মুখোশের আড়ালে: মানস রায়ের কাজ
স্টার থিয়েটারের নটী বিনোদিনী মেমোরিয়াল আর্ট গ্যালারিতে ইউনিক-এর তরুণ সদস্যরা আয়োজন করেছিলেন ষষ্ঠ বার্ষিক প্রদর্শনীর। কিন্তু চিত্র প্রদশর্নীর কাজের সঙ্গে সংস্থার নাম মানানসই হলে চোখেরও আরাম হত। যদিও তা একেবারেই হয়নি। তবে দর্শকের চোখ ও মনকে আহত না করলেও প্রদর্শনীর ছবি নির্বাচনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ছবির মান নিয়ে সদস্যদের আরও ভাবা উচিত ছিল। কাজগুলির পিছনে নিষ্ঠার অভাব না থাকলেও পরিণত শিল্পবোধ ও শিল্প রচনার অনুষঙ্গের অভাব কিছু কিছু ক্ষেত্রে সে সৃষ্টিগুলিকে সম্পূর্ণতা দেয়নি। তাঁদের সামগ্রিক প্রয়াসকে তবুও এক সময় দর্শককুল ‘ইউনিক’ বলে বাহবা দিলে ভবিষ্যতের রুপোলি রেখার এক আভাস পাওয়া যেতেই পারে।
মানস রায় ‘সার্কাস’ ও ‘জোকার’ সিরিজ নিয়ে কাজ করেছেন। ক্যানভাস-স্পেসকে ছোট অনুষঙ্গে ভেঙে, রচনা এগিয়েছে নিজস্ব গতিতে। সীমিত রঙের অনুজ্জ্বলতা রচনার আবহকে কিন্তু এক সর্বজনীনতার মাত্রা দিয়েছে।
সুমিতা সাহুর কাজে ধারাবাহিকতার অভাব। ড্রয়িং দুর্বল। ছবি তৈরির অস্থিরতা রচনাকে দানা বাঁধতে দেয়নি। বাসের টিকিট পেস্ট করে ফর্ম তৈরি, তাকে ড্রয়িংয়ে সাজানো। শিল্পশিক্ষার পাঠযোগ্য ব্যবহার এক-একটি কম্পোজিশনের মাত্রাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে। এখানে তা অনুপস্থিত। উদ্দেশ্যহীন ইনস্টলেশন দেওয়ালের শুভ্রতাকে যেন ক্ষুণ্ণ করেছে।
বিশ্বরূপ পাল মিশ্রমাধ্যমে কিছু অলৌকিক আধিভৌতিক মুখাবয়ব এঁকেছেন। ড্রয়িংভিত্তিক কাজগুলিতে চারকোলের প্রাধান্য, প্যাস্টেলের টান ও রং রয়েছে। রং সীমিত। ছবি তৈরির সীমিত ভাবনায় এ সব কাজে কোনও গভীরতাই প্রকাশ পায়নি।
শর্মিষ্ঠা বিশ্বাসের কাজ দেখে প্রাথমিক ভাবে মনে হয় অনেক স্থির, পরিণত, সীমাবদ্ধ। যদিও তা নয়। নিসর্গপ্রধান ছোট জলরং। জল আকাশ পাহাড় গাছ জমি দিগন্ত নৌকা নিয়ে বিস্তৃত পটভূমি। ব্রাশিং ও জলরঙের যে মায়াবী ব্যঞ্জনা ভেজা হ্যান্ডমেড কাগজের দৌলতে এক ধরনের মোহ তৈরি করে— বিদেশি পুরু কাগজের সারফেসের সাহায্য পেয়েও তা ব্যবহার করতে পারেননি শিল্পী।
সঞ্জীব মাহাতার অ্যাক্রিলিকে করা দু’টি ছবির একটি কালো পটভূমিতে গাঢ় সবুজ ফুলপাতা ও গাছপালা সংবলিত গর্ভবতী নারীর পার্শ্বাবয়ব। অন্যটি ধনেশ জাতীয় এক পাখির। ভাবনায় শৃঙ্খলার অভাব দেখা গিয়েছে।
গৌরব ঘোষাল উজ্জ্বল দু’টি চিত্রে মাদার টেরেসার মুখ এঁকেছেন। মাথায় জড়ানো শাড়ির নীল বড্ড প্রকট। দু’টি মুখেরই সবটা জুড়ে রুক্ষ টেক্সচার। পরে অতিরিক্ত রঙের গুঁড়ো মিশিয়ে ত্বকের স্বাভাবিক মসৃণতাকে শিল্পী যে ইচ্ছে করেই নষ্ট করেছেন, তা কি মুখের বলিরেখাকে প্রাধান্য দেওয়ার জন্যই? অ্যাক্রিলিক হোয়াইট ও স্প্যাচুলার ব্যবহারই প্রাধান্য পেয়েছে ছবিতে।
মনীষা হাজরার কয়েকটি পেন অ্যান্ড ইংক-এর কাজ ছিল। সাদাকালো ড্রয়িংগুলির মাধ্যমে শিব-পার্বতীর জীবনভিত্তিক রচনা ঠিক বোঝা গেল না। তিন-চারটি আপাত রঙিন ছোট কাজ ছিল। বরং ফুল লতা পাতার কাজটি অন্যগুলির তুলনায় আলাদা।
বিপ্লব সর্দার তাঁর ক’টি ক্যানভাসে ঠিক কোন আধ্যাত্মিক দর্শনকে ব্যক্ত করেছেন? স্পেস নষ্ট হয়েছে অনাবশ্যক। বড্ড বেশি সমতলীয়, অযথা কনটেন্ট তৈরির ভ্রান্ত দিকনির্দেশ।
তাপস হালদার যদি মালভর্তি চটের বস্তা বাস্তব থেকে স্টাডি করে কম্পোজিশনকে ধরার চেষ্টা করতেন, তা হলে ভাল হত। অন্ধকারাচ্ছন্ন পটভূমির ডান দিকে একগুচ্ছ নক্ষত্রের পাশে একটি মেয়ের কৌতূহলী মুখটি রচনা হিসেবে মন্দ নয়। ক্যানভাসে প্রায় মনোক্রোমের এই ছবিতে বিষণ্ণতাও আত্মগোপন করে আছে।
দেবযানী দত্ত ছোট কাগজে পেন, প্যাস্টেল, অ্যাক্রিলিকে ছবি এঁকেছেন। ছোটদের, বিশেষত বিদেশি গল্পের বইতে যেমন সচিত্রকরণ থাকে, অনেকটা সে রকম। শিশুসুলভ ছবি। মাছ, পাখি, বিভিন্ন আকারের ছোট এই কাজগুলো কোনও ভাবেই একটি পূর্ণাঙ্গ পেন্টিং হয়ে ওঠেনি।
প্রদর্শনীর একমাত্র আমন্ত্রিত শিল্পী অতনু পালের রঙিন আলোকচিত্রটি সাবজেক্ট হিসেবে মন ও চোখকে আরাম দেয়। ঘাস, থান ইট, পাথর, চ্যাপ্টা ছোট্ট একটি কৌটো, সামান্য জঞ্জাল-পরিবৃত অঞ্চলে পড়ে থাকা অর্ধচ্ছিন্ন রবারের দু’টি দস্তানা—এই হল শিল্পীর খুঁজে পাওয়া বিষয়। আপাতদৃষ্টিতে সামান্য মনে হলেও তা প্রখর বাস্তব। গোটা প্রদর্শনীর এটি অন্যতম সুন্দর কাজ। যা হয়তো মনে করিয়ে দেয়, সাধারণকে ভেঙে, অনেক গতিশীল গড়নের দিকে এগোনোই হচ্ছে শিল্পের আসল লক্ষ্য।
অতনু বসু
যে প্রেমের পরিণতি নেই
মানিকতলা দলছুট-এর ‘ভালবাসার গতিবিধি’ সত্যি এক নির্মল হাসির নাটক। এক প্রৌঢ় ব্যক্তি ইন্দ্রজিৎ সিংহ একাকিত্ব কাটাতে মজেছেন মুখ-পুস্তিকায় অর্থাৎ ফেসবুকে। তবে তাঁর নিজস্ব প্রোফাইলে নয়, তাঁর শ্যালকের ছেলে রুদ্রনীল করের প্রোফাইল দিয়ে। সেই সূত্রেই আলাপ হয় ত্র্যম্বকেশরী নামে এক যুবতীর সঙ্গে। এক বছর ধরে চলতে থাকে গভীর প্রেমালাপ। এ বার সেই যুবতী বায়না ধরে ইন্দ্রজিতের মুখোমুখি হতে। তখনই ফাঁপড়ে পড়ে যান ইন্দ্রজিৎ। অগত্যা বন্ধু কৃষ্ণময়ের শরণাপন্ন হন তিনি। ইন্দ্রজিৎ সেজে বন্ধুই পার্কে দেখা করেন সেই যুবতীর সঙ্গে। তক্কে তক্কে ছিল পুলিশ। দুই ঘুষখোর পুলিশ হাতেনাতে পাকড়াও করে তাদের।