কিন্তু আমার সে আমেজকে খানখান করে বিদ্যুতের সদর্প পদার্পণ।

বিশপ লেফ্রয় রোডের এই ফ্ল্যাট দেবিকাদেবীর বাবা লিজে নিয়েছিলেন এক ব্রিটিশ দম্পতির কাছ থেকে, যা পৈতৃক সূত্রে পেয়েছেন তিনি। দেবিকাদেবীর বাবা রমেশ দত্তের পরিবার পঞ্জাবি এবং লাহৌরের বাসিন্দা। তাঁর ঠাকুরদা প্রথম কলকাতায় আসেন। দেবিকার মা দীপালি রায় বাংলাদেশের দিঘাপতিয়া রাজপরিবারের মেয়ে। দেবিকাও বিয়ে করেছিলেন এক স্কটিশ ভদ্রলোককে। তাঁর সঙ্গে আঠারো বছর কাটিয়েছেন বিভিন্ন চা-বাগানে। যদিও তার পর তাঁদের ডিভোর্স হয়ে যায়। একমাত্র মেয়ে দিয়ার বিয়ে হয়েছে জিউয়িশ পরিবারে। ট্রুলি ইন্টারন্যাশনাল ফ্যামিলি!

তার ছাপ বাড়ির সর্বাঙ্গে। কাঠের অসাধারণ আসবাব বেশির ভাগই বার্মাটিকের। কিছু কিছু ইউরোপিয়ান মেহগনির। দেওয়ালে বাঁধানো ছবির সঙ্গে চোখে পড়ল অদ্ভুত ক’টি জিনিস। স্ক্যান্ডিনেভিয়া থেকে পাঠানো পোস্টকার্ড, প্রাচীন ন্যাভিগেশন ম্যাপ, লিথোগ্রাফ, জাপানি হ্যান্ডপ্রিন্টেড ব্রেসলেট, এমনকী এক সিন্ধুঘোটকের কঙ্কাল পর্যন্ত! ইন্টিরিয়ারে এহেন বিচিত্র জিনিসের সমাহার আকর্ষক বই কী!

বিরাট ফুলদানি, রুপোর পেয়ালা-পিরিচের সেট, কাঠের টেব্‌ল, ড্রেসিংটেব্‌ল অনেক কিছুই দেবিকাদেবী পেয়েছেন মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে।

এর সঙ্গে অন্দরের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে পরিচর্যা। কোথাও ধুলোর মলিনতা নেই। সেই স্নিগ্ধ মন নিয়ে বেরোলাম বিশপ লেফ্রয় রোড থেকে। বাইরেও তখন বইছে বৃষ্টির পরের ঠান্ডা মিঠে বাতাস।

ছবি: নীলোৎপল দাস

Interior Design Old House
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy