US Vice President JD Vance’s wife Usha became popular during their trip in India dgtl
Usha Vance
‘ঊষা-আলো’য় জীবন বদলায় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের, ভারতে এসেও আলোকবৃত্তে ভান্স-ঘরনি
স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে ভারত সফরে এসেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স। তাঁর স্ত্রী ঊষা ভারতীয় বংশোদ্ভূত হওয়ায় রাতারাতি খবরের শিরোনামে চলে এসেছেন।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ১০:২০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
সস্ত্রীক ভারত সফরে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তাঁরা। ভান্স দম্পতির সঙ্গে ছিল তাঁদের দুই পুত্র এবং এক কন্যা। মোদীর উষ্ণ অভ্যর্থনা এবং আতিথেয়তায় মুগ্ধ তাঁরা। জেডির স্ত্রীর ঊষা আবার ভারতীয় বংশোদ্ভূত। প্রথম বার স্বামী-সন্তানের সঙ্গে মাতৃভূমিতে পা রেখেছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, এ দেশে আসা ইস্তক ঊষা যাবতীয় ‘স্পটলাইট’ কেড়ে নিয়েছেন বললেও অত্যুক্তি হবে না।
০২১৮
ওয়াশিংটন থেকে দিল্লি পৌঁছেই অক্ষরধাম মন্দিরে চলে যান ভান্স দম্পত্তি। সেই সময় তাঁদের তিন সন্তানের পরনে ছিল পুরোদস্তুর ভারতীয় পোশাক। মন্দিরের চাতালে ফুলের মালা পরে সস্ত্রীক ছবি তোলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট। ওয়াশিংটনে প্রচারের আড়ালে থাকা ঊষা এর পরই চলে আসেন সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে।
০৩১৮
দিল্লি থেকে জয়পুরের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যান ভান্স দম্পতি। সেখানে বক্তৃতা শুরু করার ঠিক আগের মুহূর্তে অক্ষরধাম মন্দিরের প্রসঙ্গ তোলেন জেডি। অনুষ্ঠানমঞ্চের একেবারে সামনের সারিতে বসেছিলেন তাঁর স্ত্রী। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ঠিক করেন, তাঁর বক্তব্যে দেবালয় দর্শনের প্রসঙ্গে টানবেন। আর তাই মন্দিরটির নামের উচ্চারণ ঠিক হচ্ছে কি না, তা ঊষাকে জিজ্ঞাসা করেন জেডি।
০৪১৮
স্ত্রীর কল্যাণে ‘হিন্দু’ রীতিনীতির সঙ্গে বেশ ভাল পরিচয় রয়েছে ভান্সের। সনাতন ধর্মটিকে তিনি যে শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখেন, বহু বার তা প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছেন তিনি। জীবনের প্রতিটা চড়াই-উতরাইয়ে ৩৯ বছরের আইনজীবী ‘ভারতীয়’ স্ত্রীকে পাশে পেয়েছেন তিনি। জয়পুরের অনুষ্ঠানেও তার ব্যতিক্রমী কোনও দৃশ্য চোখে পড়েনি।
০৫১৮
মরুরাজ্যের অনুষ্ঠানে গিয়ে একটি টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দেন মার্কিন সেকেন্ড লেডি। সেখানে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ব্যাপক প্রশংসা করেন ভান্স-পত্নী ঊষা। বলেন, ‘‘মা-বাবার জন্মভূমিতে এসে সকলের মনোযোগ কেড়ে নিতে পেরেছি, এটা ভেবেই ভাল লাগছে। তাই এই সফরটা অন্য সব কিছুর থেকে আলাদা। সারা জীবনের অনন্য অভিজ্ঞতা হিসাবে এটা থেকে যাবে।’’
০৬১৮
স্বামী এবং তিন সন্তানের সঙ্গে এই প্রথম ভারত সফরে এলেন ভান্স-পত্নী ঊষা। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে তাঁর বাসভবনে দেখা করেন তাঁরা। পরে জয়পুর হয়ে জেডি পরিবার তাজমহল দেখতে উত্তরপ্রদেশের আগরায় চলে যান। মুঘল বাদশা শাহজাহানের তৈরি ওই জগদ্বিখ্যাত সৌধের সামনে দাঁড়িয়েও সপরিবার ছবি তোলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট।
০৭১৮
তাজমহল দর্শনকালেও জেডি-ঊষার ছেলেমেয়েদের গায়ে ছিল ভারতীয় পোশাক। ভান্স-পত্নী জানিয়েছেন, অনলাইনে অর্ডার করে সেগুলি কিনেছেন তিনি। ভারত সফরে এসে স্ত্রীকে রাতারাতি খবরের শিরোনামে চলে যেতে দেখে চুপ করে থাকেননি জেডি। জয়পুরে তিনি বলেন, ‘‘এখানে তো দেখছি ঊষা একজন সেলিব্রেটি। ওর জনপ্রিয়তা আমার চেয়ে বেশি।’’ প্রসঙ্গত, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন ফিটজেরাল্ড কেনেডিকে স্ত্রী জ্যাকলিনের সঙ্গে প্যারিস সফরকালে একই ধরনের মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছিল।
০৮১৮
উল্লেখ্য, একটা সময়ে ডেমোক্র্যাটিক দলের গোঁড়া সমর্থক ছিলেন ঊষা। কিন্তু, বর্তমানে সম্পূর্ণ উল্টো মেরুতে হেঁটে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন’ বা ‘মাগা’র প্রচারে গা ভাসিয়েছেন তিনি। ২০১৮ সালে যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ব্রেট কাভানাহ। সেই বিতর্কে অংশ নিয়ে প্রচারের আলোয় আসেন ভান্স দম্পতি।
০৯১৮
স্বামী জেডির মতো ঊষা কোনও দিনই সক্রিয় রাজনীতি করেননি। ইয়েল ল’ কলেজে থেকে আইনে স্নাতক হওয়ার পর বিচারপতি ব্রেটের দফতরে কেরানির চাকরি করতেন তিনি। ভান্সের সঙ্গে সেখানেই আলাপ হয় তাঁর। কাভানাহের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ঊষার অনেক সহকর্মীই বিচারপতির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এ ব্যাপারে একমাত্র প্রতিবাদী ছিলেন ভান্স-পত্নী।
১০১৮
গত বছর বিষয়টি নিয়ে ফক্স নিউজ়ের একটি অনুষ্ঠানে মুখ খোলেন ঊষা। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘এটা সত্যিই খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। এক বিচারপতির প্রতি আমজনতার মনোভাব রাতারাতি বদলে যেতে দেখেছি আমি। ওই সময় মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা বেশ কঠিন হয়ে উঠেছিল।’’
১১১৮
ভান্স-পত্নী ৪০-এ পা না দিলেও ভারতীয় বংশোদ্ভূত হওয়ায় তাঁর আলাদা সৌন্দর্য রয়েছে। সেটা যে কোনও চিত্রতারকার ঈর্ষার কারণ হতে পারে। ঊষার চুলের রং ধূসর। সব সময়ই অতি সাধারণ পোশাকে ঘুরতে পছন্দ করেন তিনি। পাশাপাশি, ভারতীয় ঐতিহ্য নিয়ে পড়াশোনা এবং গল্প করতে বা আড্ডা দিতে বেশ ভালবাসেন মার্কিন সেকেন্ড লেডি।
১২১৮
জয়পুরে টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ঊষা বলেন, ‘‘আমার মা-বাবা ভারত থেকে অগাধ পাণ্ডিত্য সঙ্গে নিয়ে আটলান্টিকের পারে পাড়ি জমিয়েছিলেন। তাঁরা বই ও শিক্ষাকে সব সময় প্রাধান্য দিয়েছেন। সেই আদর্শকে সামনে রেখেই আমাদের গড়ে তুলেছেন তাঁরা।’’
১৩১৮
ভান্স দম্পত্তির ঘনিষ্ঠেরা জানিয়েছেন, জেডির অন্যতম পরামর্শদাতা হলেন ঊষা। তাঁর রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের ক্ষেত্রে সেকেন্ড লেডির যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়েই হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওভাল অফিসে যাতায়াত করেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, দিনের মধ্যে যত্রতত্র ঘন ঘন জেডি-ঊষাকে একান্ত আলাপচারিতায় মগ্ন থাকতে দেখা যায়।
১৪১৮
এ ব্যাপারে অবশ্য মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের কোনও রাখঢাক নেই। তিনি যে স্ত্রীর পরামর্শ মেনে একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তা প্রকাশ্যে বলতে জেডির কোনও কুণ্ঠা বা লজ্জাবোধ নেই। কোনও বড় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার আগে অবশ্যই ঊষার মতামত নেন ট্রাম্পের এই ডেপুটি।
১৫১৮
জেডি জানিয়েছেন, সমাজমাধ্যম থেকে একটা সময় দূরেই থাকতেন তিনি। পরে ঊষার উৎসাহেই তাতে যোগ দেন। তাঁর বন্ধু তথা রক্ষণশীল আইনজীবীদের সংগঠন ‘টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা চার্লি কার্কও বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘‘জেডি সত্যিই ঊষার কথা শোনে। এটাই ওর চরিত্রের অন্যতম বড় গুণ।’’
১৬১৮
২০১৬ সালে প্রকাশিত হয় জেডির লেখা বই ‘হিলবিল এলিজি’। সেখানে ঊষার সঙ্গে দেখা হওয়া এবং তাঁদের বিবাহ-পূর্ব প্রেমের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট। প্রথম দর্শনেই তিনি যে ক্যালফোর্নিয়া নিবাসী তরুণীর রূপে ও গুণে মুগ্ধ হয়েছিলেন, তা জানাতে ভোলেননি ভান্স।
১৭১৮
গত বছর ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভান্স বলেন, ‘‘ঊষার সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর সব্জি খেতে শুরু করি। এটা যে পারব, তা কখনও ভাবিনি।’’ উল্লেখ্য, ভারতে এসে স্ত্রীর ইচ্ছামতো মিষ্টির পদ চেখে দেখেছেন তিনি। মিষ্টির রেসিপি ঊষা সঙ্গে করে আমেরিকা নিয়ে যাবেন বলে স্পষ্ট করেছেন জেডি।
১৮১৮
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের দাবি, ঊষার রান্নার হাত বেশ ভাল। একগুচ্ছ ভারতীয় পদ রান্না করতে পারেন তিনি। সেগুলি মায়ের কাছ থেকে শিখেছেন ঊষা। ২০২২ সালে ওহিও থেকে সেনেট নির্বাচিত হন ভান্স। রাজনৈতিক জীবনে এর পর আর তাঁকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তবে স্ত্রীর নীরব সমর্থন না পেলে যে সেটা হত না, ভারত সফরে এসে তা আরও একবার স্বীকার করলেন তিনি।