E-Paper

জিতাষ্টমী, মহালয়া অথবা রাসপূর্ণিমাতেও হয় অকালবোধন

শুধু আশ্বিনের শারদপ্রাতে শুক্লা ষষ্ঠীর দিনই নয়, মহামায়ার পুজো প্রচলিত আছে বছরের নানা সময়ে। মানুষের আগ্রহে, প্রয়োজনে অথবা স্বপ্নাদেশ অনুসারে বছরের নানা সময় মর্তে আসেন মহামায়া। কখনও ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়ে, কখনও বা তাদের ছাড়াই।

দেবযানী বসু

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৬:১১
মহামায়া: জলপাইগুড়ির পাতাকাটায় রাসপূর্ণিমায় পূজিতা দুর্গা।

মহামায়া: জলপাইগুড়ির পাতাকাটায় রাসপূর্ণিমায় পূজিতা দুর্গা। ছবি: লেখক।

বর্ষা শেষে আসে শরৎ। প্রকৃতির সেজে ওঠার পালা। মায়ের আগমনবার্তা ঘোষণা করে প্রকৃতি। আশ্বিনের শুক্লপক্ষে ষষ্ঠী তিথিতে মায়ের বোধন, আবাহন ও অধিবাস। অর্থাৎ শারদলক্ষ্মীকে নিদ্রা থেকে জাগ্রতা হয়ে ওঠার অনুনয়। বসন্তকালের পুজোয় এই বোধনের অনুষঙ্গটি নেই। কারণ দেবদেবীরা তখন জাগ্রতই থাকেন। তবে শরৎকালীন শুক্লপক্ষের পুজোটি একমাত্র অকালবোধন নয়। বাংলায় রয়েছে আরও নানা সময়ের অকালবোধন। কোথাও লোকাচার, কোথাও স্বপ্নাদেশ, কোথাও বা কুলপ্রথা মেনেই চলে আসছে বছরের বিভিন্ন সময়ের দুর্গাপুজো।

জিতাষ্টমীর যোগমায়া

বর্ধমানের উখড়া গ্রামে জিতাষ্টমীতে পূজিতা যোগমায়া।

বর্ধমানের উখড়া গ্রামে জিতাষ্টমীতে পূজিতা যোগমায়া। ছবি: লেখক।

পশ্চিম বর্ধমান জেলার উখরা গ্রামে জিতাষ্টমীতে প্রচলিত আছে যোগমায়া দুর্গার পুজো। বসুদেব ও দেবকীর অষ্টম সন্তান কৃষ্ণকে সুরক্ষিত রাখতে তিনি জন্ম নিয়েছিলেন গোকুলে, মাতা যশোদার গর্ভে। কৃষ্ণকে গোকুলে রেখে যোগমায়াকে তাঁর কাছে নিয়ে আসেন বসুদেব। কংস যোগমায়াকে বধ করতে উদ্যত হতেই তিনি শূন্যে মিলিয়ে যান। উখরা গ্রামে যোগমায়া দুর্গাপুজোর বাজনা বাজে জিতাষ্টমীর সময়। জিতাষ্টমী হল আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথি। এটি একটি ব্রত, যা হিন্দু মহিলারা সন্তানের আয়ু ও মঙ্গল কামনায় পালন করেন। এই ব্রতকে ‘জিতা’ বা ‘বড়ষষ্ঠী’ নামেও উল্লেখ করা হয়। কৃষ্ণপক্ষের ষষ্ঠীতে বোধন করে, তার পর সপ্তমী থেকে পুজো চলে চার দিন। এই পুজো বয়সে নবীন। স্থানীয় অর্চিষ্মান পাল এখানকার কয়লাখনিতে কর্মরত অবস্থায় মহামায়ার নির্দেশ পান। এ যুগে এমন ঘটনা বিরল। কয়লার খাদানে কাজে করতে করতে তিনি উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি দেখেন। ঘোরের মধ্যে সেই আলোয় দেখেন এক দেবীমূর্তি। সিংহারূঢ়া, দ্বিভুজা, এক হাতে পদ্ম, অন্য হাতে ত্রিশূল। অপরূপা দেবীর মাথায় মুকুট ও অর্ধচন্দ্র, পরনে রক্তবস্ত্র। অর্চিষ্মান বরাবর ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতায় আগ্রহী। তাঁর মনে মায়ের নির্দেশকে বাস্তব রূপ দেওয়ার বাসনা প্রবল হয়ে ওঠে।

এই পুজো শুরুর আরও একটি কারণ আছে। অর্চিষ্মানের একটি ছৌ নাচের দল আছে। দলের সদস্যরা সবাই প্রায় তথাকথিত নিম্নবর্গের মানুষ। গ্রামের প্রাচীন অভিজাত পূজাগুলিতে তাঁরা ব্রাত্য। তাই এঁদের নিয়েই তোড়জোড় শুরু করেন অর্চিষ্মান। পুজোর সময় ছৌ-নাচের অনুষ্ঠানের ডাক পায় এই দলটি। তাই কৃষ্ণপক্ষের জিতাষ্টমীতে পুজোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অর্চিষ্মানবাবু যোগমায়া দুর্গার পুজোর জন্য নানা শাস্ত্রের পাতা উল্টেছেন। যজুর্বেদে রয়েছে এমন পুজোর নিয়মবিধি। সম্পূর্ণ বৈদিক নিয়ম মেনেই পুজো করেন তিনি। যোগমায়া দুর্গার বধ্য অসুরের নাম যোগাসুর। অর্চিষ্মান ‘যোগমায়াচরিতামৃত’ নামে একটি গ্রন্থও রচনা করেছেন কয়লাখাদানে কর্মবিরতির অবকাশে।

যোগমায়া দুর্গার কাঠামো বিসর্জনের পর তুলে রাখা হয়। ফের পরের বছর রথের দিন মাটি পড়ে তাতে। পঞ্চমীতে প্রতিমা এনে প্রতিষ্ঠা করা হয় পুজোর বেদিতে। স্থানীয় বকশীপুকুর থেকে ষষ্ঠীঘট ভরে আনা হয়। সপ্তমীতে নবপত্রিকা স্নান হয় বাঁধে। অষ্টমীর দিন যজ্ঞ হয়। সপ্তমীতে চিঁড়েভোগ, অষ্টমীতে লুচিভোগ, নবমীতে চিঁড়েভোগ দেওয়ার পর দশমীর দিন মাকে খিচুড়ি ও পায়েসের সঙ্গে মৎস্যভোগও দেওয়া হয়। দশমীর সন্ধ্যায় শুকোপুকুর বাঁধে হয় দেবীর বিসর্জন।

একাদশীর ভাণ্ডানী দুর্গা

একাদশীতে পূজিতা দ্বিভুজা ভাণ্ডানী দুর্গা।

একাদশীতে পূজিতা দ্বিভুজা ভাণ্ডানী দুর্গা। ছবি: লেখক।

দশমীর সন্ধেয় মা যাত্রা করেন পতিগৃহ কৈলাসের উদ্দেশে। চার দিনের সমারোহের শেষে সবার মনে বিষাদের ছোঁয়া। আবার এক বছরের প্রতীক্ষা। কিন্তু বিষাদের রেশ কেটে যায় একাদশীতে ভাণ্ডানী দুর্গাপুজোয়। উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার ভাণ্ডানী গ্রামে একাদশীতে দুর্গাপুজোর প্রচলন বহু বছর ধরে। মা এখানে ভাণ্ডানী দুর্গা রূপে আসেন। এই পুজোর পিছনেও রয়েছে একটি সুন্দর লোককাহিনি। বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়িতে তখন খুব ধুমধাম করে পুজো হত। বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ যোগ দিতেন তাতে। এক বার দশমীর দিন মা দুর্গা রাজবাড়ি ছেড়ে কৈলাসে ফিরছেন। পথিমধ্যে বৈকুণ্ঠপুরের ঘন জঙ্গলে পথ হারান। স্থানীয় এক রাখাল গরু চরিয়ে ফিরছিল। অন্ধকার জঙ্গলে নারীকে দেখে সে এগোতে বারণ করে ও নিজগৃহে আশ্রয় দেয়। মাঝরাতে দেবী স্বপ্নে আসেন নিজরূপে। রাখালকে বলেন বরপ্রার্থনা করতে। রাখাল দেবীকে বলে, এখানে খাওয়ার খুব কষ্ট, জঙ্গলে চাষ করা যায় না। অঞ্চলের অন্নসঙ্কট দূর করার বর চায় সে। দেবীর কৃপায় তিস্তার চর ভরে যায় শস্যশ্যামলা কৃষিভূমিতে। শস্যভান্ডার ভরে ওঠে, যার ভান্ডারি দেবী স্বয়ং, তাই তাঁর নাম হয় ভাণ্ডানী। একাদশীতে আয়োজন হয় ভাণ্ডানী পুজোর।

অনেকের মতে, বনপথে দুর্গার গতিরোধ করেছিল নিম্নবর্গীয় এক দল দরিদ্র মানুষ। তাঁরাও চেয়েছিলেন মায়ের পুজো করার অধিকার। কিন্তু তিনি তো সবে পুজো নিয়ে ফিরছেন কৈলাসে। শিবকে কথা দেওয়া আছে যে। কিন্তু দরিদ্র মানুষগুলি নাছোড়। দুর্গা কি শুধু জমিদার, রাজা, উচ্চবর্গীয়দের? তিনি তো মা, ধনী-দরিদ্র সবাই তাঁর সন্তান। তখন দেবী বলেন, ওরা যেন সে দিনই তাড়াতাড়ি পুজোর জোগাড় করে। একটি জনমত অনুযায়ী, এই কাহিনি অনুযায়ী সন্তানরা মায়ের সঙ্গে ছিলেন না। কারণ তাঁরা পথে এগিয়ে গিয়েছিলেন অনেকটা। এই কারণে ভাণ্ডানী পুজোয় কোথাও পার্শ্বদেবদেবী থাকেন, কোথাও থাকেন না। তবে মূলত কৃষি-সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত এই পুজো আজ উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ভীষণ জনপ্রিয়।

প্রায় পাঁচশো বছর ধরে চলে আসছে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার তিস্তার পাড় বরাবর ভাণ্ডানী পুজো। একাদশীর দিনে পুজো, রাতে বিসর্জন। দেবী এখানে মহিষাসুরমর্দিনী নন, গ্রামের স্নেহধন্যা সাধারণ নারী। দেবী দ্বিভুজা, বাঘের উপর অধিষ্ঠিতা। এই জঙ্গলে এক সময় বাঘের উপদ্রব ছিল খুব। সে কারণে দেবীর বাহনরূপে বাঘকে রাখা হয়েছে। পদতলে নেই অসুর। শান্ত মূর্তি মায়ের। দেবীর নামে পায়রা ওড়ানো হয়। দেবীর উদ্দেশ্যে হয় পাঁঠাবলিও।

উত্তরবঙ্গের ইতিহাস বলছে, প্রাচীন রাজবংশী সমাজে দুর্গাপুজোর বিকল্প হিসেবে ভাণ্ডানী পুজোর আয়োজন হত। কারণ চার দিনের পুজো ছিল ব্যয়বহুল। তা ছাড়া, রাজার অনুমতিও মেলেনি। তাই এই এক দিনের পুজোর শুরু। কোচবিহারের রাজা নরনারায়ণের কামরূপ বিজয়ের বহু আগে থেকেই রাজবংশীরা এই পুজো করে এসেছে, যার ঐতিহ্য আজও অমলিন।

মহালয়ায় দুর্গাপুজো

যে মহালয়ার পুণ্যতিথি দেবীপক্ষের সূচনাবার্তা নিয়ে আসে, সেই মহালয়াতেই দেবীর আবাহন, আরাধনা ও নিরঞ্জন। এমন পুজোর দেখা মেলে পশ্চিম বর্ধমানের বার্নপুরের ধেনুয়া গ্রামে। এখানকার কালীকৃষ্ণ আশ্রমে, মহালয়ার অমাবস্যা তিথিতেই ষষ্ঠী থেকে দশমীর সর্বাঙ্গীণ পুজো সারতে হয়, রাতে বিসর্জন। ধেনুয়াতে ১৯৩৭ সালে কালীকৃষ্ণ যোগাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন সাধক কালীকৃষ্ণ। আশ্রমে প্রতিষ্ঠিত কেদারনাথ শিব ও কালীমূর্তি। ১৯৬৯ সালে আশ্রমে আসেন তেজানন্দ ব্রহ্মচারী। তিনি ১৯৭৭ সালে এক রাতে স্বপ্ন দেখেন মা দুর্গাকে। মায়ের আদেশ অনুযায়ী মহালয়াতেই করতে হবে সম্পূর্ণ পুজো। ঠিক মহালয়ার আগের দিন প্রতিমা তৈরি সম্পন্ন হয়। আশ্রমেই গড়া হয় প্রতিমা। দুর্গাপুজোর আগে কালীপুজো হয়। তার পর নির্দিষ্ট সময় হলে বোধন। নবপত্রিকা স্নান, চার দিনের পুজো, অন্নভোগ, সন্ধিপুজো— খুব দ্রুততার সঙ্গে চলে। বৈষ্ণবমতে পুজো হয়। আগে মহালয়ার গভীর রাতে প্রতিমা বিসর্জিত হত দামোদরের বুকে। এখন সে দিন শুধু ঘট ও নবপত্রিকা বিসর্জন হয়। গ্রামবাসীদের অনুরোধে দশমীর দিন জলে দেওয়া হয় প্রতিমা। তার আগে থাকে গ্রামবাসীদের সিঁদুর খেলা, মিষ্টি বিতরণ।

তেজানন্দ ব্রহ্মচারী এক অনন্য মূর্তি দেখেছিলেন স্বপ্নে। মায়ের গাত্রবর্ণ অগ্নিস্বরূপা, দশভুজা, সিংহবাহিনী, তবে অসুর নেই। সঙ্গে থাকে মায়ের দুই সহচরী জয়া ও বিজয়া। অভিনব এই পূজাটি যুগ যুগ ধরে তার নিজস্বতা বজায় রেখে চলেছে।

রাসপূর্ণিমায় দুর্গাপুজো

রাসপূর্ণিমার দিনে দুর্গার অকালবোধন ঘটে জলপাইগুড়ি জেলার পাতাকাটা অঞ্চলে। আশ্বিনের শুক্লপক্ষ নয়, কার্তিকের পূর্ণিমাকে এখানে বেছে নেওয়া হয়েছে দুর্গার আরাধনার জন্য। দেশের অন্যান্য অংশের মানুষ যখন শ্ৰীকৃষ্ণের রাসলীলা উদ্‌যাপনে মগ্ন, তখন খানিকটা আড়ম্বরহীন ভাবেই দুর্গাপুজো পালিত হয় পাতাকাটার গুয়াবাড়িতে। প্রায় দু’শো বছর ধরে চলছে এই পুজো। ১৮৫০ সালে স্থানীয় গুয়াবাড়ির বাসিন্দা ভয়দেব রায় পারিবারিক ভাবে পুজোটির সূচনা করেন। তাঁর পুত্র সুদান রায় পুজোটি চালিয়ে এসেছিলেন। বর্তমান প্রজন্মের সেকেন্দ্রনাথ রায় আছেন পুজোর দায়িত্বে। আগে জগদ্ধাত্রী পুজোর দিনে দশভুজা দুর্গার পুজো হত, সঙ্গে থাকতেন দুর্গার চার ছেলেমেয়ে।পরবর্তী কালে রাসপূর্ণিমার দিনে পুজো শুরু হয়। বর্তমানে আর্থ-সামাজিক কারণে পুজোটি সর্বজনীন ভাবে পরিচালিত হয়। পুজোটির দায়িত্ব নিয়েছে গুয়াবাড়ি সর্বজনীন।

রাসের দিন পুজো হওয়ার পর দুর্গাপ্রতিমা মন্দিরেই থাকে। বিসর্জন হয় না। সারা বছর পুজো হয়। পরের বছর পুজোর আগের দিন বিসর্জন হয়। নতুন প্রতিমা এনে মন্দির পরিষ্কার করে বেদিতে স্থাপন করা হয়। এক দিনে পুজোর সব অনুষ্ঠান পালন করা হয়। এই দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে গুয়াবাড়ির বাসিন্দারা মেতে ওঠেন হুল্লোড়ে। বসে মেলা, চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

ভরা শীতের পৌষালী দুর্গা

দেবী দুর্গার নবরূপের মধ্যে অন্যতম হলেন কাত্যায়নী। মহর্ষি কাত্যায়ন প্রথম তাঁর আশ্রমে কন্যারূপে কাত্যায়নী দুর্গার পুজো করেছিলেন। উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার বেশ কয়েকটি জায়গায় কাত্যায়নী দুর্গাপুজোর চল বহু বছর ধরে। জাঁকজমক করে পুজো হয় প্রতি বছর। তবে পুজোটি হয় পৌষের কৃষ্ণপক্ষে, ঘোর শীতের মধ্যে। যেমন, জলপাইগুড়ির রায়কত পাড়ায় ভট্টাচার্য বাড়িতে নিয়মনিষ্ঠার সঙ্গে হয় এই দুর্গাপুজো। অঞ্চলের মানুষ মেতে ওঠেন পুজো ঘিরে। জলপাইগুড়িতে এই পুজো চলছে আশি বছর ধরে। তবে এর শুরু পূর্ববঙ্গে, তৎকালীন ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জে, অমরেন্দ্র ভট্টাচার্যের হাত ধরে, ২৩০ বছর আগে। পরে তাঁরা এ দেশে চলে আসেন। এ পুজোর নির্ঘণ্ট, পুজোর প্রথা, অনেকটাই আলাদা শারদীয়া দুর্গাপুজোর থেকে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja Autumn

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy