Advertisement
E-Paper

সরলীকরণের মন্ত্রেও রয়েছে মন ভরানো মেলোডির মূর্ছনা

যে সুর তুলছে অহরহ—তার সেই কেঁপে কেঁপে ওঠা মায়াবী সুরের অন্তর্লোকে হঠাৎ এক পাশ্চাত্য মেলোডির মূর্ছনা! আশ্চর্য এই যে, কখনও সবই আবার স্তিমিত হয়ে আসা এক চন্দ্রালোকিত সাঙ্গীতিক পরিবেশ! এই হল শর্মিষ্ঠা ঘোষের ছবির জগৎ।

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৮ ০০:৫৮
বিমূর্ত: শর্মিষ্ঠা ঘোষের কাজ ‘কোরাস’। অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে

বিমূর্ত: শর্মিষ্ঠা ঘোষের কাজ ‘কোরাস’। অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে

ছোট পরিসরে এও এক ধরনের খেলা। মাধ্যম শুধু যৎসামান্য রং, রেখা, ছায়াতপের মিত ও অমিত ব্যবহার। এ সব কিছুই বিবিধ রূপ ও অরূপের মধ্যবর্তী সাঁকোর উপরে অতি স্বাধীনতায় অথবা সন্তর্পণে পারাপার। চেনা বাস্তব থেকে অজানা এক পার্থিব অবস্থান। শিল্পী তো তাই-ই করবেন। তাঁর ভাবনা, কল্পনা কবির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হবে ছবিতে। হয়েছেও তাই-ই। একই সঙ্গে যা কিনা আপাতনিরীহ কাব্যময় এক বিমূর্ততার ছন্দোবদ্ধ গিটার। যে সুর তুলছে অহরহ—তার সেই কেঁপে কেঁপে ওঠা মায়াবী সুরের অন্তর্লোকে হঠাৎ এক পাশ্চাত্য মেলোডির মূর্ছনা! আশ্চর্য এই যে, কখনও সবই আবার স্তিমিত হয়ে আসা এক চন্দ্রালোকিত সাঙ্গীতিক পরিবেশ! এই হল শর্মিষ্ঠা ঘোষের ছবির জগৎ। অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে ‘কোরাস’ নামে ওঁর সাম্প্রতিক একক প্রদর্শনী তাই দর্শক-দৃষ্টির অভ্যন্তরে যে অদৃশ্য শ্রবণেন্দ্রিয় প্রতীক্ষায় থাকে—তাতে বিরল এক অনুরণন
তুলেছে, সন্দেহ নেই। এই প্রদর্শনীতে তাঁর ৪০টি কাজ পার্থিব-অপার্থিবের এক অদ্ভুত মেলবন্ধন ঘটিয়ে, চারকোল, ড্রাই প্যাস্টেল, কালি-তুলি ও জলরঙের মিশ্র মাধ্যমে সেই সাক্ষ্যটুকুই বয়ে এনেছে।

শিল্পশিক্ষায় নয়, রবীন্দ্রসঙ্গীতে স্নাতকোত্তর শর্মিষ্ঠা কখনও মেলেভিচ বা মিরোর কাজ দেখেননি। কান্দিনস্কি মন্দ্রিয়ানরা তাঁকে প্রত্যক্ষ ভাবে কখনওই প্রভাবিত করেননি। তা সত্ত্বেও ওঁর কিছু ছবিতে তাঁদের আশ্চর্য উপস্থিতি উপলব্ধি করা যায়। আসলে রং-রেখার অদ্ভুত সব ব্যবহার নিরন্তর এক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে তাঁকে ‘ভাসিয়ে নিয়ে গেছে’ অনন্ত সুরের মায়ায়! সেখানেই বেজে উঠেছে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের এক বিরল মিউজ়িক্যাল হারমনি। ডাইমেনশন না-মানা এক স্টাইল।

ছবিতে রূপ কখনও পরিসরকে ছাপিয়ে অবগাহন করছে অদ্ভুত এক আলোর মায়াবী সরোবরে। শুনতে পাওয়া যাচ্ছে রূপের আড়ালে অরূপ-বীণার সেই লুকোনো ক্রন্দন। এ কান্না এক ধরনের ‘প্যাশন’ যা শিল্পীর ছোট কাজগুলির মধ্যে নিহিত পাতালছায়া।

মাছ, গাছ, পশুপাখি, অবয়ব, মুখ এ সবই ছবিগুলির অন্তর্গত প্রাণ। অথবা নিষ্প্রাণ আলোর মধ্যেও এক অবাধ অলৌকিক গতিবিশিষ্ট রেখার বৈচিত্রে ও রঙের সীমিত ছায়াতপের ব্যবহারে। রঙের বিচ্ছুরণ কোথাও কোথাও এক অলৌকিক আবহ তৈরি করেও মিশে যাচ্ছে বিমূর্ত রূপের অনুষঙ্গের সহযাত্রী হয়ে! এখানেই দ্যুতি বা তার ‘সহাবস্থান’কে চিনে নিতে অসুবিধে হয় না দর্শকের। তুলির সাবলীলতার সঙ্গে মিশে গিয়ে কিছু দ্রুত গতি রেখা এক বিক্ষিপ্ত প্যাটার্ন তৈরি করছে এই রঙিন বাতাসের মতো আন্দোলিত পরিসরে। যেখানে ‘মুক্তি টু’ বা ‘রঙের আগুন’ থেকে উঠে আসছে অনেক প্রচ্ছন্ন সুরের বিস্তার। এই সুর ভেঙে ভেঙে আরও সরলীকরণ হয়ে যাচ্ছে ‘সে’, ‘আর্তি’ ইত্যাদির ‘আপন খেয়ালে’।

শিল্পী বহু দিন ধরে এই স্টাইলকে লালিত-পালিত করতে গিয়ে কিন্তু রূপারোপের দ্বন্দ্বকে বুঝতে পারেননি তাঁর কম্পোজ়িশনের মধ্যে। আপাত-দৃষ্টিতে ওই দ্বন্দ্বকে হয়তো রচনার ভারসাম্য বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এই বিভ্রমটুকু চিহ্নিত করতে পারবেন সিরিয়াস দর্শক। ছবি দেখার, বিশেষত বোঝার জন্যও চোখ দরকার। মিত রৈখিক প্যাটার্ন বা অনুষঙ্গ, সলিড ফর্ম ও ছায়াতপের অবস্থানগত ব্যবহার এই ধরনের স্টাইলাইজ়েশনের সবচেয়ে বড় শত্রু, আবার বন্ধুও! তাই গোটা অ্যারেঞ্জমেন্টই পারে এই বার্তার মধ্য দিয়ে শিল্পীকে সচেতন করতে।

রবীন্দ্রনাথ, বিনোদবিহারী, নন্দলাল, রামকিঙ্করের কাজ তিনি শুধু গভীর ভাবে উপলব্ধিই করেননি, অন্তর্নিহিত সত্তার মধ্যেও সেগুলি এক নির্দিষ্টতার সীমারেখা তৈরি করে দিয়েছিল, যাকে অস্বীকারের চেষ্টা শিল্পী করেননি।

তবে তাঁর ‘খেলা যখন’ সাবলীল, ‘লড়াই’ যখন লক্ষ্যমাত্রায় বাঁধা, তখন ‘শিকার’-এ নেমে লক্ষ্যবস্তুকে টার্গেট করা অনেক সময়েই ‘আদিম লতাগুল্মময়’-এর দিকে হঠাৎই দিক বদল করে চলে গিয়েছে। ‘আলো-ছায়া’ বা ‘আঁধার’-সদৃশ তাঁর এই পাশ্চাত্য-বিমূর্ততার সাক্ষ্যের পাশে যদি ওই রকম সরল রূপান্তরণেরও সাক্ষ্য উপস্থিত থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে আরও এক রকম দ্বন্দ্ব কিন্তু পটকে আক্রমণ করতেই পারে। এ বিষয়ে সচেতন থাকলে ভাল।

অতনু বসু

পুনর্জন্মের আখ্যান ‘পুনরুত্থান’

সায়ক আর মেঘনাদ ভট্টাচার্য: বাংলা রঙ্গমঞ্চের বহু পরিচিত দু’টি নাম। তার সঙ্গে নাট্যকার হিসেবে চন্দন সেন থাকা মানেই মণিকাঞ্চন যোগ! আর এই ত্রিশক্তিযোগেই মঞ্চস্থ হল সম্প্রতি অবদমিতের পুনর্জন্মের এক মনোময় আখ্যান: ‘পুনরুত্থান’। যদিও প্রথম রজনী, তবুও অনেক প্রত্যাশা নিয়েই দেখতে বসেছিলাম ও বলতে দ্বিধা নেই, সেই প্রত্যাশার পাত্রখানি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছে!

নাটকের পটভূমি দামোদরের তীরে রানিগঞ্জ কয়লাখনি অঞ্চলে বেআইনি খাদান। তার পাশেই চূড়ান্ত গরিব আদিবাসীদের বসবাস। যাদের এক জন ভরত কুইল্যা, স্কুল তৈরি করে আদিবাসী ছেলেমেয়েদের প্রথম পাঠের সুযোগ করে দিতে চেয়েছিল। খাদানে ধস নামার ফলে মৃত তিন শ্রমিকের মায়েদের দিয়ে উপর মহলে দরখাস্ত পাঠিয়েছিল, যাতে সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর ছিল ভরতের বাবা পবন কুইল্যার। কিন্তু মাফিয়া দলের হাত অনেক লম্বা। আইপিএস-এ শীর্ষ স্থান পাওয়া এএসপি অনিন্দ্য তালুকদার ভরতকে থানায় তুলে আনে। লকআপে ড্রাইভার পল্টনকে দিয়ে এমন পেটায় যে, ভরত মারা যায়। ওসি গোলকবিহারী অত্যন্ত সৎ এক অফিসার, প্রথম থেকেই বেআইনি খাদানের বিরুদ্ধে থাকায় এএসপি-র মৌখিক নির্দেশে অন্যত্র যেতে হয়েছিল যাকে। তাকেই দায়ী করা হয় লকআপে মৃত্যুর জন্য। এ দিকে এএসপি-র শ্বশুর এক সিনিয়র আইপিএস অফিসার, এ রাজ্যে যার মুখ্য সচিব হয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ডিএম-এর পরামর্শে এএসপি ছুটিতে যায়।

এ বার এই ঘটনায় আদিবাসীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ডিএম সন্দীপ ঘোষের কলেজে পড়া মেয়ে তার কাছে যে সব প্রশ্ন তোলে, তার সদুত্তর দিতে পারে না সে। ওসি তার স্ত্রীর পরামর্শে নিজের থানায় ফিরে আসে ভয়ে ভয়ে। তখন তার পাশে দাঁড়ায় পবন কুইল্যা আর খাদানের মজুরেরা। এর পর পুনরুত্থান, গোটা মঞ্চ জুড়ে।

সংলাপ, মঞ্চ পরিকল্পনা, আলো, রূপসজ্জা আর সর্বোপরি অভিনয় অসাধারণ। যদিও নাটকের পরিচালক মেঘনাদকে পূর্ণমাত্রায় পাওয়া গেলেও অভিনেতা মেঘনাদের কাছে নাটকে যে প্রত্যাশা ছিল, তা পূর্ণ হয়নি। আর একটি কথা— রণিতা দু’বার এবং গোলকবিহারী এক বার সংলাপ ভুলে গিয়েছিলেন। হয়তো প্রথম অভিনয়ের রজনী বলেই। বুবুন যদিও কথা আটকে গেলেও দারুণ ভাবেই তা সামলে নিয়েছেন। আশা করি, পরবর্তী অভিনয়ে এই সামান্য সমালোচনারও ‘পুনরুত্থান’ হবে না।

সুকোমল ঘোষ

পরিশীলিত পরিবেশনায় কবিস্মরণ

সম্প্রতি ইন্দুমতী সভাগৃহে অনুষ্ঠিত হল সপ্তস্বরা আয়োজিত ‘কবিপ্রণাম’ অনুষ্ঠান। রবীন্দ্রনাথের ১৫৮তম জন্মদিন উপলক্ষে ২০ জন শিল্পী একক ও সমবেত ভাবে ২৪টি গান পরিবেশন করেন। ‘পূজা’ পর্যায়ের গানগুলি নির্দিষ্ট কোনও ভাব অনুসরণ করে পরিবেশিত না হলেও প্রতিটি গানেই ছিল বিশ্বকবির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। যদিও সব শিল্পীর গান মানোত্তীর্ণ হয়নি। অনেককেই এখনও শিক্ষার্থী বলে মনে হয়েছে। তবু তারই মধ্যে ভাল লাগে ‘তোমায় নতুন করে পাব বলে’, ‘মহাবিশ্বে মহাকাশে’, ‘তোমার সুর শুনায়ে’, ‘সুখে আমায় রাখবে কেন’, ‘যদি প্রেম দিলে না’, ‘তোমারে জানিনে হে’, ‘আমি যখন তাঁর দুয়ারে’, ‘আরও আঘাত সইবে’ ইত্যাদি গানগুলি, যা পরিবেশন করেছেন যথাক্রমে দূর্বা বন্দ্যোপাধ্যায়, তনিমা ঘোষ, রুমা দাস, পাপড়ি ভট্টাচার্য, শুভঙ্কর মণ্ডল, বন্দনা ভট্টাচার্য, নীলাঞ্জনা পান ও অনিন্দিতা অধিকারী। সমবেত ভাবে পরিবেশিত ‘আকাশ জুড়ে’, ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’, ‘আমি যখন তাঁর দুয়ারে’ এবং ‘পথ এখনও শেষ হল না’— এই চারটি গানই সুগীত। গানের সঙ্গে সঙ্গতি বজায় রেখে গানগুলির মাঝে মাঝে সুপ্রযুক্ত পাঠ করেছেন পূষণ চট্টোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে চারটি গান পরিবেশন করেন সুব্রত সেনগুপ্ত। পরিচ্ছন্ন পরিবেশনায় ও পরিশীলিত কণ্ঠে গাওয়া ওঁর প্রতিটি গানই শ্রোতাদের মনকে স্পর্শ করে। যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীদের সহযোগিতা ছিল যথাযথ। অনুষ্ঠানটি সযত্ন পরিচালনা করেন সুব্রত সেনগুপ্ত।

কাশীনাথ রায়

অনুষ্ঠান

• সম্প্রতি উত্তরপাড়া গণভবন হলে শ্রী ডান্সিং গ্রুপ আয়োজন করেছিল একটি মনোজ্ঞ বার্ষিক অনুষ্ঠানের। অংশগ্রহণ করেন প্রিয়ব্রত খাঁ, নমিতা রায়, শিল্পা মঠ, প্রত্যাশা সামন্ত, চৈতালী সিংহ, লক্ষ্মীকান্ত দাস, তমাল ভাণ্ডারী, স্নেহা হালদার, লহমা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন প্রসেনজিৎ মঠ, স্বপন বসু, জুন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সেঁজুতি দাস। ব্যবস্থাপনায় রাজদীপ সামন্ত। সমগ্র অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা এবং কোরিয়োগ্রাফির দায়িত্বে ছিলেন পার্থ দাস।

• গ্যালারি গোল্ডে সঙ্গীতশিল্পী নিশীথ সাধুর স্মৃতির উদ্দেশ্যে আয়োজিত হল একটি সঙ্গীতানুষ্ঠান। আয়োজন করেছিল দীপালিকা সঙ্গীতালয়। অংশগ্রহণ করেছিলেন ডালিয়া মুখোপাধ্যায়, সাবর্ণী কর, আনন্দিতা সাহা, জবা মুখোপাধ্যায়, মোনালিসা কুণ্ডু-সহ সংস্থার শিল্পীরা। উপস্থিত ছিলেন অরুণাভ রায়, সজল মাইতি, মালবশ্রী দাস প্রমুখ। গোটা অনুষ্ঠানটি পরিকল্পনা করেছিলেন সুপর্ণা ঘোষ।

• সম্প্রতি বাংলা আকাদেমি সভাঘরে দু’দিন ব্যাপী আয়োজিত হল কাব্য-শ্রুতি উৎসব। আয়োজন করেছিল কাব্যপথিক এবং পর্ণশ্রী রূপকল্প। অংশগ্রহণ করেন রঞ্জন সেন, অমিতাভ ভট্টাচার্য, চৈতালী হালদার, মিঠু বসু, কঙ্ক ভট্টাচার্য, তিন্নি চট্টোপাধ্যায়, তন্ময়কুমার বক্সী, দেবায়নী পাল, শান্তনু পাল প্রমুখ। অনুষ্ঠানে আবহ প্রদান করেছেন আশিস ঘোষ। সঞ্চালনায় ছিলেন শান্তনু পাল, প্রীতিশেখর, মৈত্রেয়ী রায়, তাপস ভট্টাচার্য প্রমুখ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সৌম্যেন বসু। তিনি আলোচনায় অংশ নেন।

Shows Drama Theatre Painting
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy