Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আবার ভুট্টা

কলম্বাস ভারতবর্ষ আবিষ্কার করতে ব্যর্থ হলে কি হবে, উনি আমেরিকা আবিষ্কারের সঙ্গেই, একের পর এক খাবার ইউরোপে নিয়ে এসে হেঁশেলে যে বিপ্লব এনেছিলেন, বিশ্বের তাবড় খাদ্যপ্রেমীর ওঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকা উচিত।

পিনাকী ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

কলম্বাস ভারতবর্ষ আবিষ্কার করতে ব্যর্থ হলে কি হবে, উনি আমেরিকা আবিষ্কারের সঙ্গেই, একের পর এক খাবার ইউরোপে নিয়ে এসে হেঁশেলে যে বিপ্লব এনেছিলেন, বিশ্বের তাবড় খাদ্যপ্রেমীর ওঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকা উচিত। ইউরোপ ভুট্টা কাকে বলে জানতই না। ও দিকে অতলান্তিক মহাসাগরের অপর পাড়ে, কলম্বাস পৌঁছনোর ৬০০০ বছর আগে থেকে ভুট্টা সেখানকার মানুষজনকে বাঁচিয়ে রেখেছে। কলম্বাস ইউরোপে ভুট্টা নিয়ে আসার পর দাবানলের মতো তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, আর চরম আবহাওয়াতেও চাষ করা যায় বলে বিশ্বের প্রত্যন্ত কোণেও ভুট্টা পৌঁছে গিয়েছে।

উত্তর আমেরিকার অন্যতম বড় উৎসব ‘থ্যাংকসগিভিং ডে’-র ইতিহাসের সঙ্গেও ভুট্টা জড়িত। সতেরো শতকে দ্বিতীয় দশকের শুরুতে পরিবার নিয়ে আমেরিকায় পৌঁছন বেশ কিছু ইংরেজ পাদ্রি, ধর্মপ্রচার করতে। পৌঁছেই এক বিশাল ধাক্কা। ওখানকার আবহাওয়া, খাবার সবই অজানা। বেশির ভাগেরই ঈশ্বরপ্রাপ্তি ঘটল। প্রাণে বাঁচতে বাকিরা দেশে ফেরত যাওয়ার কথা ভাবছেন, সেই সময়ে আলাপ হল স্কোয়ান্তো নামে এক ওয়াম্পানোয়াগ জনজাতির মানুষের সঙ্গে। স্কোয়ান্তো ইংরেজি শিখেছিল তার দাসত্বকালে, তাকে পেয়ে পাদ্রিরা হাতে চাঁদ পেলেন। এই স্কোয়ান্তো তাঁদের শেখাল বাণ মাছ শিকার, আর ভুট্টা চাষ। যখন পাদ্রিদের জাহাজে আনা খাবার কম পড়ল, ওয়াম্পানোয়াগদের নেতা ম্যাসাসোয়েত তাঁদের সেই শীতকালে খাবারও জোগান দিল।

১৬২১ সালে পাদ্রিরা প্রথম ফসল ফলালেন, আর প্রথম বারেই সাফল্য। সেই সাফল্য উদ্‌যাপন করতে প্লাইমাউথ প্ল্যান্টেশনের ৫০ জন পাদ্রি আর ৯০ জন স্থানীয়দের নিয়ে ‘থ্যাংকসগিভিং ডে’ পালিত হল। সে অনাবিল আনন্দের ভোজের দিন হেঁশেল সামলেছিলেন এলিয়ানর বিলিংটন, এলিজাবেথ হপকিন্স, মারি ব্রিউস্টার আর সুসানা হোয়াইট। প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের মধ্যে শুধু তাঁরাই বেঁচেছিলেন। আজকের ‘থ্যাংকসগিভিং ডে’-তে পরিবেশিত ক্র্যানবেরি সস, রাঙা আলু আর পাম্পকিন পাই ছিল না, সে দিন পরিবেশিত হয়েছিল ভুট্টা দিয়ে তৈরি নানা পদ।

দুই আমেরিকাতেই একের পর এক লোককথা তৈরি হয়েছে ভুট্টার জন্ম নিয়ে। এক লোককথার সন্ধান পাই আন্তোয়েন ল্যক্লেয়ারের লেখায়। তিনি বার বার আমেরিকার স্থানীয় মানুষদের অধিকারের জন্য লড়াই করে তাঁদের মসিহা হয়ে উঠেছিলেন। ১৭০০ সাল নাগাদ স্যক আর মেসকোয়াকি জনজাতির লোকেরা এখনকার আয়ওয়া প্রদেশ আর মিসিসিপি নদীর পাড়ে থাকতে এসেছিল। অন্যান্য জনজাতির মতো তাদের মহিলারাও একরের পর একর জমিতে ভুট্টা ফলাত বসন্তকালে। এই জনজাতির অবিসংবাদী নেতা ব্ল্যাক হক-এর কাছে ওই সাহেব শুনেছিলেন, তাদের লোককথা অনুযায়ী, ভুট্টা কী করে প্রথম পৃথিবীতে এসেছিল।

স্যক-মেসকোয়াকিদের দুই পূর্বপুরুষ এক দিন সন্ধেবেলা হরিণ শিকার করে, আগুনে ঝলসাচ্ছেন, হঠাৎ মেঘ থেকে এক সুন্দরী নেমে এল জঙ্গলে। তাঁরা ভাবলেন, নিশ্চয় এর খিদে পেয়েছে, তাই মাংসের গন্ধে হাজির হয়েছে মেঘের দেশ থেকে। তাঁরা তখনই এক টুকরো মাংস নিয়ে, মেয়েটাকে দিলেন। সে খুশিমনে খেল, আর দুজনকে বলল, এক বছর পরে জঙ্গলের এই জায়গাতেই ফেরত আসতে। সেখানে তাঁদের নরম মন ও ঔদার্যের পুরস্কার রাখা থাকবে।

গ্রামে ফেরত গিয়ে তাঁরা সবাইকে বললেন এ কথা। সবাই হেসে উড়িয়ে দিল। এক বছর পর যখন দুই বন্ধু জঙ্গলের দিকে পা বাড়ালেন, গোটা গ্রাম সঙ্গে চলল মজা দেখতে। সেখানে পৌঁছে দেখা গেল— মেয়েটি যেখানে ডান হাত রেখেছিল সেখানে ভুট্টা জন্মেছে, যেখানে বাঁ হাত রেখেছিল সেখানে বিন্‌স জন্মেছে, আর যেখানে সে বসেছিল সেখানে তামাক জন্মেছে।

অনেক বছর আগে, এমনকী কলম্বাস আমেরিকায় পৌঁছনোরও আগে, আমেরিকা থেকে কোনও ভাবে ভুট্টা পৌঁছে গিয়েছিল ভারতে। আর পৌঁছেই ছক্কা। প্রতিকূল আবহাওয়ায় নিজেকে মানিয়ে নিতে পারার জন্য, উত্তর আর পশ্চিম ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের হেঁশেলে ভুট্টা জাঁকিয়ে বসল। পঞ্জাবের বিখ্যাত ‘মক্কে কি রোটি’র জনপ্রিয়তা এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ। অসময়ের আর দুঃসময়ের সঙ্গী ছিল ভুট্টা। মুঘলদের হাত থেকে নিজের দেশের মাটি রক্ষা করার জন্য রানা প্রতাপ সিংহ তাঁর প্রিয় ঘোড়ার পিঠে চড়ে তলোয়ার উঁচিয়ে হাঁক দিয়েছিলেন— ‘গেহু ছোড়কে মক্কি খানু, মেওয়ার ছোড়কে কোই না যানু!’

pinakee.bhattacharya@gmail.com

কাজটা কম-পেয়ারিং’এর, বেশি পেয়ার কোরো না

অফিসে জয়েন করতেই আমাকে বলা হল টাইপিং সেকশনে যেতে। কুঁইকুঁই করে বললাম, আমি তো টাইপ জানি না স্যর। ‘জানি।’ ফাইলে চোখ রেখেই বড়কর্তার আদেশ-বাণী: ‘ননীবাবুর কাছে যান।’

প্রথম দিন। বেশি প্রশ্ন করা যাবে না। হাজির হলাম ননীবাবু সমীপে। মেজো মাপের কর্তা। দেওয়াল-ঘেঁষা টেবিল। চতুর্দিকে গোটা দশেক টাইপমেশিনের খটখটাস। সেই মুহূর্তে ননীবাবুর টেবিল ঘিরে কয়েক জন ললনা কলকলায়মান। এক জন পৃথুলা ভেজা-ভেজা নাকি সুরে বলছিলেন, ‘আমার ড্রয়ারে রাখা চিনির কৌটোয় পিঁপড়ে ছেড়ে দিচ্ছে ও। আপনি দেখুন। না হলে... না হলে...’ আর বলতে পারলেন না তিনি। কান্না নাক ছেড়ে গলার দখল নিল।

পিঁপড়ে ছেড়ে দেওয়ার মারাত্মক অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে, এ বার তিনি বলে উঠলেন, ‘আর ও? ও কী করেছে জানেন ননীদা? আমার মাথায় উকুন চালান করেছে! আপনি এর বিচার করবেন। না হলে আমি, আমি ওর চুলের গোছা কেটে নেব!’

বিচারক ননীদা টেবিলে চাপড় মেরে দু’পক্ষকেই থামালেন। দুজনের সমর্থকেরা বিপরীত পক্ষের অপরাধের ডিগ্রি চড়াচ্ছেন। কণ্ঠের চেয়ে বেশি হিল্লোল উঠছে দেহবল্লরীতে। হাতের কাজ বন্ধ রেখে এক দাদা আমার বাজু ধরে টানলেন: ‘আজই জয়েন করলেন তো?
এ দিকে এসে বসুন। আগে ওয়ার্কিং গার্লস হোস্টেলের বিচারপর্ব মিটুক।’

‘কিন্তু এটা তো টাইপ সেকশন!’ কৌতূহল ফুটেছে আমার গলায়। ফিচেল হাসিতে বাজতে বাজতে দাদা বললেন, ‘ননীগোপাল একমেবাদ্বিতীয়ম। এই সেকশনের ইন-চার্জ, আবার হোস্টেলটাও দেখেন। মথুরাতে রাজ্যশাসন, আবার গোপিনীদের নিয়ে লীলাখেলা, সবই এক দেহে। কেরমে কেরমে বুঝতে পারবেন।’

অবশেষে চেয়ারে আসীন হওয়া গেল। কাজটাও জানা গেল— ‘কম্পেয়ারিং’। বিভিন্ন সেকশন থেকে চিঠি আসে টাইপে। ফার্স্ট কপি টাইপ হওয়ার পর, আসলের সঙ্গে মিলিয়ে ভুলগুলো মার্ক করতে হবে। মার্কড কপি ফের যাবে টাইপে।

কম্পেয়ারিং-এ আর এক জন কর্মী মহিলা। তদুপরি যুবতী। তখন যা বয়স, মেয়েদের দিকে সামনাসামনি তাকালে বুকের মধ্যে দুপদাপ। একই টেবিলে পাশাপাশি চেয়ার। আমি পড়া মুখস্থ করার মতো রেলগাড়ি ছোটাই। তিনি গম্ভীর গলায় বলে ওঠেন, ‘আস্তে, এবং জোরে।’ পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রি ঘাড় ঘুরিয়ে আমি বলি, তার মানে?

‘স্পিড কম, আর ভল্যুমটা বেশি। টাইপমেশিনের আওয়াজে কিছু শুনতে পাচ্ছি না। ভুল স্লিপ করে গেলে ননীদা হুঁকাবে।’

ছবি: সুমিত্র বসাক

অগত্যা আমি চিৎকৃত। আর একটা সমাধান মাথায় আসে। দুই চেয়ারের দূরত্ব কমিয়ে আনা। ঠিক ভরসা পাই না। এমনিতেই এই টেবিলে কয়েক জোড়া চোখের সার্চলাইট। অন্যের মুসাবিদা করা চিঠির বাইরে ম্যাডামের সঙ্গে কোনও কথা হয় না।

ননীদা থাকেন স্বমহিমায়। সেকশনের সবাই বেশ সমঝে চলে ওঁকে। শুনতে পাই, বড়কর্তাদের সঙ্গে ওঁর বেশ দহরম মহরম। কে জানে, কলকাঠি করে কাকে কোথায় ঠেলে দেয়! সকালে সবাইকে কাজ দেওয়ার পরেই প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রমীলা বাহিনী। নিত্য নতুন সমস্যা, নতুন নতুন কাজিয়ার সালিশি। এর মধ্যেই একটু ফাঁকা হলে ননীদা হাঁক পাড়েন, ‘ভায়া, কাজটা কিন্তু কম-পেয়ারিং’এর। বেশি পেয়ার করে বোসো না যেন।’

ম্যাডামের কোনও ভাবান্তর বুঝতে পারি না। তবে আমার কালো কান বেগুনি-বর্ণ ধারণ করে। আয়না না ধরেও দিব্যি বুঝতে পারি।

কাঁটায় কাঁটায় দুটো বাজলেই ম্যাডাম উঠে চলে যান। মহিলামহলের টিফিনের আলাদা জায়গা। তখন টিফিনকৌটো হাতে হাজির হন জিতেনদা, পূর্ণদা। ম্যাডামের ফাঁকা চেয়ারে ঠেসাঠেসি করে দুজন। শসার টুকরো চিবোতে চিবোতে চেয়ারের হাতলে নিতম্ব ঠেকিয়ে সনাতনবাবু তিতকুটে ইয়র্কার ছাড়েন, ‘কী ভাইপো, কদ্দূর এগোলে? আগেভাগে বোলো, বাড়িতে গিয়ে কথা বলতে হবে তো!’

অবশ্য প্রতি দিনই বল্লমের মুখ অবধারিত ভাবে ঘুরে যায় ননীবাবুর উদ্দেশে। ঘাড় নিচু করে শুরু হয় অদৃশ্য ইষ্টকবর্ষণ। আগের দিন একটা চিঠি জমিয়ে রাখায় যা নয় তা-ই বলেছে ননীদা। জিতেনদা আবার কার্যকারণ খুঁজতে চেষ্টা করেন। অনেক আলোচনান্তে তাঁর মন্তব্য, ‘মেয়েদের নিয়ে নাড়াঘাঁটা অথচ নিজেই বিয়ে-থা করতে পারছে না। ওই জন্যেই অমন খেঁচোপনা করে।’

পরের দিন দুপুরের আড্ডায় বোমা ফাটালেন পূর্ণদা, ফিসফিসিয়ে। গত কাল সন্ধেয় নিউমার্কেটে দেখা গেছে দুজনকে। ননীদা আর রূপালি। মানে কম্পেয়ারিং ম্যাডাম। ভাইঝির জন্য জামা কিনতে গিয়েছিলেন পূর্ণদা। ওঁদের দেখতে পেয়েই আড়ালে সরে গেছেন। শুনে জিতেনদার চোখ কপাল ছাড়িয়ে মাথার চুলে, ‘তলে তলে এই!’

পরের দিন থেকে ফোকাস ঘুরে গেল। ক’বার ননীদা আড়চোখে রূপালির দিকে তাকালেন, রূপালি কত বার ফাইল দিতে গেছে ননীদার টেবিলে— দুপুরের আড্ডায় এই সব কভার করতে আধ ঘণ্টা বড় কম সময়।

এর মধ্যে এক দিন অফিসে এলেন না ম্যাডাম। ননীবাবু ফার্স্ট আওয়ারেই ডেকে নিলেন আমাকে ওঁর টেবিলে। খুবই বিনয়ী গলায় বললেন, ‘এক দিন একটু কষ্ট করে একা চালিয়ে নাও ভায়া। ও কালকেই আসবে।’

অর্থাৎ, ম্যাডামের কাল আসা সম্পর্কে ননীদা নিশ্চিত। একা একা কম্পেয়ারিং করতে করতে ভাবি, দুপুরের মজলিশে আজকের হিট মেনু হবে এটাই।

কিন্তু, তার আর দরকার হল না। আর একটু বেলা গড়াতেই, হাতে হাতে রঙিন কার্ড: ‘যদিদং হৃদয়ং মম...’ ননীদার মুখে এত বোকা-বোকা হাসি, কল্পনাই করতে পারেনি কেউ।

হুল্লোড়পর্ব মিটতে হপ্তা দুয়েক। আবার ভরাট পাশের চেয়ার। এ বার চেয়ার বেশ খানিকটা কাছাকাছি। কম্পেয়ারিং-এর বাইরে দু’-একটা কথা হয়। তার চেয়ে অনেক বেশি মনে মনে। আর একটা কথা না বললেই নয়। কী রকম একটা বেলফুলের গন্ধ, শাড়ির খসখস, শাঁখা-চুড়ির লিং-টাং— আমার ভেতরে গোলমাল পাকিয়ে দেয়।

তবে অফিসে গোলমাল কমেছে। ননীদা বড়কর্তাকে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি আর লেডিজ হোস্টেলের ঝামেলা পোয়াতে পারবেন না।

বিশ্বনাথ পাকড়াশি, শ্রীরামপুর

pakrashib08@gmail.com

যেখানেই কাজ করুন, ব্যাংক, রেস্তরাঁ, আইটি, অন্য কোথাও— আপনার অফিসের পরিবেশ পিএনপিসি হুল্লোড় কোঁদল বস কলিগ ছাদ ক্যান্টিন— সব কিছু নিয়ে ৭০০ শব্দ লিখে পাঠান। ঠিকানা: অফিসফিস, রবিবাসরীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Corn
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE