রূপকল্প: ডানা ঘোষের একক প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম। —নিজস্ব চিত্র।
চিত্রশিল্পী ডানা ঘোষ সৃষ্টির প্রতি আদিমের বন্দনায় তাঁর ২৯টি ছবি নিয়ে উপস্থিত ছিলেন চারুবাসনার সুনয়নী চিত্রশালায়। ‘দ্য প্রাইমর্ডিয়াল’ নামে এই প্রদর্শনী সেখানে আয়োজিত হয়েছিল সম্প্রতি।
বৃক্ষরাজির উপাখ্যান তুলে ধরার প্রক্রিয়ায় অ্যাবস্ট্রাক্ট ফর্ম এলেও ডানার আঁকা ছবিতে এমন কিছু উপাদান এসেছে, যা রূপক-আশ্রিত হওয়ার ফলে, ছবি দেখায় কোনও বিভ্রম ঘটে না। বরং শিল্পীর রেখাশ্রিত আকৃতি বয়ে যাওয়ার মধ্যে পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণ উঠে আসে।
শিল্পী ডানার এটি দ্বিতীয় একক প্রদর্শনী। গাছের প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে তাঁর কাজ করার মূলে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প ‘বলাই’-এর মূল ভাবনাটি— ‘পঙ্কস্তরের মধ্যে বিশ্বের ভাবী অরণ্য নিজের জন্মের প্রথম ক্রন্দন উঠিয়েছে। চারিপাশে পাথর, পাঁক আর জল। জীবনের কলরব নেই। কালের পথে সমস্ত জীবের অগ্রগামী গাছ, সূর্যের দিকে জোড় হাত তুলে বলেছে, আমি চিরপথিক, আমি বাঁচব। আমি থাকব।’ শিল্পীর মতে এই যে অঙ্গীকার, আদিম সময় থেকে ভাবীকালের স্বপ্ন দেখছে। এই ভাবনা থেকে শিল্পীর কাজে বিভিন্ন অ্যাঙ্গলে উঠে এসেছে মানুষের অংশ, গাছের পাতা, ডাল নিয়ে বেড়ে ওঠার কাহিনি। অ্যামিবা, ছত্রাক, শ্যাওলা সব মিলিত ভাবে যেন মানবসমাজকে রক্ষা করছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও গাছ বেঁচে থাকে। নিজের জন্য ক্লোরোফিল তৈরি করে।
ক্যানভাসে করা প্রতিটি শিকড়ের ফর্ম গড়ে উঠেছে শুধুমাত্র পেন অ্যান্ড ইঙ্কের আলঙ্কারিক কারিগরিতে। এই আলঙ্কারিক ছন্দের মধ্যে কখনও কখনও দেখা যায় অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অভ্যন্তরীণ চলাচল। একটি ছবিতে পাখির ফর্ম আবার কিছুটা সাপের মতো। সাপোর্ট হিসেবে সামান্য ইয়েলো অকারের কোড রয়েছে। কিছু ছবির ফর্মেশনে কখনও ব্যাং, পাখি, শামুক, মথ, আবার কোথাও ফুল-সহ স্থাবর জঙ্গল নিয়ে একটি পূর্ণ সমাজ। শিল্পীর এই সিরিজ়ে বিনাশের কথা নেই বললেই চলে। তবে একটি ছবিতে গাছের কাটা অংশ ঘিরে যে ফর্ম দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হতে পারে, গিরগিটি চোখ মেলে রয়েছে। এ দিকে পাতাঝরা বৃক্ষের কাণ্ড, ডাল ও শাখাপ্রশাখার সার্বিক আকারে এক-একটি জীবের প্রতীক দেখা যায়।
নিঃসন্দেহে বিষয় নির্বাচন খুবই ভাল। কোনও আর্ট কলেজের ডিগ্রিধারী না হলেও, শুভাপ্রসন্নর কলেজ অব ভিসুয়াল আর্টে ভর্তি হওয়া এবং পারিপার্শ্বিক ছবি আঁকার কর্মযজ্ঞ সদ্য শিক্ষার্থী ডানাকে আরও প্রেরণা জুগিয়েছিল। তার পর আর থেমে থাকেননি শিল্পী। ছবির গাঠনিক সৌন্দর্য ও ড্রয়িং নিয়ে ডানা ঘোষের পরিচ্ছন্ন কাজ সম্পর্কে কোনও দ্বিমত নেই। তবে শূন্য সারফেসে শুধু অবজেক্টকে ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে রেখার বুননকে অনেক সময় নকশা বলে মনে হতে পারে বা অপার্থিব মনে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ছবির প্রয়োজন বুঝে রং বা কালির সামান্য ব্যবহার বা মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব অনুসরণ করতে পারলে বিষয়ের ওজন ও মেজাজের গুরুত্ব হয়তো আরও বাড়তে পারত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy