Advertisement
E-Paper

হজমের সমস্যায় আসন ও ডায়েট

কখনও খাবার খেলেই বদহজম, আবার না খেলে অস্বস্তি। হজমের সমস্যায় নিস্তার পাবেন কী ভাবে?কখনও খাবার খেলেই বদহজম, আবার না খেলে অস্বস্তি। হজমের সমস্যায় নিস্তার পাবেন কী ভাবে?

রূম্পা দাস

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৯ ০৮:২৮
মডেল: শ্রীময়ী ঘোষ; ছবি: দেবর্ষি সরকার মেকআপ: অভিজিৎ পাল; পোশাক: ওয়েস্টসাইড, পার্ক স্ট্রিট

মডেল: শ্রীময়ী ঘোষ; ছবি: দেবর্ষি সরকার মেকআপ: অভিজিৎ পাল; পোশাক: ওয়েস্টসাইড, পার্ক স্ট্রিট

বাঙালির হজমের সমস্যা নতুন নয়। ভাজা-পোড়া-ভর্তা-ঝাল-ঝোল-অম্বলে অভ্যস্ত বাঙালির পেট ও হজমের সমস্যা চিরকালীন। কিন্তু স্বাস্থ্য সচেতনতার যুগে দৈনন্দিন জীবনে অতিরিক্ত তেলমশলা অনেকেই এড়িয়ে চলেন। তা হলে কেন এ ধরনের সমস্যা?

আসলে গলদটা গোড়াতেই। স্পষ্ট করে বললে, অনিয়মিত খাওয়াদাওয়ার ফলে তৈরি হয় হজমের সমস্যা। আবার এই সমস্যা দু’রকমের— ইনডাইজেশন এবং ম্যালঅ্যাবজ়র্পশন। অতিরিক্ত খেলে এবং তা হজম করতে না পারলেই বদহজম হয়। আবার ম্যালঅ্যাবজ়র্পশনে গৃহীত খাদ্যের অংশ শরীর নিতেই পারে না। অর্থাৎ যা খাওয়া হচ্ছে, তা-ই শরীর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।

যাঁরা হজমের সমস্যায় ওষুধের উপরে নির্ভরশীল, ক্রমশ তাঁদের সমস্যা পরিণত হয় ক্রনিকে। চিকিৎসক, ডায়াটিশিয়ানদের মতে, জীবনযাপনের অনিয়মিত ধারা বদলাতে পারলে সমস্যার সুরাহা হয়। আবার ঘরোয়া ব্যায়ামের নিয়মিত অভ্যেস শরীরকে সুস্থ করে তুলতে পারে।

প্রসঙ্গ আসন

সুস্থ জীবনযাপন করতে গেলে শরীর ভাল রাখা জরুরি। শরীর যতটা সচল থাকবে, ততটাই ভাল। যোগ বিশেষজ্ঞ দীপেন সেনগুপ্ত বলছেন, ‘‘আসন বা ব্যায়াম মাত্র এক দিনেই সমস্যা সারিয়ে ফেলে, এমনটা নয়। আসন আসলে অভ্যেস। রোজ নিয়ম মেনে করা জরুরি। প্রাথমিক ভাবে হয়তো এর ফল বোঝা যাবে না। কিন্তু রোজ করতে থাকলে আসন করার ফল পাওয়া যাবেই।’’ রইল এমন আসন, যা পেটের সমস্যা কমায়।

• প্রাণায়াম: যাঁরা ব্যায়ামে অভ্যস্ত এবং যাঁরা একেবারেই আসন করেন না, তাঁরা সকলেই শুরু করতে পারেন প্রাণায়াম দিয়ে। মাটির উপরে পা মুড়ে বসার সময়ে যে একেবারে পদ্মাসনেই বসতে হবে, তা বাধ্যতামূলক নয়। যে ভাবে বসলে আরাম পাবেন, সেই ভাবেই বসুন। তবে শিরদাঁড়া থাকবে টানটান। শিরদাঁড়া, ঘাড়, মাথা সোজা করে বসে চোখ বুজে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হবে জোরে জোরে। ১০-১৫ বার শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার প্রক্রিয়া চালাতে হবে। এটি প্রথম সপ্তাহে দশ বার করতে পারেন। দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ১৫ বার অবধি করা যায়। এই প্রাণায়াম শরীরের প্রত্যঙ্গে রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে। কনস্টিপেশন, ডায়ারিয়া, গ্যাসট্রিক, বদহজম, পেটব্যথাও সারায়।

• ভুজঙ্গাসন: মেঝেয় টানটান হয়ে পেটের উপরে শুয়ে, হাতের তালুতে চাপ দিয়ে আস্তে আস্তে কাঁধ দুটো তুলতে হবে। পায়ের গোড়ালি থাকবে জোড়া। শ্বাস-প্রশ্বাস থাকবে স্বাভাবিক। এটি করতে পারেন দিনে চার বার পর্যন্ত।

• বজ্রাসন: হাঁটু মুড়ে পায়ের উপরে বসতে হবে। হাত দু’টি রাখতে হবে হাঁটুর উপরে। মেরুদণ্ড থাকবে সোজা। দশ থেকে পনেরো অবধি গুনে বিশ্রাম নিতে হবে। এ ভাবে দিনে চার বার পর্যন্ত করা যেতে পারে বজ্রাসন।

• পবনমুক্তাসন: মাটিতে টানটান হয়ে শুয়ে একটি পা তুলতে হবে। হাঁটু মুড়ে তা নিয়ে আসতে হবে বুকের উপরে। ব্যালান্স রাখার জন্য দু’হাত দিয়ে হাঁটু চেপে ধরতে হবে। আট থেকে দশ বার গুনে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে হবে। দু’টি পায়েই করতে হবে এই আসন। দিনে মোট ছ’-আট বার করা যায়।

• উপবিষ্ট কোণাসন: মাটিতে সোজা হয়ে বসে দু’পা ছড়িয়ে দিতে হবে কোনাকুনি। দু’পায়ের পাতা ধরতে হবে দু’হাত দিয়ে। পা ধরতে গেলে নিচু হতে হবে। আট থেকে দশ গোনা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ফিরতে হবে স্বাভাবিক অবস্থায়। দিনে ছ’-আট বার করতে পারেন।

• শবাসন: মাটিতে টানটান হয়ে শুয়ে হাত ও পা ছড়িয়ে দিতে হবে। হাতের তালু মেঝের উপরে রাখা থাকবে। তিন-চার সেকেন্ড চোখ বুজে থাকার পরে চোখ খুলতে হবে। তিন চার সেকেন্ড পরে আবার বন্ধ করতে হবে। প্রত্যেক আসনের পরে শবাসন করা জরুরি। আসন করার সময়ে বেড়ে যাওয়া হৃদ্‌স্পন্দন স্বাভাবিক হয়, স্ট্রেস কমে, মাথা ঝিমঝিম দূর হয়।

ধীরে ধীরে করতে পারেন কুম্ভীরাসন, গোমুখাসন ইত্যাদি।

মেপে খান, সময়ে খান

হজমের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে জরুরি হল নিয়মিত সময়ে ঠিক মতো মেপে খাওয়া। যোগ ও অ্যাকিউপ্রেশার বিশেষজ্ঞ অনীশ রঘুপতি বলছেন, ‘‘যোগ এক ধরনের জীবনধারা। ফলে শুধু আসন নয়, সুস্থ থাকার জন্য দরকার ঠিক ডায়েটও। আর খাবার খাওয়া উচিত শরীরের জন্য, জিভের স্বাদের জন্য নয়।’’

ঘুমের ছ’-আট ঘণ্টা বাদ দিলে বাকি সময়টা জুড়ে ছ’বার খাবার খাওয়া ভাল। প্রাতরাশ, দুপুর ও রাতের খাবার ছাড়াও দু’টি মাঝারি ও একটি ছোট জলখাবার থাকতে পারে। ঘুম থেকে ওঠার এক ঘণ্টার মধ্যেই প্রাতরাশ করে নেওয়া দরকার। তাতে থাক ফল, কল বার করা ছোলা বা মুগ, কর্নফ্লেক্স, ডালিয়া, ডিম সিদ্ধ ইত্যাদি। বাঙালি বাড়ির দৈনন্দিন লুচি-পরোটা, পাউরুটি বাদ দেওয়াই ভাল। তেমন হলে জলে ভিজিয়ে মুড়ি খেতে পারেন। তাতে মিশিয়ে নিতে পারেন নুন, পেঁয়াজকুচি। আর ফল খেলে কলা, পেয়ারা, আম ও লিচু বাদ দেওয়া উচিত। খালি পেটে এ জাতীয় ফল শরীরের জন্য ঠিক নয়।

সকাল আটটা-সাড়ে আটটা নাগাদ প্রাতরাশ করলে, জলখাবার খেতে হবে দশটা থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে। তাতে কয়েকটি বাদাম বা একটি ছোট ফল ইত্যাদি চলতে পারে। সওয়া বারোটা নাগাদ অবশ্যই খান এক বাটি স্যালাড। স্বাভাবিক ভাবে পেট খানিকটা ভর্তি হয়ে যাবে। দুপুর দুটোর মধ্যে খাবার খেয়ে নেওয়া ভাল। বাড়ির সাধারণ হাল্কা ঝোল-ভাত খাওয়াই শ্রেয়।

দুপুরে খাওয়ার ঘণ্টা তিন-চারের মধ্যে চা খেতে পারেন। সন্ধের জলখাবার সেরে নিন সাড়ে পাঁচটা-ছ’টা নাগাদ। তবে রাস্তার তেলেভাজা, অতিরিক্ত মশলাদার বা ভীষণ শুকনো খাবার এড়িয়ে যান। বরং খেতে পারেন চিঁড়ে ভাজা। তাতে মিশিয়ে নিতে পারেন অল্প বাদামও। তেলেভাজা খেতে নিতান্ত ইচ্ছে হলে, সঙ্গে অবশ্যই মুড়ি খান। তবে বদহজমের সমস্যা চলাকালীন তেলেভাজা বর্জন করুন। আবার দুপুরের খাবার খেতে যদি দেরি হয়, তা হলে এড়িয়ে যান সন্ধের জলখাবারটাও।

রাতের খাবার অবশ্যই সাড়ে আটটার মধ্যে শেষ করা উচিত।

এক নজরে

• খেতে খেতে টিভি দেখা, বই পড়া, আড্ডায় মেতে না থাকাই ভাল। অতিরিক্ত খাবার খাওয়া হয়ে যেতে পারে।

• খিদে নেই, অথচ খেতে হবে বলে খাচ্ছি— এই মনোভাবও ঠিক নয়।

• যোগের মতে, খাবার খাওয়ার সময়ে খেয়াল রাখা উচিত ইংরেজি V আকারের কথা। প্রাতরাশ হবে ভারী, সময় বাড়ার সঙ্গে কমতে থাকবে খাবারের পরিমাণ।

• টেবিল-চেয়ার ছেড়ে মাটিতে বাবু হয়ে বসে খেলে খাবার হজমে সাহায্য করে।

• পুরো পেট না ভরে খেয়ে ৮৫ শতাংশ খান। অল্প জায়গা ফাঁকা রেখে অপেক্ষা করুন। খাওয়ার মিনিট পাঁচেক পরে বুঝবেন, আপনার পেট ভর্তি হয়ে গিয়েছে।

• খাবার খাওয়ার ঠিক পরেই ঢকঢক করে গ্লাসভর্তি জল খাওয়া উচিত নয়। আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করে জল খান।

• পেটের ভিতরের তাপমাত্রা সাধারণত ভীষণ বেশি থাকে। যাকে যোগের ভাষায় বলা হয় জঠরাগ্নি। কখনওই অতিরিক্ত ঠান্ডা বা অতিরিক্ত গরম খাবার খাওয়া উচিত নয়। সেই তাপমাত্রার ভারসাম্য হারালে পেটের সমস্যা শুরু হয়। তাই এড়িয়ে যান ফ্রিজ থেকে বার করে আনা কোল্ড ড্রিঙ্ক, আইসক্রিম বা ফুটন্ত চা-কফি।

হজমের সমস্যা ছাড়া অন্য শারীরিক সমস্যা থাকলে অবশ্যই যোগ বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া দরকার। একই কথা প্রযোজ্য অন্তঃস্বত্ত্বা নারীর ক্ষেত্রেও। পেটের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে সুস্থ জীবনযাপনই বিকল্পহীন।

Diet Yoga Digestion System Fitness
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy