E-Paper

নাটকের চলনে নিরন্তর খেলা করে জোয়ার-ভাটা

নাটকে বেশ কিছু দৃশ্যের নেপথ্যে বহুশ্রুত গান বা সঙ্গীতের ব্যবহার দৃশ্যগুলিকে কাব্যে উত্তীর্ণ করেছে।

সৌভিক গুহসরকার

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২৫ ০৭:৫৮
নাটকের একটি দৃশ্য।

নাটকের একটি দৃশ্য।

সম্প্রতি অ্যাকাডেমি প্রেক্ষাগৃহে মঞ্চস্থ হল ইচ্ছেমতো নাট্যগোষ্ঠীর ‘যে জানলাগুলোর আকাশ ছিল’। রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা দু’টি প্রবন্ধকে আশ্রয় করে গড়ে উঠেছে নাটকটি। নাট্যরূপ দিয়েছেন নির্দেশক সৌরভ পালোধী। তাঁকে সাহায্য করেছেন দীপ ভট্টাচার্য, দেবীপ্রসাদ দত্ত ও সম্বিৎ রায়। প্রথমেই এই নাট্যরূপটির প্রশংসা করতে হয়। দৃশ্য-পরম্পরা ও সংলাপের প্রয়োগ নাটকটিকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে। চোখের উপর দিয়ে দৃশ্যের পর দৃশ্য সহজ ও স্বাভাবিক গতিতে প্রবাহিত হয়েছে। লেখায় বারবার জলের অনুষঙ্গ আসার কারণ হল নাটকটির ‘স্ট্রাকচারাল ফ্লুয়িডিটি’। নাটকটি আলগা ভাবে হাসি আর অশ্রুজলে বোনা, তাই তার চলনেও নিরন্তর খেলা করেছে জোয়ার-ভাঁটা।

নাটক শুরু হয় ২০০৭ সালে। তার পর পিছিয়ে যায় ১৯৯৮ সালে। আবার ফিরে আসে ২০১৭-য়। মোটামুটি কুড়ি বছর সময়ের মধ্যেই আবর্তিত হয়েছে এই নাটকের কাহিনি। উঠে এসেছে টুবাই, সোমা, বুবান, তাতিন— চার বন্ধুর গল্প। টুবাই আর সোমা সমবয়সি। তাদের মধ্যে চাপা প্রেম রয়েছে। দু’জনেই উচ্চমাধ্যমিক দেবে। ও দিকে বুবান মনে মনে সোমার প্রেমে অন্ধ, যদিও সে সোমার চেয়ে চার বছরের ছোট। তাতিনও প্রায় বুবানের বয়সি। এরা থাকে একটা কলোনিতে। নাটকটিতে উঠে এসেছে নব্বইয়ের শেষের দিকে কলোনি জীবনের এক প্রাণবন্ত চিত্র। ‘কলোনি, কলোনি, আগে কেন বলোনি’— এই কলোনি জীবনের আনন্দ-দুঃখ, আশা-হতাশা, হাসি-কান্না, রাজনীতি-প্রেম, সব উঠে এসেছে শিল্পিত ভঙ্গিমায়। বেশ কিছু দৃশ্য মনে ছাপ রেখে যায়। যেমন, তাতিনের সামনে তার বাবা-মায়ের ঝগড়ার দৃশ্য বা বুবান মারা যাওয়ার পরে টুবাইয়ের কাঁদতে না-পারার উন্মত্ততার মুহূর্ত। মনে দাগ কেটে যায় অপুর মৃত্যুর দৃশ্য।

এই নাটকে বেশ কিছু দৃশ্যের নেপথ্যে বহুশ্রুত গান বা সঙ্গীতের ব্যবহার দৃশ্যগুলিকে কাব্যে উত্তীর্ণ করেছে। যেমন দেবব্রত বিশ্বাসের গলায় ‘গোধূলিগগনে মেঘে’ বা কিশোরকুমার ও আশা ভোঁসলের গলায় ‘ইয়ে রাতে ইয়ে মৌসম’ বা ‘পথের পাঁচালী’র থিম মিউজ়িক। নাটকে ব্যবহৃত ‘স্লো-মোশন’ দৃশ্যের ব্যবহারও অসাধারণ। এ ছাড়া একই চরিত্রের কৈশোরকালের সঙ্গে তাদের যৌবনকালকে যুক্ত করার পদ্ধতিটি অবশ্যই তারিফযোগ্য।

টুবাইয়ের ভূমিকায় রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায় দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন। তাঁর অভিনয়ের মধ্যে একটা ঢিলেঢালা সহজ ভাব রয়েছে। তিনি যে অভিনয় করছেন, তা আলাদা ভাবে বোঝা যায় না। তিনি যেন টুবাই চরিত্রটাই হয়ে উঠেছেন। পাশাপাশি সোমার ভূমিকায় তূর্ণা দাশ মুগ্ধ করেছেন। তার উচ্ছলতা, আনন্দ, হতাশা, চমৎকার তুলে ধরেছেন তূর্ণা। বুবানের ভূমিকায় বুদ্ধদেব দাস মন ছুঁয়ে গিয়েছেন। যারা ভালবাসে, কিন্তু বলতে পারে না— তেমন একজন ছেলের হৃদয়কে তিনি বড় নরম করে তুলে ধরেছেন। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে তাঁর অভিনয় চমৎকৃত করে। তাতিনের চরিত্রে কৃষ্ণেন্দু সাহা বিস্মিত করেছেন, এতটাই স্বাভাবিক তাঁর অভিনয়। অবাক করেছেন বুবানের দাদুর চরিত্রে বিমল চক্রবর্তী। বুবানের বাবা আদিত্য নন্দীর সঙ্গে তাঁর শ্বশুর-জামাইয়ের রসায়ন দর্শক খুব উপভোগ করেছেন। তাতিনের মায়ের ভূমিকায় আমাইরা মুসকান দারুণ। বাকিরা সকলেই তাঁদের অভিনয়ের মাধ্যমে নাটকটির মূল ভাব তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন।

দেবদীপ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গীত নাটকটিকে নিজস্ব একটা সুর প্রদান করেছে। সৌরভ পালোধীর মঞ্চ ভাবনা নতুন ধারার। মঞ্চে টেলিভিশনের ব্যবহার খুব ভাল লেগেছে। সৌরভ পালোধী ও আমাইরা মুসকানের পোশাক পরিকল্পনা যথাযথ। মানসী সাহুর নৃত্য পরিকল্পনা নাটকে গতি এনেছে। পরিশেষে এ কথা বলতেই হবে, ‘যে জানলাগুলোর আকাশ ছিল’ নাটককে নিজস্ব কল্পনাপ্রতিভা দিয়ে নির্দেশক সৌরভ পালোধী ‘স্টাইলাইজ়’ করতে সক্ষম হয়েছেন। নিজস্ব মঞ্চভাষার স্ফূরণ অনুভব করা যায় তাঁর কাজে, যা প্রাণবন্ত ও কাব্যময়।

অনুষ্ঠান

নৃত্য পরিবেশনায় শিল্পীরা

নৃত্য পরিবেশনায় শিল্পীরা

  • সম্প্রতি গিরিশ মঞ্চে অনুষ্ঠিত হল ‘নৃত্যাঙ্গনা’-র ৩০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান। পদ্মবিভূষণ গুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের সুযোগ্যা ছাত্রী মায়া ভট্টাচার্যের পরিচালনায় ‘নৃত্যাঙ্গনা’র ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশনায় ওই দিন ওড়িশি নৃত্যের বিভিন্ন উপস্থাপনা দর্শকদের মন ভরিয়ে তোলে। এই নৃত্যসন্ধ্যায় উপস্থিত ছিলেন নৃত্যগুরু অরুন্ধতী রায়, নৃত্যসমালোচক তপতী চৌধুরী, বাঁশরিবাদক বিশ্বজিৎ সরকার, অভিনেতা পুণ্যদর্শন গুপ্ত সহ আরও বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ। ‘নৃত্যাঙ্গনা’র শিল্পীদের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন পৌষালী মুখোপাধ্যায় ডান্স অ্যাকাডেমির শিল্পীরা, শাশ্বতী সরকার ও তাঁর সহশিল্পীবৃন্দ, কাকলি বসু ও অর্কপলা বসু, অরিজিৎ বণিক ও সুলগ্না বণিক। অংশগ্রহণ করেন মেহেক, অন্বেষা, আয়ুষী, কৌশানী, অনুষ্কা, সত্যজিৎ, শুভব্রত, শৌভিক। ছিল মায়া ভট্টাচার্যের উপস্থাপনা। ‘শ্রীতকমলা’, ‘উৎপ্লাবন’, ‘নৃত্যসঙ্গম’, ‘বসন্তপল্লবী’, ‘ম্যায় বর্ষা হুঁ’, ‘তরঙ্গ’, ‘আরাত্রিকা’-সহ প্রতিটি উপস্থাপনাই দর্শকের হৃদয় স্পর্শ করে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Academy of Fine Arts

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy