E-Paper

দুর্গানাম জপ করতে করতে মুখস্থ করেছিলাম আঙুলের হরেক সঙ্কেত

টেলিভিশন সম্বন্ধে কোনও ধারণাই নেই, অথচ প্রথম খবর পড়ার দায়িত্ব এসে পড়েছে কাঁধে! ফ্লোর ম্যানেজার আঙুলের ইশারায় সংবাদ-পাঠককে নির্দেশ দিতেন কখন শুরু করতে হবে, পড়ার গতি কখন বদলাতে হবে বা শেষ করতে হবে। লাইভ সম্প্রচারে একটু ভুল হলেই সর্বনাশ! গতকাল পঞ্চাশ বসন্ত পূর্ণ করল কলকাতা দূরদর্শন। তবু প্রথম দিনের কথা, মনে হয় যেন এই তো সেদিন!

তরুণ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৫ ০৭:৪৫
অনুষ্ঠান: দূরদর্শনের কোনও উদ্‌যাপনে সত্যজিৎ রায়, সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

অনুষ্ঠান: দূরদর্শনের কোনও উদ্‌যাপনে সত্যজিৎ রায়, সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

আর একটি স্মরণযোগ্য জন্মতিথি এল, কলকাতা দূরদর্শনের অর্ধশতক পূর্ণ হল। পিছনে রয়ে গেল পঞ্চাশ বছর, রূপময় অর্জনের কত না সঞ্চয় নিয়ে। পঞ্চাশ বছর তো খুব কম সময় নয়, স্মৃতিচিত্রশালা থেকে বড়ই দ্রুত পট যায় বদলে। তবু মনে হয়, এই তো সেদিনের কথা।

টালিগঞ্জে বাঙ্গুর হাসপাতাল পেরিয়েই বাঁ দিকের রাস্তা। মুখের কাছে জীর্ণপ্রায় রাধা স্টুডিয়োর গেট। তার দু’ধারে চিত্রিত দু’টি ঘটের উপর, আম্রপল্লব আর ফুলের মালা শোভা পাচ্ছে। ভিতরে ঢুকতেই প্রবীণ এক কাঠচাঁপায় ফুল ফুটেছে থরে থরে। খানিক সাফসুতরো করা হয়েছে স্টুডিয়োটি। অব্যবহৃত পড়েছিল অনেক বছর। সেই ১৯৩০ সালের পর আবার নব মহিমায় তার দ্বারোদ্ঘাটন। দিল্লি থেকে তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কয়েক জন কর্মকর্তা তো আগেই এসে গেছেন, আজ আসছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বিদ্যাচরণ শুক্ল। তিনিই অনুষ্ঠানের উদ্বোধক। চার দিকে ব্যস্ততা, উত্তেজনা, আনন্দ আর অজস্র কৌতূহলের মিশেলে অভিনব একটি দিন, ১৯৭৫ সালের ৯ অগস্ট।

যথাসময়ে মাঙ্গলিক প্রদীপ জ্বালিয়ে শ্রীশুক্ল উদ্বোধন করলেন ‘কলকাতা টেলিভিশন’-এর (প্রথমে এই নামই ছিল)। উপস্থিত ছিলেন এ রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, কলকাতা টেলিভিশনের প্রথম অধিকর্তা মীরা মজুমদার, আকাশবাণীর মহানির্দেশক ও পদস্থ আধিকারিকরা। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছিল। সেই সম্প্রচার ছিল সাদা-কালো। যত দূর মনে পড়ে, বছর খানেক পরেই কলকাতা টেলিভিশনের নামান্তর হয় ‘কলকাতা দূরদর্শন’ আর ১৯৮২ সালের ১৫ অগস্ট শুরু হয় রঙিন সম্প্রচার, লালকেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের মধ্য দিয়ে।

রাধা স্টুডিয়োর ঘরগুলি ছিল ছোট ছোট, স্বল্প পরিসর, সরঞ্জামও কোনও রকমে কাজ চালানোর মতো। শুরুতে সন্ধ্যা ছ’টা থেকে রাত সাড়ে ন’টা, মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টার সম্প্রচার হত। তা সত্ত্বেও কর্মীদের প্রবল উৎসাহ, আন্তরিকতা আর নিষ্ঠার দৌলতে সেদিনের কলকাতা টেলিভিশন খুব অল্প দিনেই বিপুল সামাজিক পরিসর অর্জন করে নিয়েছিল। ক’জনের ঘরেই বা টিভি-সেট তখন! কিন্তু যাঁর ঘরে এসেছে, সন্ধ্যা হলেই তাঁর ঘরে স্বজন-প্রতিবেশীরা ভিড় জমাতেন। তখনকার টিভি-সেটের স্ক্রিন ঢেকে রাখার ব্যবস্থা ছিল কাঠ বা প্লাস্টিকের আগল দিয়ে। চক্ষুপীড়া যাতে না হয় সে জন্য নির্দেশ ছিল টিভি-সেটের উল্টো দিকে, অর্থাৎ দর্শকদের মাথার পিছন দিকের উপরে আলো জ্বালিয়ে রাখার। আনকোরা নতুন জিনিস তো, তাই নানা মুনির নানা মত শোনা যেত টিভি দেখার ব্যাপারে।

অনেকেরই জানা, কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনে আকাশবাণী ও দূরদর্শন। যেমন ছিল প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো, পাবলিকেশন ডিভিশন, ফিল্ড পাবলিসিটি ইত্যাদি সংস্থা। এগুলির কোনও একটির আধিকারিক বা কর্মীকে প্রয়োজনে একই মন্ত্রণালয়ের অন্য সংস্থায় কাজ করতে পাঠানো যেত। কলকাতা টেলিভিশনের যাত্রা শুরু আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের হাত ধরেই। টিভির স্বতন্ত্র ব্যবস্থা তখনও গড়ে ওঠেনি, তাই প্রথমে বেশ কিছু দিন ইডেন গার্ডেনসে আকাশবাণী ভবনের দোতলার একটি ঘরে বসতেন টিভির কর্মকর্তা ও ইঞ্জিনিয়াররা। এই ব্যবস্থা ছিল সাতের দশকের শেষের দিক পর্যন্ত। তার আগে টিভির জন্য প্রায় সব খবরই সরবরাহ করা হত আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের সংবাদ বিভাগ থেকে। বনেদি এই প্রতিষ্ঠানের সংবাদদাতা আছেন যেমন রাজ্যের সব জেলাতেই, কলকাতার জন্যও আছেন স্থায়ী ও অস্থায়ী সংবাদদাতা। প্রতিদিন মহাকরণ, বিধানসভা, লালবাজার-সহ নানা জায়গা থেকে আকাশবাণী-র সংবাদদাতারা যে সব খবর আনতেন, তা থেকেই বাছাই করা কিছু খবর টেলিফোনে পাঠিয়ে দেওয়া হত রাধা স্টুডিয়োর টিভি সেন্টারে। আকাশবাণীর বার্তা সম্পাদকরাই প্রথম দিকে টেলিভিশনের সংবাদ বিভাগে কাজ করেছিলেন।

১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি যোগ দিয়েছিলাম আকাশবাণী-র সংবাদ পাঠক হিসেবে। কলকাতা টেলিভিশনের উদ্বোধনের মাত্র চার-পাঁচ দিন আগে আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয় প্রথম দিনের খবর পড়ার। অথচ টেলিভিশন ব্যাপারটা যে কী, তার কোনও ধারণাই তখন আমার ছিল না। কিন্তু কর্তৃপক্ষের নির্দেশ বলে কথা! অগত্যা দুর্গানাম জপ। একে অচেনা অজানা টেলিভিশন, তার উপর সেখানে খবর পড়া— সে এক বিচিত্র মিশ্র অনুভূতি। ভয় সেদিন একটাই, ভিতরের সঙ্কট যেন অনাবৃত হয়ে না পড়ে।

উদ্বোধনের দিন তিনেক আগে রাধা স্টুডিয়োতে গিয়ে দেখে এলাম কোথায় বসে খবর পড়তে হবে। জানলাম, আমার সামনে ক্যামেরাম্যান, তাঁর বাঁ দিকে দাঁড়িয়ে থাকবেন ফ্লোর ম্যানেজার। স্টুডিয়োর বাইরে, প্রাঙ্গণের এক ধারে তখন থাকত একটি ওবি ভ্যান বা আউটসাইড ব্রডকাস্টিং ভ্যান। সেখান থেকেই প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হত ফ্লোর ম্যানেজারকে। হেডফোনে শুনে তিনি সংবাদ-পাঠককে নির্দেশ দিতেন কখন শুরু করতে হবে পড়া, থামতে হবে কখন, খবর পড়ার গতি কখন কমাতে বা বাড়াতে হবে এবং জানাবেন, শেষ করার সময়ও। এ সবই তিনি জানাবেন অঙ্গুলি সঙ্কেত বা হাতের ইশারায়। কথা বলার তো উপায় নেই, কেননা সংবাদ সম্প্রচার যে লাইভ! সরাসরি! সেদিন থেকেই সঙ্কেতগুলি মনে মনে মুখস্থ করতে লাগলাম। প্রমাদও গুনলাম, ভুল না হয়! একে তো প্রথাগত কোনও প্রশিক্ষণ ছিল না, তার উপর যা কিছু অভিজ্ঞতা, সবই রেডিয়োর। বেতারের খবরে শব্দের আধিপত্য, টেলিভিশনে কিন্তু ছবিই প্রধান, কথাগুলি চলবে তার সঙ্গে সঙ্গত করেই। খবরের সঙ্গে ছবির এই যে মেলবন্ধন, বেতারের সংবাদ-পাঠক হিসেবে এ ব্যাপারটাই প্রথমে আমাকে ভাবিয়েছিল। রপ্ত করতেও বেশ কিছু দিন লেগেছিল। প্রথম দিকে কিন্তু সংবাদ পাঠের আগে প্রোডিউসারদের কাছে গিয়ে এডিট করা ছবিগুলো দেখার সুযোগ খুব একটা মিলত না। তখন অবশ্য ছবিও থাকত খুব কম। থাকলে, সংশ্লিষ্ট খবরটির পাশে লেখা থাকত ‘হোল্ড’ শব্দটি।

আর একটি বিষয় বেশ ভাবিয়েছিল। আকাশবাণী-র স্টুডিয়ো থেকে যখন খবর পড়ি, তখন তো থাকি শ্রোতাদের অন্তরালে। হাঁচি, কাশি এলে ইচ্ছেমতো ফেডার নামিয়ে সে-সব থেকে স্বস্তির ব্যবস্থা করতে পারি। মাথা কুটকুট করলে কিংবা গা, হাত চুলকোলে, সে-সব সমস্যারও অনায়াস সমাধান হতে পারে স্টুডিয়োর অদৃশ্যলোক থেকেই। কিন্ত এ-সব ক্ষেত্রে টেলিভিশন যে ক্ষমাহীন একেবারেই। দর্শক-শ্রোতারা যে সরাসরি দেখতে পান সংবাদ-পাঠককে! এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল এক বার এক বিপত্তির কথা। সেদিন খবর পড়ছি, হঠাৎই বেআক্কেলে একটা মাছি কোত্থেকে উড়ে এসে বসে পড়ল একেবারে আমার নাকের ডগায়। আবার শুধু বসেই ক্ষান্ত নয়, হতচ্ছাড়া মৃদু পদচারণাও শুরু করে দিল। স্বভাবতই প্রবল অস্বস্তিকর অবস্থা, অথচ কিছু করতে পারছি না। হাত দিয়ে তাড়াতে গেলে যেই মুখের উপর হাত আসবে, নিমেষের জন্য হলেও মুখাবয়বের কিয়দংশ তো ঢাকা পড়বেই। আবার এ ব্যাপারে বিধিনিষেধও স্মরণে আছে। ও দিকে ফ্লোর ম্যানেজার সম্ভবত তখনও কোনও বিশেষ নির্দেশ পাচ্ছেন না যে আমাকে সাহায্য করবেন। কী করি কী করি ভাবতে ভাবতে এক সময় বেপরোয়া হয়েই ত্বরিত গতিতে হাত নেড়ে সেই অপোগণ্ডটাকে বিদায় করলাম। পরদিনই একটি সংবাদপত্রে ছোট্ট এক টুকরো খবরও ছাপা হয়েছিল। এক ভদ্রলোক তাঁর টিভির পর্দায় মাছি বসেছে ভেবে, এক টুকরো কাপড় দিয়ে বার বার সেটাকে তাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। খানিক পরেই অবশ্য তাঁর ভুল ভেঙেছিল।

শুরুতে সপ্তাহে চার-পাঁচ দিনও খবর পড়তে হয়েছে টেলিভিশনে। কখনও সকালে আকাশবাণী-র ডিউটি সেরে, সন্ধ্যায় রাধা স্টুডিয়ো থেকে খবর পড়ে, ফের মেক-আপ না মুছেই ছুটতে হয়েছে আকাশবাণী ভবনে, রাতের খবর পড়তে। আমাদের বার্তা বিভাগের এডিটর আমার ডিউটির সময় ঠিক করে দিতেন। তখন দু’দিক সামলে কাজ করা ছিল অবশ্যই আমার সানন্দকৃত্য। ১৯৮৬ সালের পয়লা জুলাই থেকে কলকাতা দূরদর্শনের স্থায়ী ঠিকানা হয় গল্‌ফ গ্রিন, ১৮/৩ উদয়শঙ্কর সরণি।

আমুদে কত অধ্যায়ও রচিত হত সেই দিনগুলোয়। তাই নিয়েই স্মৃতির কিছু আঁকিবুকি কাটা চলে মনে। কলকাতা টেলিভিশন, অর্থাৎ দূরদর্শন ছাড়া যে হেতু তখন অন্য কোনও চ্যানেল ছিল না, তাই টিভিতে, বিশেষ করে সংবাদ পাঠক-পাঠিকা, ঘোষক-ঘোষিকাদের মতো নিয়মিত দেখা যেত যাঁদের, তাঁরা হয়ে উঠেছিলেন চিত্রতারকাসদৃশ। বাসে চড়া-ও অনেক সময় তাঁদের পক্ষে বিড়ম্বনার হত। অবাঞ্ছিত প্রশ্ন এড়াতে, দায়ে পড়ে অনেক সময় ট্যাক্সি নিতে হত। আসলে টেলিভিশন সম্পর্কে তখন সাধারণের মধ্যে কৌতূহল ছিল প্রবল। সে সময় দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে বেশ মজার একটা খেলাও চালু হয়েছিল— ‘আজ কে খবর পড়বে’— এই নিয়ে বাজি ধরা। সেদিনকার হাতে-গোনা কয়েক জন সংবাদ-পাঠক বা ঘোষক— সবাই প্রায় হয়ে উঠেছিলেন বাংলার মানুষের আপনজন।

টিভির বছর চারেক আগে থেকে রেডিয়োতে খবর পড়া শুরু করলেও মানুষ আমাকে চিনেছিলেন টেলিভিশনের দাক্ষিণ্যেই। পথে অনেকেই জানতে চাইতেন, রেডিয়ো আর টেলিভিশনের আমি একই ব্যক্তি কি না। সবচেয়ে বেশি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হত, প্রথম টেলিপ্রম্পটার চালু হলে। দর্শকদের প্রশ্ন, আমরা কি খবর মুখস্থ করে বলি? এত মুখস্থ রাখা কি সম্ভব? সাধ্যমতো বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতাম। আসলে এমন কৃৎকৌশল সে সময় তো সবার কাছেই অভাবিত, বিস্ময়কর। এমনও হয়েছে, এক-একটা প্রশ্নে সম্মানরক্ষার উপায় হাতড়ে বার করতে রীতিমতো ভাবতে হয়েছে। হয়তো বা কোনও সপ্তাহে দু’দিন একই শার্ট পরে খবর পড়েছিলাম। জনৈক পথচারিণী তা মনে রেখে প্রশ্ন করেছিলেন, “আচ্ছা, আপনি একই শার্ট রোজ রোজ পরেন কেন?” ভদ্রজনোচিত হাসিমুখেই সেদিন তাঁকে সম্মানিত করতে চেয়েছিলাম পরিহাসছলে শুধু এটুকু উত্তর দিয়ে, “যে কারণে স্ত্রীকে সাধারণত লোকে ত্যাগ করে না, ওই একটিই আছে বলে।” বিশ্বাস করুন, চটজলদি কোনও সদুত্তর খুঁজে না পেয়ে, নেহাতই আত্মরক্ষার্থে ছিল সেই ঠাট্টাটি।

আর এক দিন, মিনিবাস থেকে কার্জন পার্কে নেমে প্রায় দৌড়ে যাচ্ছি আকাশবাণী-র দিকে। ভদ্রলোক দেখছেন, হন্তদন্ত হয়ে চলেছি, তবু যেন পাল্লা দিয়েই এসে বললেন, “আপনাকে খুব চেনা-চেনা লাগছে, কোথায় দেখেছি বলুন তো?” বেশ উষ্মার সঙ্গে বলে দিয়েছিলাম, “বোধ হয় স্বপ্নে।” টুকরো-টাকরা এমন কত কিছু যে হজম করতে হত! ভাবতাম, টিভিতে খবর পড়ি তাতেই এই, না জানি চলচ্চিত্রাভিনেতাদের কত ঝক্কি পোহাতে হয়!

ত্রস্ত দিনও উঁকি দিয়েছিল। ১৯৮৪-র ৩১ অক্টোবর আততায়ীর গুলিতে নিহত হলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। জরুরি তলব পেয়ে টিভি সেন্টারে পৌঁছতেই ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল স্টুডিয়োতে, মেক-আপ ছাড়াই। আগে থেকে খবরের একটি লাইনও দেখার সুযোগ ছিল না। তখনও তাঁর প্রয়াণের চূড়ান্ত সংবাদ আসেনি। মনে আছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রাণনাশের চেষ্টার খবর পেয়ে রাষ্ট্রপতি সানা থেকে রওনা হয়েছেন’— এই কথাটি বলার পর আমার মাথা বোধ হয় একটু নত হয়েছিল। এতেই নাকি দর্শকরা যা বোঝার বুঝে গিয়েছিলেন। দিন চারেক পর মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু মহাকরণে ডেকে পাঠান। তিনি বলেছিলেন, “এ ভাবে এক জন নেত্রীকে মেরে ফেলল, এ তো অভাবনীয়! পড়ার সময় স্থির ছিলেন কি করে?”

রাজীব গান্ধীর নিহত হওয়ার খবরও পড়তে হয়েছিল স্থির থেকেই। মনে পড়েছিল, দূরদর্শন কেন্দ্রের নতুন ভবনের উদ্বোধনের দিন তাঁর সান্নিধ্যে আসা। উদ্বোধক ছিলেন তিনিই।

সংবাদ মানেই তো কান্নাহাসির দিন-দুনিয়ার ধারাভাষ্য। এই তো চলে গেলেন সহকর্মী ছন্দা সেন আর দেবরাজ রায়। টিভিতে তৃতীয় দিন থেকেই খবর পড়তেন ছন্দা, আকাশবাণী থেকেই এসে। সহকর্মীদের মৃত্যুর খবরও পড়তে হত ব্যক্তিগত আবেগ চেপে রেখেই। এমনই ছিল আমাদের অগ্রজদের শিক্ষা। তাঁরা বলতেন, খবর পড়তে হবে নৈর্ব্যক্তিক ভাবে, খবর হবে পক্ষপাতহীন।

পঞ্চাশ বছর আগেকার কলকাতা দূরদর্শনের জীবনের কিয়ৎ-কিঞ্চিৎ এই পাঁচালি ‘শুধু আধোখানি’-র মতোই। এমন অতীতখণ্ড জীবনের সুখ, দুঃখ, আনন্দের মূল্যবান উপাদান বয়ে আনে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

DD Bangla Satyajit Ray

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy