ঠিক স্মৃতিময় বাস্তবের ইলিউশনের উল্টো প্রান্তে রয়েছে বৃদ্ধ তুষারেরই পুত্র পরিচয়ে বেড়ে ওঠা বন্ধুসন্তান রেহান ও পুত্রবধূ দিয়ানা। বৃদ্ধ শ্বশুরের যন্ত্রণা ও আর্তির সমব্যথী দিয়ানার সঙ্গে তুষারের আশ্চর্য সংলাপ দৃশ্যগুলি সরলরৈখিক অবস্থান থেকে ক্রমশ জটিল ও কৌণিক হয়ে দুর্দান্ত সব স্পেস তৈরি করে দর্শকের চিন্তাজগতে। প্রেম ও যৌনতা, মধ্যবিত্তের ভোগবাদী মন ও মানসিকতার স্তর ছুঁয়ে এ নাটক প্রায়শই দর্শকদের ছুড়ে দেয় সেই অনতি-অতীতে। কথা ছিল গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরার, তার বদলে আজ টেকনোলজি, মিডিয়া, শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স দিয়ে শহরই মুঠোয় পুরেছে গ্রামকে। ত্যাগ, স্পর্ধা ও সাহস বদলে গিয়েছে ভোগে, বিনয়ে আর আপসে। এ নাটক দুই প্রজন্মকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দর্শককে অপ্রস্তুত এক আত্মপ্রশ্নে ঠেলে দেয়। শেষ দৃশ্যে তুষারের মৃত্যুর পর এক তরুণ যখন মঞ্চের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত লাল-সাদা ফিতেয় মুড়ে দিতে থাকে, নেপথ্যে ভেসে আসে তুষারের কণ্ঠ— ‘‘হাত ধরে নেমে এসো। খোলা রাজপথে আবার তোমাদের সাহসী, দুর্জয় অপ্রতিরোধ্য মুখ দেখতে চাই। মৃত পুরনো বন্ধুদের মতো।’’ কাঁপনধরা এই সব দৃশ্যাবলি আমাদের স্মৃতিতে চিরদিন থাকবে।
শুধু দুটো আপত্তি— ডাক্তারের মুখে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার কারণতত্ত্ব খুবই বেমানান লেগেছে। আর দিয়ানা চরিত্রে বড্ড জড়োসড়ো মনে হয়েছে রায়তী বসুকে। এটুকু বাদ দিলে এ নাটক দেখা দর্শকের কাছে সত্যিই একটা বড় অভিজ্ঞতা।
মলয় রক্ষিত
মিল নেই গানে ও শিরোনামে
সুরঙ্গমা কলাকেন্দ্র আয়োজিত অনুষ্ঠান ‘তবু মনে রেখো’ অনুষ্ঠিত হল ফণীভূষণ বিদ্যাবিনোদ মঞ্চে। শুরুতেই মহড়া-বিহীন উদ্বোধন সঙ্গীত পরিবেশন করলেন সংস্থার শিল্পীরা। কুড়ি জনেরও বেশি শিল্পীর কণ্ঠে গান ও আবৃত্তি পরিবেশিত হল। তাঁদের মধ্যে স্বপ্না ঘোষাল ও শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়ের গান শ্রোতাদের মনকে স্পর্শ করেছে।
বলতে বাধা নেই, অনুষ্ঠানের শিরোনামের সঙ্গে অনেক শিল্পীর সঙ্গীত পরিবেশনে কোনও সাযুজ্য নেই, যা শুনে বিস্মিত হতে হয়।
কাশীনাথ রায়
শব্দ-বন্ধুর সান্নিধ্যে
শব্দের ক্ষমতা অসীম। শব্দে আছে শান্তি। ক্লান্ত মনের শুশ্রূষা করে শব্দের প্রলেপ। বাচনিক শিল্পী সংস্থা আয়োজিত ‘নান্দনিক বাচনিক’ অনুষ্ঠান শব্দের সঙ্গে আর এক বার সখ্য স্থাপন করল। রবীন্দ্র সদনে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন প্রদীপ ঘোষ। কোরাসে কবিতা পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শব্দের জয়যাত্রা। দেবেশ ঠাকুর, সোহিনী সেনগুপ্ত, প্রণতি ঠাকুর, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, জগন্নাথ বসু, ঊর্মিমালা বসুর মতো বাচিক শিল্পীদের মনোজ্ঞ পরিবেশনে ভরে উঠেছিল শ্রোতাকুলের মন। সঞ্চালনা করেছেন দেবাশিস বসু ও চন্দ্রমৌলি বন্দ্যোপাধ্যায়।
মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
অনুষ্ঠান
• সম্প্রতি রঙ্গিলা নাও ও অভিব্যক্তি ইন্দুমতী সভাগৃহে আয়োজন করেছিল ‘প্রাণ দরিয়া প্রেম’। প্রথমেই ছিল মাতৃবন্দনা। গণেশ বন্দনায় ছিলেন অরিত্রা সেনগুপ্ত, রবীন্দ্রসংগীতে শেষের কবিতা এবং আবৃত্তিতে মৈত্রেয়ী রায়। অভিব্যক্তি আয়োজন করেছিল শ্রুতিনাটক ‘শেষ অন্তরা ও রাক্ষসী’র। অভিনয় করেন চন্দন মজুমদার, প্রসেনজিৎ ঘোষ, হীরালাল শীল প্রমুখ। শেষে ছিল রঙ্গিলা নাও-এর ‘মাটির গানে’। গানে ছিলেন সুদীপ্তা, অমিতা, কল্যাণী প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনা করেন অর্পিতা ঘোষ।
• বিড়লা অ্যাকাডেমিতে সোনারতরী কলাকেন্দ্র আয়োজন করেছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। সংগীতে ছিলেন জয়তী ভট্টাচার্য, মধুছন্দা ঘোষ, ঋতুপর্ণা রায়, কল্যাণী রায় সান্যাল প্রমুখ। আবৃত্তি করেন দেবাশিস মিত্র, অরুণাভ বিশ্বাস, মহুয়া দাস প্রমুখ। সঞ্চালনায় নিমাই মণ্ডল ও অর্পিতা গঙ্গোপাধ্যায়।
• ত্রিগুণা সেন অডিটোরিয়ামে বিস্তার আয়োজন করেছিল চার দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের। এ দিন সরোদে ছিলেন জয়দীপ ঘোষ, দেবাঞ্জন ভট্টাচার্য, সিরাজ আলি খান প্রমুখ। সেতারে আয়ুষ চক্রবর্তী, শুভ চক্রবর্তী, অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। কত্থক প্রদর্শন করেন শ্রুতি মজুমদার, দেবাংশু মণ্ডল প্রমুখ। কণ্ঠশিল্পী ছিলেন পণ্ডিত দেবাশিস দে, সানিয়া পটনাকর, বেদান্তিকা মুখোপাধ্যায়, অমরেন্দ্র ধনেশ্বর প্রমুখ।
• আইসিসিআর এবং হেরি়টেজ বেঙ্গল-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছিল ‘কালচারাল ফেস্টিভ্যাল অফ ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট’। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী এবং নৃত্য প্রদর্শন করে মঙ্গোলিয়া গ্রুপের শিল্পীরা।
• শিশির মঞ্চে সম্প্রতি কৃষ্ণকলি আয়োজন করেছিল একটি রবীন্দ্রসংগীতের অনুষ্ঠান। একক রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন শ্যামল সাহা। পরে কৃষ্ণকলি সংস্থার ছাত্রছাত্রীরা মিলে নিবেদন করেছিলেন ‘রাত্রি এসে যেথায় মেশে দিনের পারাবারে’।