পূর্বানুবৃত্তি: প্রতাপরুদ্রদেবকে কাছে টেনে নিলেন মহাপ্রভু। মহারাজ্যের আনুকূল্যে রাজ্যে বৈষ্ণব ধর্মের প্রসার ও প্রচার বাড়তে শুরু করল। কিন্তু মহাপ্রভুর নির্বিচারে সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষকে কাছে টেনে নেওয়া ভাল চোখে দেখল না ওড়িশার স্মার্ত ব্রাহ্মণ সমাজ। উচ্চ বর্ণের লোকজন মহাপ্রভুর উপরে ক্ষুব্ধ হলেও মহারাজের কাছে অভিযোগ জানাতে পারলেন না, কারণ মহারাজ নিজেই চৈতন্য-অনুগামী। ব্রাহ্মণগোষ্ঠীর প্রধান ভরদ্বাজ মিশ্র গোপনে দেখা করলেন মহামন্ত্রী গোবিন্দ বিদ্যাধরের সঙ্গে। খুলে বললেন তাঁদের সমস্ত আপত্তি-বিরক্তির কথা। বিদ্যাধর সব শুনে ভরদ্বাজকে দিয়ে শপথ করিয়ে নিলেন যে, ভরদ্বাজ সর্বদা বিদ্যাধরের অনুগামী থাকবেন, কখনও বিরোধিতা করবেন না। তার পর বিদ্যাধর নির্দেশ দিলেন ভরদ্বাজ যেন মহাপ্রভুর বৈষ্ণব গোষ্ঠীতে অংশ নিয়ে মহাপ্রভুর ভক্তদের খুব কাছের লোক হয়ে ওঠার অভিনয় করে চলে। ঠিক সময়ে বিদ্যাধর কাজে লাগাবেন ভরদ্বাজের অনুগামী পান্ডাদের। আর এও বললেন, এর পর থেকে ভরদ্বাজ যেন আর বিদ্যাধরের সঙ্গে নিজে থেকে যোগাযোগ করার চেষ্টা না করেন। অন্য দিকে মাধবী নামে এক অল্পবয়সি বিধবা রমণী স্বামীর মৃত্যুর পর তার দাদা আর বিমাতার সংসারেই বড় হয়ে উঠেছে। বড় ভাই শিখী মাহাতীর টোলের কাছে বসে শাস্ত্র আলোচনা শুনতে শুনতেই সে আত্মস্থ করেছিল শাস্ত্রের নানা বিষয়। ভক্তিরসাশ্রিত সঙ্গীতে মাধবীর গলা খুবই মিষ্ট। একদিন শিখী মাহাতী জগন্নাথ দাসের কাছে অনুমতি চাইতে এলেন, যাতে মাধবী ইষ্টগোষ্ঠীতে মাঝে মাঝে ভক্তিগীতি পরিবেশন করতে পারে।
বৈষ্ণব ইষ্টগোষ্ঠীতে কোনও মহিলা এসে সঙ্গীত পরিবেশন করবে, সে বিষয়ে কেউ এর আগে কখনও চিন্তাও করেনি। সুতরাং জগন্নাথ দাস মনে মনে বিশ্বাস করেন, নারী যতই ভক্তিমতী হোক না কেন, তাদের উপস্থিতি বৈষ্ণবদের পক্ষে ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। বৈষ্ণবরা মূলত আবেগপ্রবণ। ইষ্টগোষ্ঠীতে নারীর উপস্থিতি তাদের সাধনা ও মনঃসংযোগে বিঘ্ন হয়ে ওঠা খুবই স্বাভাবিক। এত দিন তিনি ভক্তদের উপদেশ দিয়ে এসেছেন যে, কাঠ বা পাথরের নারীমূর্তি দর্শনও বৈষ্ণবদের কাছে বর্জনীয় হওয়া উচিত। এই কথা তো শিখী মাহাতীর অজ্ঞাত নয়। তা হলে এই প্রস্তাব শুধু কি ভগিনীর মুখ চেয়ে? নাকি এর ভিতরে অন্য কোনও গূঢ়তর কারণ আছে?
এই সব সাত-পাঁচ ভেবে তিনি এক কথায় রাজি হয়ে যেতে পারলেন না। মুখে বললেন, “দেখো শিখী, তুমি তো জানো বৈষ্ণবদের আচার-আচরণ নিয়ম-নিষ্ঠার কথা। যতই হোক মাধবী তো রক্তমাংসের নারী।”
কথাটা বলে তিনি হঠাৎ থেমে গেলেন। বলতে গিয়েও বললেন না যে, মাধবীর মতো উদ্ভিন্নযৌবনা সুন্দরী রমণী হল আগুনের মতো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি শিখী মাহাতির দিকে তাকিয়ে বললেন, “তোমার ভগিনীর উপস্থিতি ইষ্টগোষ্ঠীতে অন্য বৈষ্ণবদের আত্মবিচ্যুতির কারণ ঘটাতে পারে।”
শিখী মাহাতী আরও ঘন হয়ে বসে জগন্নাথ দাসের পায়ের কাছে এগিয়ে এলেন। করুণ মুখে বললেন, “দাদা, মা-বাপ মরা বালবিধবা মেয়েটির কীর্তনই সম্বল। ঈশ্বরের নাম-গান ছাড়া ও যে আর কিছুই বোঝে না। এই সঙ্গীতই তার বেঁচে থাকার সহায়। এখন আপনি যদি তাকে করুণা করে তার সঙ্গীতসাধনার সুযোগ করে দেন, তবে সে হয়তো স্বস্তি পেয়ে একটু বাঁচবে। না হলে পরগাছা লতার মতো দিনে দিনে শুকিয়ে মরে যাবে।”
সব কথা শুনে জগন্নাথ দাসেরও করুণা হল। তিনি আত্মভোলা শাস্ত্রানুরাগী মানুষ। তবু তিনি কোনও কারণে শিখী মাহাতীর অনুরোধকে সম্যক অনুধাবন করতে পারছিলেন না। বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তাঁর মনের ভিতরে একটা কাঁটা যেন বিঁধে থাকল।
কিছু ক্ষণ ভেবে তিনি কতকটা যেন নিরাশ হয়েই বললেন, “দেখো, এই ব্যাপারে মহাপ্রভুই হলেন শেষ কথা। তুমি বরং মহাপ্রভুর কাছে থেকে অনুমতি নিয়ে এসো। তিনি অনুমতি দিলে অন্য বৈষ্ণবরা বিরুদ্ধতা করতে পারবেন না।”
শিখী মাহাতী পায়ে হাত দিয়ে জগন্নাথ দাসকে প্রণাম করলেন। মুখে কিছু বললেন না। ভাবলেন, সেই ভাল. মহাপ্রভুর অনুমতি পেলে আর কারও কিছু বলার থাকবে না।
২১
রাত্রির অন্ধকার নেমে এসেছে সমস্ত চরাচরে। রাজপ্রাসাদের কক্ষে কক্ষে জ্বলে উঠেছে বাহারি ঝাড়লণ্ঠন। প্রদীপশিখার আলোয় অন্তর্হিত অন্ধকার। সারা দিনের কাজকর্মের শেষে রাজপুরুষেরা আপন আপন কক্ষে বন্ধুবান্ধব সহযোগে সুরাপানে, পাশাখেলায় মগ্ন। কোনও কোনও প্রমোদকক্ষে রুনঝুন শব্দে বেজে উঠছে নৃত্যপটীয়সী বারাঙ্গনাদের পায়ের মঞ্জীর। সঙ্গীতের মৃদু কলি বাহারি প্রজাপতির মতো বাতাসে বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে। সেই সঙ্গে মিশে গিয়েছে দূর থেকে ভেসে আসা মন্দিরের দেবদাসীদের মঞ্জীরের শব্দ।
প্রহরীদের কাজে ঈষৎ শৈথিল্য। তাদের দু’-চার জন করে একজোট হয়ে মেতে আছে খোশগল্পে। তাদের চটুল পরিহাস, অশ্লীল রসিকতা আর হাসিতে শান্ত বাতাস মাঝে মাঝে চমকে উঠছে।
রাজপুরীর রন্ধনশালায় তখন তুমুল ব্যস্ততা। পাচক-পরিচারিকাদের নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই। হাঁড়ি-কড়া-খুন্তির ঝনঝন শব্দে যুদ্ধকালীন ব্যস্ততা।
রাজ-অন্তঃপুরে আবার অন্য চিত্র। রানিরা নিজ নিজ মহলে সখী-দাসীদের সঙ্গে কথাবার্তায় মেতে আছেন। কেউ কেউ রূপ-পরিচর্যা করে নিচ্ছেন।
কিন্তু মহারানি পদ্মাদেবীর মনে সুখ নেই। তিনি উদাস নয়নে পালঙ্কে গা এলিয়ে আছেন। এক পরিচারিকা মন্থর হাতে তাঁর কেশ প্রসাধন করে দিচ্ছে। দুই-তিন রকম উপায়ে বেণি বয়ন করে দিয়েছে, তবু রানিমার মনে ধরছে না। বার বার মহারানি বেণি খুলিয়ে আবার বেণি রচনা করাচ্ছেন। শেষে বিরক্ত হয়ে তিনি দাসীকে ভর্ৎসনা করলেন, “তুই এ বার যা তো, তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।”
পরিচারিকাটি বয়সে তরুণী। সে ভয় পেয়ে কাঁদো-কাঁদো হয়ে বার বার রানিমার কাছে ক্ষমা চাইলে মহারানি আরও বিরক্ত হলেন।
এমন সময়ে ঘরে এসে উপস্থিত হল মহারানির সবচেয়ে কাছের পরিচারিকা মন্থরা। কক্ষে প্রবেশ করেই মন্থরা বুঝতে পারল মহারানির মনের অবস্থা। সে ইশারা করে তরুণী পরিচারিকাকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলল।
মন্থরা এ বার নিজের হাতে মহারানির কেশগুচ্ছ তুলে নেয়। বলে ফেলে, “বাব্বা, এক সময় আপনার চুলের কী গোছ ছিল!”
পরক্ষণেই কথার ভুল বুঝে নিজেকে শুধরে নিয়ে আবার বলল, “আমি বলছিলাম রানিমা, এখনও আপনার চুল যা সুন্দর, এমনটা সারা রাজ্যে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।”
কিন্তু এ তোষণ খাটল না। মহারানি মুখ ঝামটা দিয়ে উঠলেন, “চুপ কর পোড়ারমুখী! এত মিথ্যে প্রবোধ দিস না! রূপ যৌবন প্রভাব প্রতিপত্তিসবই তো গেছে। এখন আমার মরণই ভাল। মহারাজের মতিগতি আজকাল আমার ভাল লাগে না রে মন্থরা।”
মন্থরা বোঝে এটাই মোক্ষম সময়। সে বলে, “আপনার পায়ে পড়ি রানিমা, এমন কথা বলবেন না! আপনার হারানো সব কিছু ফিরে আসবে। আমি ব্যবস্থা করেছি। সে আজ আসবে। আপনি তার সঙ্গে দেখা করবেন তো রানিমা?”
মন্থরা কথা বলতে বলতে বেণি বয়ন শেষ করেছে। কিন্তু সেই বেণি ভাল হল না খারাপ হল, সে দিকে রানিমার আর কোনও খেয়াল নেই।
মন্থরা মহারানির মুখের সামনে দুই হাত দিয়ে মুকুর তুলে ধরল। রানিমার পিছনে বসে মুকুরের প্রতিবিম্বে চোখ রেখে সে আবার আদুরে গলায় প্রশ্ন করল, “তার সঙ্গে দেখা করবেন তো রানিমা?”
মহারানি যেন ইতস্তত করলেন। মন্থরাকে তিনি ঝোঁকের মাথায় বৌদ্ধ সন্ন্যাসীকে নিয়ে আসার কথা বলেছিলেন। তখন অত সাত-পাঁচ ভাবেননি। আসলে তিনি ভিতরে ভিতরে নিজের অন্তরের সত্তাকে জাগিয়ে তোলার একটা অবলম্বন খুঁজছিলেন। নিজেকে তিনি ভাবছিলেন অবহেলিত। যদি ওই বৌদ্ধ সন্ন্যাসী তুকতাক করে তাঁর হৃত গৌরব ফিরিয়ে দিতে পারে, সেই জন্যই তিনি মন্থরার কথায় রাজি হয়েছিলেন। এখন আবার তাঁর মনে সন্দেহ হচ্ছে, সত্যি কি ওই সন্ন্যাসী এত কিছু পারবে! তা ছাড়া এটা যদি মহারাজের কানে যায়, তা হলে তিনি কি এটাকে ভাল চোখে দেখবেন! তাই মহারানি একটু দ্বিধান্বিত হলেন।
বললেন, “মন্থরা, এতে খারাপ কিছু হবে না তো? মহারাজা যদি জানতে পারেন?”
“না, না রানিমা। আপনি একেবারে ভয় পাবেন না। কাকপক্ষীও জানতে পারবে না এই কথা।”
মন্থরা ভরসায় মহারানি অনিচ্ছাসত্ত্বেও রাজি হলেন। রাজি না হয়ে তাঁর যেন আর কোনওউপায় নেই।
মন্থরা উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আপনার গোপন বিশ্রামকক্ষেই সব আয়োজন করেছি। সমস্ত দাসী কঞ্চুকীকে আমি ভাল করে বলে বুঝিয়ে বলে দেব। এমন ব্যবস্থা করে রাখব যাতে তাদের মনে কোনও রকম সন্দেহ দেখা না দেয়। তা ছাড়া আমি তাকে আসতে বলেছি নারীর ছদ্মবেশে।”
ক্লান্ত গলায় মহারানি জিজ্ঞেস করলেন, “কী নাম তার?”
“তার নাম বীরসিংহ...” মন্থরার চোখে যেনবিজলি খেলে গেল। কথাটি বলে মৃদু হেসে সে ঘরছেড়ে বেরিয়ে গেল।
মধ্যরাতে তখন মহারানি নিদ্রামগ্ন। জেগে জেগে অপেক্ষা করতে করতে কখন তিনি ঘুমিয়ে পড়েছেন নিজেই বুঝতে পারেননি। মন্থরা এসে তার রানিমাকে জাগাল।
নিজস্ব বিশ্রামকক্ষে মহারানি প্রবেশ করে দেখলেন সেখানে বীরসিংহ অপেক্ষা করছে। নারীর ছদ্মবেশ পরিত্যাগ করে সে টান-টান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে মহারানি যেন একটু থমকে গেলেন। তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত এই কক্ষে এই প্রথম কোনও পুরুষমানুষের প্রবেশ ঘটল। মহারাজও কখনও তাঁর এই ব্যক্তিগত কক্ষে প্রবেশ করেননি।
মহারানি সরাসরি বীরসিংহের দিকে তাকালেন। তিনি যেন একটু অবাক হয়ে গেলেন। এ কেমন সন্ন্যাসী! এ যে এক তরুণ যোদ্ধা। বীরসিংহ দীর্ঘদেহী। বলশালী, আর অপূর্ব তার দেহসৌষ্ঠব। ভগবান যেন ভীষণ যত্নে তাকে গড়ে তুলেছেন। কাঁচা সোনার মতো তার গায়ের বর্ণ। পুরুষ্টু রক্তিম ওষ্ঠ। ঘন কৃষ্ণ পল্লবে ঘেরা অন্তর্ভেদী দুটি চক্ষু।
মহারানির অন্তর যেন কেঁপে উঠল।
বীরসিংহ নিচু হয়ে ভূমিতে উপবেশন করে মহারানিকে অভিবাদন জানাল।
মহারানি কী বলবেন যেন বুঝতে পারছেন না। তিনি স্থবিরের মতো দাঁড়িয়ে থাকলেন।
মন্থরা মহারানির সঙ্গে ঘরে এসেছিল। সে আস্তে আস্তে ঘরে থেকে বেরিয়ে যায়। তার ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি। চোখে বিদ্যুতের ঝিলিক।
রাজপ্রাসাদের অন্য প্রান্তে বিশ্রামকক্ষে মহারাজের সহসা নিদ্রা ভেঙে গেল। আজকাল মহারাজের এমন হয়। কোনও রাতেই মহারাজের সুনিদ্রা হয় না। কখনও যেন এক করাল দুঃস্বপ্ন মহারাজের ঘুমকে গ্রাস করে নেয়। মহারাজের সারা শরীর ঘামে ভিজে যায়। তিনি ঘুম ভেঙে শয্যার উপরে উঠে বসেন। তার পরে সারা রাত্রি তাঁকে জেগে কাটাতে হয়। এই কথা তিনি রাজবৈদ্য চিত্রভানুকে বলেছিলেন। রাজবৈদ্য অনিদ্রা নিরাময়ের ঔষধও দিয়েছেন, কিন্তু তাতে সুরাহা হয়নি।
আজও মহারাজা এক স্বপ্নে দেখলেন, তাঁর এক-একটি দুর্গ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। একটু একটু করে তাঁর রাজ্যের সীমানা ছোট হয়ে আসছে। ওঃ! কী বীভৎস সেই স্বপ্ন! বুকের ভিতরে তাঁর কী একটা যাতনা। কেন এমন হচ্ছে! কেন তিনি এই দুঃস্বপ্ন দেখছেন? সত্যি কি এমনি করে এক-একটি কেল্লা তাঁর হাতছাড়া হয়ে যাবে?
মহারাজা ঘাড় ঘোরালেন। দেখলেন, পাশে নিশ্চিন্ত নিদ্রায় মগ্ন আছেন ছোট রানি শ্রীইলা। ঊর্ধ্বাঙ্গের বস্ত্র সরে গিয়েছে অবহেলায়। আহা, কী অপূর্ব তাঁর দেহসৌন্দর্য! মহারাজা বিমোহিত হয়ে গেলেন। এই তো কিছু ক্ষণ আগেই ইলা তাঁকে আদরে আদরে ভরে দিয়ে ঘুম পাড়িয়েছিলেন। সুখস্বপ্নের আবেশে তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। এমন স্বপ্নের মোহেই তো তিনি ঘুমিয়ে থাকতে চান। তবে কেন এই দুঃস্বপ্নের দংশন!
এই সব স্বপ্ন থেকে মুক্তির উপায় তো তাঁকে পরামর্শের ছলে দিয়েছিলেন মহাপ্রভু। রাজকার্যে নিয়োজিত থেকেও কী ভাবে ভগবানের সেবা করতে হবে সে শিক্ষাও মহাপ্রভু তাঁকে দিয়েছিলেন। কিন্তু সন্ধ্যা থেকে আকণ্ঠ সুরাপানে আর ছোটরানির সংসর্গে প্রমত্ত মহারাজের সে কথা স্মরণে থাকে না।
তিনি অপলকে ইলার দেহলাবণ্যের পানে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ তার দেহের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। ইলার বুকে মুখ গুঁজে দিয়ে আশ্লেষে আশ্লেষে তাকে জাগিয়ে তুললেন।
ইলারও ঘুম ভেঙে গেল। ভুবন ভোলানো দুই চোখ মেলে তিনি মহারাজের চোখের দিকে তাকালেন। প্রদীপের আলোকে সেই চোখের দৃষ্টি যেন সমস্ত দৃষ্টির সীমানা পেরিয়ে গিয়েছে বলে মনে হল মহারাজের। তা এতই অপূর্ব।
মহারাজ সমস্ত ভুবন ভুলে গেলেন।
ক্রমশ
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)