মডেল: অঙ্কিতা, মেকআপ: সন্দীপ নিয়োগী, ছবি: অমিত দাস
বয়সের চাকা বার্ধক্যের দিকে ছুটছে, তা প্রথম ধরা পড়ে চুলের ফিকে হওয়া রঙে। তবে আধুনিক জীবনের গতি এতটাই বেশি যে, বয়স না হলেও ‘বার্ধক্য’ আগাম কড়া নাড়ে। বছর তিরিশের যুবক-যুবতী, অনেক টিনএজারেরও চুল কম বয়সে পাকতে শুরু করে। এবং শারীরিক কারণে সমস্যা শুরু হলেও ক্রমশ তা মানসিক দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে ওঠে। কম বয়সে চুল পেকে যাওয়াকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে, প্রিম্যাচিয়োর ক্যান্যাইটিস। আধুনিক লাইফস্টাইলের পাশাপাশি এ সমস্যার কারণ কিন্তু অনেকটাই জিনগত।
কী কী কারণে কম বয়সে চুল পাকে?
• শতকরা ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রে সমস্যা জিনগত। বাবা-মায়ের কোনও একজন বা দু’জনেরই যদি অল্প বয়সে চুল পেকে থাকে, সন্তানদের ক্ষেত্রে সেই সম্ভাবনা থাকবেই। তবে অনেক বাবা-মা অভিযোগ করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে সমস্যা তিরিশের কোঠায় শুরু হয়েছিল। ছেলে-মেয়ের টিনএজেই চুল পেকেছে। এ প্রসঙ্গে চিকিৎসকের মত, জিনের বাহ্যিক অভিব্যক্তি (জেনেটিক ইনফর্মেশন কনসেনট্রেশন) কেমন হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। যদি একাধিক সন্তান থাকে, তবে তাদের অনেক আগে থেকেই চুল পাকতে শুরু করে।
বাকি পাঁচ শতাংশর ক্ষেত্রে সমস্যার মূলে শরীরে উপযুক্ত ভিটামিন-মিনারেলের অভাব।
• এখনকার শিশুরা জাঙ্ক ফুড খেতে অভ্যস্ত। অনেক সময়েই তাদের রোজকার ডায়েটে পর্যাপ্ত পরিমাণে সবুজ শাকপাতা থাকে না। যার ফলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অভাব হয়।
এর থেকেই অল্প বয়সে চুল পেকে যেতে পারে। আধুনিক জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ স্ট্রেস। এর ফলে শরীরে আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিডের অভাব হতে পারে। যার থেকে চুলে অকালপক্বতা দেখা যেতে পারে। লিভারের ধারাবাহিক সমস্যা থাকলেও কম বয়সে চুল পেকে যায়। তাই সে ক্ষেত্রে লিভারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাও জরুরি।
• লিউকোডার্মার সমস্যার প্রথম আভাস কিন্তু চুলের ক্ষেত্রেই ধরা পড়ে।
তবে এই সমস্যা পুরোপুরি জিনগত নয়। ২০ শতাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, উত্তরাধিকার সূত্রে লিউকোডার্মার সমস্যা হতে পারে। তাই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
চিকিৎসা পদ্ধতি
• এই সমস্যায় রোগীদের কাউন্সেলিংয়ের বিশেষ প্রয়োজন। বিশেষত স্কুল-কলেজের পড়ুয়া হলে ‘পিয়ার প্রেশার’ অনেক বেশি থাকে। তাই রোগী ও তার বাবা-মা সকলেরই এই বিষয়ে বিশেষ সজাগ হওয়া প্রয়োজন।
• পাকা চুল তুলে ফেললে পাকা চুল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে, এটা কিন্তু সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। যদি সামান্য কয়েকটা চুল সাদা হয়ে থাকে, তবে সেগুলো তোলার বদলে রুট থেকে কেটে ফেলাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
• চুল রং করতে হেনা-মেহেন্দির মতো ন্যাচারাল প্রডাক্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ কেমিক্যাল প্রডাক্টে অনেক ক্ষেত্রে অ্যালার্জির ভয় থাকে।
• ভিটামিনের অভাব দূরীকরণের জন্য ৬ মাস বা এক বছরের কোর্স করা যেতে পারে। এ ছাড়া রোজকার ডায়েটে সবুজ শাকপাতা বা টাটকা ফল থাকা ভীষণ ভাবে জরুরি।
যে সমস্যার উপর আপনার হাত নেই, তা নিয়ে ভেবে ভেবে চুল আরও সাদা করে ফেলার কোনও প্রয়োজন নেই। তবে আপনি যা করতে পারেন, তা হল খাদ্যাভাসে বদল ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন। আর চুল রং করা এখন ফ্যাশন। সমস্যার জন্য হোক বা মনের খুশিতে হোক, চুল রাঙিয়ে নেওয়ার সুযোগ তো সব সব সময়ই রয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রেও কী প্রডাক্ট ব্যবহার করছেন, তা নিয়ে অবশ্যই সতর্ক হবেন।
তথ্য সহায়তা: ডা. সন্দীপন ধর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy