নারী অর্ধেক আকাশ। এই অজস্র নারীকে নিয়েই কে জি সুব্রহ্মণ্যম এঁকেছিলেন অসংখ্য ছবি। প্রায় ষাট বছরের সে সব কাজের থেকে বাছাই করা শুধু মাত্র ৩২২টি ড্রয়িং নিয়েই এক অনবদ্য প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বিড়লা অ্যাকাডেমি ও সিগাল ফাউন্ডেশন ফর দি আর্টস।
১৯৫৩ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে তিনি এই ড্রয়িংয়ে ব্যবহার করেছেন পেনসিল, বল পয়েন্ট পেন, ক্রেয়ন, পেন, কালি, তুলি, কাগজে তেল রং, চারকোল, মিশ্র মাধ্যম। নারীশরীর, বিশেষত তাদের মুখাবয়ব ও বিভিন্ন ভঙ্গি-বৈচিত্রের বর্ণনা শিল্পী কাগজের ছোট পরিসরে রৈখিক বিন্যাস ও বর্ণ-নৈপুণ্যের যে সাবলীল কাব্যিক গতিময়তার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেছিলেন, তা অনন্য। প্রতিটি মুহূর্তই নাটকীয়, খণ্ড চিত্রনাট্যের অন্তর্নিহিত নারীদের এক নীরব কথোপকথন, যেন বা নিজের সাথেই, কখনও অন্যের সঙ্গেও। হয়তো বা সন্তান, আত্মজন, পরিচিত-অপরিচিত গণ্ডিভাগে সমস্ত কোলাহলের ভিতরে বাইরে এ এক বা একাধিক নারীর নিজস্ব পৃথিবী। সুব্রহ্মণ্যম তাঁর নিজস্ব স্টাইল ও টেকনিককে কত ভাবে যে এ সব ড্রয়িংয়ে ব্যক্ত করেছেন, কাজগুলির সামনে না দাঁড়ালে তার হদিস পাওয়া দুষ্কর।
এমন কিছু রং তিনি এ সব ড্রয়িং-সদৃশ ছবিতে ব্যবহার করেছেন, সেই আশ্চর্য চড়া ও উজ্জ্বলতর রং হঠাৎ কী ভাবে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে অন্যরা দু’বার ভাববেন—কিন্তু শিল্পী অত্যন্ত সহজাত দক্ষতায় সে-সব রঙের পাশে ওই রঙেরই হালকা একটা টোন তৈরি করে, কখনও টেম্পারা বা গোয়াশ ছবির মতো করে লাগিয়েছেন প্রত্যক্ষ রূপারোপের শরীরে বা আশেপাশে। এত গাঢ়ত্বের মধ্যেও দৃষ্টিনন্দন নরম রঙের সাদাযুক্ত সেই রূপ ছোট পরিসরেও যেন একটি বিরতি তৈরি করছে। এমনকী শূন্য স্পেসকেও অজস্র রেখা-রঙের আঁকিবুকিতে কথা বলিয়েছেন। ফ্রেমে স্তর বিন্যাসের মাধ্যমে পরিপ্রেক্ষিতের কৌতুক ও অন্তরঙ্গতা তাঁর আঁকায় পুরনো বা আধুনিক জীবনের দৈনন্দিন অবস্থাকে একটা নির্দিষ্টতা দিয়েছে। এ হেন গভীরতর মেধাই বুঝিয়ে দেয় একটি ছোট ড্রয়িংয়েরও স্বয়ংসম্পূর্ণতা!