Advertisement
E-Paper

লড়াই যেন লক্ষ্যহীন হয়ে না পড়ে

অ্যাকাডেমির বর্তমান প্রদর্শনীতে যদিও তাঁদের ‘লড়াই’ ছিল আপাতশান্ত, অস্ত্রের ঝনঝনানি কম। তবুও এ লড়াই থেকে তাঁরা পরবর্তী যুদ্ধক্ষেত্রের ছাড়পত্র পেয়ে আরও মজবুত শক্তি নিয়ে মাঠে নামবেন, এমনটা আশা করাই যায়।

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৮ ০০:০০
সংগ্রাম: পরেশ মোদক এবং সঞ্জয় দে-র কাজ। অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে

সংগ্রাম: পরেশ মোদক এবং সঞ্জয় দে-র কাজ। অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে

ষোলো জন তরুণ সমকালীন শিল্পীর দল স্ট্রাগল। অ্যাকাডেমির বর্তমান প্রদর্শনীতে যদিও তাঁদের ‘লড়াই’ ছিল আপাতশান্ত, অস্ত্রের ঝনঝনানি কম। তবুও এ লড়াই থেকে তাঁরা পরবর্তী যুদ্ধক্ষেত্রের ছাড়পত্র পেয়ে আরও মজবুত শক্তি নিয়ে মাঠে নামবেন, এমনটা আশা করাই যায়। কারণ অনেকেই তাঁদের শক্তি ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন স্ব স্ব ক্ষেত্রে। সকলেই যে উত্তীর্ণ হয়েছেন এমন নয়। তবে একটা মরিয়া চেষ্টা ছিল, লক্ষ করা গিয়েছে।

অ্যাক্রিলিকের সুবিধেকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই পটকে সাময়িক উতরে দিতে পারেন। তবে ওই মাধ্যমের বিশেষত্ব, গুণ ও ত্রুটি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হলে তবেই। অর্ঘ্য ভট্টাচার্য ভাল ভাবে তা আয়ত্ত করতে পারলে কাজ অন্য রকম হত। রঙের ছড়ানো ছিটোনো ঘষামাজা অবস্থায় জটিলতাই তৈরি হয়। কম্পোজ়িশন ও স্পেস বুঝে ‘প্লাজমা ওয়র্ল্ড’কে আরও সংগঠিত করা যেত। মাধ্যমকে অধীনে আনতে হবে।

যেটা অনেকটাই সফল ভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন অভিজিৎ সাহা। নিজস্ব ধারণার ‘সিটিস্কেপ’ অ্যাক্রিলিকের ব্রাশিংয়ের ফর্ম ও কনটেন্টকে যেন একসূত্রে গেঁথেছে। তিন-চারটি রঙের আবহে কালোর ব্যবহার গোটা ছবির সত্তাকে ধরে রেখেছে। অতি সরলীকরণও কখনও কখনও মোনোটোনি তৈরি করে ডায়মেনশন নষ্ট করে, শিল্পীকে মনে রাখতে হবে।

ছোট পরিসরে কালো কালিতে কাজ করতে গিয়ে বিধান চক্রবর্তী ছোটদের গল্পের বইয়ের সচিত্রকরণের মতো করে ফেলেছেন। হিজিবিজি রেখার সূক্ষ্মতা কি গাছের পত্রপল্লবকে প্রাণিত করে?

পেন অ্যান্ড ইঙ্কে ফুল-লতাপাতার নকশাময় ড্রয়িং করেছেন মৌমিতা মিত্র। প্রিন্ট মেকিংয়ের ছাত্রীর কাজ কেন গ্রাফিক কোয়ালিটি থেকে সরে গিয়ে অমন শিক্ষানবিশের মতো হবে?

শ্রীপর্ণা রায় বেশ যত্ন নিয়ে ওয়াশ মাধ্যমে কাজ করেছেন। তবে পিয়োর ওয়াশ পেন্টিংয়ের যে চিরাচরিত অধ্যায়— টেকনিক-কম্পোজ়িশনের ঐতিহ্যে যা ভারতীয় চিত্রকলাকে এক মহার্ঘ স্থান দিয়েছে, তা থেকে সরে এসে শ্রীপর্ণা নিজস্ব স্টাইল ও টেকনিকে ওয়াশের গুণগুলোকে কাজে লাগিয়ে ছন্দোবদ্ধ ডিজ়াইন-ভিত্তিক কম্পোজ়িশন করেছেন। যেখানে ছোট্ট ফর্ম, তার পরিবেশনা ও রঙের চমৎকারিত্বে চোখের আরাম তৈরি করছে। খুবই খেটেছেন। বুদ্ধিদীপ্ত কাজ।

বামিয়ান বুদ্ধের সঙ্গে মিলই নেই। না ভাবনায়, না শরীরী ভাব-বিভঙ্গে। তবুও কাটা হাত, কাঁটাতার! ধ্বংসের পর এমন হয়েছিল নাকি? অন্যটিতে সরু স্বচ্ছ নল কখনও শরশয্যার শর হতে পারে? হাঁটু মুড়ে শুয়ে থাকা মানুষের অবস্থান অত জটিল কেন? জিৎ নট্টের কাজে তবে প্রাণ কোথায়?

রূপকধর্মিতার আদলে বুদ্ধের রূপকে রেখা ও ছায়াতপের বর্ণনায়, ঝোড়ো ঘষামাজা রঙের আবহে ধরেছেন বিশ্বজিৎ মণ্ডল। চিরুনির দাঁত ব্যবহারে টেক্সচারের বর্তুলাকার বলয় অতিরিক্ত সাদা রঙের জন্য মার খাচ্ছে। জাপানি ভাষার জটিল ডিজ়াইনের অক্ষর সমাবেশ রচনাকে ব্যাহত করছে।

পরেশ মোদক চেষ্টা করেছেন নিসর্গের অন্ধকারের মধ্যে এক ধরনের গভীর দ্যোতনা তৈরি করার। কিছু চাহিদা তৈরি হয়েও রূপারোপের বিস্তারহীন অবস্থা কোথাও আটকে যাচ্ছে। তবে কাজ মন্দ নয়। সঞ্জয় দে কাগজে চারকোল, প্যাস্টেল ব্যবহার করে ড্রয়িং-সদৃশ কাজ করেছেন। নিজস্বতা তৈরি হলেও পটের ফাঁকা অংশ ছবিকে এক জায়গায় থামিয়ে দিচ্ছে। অ্যাসেম্বল স্কাল্পচারে মস্তিষ্কের প্রয়োগ, মেটিরিয়াল ভ্যালু... এ সব সম্পর্কে বিস্তৃত বোধ না থাকলে ওই মাধ্যমটি নিয়ে কাজ করা মুশকিল। সন্টু রায় চেষ্টা করেছেন খুবই। তবে‌ তাঁকে এ সব কাজ সম্পর্কে আরও অবহিত হতে হবে। কাজ দেখতে হবে প্রচুর।

প্রদর্শনীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাজ ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিকে করা সুজয় সাধুখাঁর গোলাপ ফুলদান, দু’পাশের নকশাময় পর্দা, আর পটভূমিকার প্রজাপতি এবং সামনে অবস্থিত টব। সব মিলিয়ে রিয়্যালিজ়মের বুদ্ধিদীপ্ত রচনা। এ ছাড়াও প্রদর্শনীতে ছিলেন ছন্দসী পাল, তারক নস্কর, প্রণবেন্দু ভৌমিক, প্রবীর সেনচৌধুরী, পাপিয়া গুহরায় প্রমুখ।

অতনু বসু

প্রিয় পাঠশালা

নাটকের একটি দৃশ্য

সম্প্রতি তিন দিন ব্যাপী নাট্যোৎসবের আয়োজন করেছিল ফ্র্যাঙ্কলি স্পিকিং থিয়েটার গ্রুপ। তাদের এই উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। দলের বয়স সাত বছর, কিন্তু সে তুলনায় প্রযোজনার সংখ্যা মাত্র তিনটি। তারই মধ্যে ‘প্রিয় পাঠশালা’ সাম্প্রতিকতম।

নাট্যোৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছোটখাটো চেহারার দলনেত্রী রিমি মজুমদারের স্বতঃস্ফূর্ততা নজর কাড়ে।

‘প্রিয় পাঠশালা’ দেশ-এ প্রকাশিত সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা গল্প। পরে লেখক গল্পটির নাট্যরূপও দেন। নাটকের প্রয়োজনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংযোজন করেছেন রিমি খুব সচেতন ভাবেই। একটি ছোট গ্রাম পানিমালা বিধ্বংসী ঝড়ে ও বন্যায় সম্পূর্ণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। গ্রামের স্কুলের হেডমাস্টার অভয়পদ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ওই স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে কলকাতা থেকে আসা এক যুবক তমাল নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র। আর আছে তাপসী, হেডমাস্টারমশাইয়ের মেয়ে। তমালের বাদলপুর স্টেশনে পৌঁছনো দিয়ে নাটকের শুরু। প্রথম থেকেই যা বড় শ্লথ গতিতে এগোয়। দর্শকের আগ্রহ ধরে রাখার জন্য যে পটুত্ব দরকার, তার অভাব লক্ষ করা যায়। দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে যাওয়ার সময়ও পেশাদারিত্বের ছোঁয়া তেমন নেই।

আদর্শ শিক্ষকের যে রূপটি আমরা বহু কাল ধরে বাংলা সাহিত্যে, নাটকে ও চলচ্চিত্রে বার বার দেখেছি, হেডমাস্টার অভয়পদবাবু সেই ছাঁচে ফেলা এক চরিত্র। এই ভূমিকায় বাবু দত্ত রায়ের অভিনয় নাটকটির বিশেষ সম্পদ। অবশ্য বাচনভঙ্গিতে তাঁর পূর্বসূরি এক প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের প্রচ্ছন্ন ছায়া লক্ষ করা যায়। মহম্মদ আলির রূপসজ্জা চেহারা ও চরিত্রের মিল ঘটিয়েছে। তাপসীর ভূমিকায় রিমি মজুমদার সরল স্বচ্ছন্দ। তমালের ভূমিকায় বিশ্বজিৎ ঘোষ মজুমদারের চলনে বলনে যদিও আত্মবিশ্বাস ও সাবলীলতার বেশ কিছুটা অভাব। ছায়ামূর্তিদের সঙ্গে হেডমাস্টারের কথাবার্তার দৃশ্যগুলি মনোজ্ঞ। নাটক শেষ হয় যে সদর্থক ব্যঞ্জনায়— সেটি সাক্ষরতার পথকে সুগম করার জন্য ছাত্র-শিক্ষকের পারস্পরিক সম্পর্কের এক স্বচ্ছ বার্তা। সত্যিই আনন্দদায়ক।

শেষে এটুকুই বলার আছে যে, ফ্র্যাঙ্কলি স্পিকিং— ব্রাত্য বসু যার বাংলা করেন ‘অকুণ্ঠচিত্তে বলছি’— তাদের এই সাম্প্রতিক নাটকটি কিন্তু সাধারণ মানের। আশা করব, পরবর্তী প্রযোজনার ত্রুটিবিচ্যুতিগুলি ওঁরা ঠিক পেরোতে পারবেন।

চৈতালী দাশগুপ্ত

অনুষ্ঠান

• সম্প্রতি কলাকুঞ্জে সুপ্রিয়াদেবীর স্মরণে অনুষ্ঠিত হল ‘মেঘে ঢাকেনি তারা’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠান। অভিনেত্রীর স্মৃতিচারণা করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, মাধবী মুখোপাধ্যায়, অনন্যা চট্টোপাধ্যায় এবং সুদীপা চট্টোপাধ্যায়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন ইন্দ্রাণী দত্ত, ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়, সৌমিলী বিশ্বাস, নবমিতা চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। সুপ্রিয়াদেবীর অভিনীত ছবি থেকে নানা গান উপস্থাপনা করেন ঝিনুক গুপ্ত। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন রাজীব গুপ্ত। আয়োজন করেছিল পঙ্কজ মল্লিক মিউজ়িক অ্যান্ড আর্ট ফাউন্ডেশন।

• সম্প্রতি মোহিত মৈত্র মঞ্চে অনুষ্ঠিত হল ‘বাংলা ভাষা উচ্চারিত হলে’। আয়োজন করেছিল সরস্বতী বালিকা বিদ্যালয় ও শিল্প শিক্ষা সদন। বাংলা ভাষার অবক্ষয় এবং সচেতনতামূলক বার্তাকে উপজীব্য করে পরিবেশিত হয় নৃত্য-গীত আলেখ্য। অংশগ্রহণ করেছিল বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। অনুষ্ঠানটি পরিকল্পনা এবং পরিচালনা করেছিলেন শর্মিষ্ঠা ভট্টাচার্য। উপস্থিত ছিলেন শশী পাঁজা, চিন্ময় সরকার, কার্তিক মান্না, অমিতা দত্ত, প্রচেত গুপ্ত প্রমুখ।

Theatre Painting Drama
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy