Advertisement
E-Paper

অকৃপণ প্রকৃতি

উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচল প্রদেশকে প্রকৃতি বড় যত্ন করে সাজিয়েছে। এখানকার অন্যতম সুন্দর জায়গা তাওয়াং। সেই পথে যেতে যেতে প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্য উপভোগ করলেন ঊর্মি নাথউত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচল প্রদেশকে প্রকৃতি বড় যত্ন করে সাজিয়েছে। এখানকার অন্যতম সুন্দর জায়গা তাওয়াং। সেই পথে যেতে যেতে প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্য উপভোগ করলেন ঊর্মি নাথ

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৭ ২৩:৫৪
বৌদ্ধদের পবিত্র লেক সে লা

বৌদ্ধদের পবিত্র লেক সে লা

মাইলের পর মাইল সবুজ পাহাড়, ঝকঝকে নীল আকাশ, অগুনতি পাহাড়ি ঝরনা, প্রাকৃতিক হ্রদ, নানা রঙের ফুল, পাখি, প্রজাপতি… না, কোনও সিনেমার দৃশ্য নয়। উত্তর পূর্ব ভারতের অরুণাচল প্রদেশ। হাতে সময় মাত্র ১১ দিন। এই ক’টা দিনে গোটা অরুণাচল ঘুরে দেখা অকল্পনীয়। তাই বেছে নিয়েছিলাম অন্যতম সুন্দর জায়গা তাওয়াং।

যাত্রা শুরু হল অসমের গুয়াহাটি থেকে। বিমানবন্দর থেকে সোজা গাড়ি নিয়ে ভালুকপং। অক্টোবর মাস বলেই চোখে পড়ল ব্রহ্মপুত্র নদের দুই চর কাশফুলে সাদা হয়ে আছে। ভালুকপংয়ে জিয়াভরলি নদীর চরও ভরে আছে কাশফুলে। ভালুকপং অসম ও অরুণাচলের সীমান্ত। এখানেই সেনাবাহিনীর কাছে ছাড়পত্র দেখিয়ে অরুণাচলে ঢুকতে হয়।

ভালুকপংয়ের পর যাত্রা শুরু বোমডিলার উদ্দেশে। পাঁচ ঘণ্টার রাস্তা। এই পথেই টিপি অর্কিড রিসার্চ সেন্টার। বিভিন্ন ধরনের গাছ ও অর্কিড থাকার জন্য নানা ধরনের পাখি ও প্রজাপ্রতি চোখে পড়বে। অসমের সীমা পেরোতেই জিয়াভরলির নাম বদলে হল কামিং। টিপির অরণ্য দেখে আবার পথ চলা। যেতে-যেতেই চোখে পড়ল পিকচার পোস্টকার্ডের মতো টেঙ্গা ও রূপা ভ্যালি। বোমডিলা পৌঁছতে বিকেল হয়ে গেল। হোটেলে না ঢুকে চলে গেলাম কনে-দেখা আলোয় বোমডিলা মনাস্ট্রির মায়াবী রূপ দেখতে।

তাওয়াং ওয়ার মেমোরিয়াল

বোমডিলা থেকে ভোরে বেরিয়ে পড়তে হল ১০ হাজার ফুট উপরে তাওয়াংয়ের উদ্দেশে। পথে পড়ল সে লা। তিব্বতি ভাষায় ‘লা’ মানে হ্রদ। বৌদ্ধদের কাছে এই হ্রদ বড় পবিত্র। বিরাট এই হ্রদের প্রকৃতি মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিল অনেকক্ষণ। সে লা-র পর রাস্তা বেশ খারাপ। বাড়তে লাগল ঠান্ডা, পথ ঢেকে গেল কুয়াশায়। নভেম্বর মাস থেকেই এই অঞ্চলে বরফ পড়তে শুরু করে। কপাল ভাল থাকায় অক্টোবরেই তুষারপাত দেখতে পেলাম। পাহাড় ঢেকে আছে লাল-হলুদ সবুজ রঙের গুল্ম আর ব্লু-পপি ফুলে।

এই লম্বা জার্নিতে মাঝে-মাঝে বিরতি নিতেই হয় আর্মি ক্যাম্পগুলিতে। পর্যটকদের জন্য এখানে আছে ওয়াশরুম, ক্যান্টিন এবং প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার দোকান। সে লা-র পর থামা হল যশবন্ত গড়ে। ১৯৬২ সালে ইন্দো-চিন যুদ্ধে, ভারতীয় সেনা যশবন্ত সিংহ রাওয়ত একা তিন দিন ধরে চিনা সেনার বিরুদ্ধে লড়াই করে শহিদ হয়েছিলেন। তাঁরই স্মরণে এই গড়। তিনটে দিন তাওয়াংয়ের জন্য বরাদ্দ। দীর্ঘ যাত্রার পরে, প্রথম দিন প্রাতরাশে গরম মোমো-স্যুপ খেয়ে যাওয়া হল স্থানীয় বাজারে। মার্কেটে স্থানীয় কিছু জিনিস কেনাকাটার পর দেখতে গেলাম ‘তাওয়াং ওয়ার মেমোরিয়াল’। ইন্দো-চিন যুদ্ধে শহিদ ভারতীয় সৈনিকদের স্মরণে এই মেমোরিয়াল।

জঙ্গ ফল্স্

১৬৮০-৮১ সালে তৈরি হয়েছিল ভারতের সবচেয়ে বড় এবং এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধ মঠ তাওয়াং মনাস্ট্রি। বর্তমান দলাই লামা তিব্বত থেকে ভারতে আসার সময় এই মনাস্ট্রিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। লাইব্রেরি, ক্যান্টিন, স্কুল, হস্টেল, অতিথিশালা নিয়ে যেন ছোটখাটো একটা গ্রাম এই মনাস্ট্রি। এই মঠটির কাছেই বৌদ্ধ সন্ন্যাসিনীদের মঠ। দেখা হল, ষষ্ঠ দলাই লামার জন্মস্থানও। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন তাওয়াং শহরটির মতোই সুন্দর এখানকার মানুষেরা ব্যবহারও। রেস্তরাঁয় খাবারের মানও বেশ ভাল।

ভারতীয় সেনার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে যাওয়া হল ভারত-চিন সীমান্ত ‘বুম লা’। উচ্চতা ১৬ হাজার ৫০০ ফুট। বুম লা থেকে ফেরার পথে থামা হল সাংগিটসার লেকে। শাহরুখ খান ও মাধুরী দীক্ষিতের ‘কোয়েলা’ ছবির একটি গানের দৃশ্য এখানে শ্যুট হওয়ার পরই লোকমুখে এর নাম হয়ে যায় মাধুরী লেক।

তাওয়াং থেকে এবার ফেরার পথে থাকা হল ছোট্ট ছিমছাম শহর দিরাংয়ে। যেখানে আসার পথে দেখলাম জঙ্গ ফল্‌স। এ যেন নায়াগ্রা ফল্্সের মিনিয়েচার! দিরাংয়ের শিপ ব্রিডিং ফার্ম ও অ্যাপেল অর্চার্ডের শান্ত পরিবেশ মনোরম। দিরাংয়ের পর সেসা। সেসার পরই গুয়াহাটি হয়ে ব্যাক টু দ্য প্যাভিলিয়ন। তাওয়াং ও দিরাং পাখি আর প্রজাপতি প্রেমীদের জন্য আদর্শ জায়গা।

ভালুকপং থেকে তাওয়াং, বিশ্বাস করতেই হল, পথে একটা ম্যাগনেটিক পাওয়ার আছে। আপনাকে প্রমিস করিয়েই নেবে আবার আসার!

ফোটো: লেখক

কীভাবে যাবেন

বিমানে গুয়াহাটি, তেজপুর বা ইটানগর পৌঁছে সেখান থেকে গাড়িতে। চাইলে গুয়াহাটি ট্রেনেও যাওয়া যায়।

মনে রাখুন

কলকাতা, বোমডিলা বা ইটানগর থেকে সফরের জন্য গাড়ি ও হোটেল আগেই বুকিং করুন। সেই সঙ্গে বর্ডার পাসও।

Travel Destination Tours and Travels
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy