Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Jamtara

বিদ্যাসাগরের নন্দনকানন এখন মহাবিদ্যার স্বর্গরাজ্য

চোস্ত ইংরেজি কিংবা হিন্দিতে মোবাইলে জানতে চাওয়া কিছু তথ্য, কিংবা ইনস্টল করতে বলা কোনও বিশেষ অ্যাপ। পলকে সাফ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। করমাটাঁড়কে কেন্দ্র করেই চলে এদের অপারেশন। দেশের নানা প্রান্ত থেকে যুবকরা সাইবার-অপরাধের প্রশিক্ষণ নিতে এখানে আসেন।

স্মৃতিধন্য: করমাটাঁড়ে স্থাপিত বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তি। ডান দিকে, তাঁর নামাঙ্কিত স্টেশন।

স্মৃতিধন্য: করমাটাঁড়ে স্থাপিত বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তি। ডান দিকে, তাঁর নামাঙ্কিত স্টেশন। ছবি: পাপন চৌধুরী

সুশান্ত বণিক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৩২
Share: Save:

বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমান্তের গ্রাম করমাটাঁড়ে তাঁর পদার্পণের দেড়শো বছর পূর্ণ হতে বছর দুয়েক বাকি। ১৮৭৩ সালে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পূর্ণ এই গ্রামে এসে ওঠেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। লাল মোরামের চড়াই-উতরাই পথ। উঁচু-নিচু অসংখ্য টিলা। শাল পলাশ নিম ও করমা গাছের জঙ্গলে ঘেরা এই গ্রামে টানা দেড় যুগ বসবাস করেছিলেন তিনি। ওই সময়ে তিনি এই প্রত্যন্ত গ্রামকে বিখ্যাত করে তুলেছিলেন। এক ইংরেজ মহিলার কাছ থেকে তিন একরের সামান্য বেশি জমি কিনে গ্রামের দুঃস্থ বাসিন্দাদের জন্য বহু প্রকল্প, যেমন নিরক্ষর পুরুষদের জন্য সান্ধ্য স্কুল, স্ত্রীশিক্ষার প্রসারের জন্য বালিকা বিদ্যালয়, দাতব্য হোমিয়ো চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন। বন্ধ্যা জমিতে ভুট্টা, ছোলা ফলিয়ে দিনমজুরদের খাওয়ার ব্যবস্থাও করেছিলেন। পরে তাঁর সম্মানে ১৯৭৪ সালে ভারতীয় রেল করমাটাঁড় রেলস্টেশনের নাম পাল্টে বিদ্যাসাগর রাখে। বছর কয়েক আগে স্টেশনটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়। নির্মিত হয় বিদ্যাসাগর সংগ্রহশালা ও উদ্যান। ঝাড়খণ্ড রাজ্যের জন্মের পর ঝাড়খণ্ড সরকার জামতাড়ার করমাটাঁড় ব্লকটিকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ব্লক নামে চিহ্নিত করে।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের স্মৃতিধন্য করমাটাঁড় এখন সাইবার-অপরাধে দেশের সবচেয়ে বিপজ্জনক মুক্তাঞ্চল। জামতাড়া জেলার ছোট্ট এই গ্রামে সাইবার-প্রতারণার বহু চক্র সক্রিয়। করমাটাঁড় থেকে ১২ কিমি দূরের নারায়ণপুর গ্রামও সাইবার-প্রতারণার শক্তিশালী কেন্দ্র। পুলিশের দাবি, চক্রগুলির সদস্যরা সারা দেশের মানুষের সঙ্গে নিয়মিত আর্থিক প্রতারণা করে চলেছে। এই প্রতারক চক্রগুলি দেশের নানা প্রান্তে ‘জামতাড়া গ্যাং’ বলে চিহ্নিত। করমাটাঁড় পুলিশ থানায় প্রথম বার সাইবার-অপরাধের অভিযোগ দায়ের হয় ২০১১ সালে। মোবাইল ফোনে আলাপচারিতার মাধ্যমে সে বার ওড়িশার এক ব্যবসায়ীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক লক্ষ টাকা লোপাট করেছিল দুষ্কৃতীরা। পরে ভুবনেশ্বর পুলিশ মোবাইল নম্বরটির টাওয়ার লোকেশন ধরে করমাটাঁড়ে পৌঁছয়। এখানে মামলা দায়ের হলে করমাটাঁড় পুলিশ তদন্ত শুরু করে। ওই মামলায় কেউ ধরা পড়েনি। অপরাধের এই ধরনটি তখন পুলিশের কাছে একেবারেই নতুন। বিষয়টি বুঝতে পুলিশের আরও সময় লাগে। ওই ঘটনার পরে করমাটাঁড় থানায় ধারাবাহিক ভাবে এমন অভিযোগ জমা পড়তে শুরু করে, তবে পুলিশকে এখন আর বেগ পেতে হয় না। অনেক ক্ষেত্রে দুষ্কৃতী গ্রেফতারও হয়। করমাটাঁড় পুলিশের প্রকাশিত সাম্প্রতিক তথ্যে এখনও পর্যন্ত এ রকম প্রায় ৮১টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুলিশের নজর আছে প্রায় ৩৫০ জন দুষ্কৃতীর উপরে।

এ ধরনের আর্থিক প্রতারণা পুরোটাই হয় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। এরা ফোনে খুবই আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে চোস্ত ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় ব্যাঙ্ক অফিসারদের মতো পেশাদারি ঢঙে এটিএম কার্ডের নম্বর ও পিন নম্বরটি জেনে নেয়। পুলিশ জানিয়েছে, যে এই কাজটি করে তাকে বলা হয় ‘এটিএম মাস্টার’। প্রতারণা থেকে অর্জিত অর্থের বেশির ভাগই সে নেয়। এটিএম কার্ডের নম্বর ও পিন জেনে কম্পিউটারের মাধ্যমে এটিএম মাস্টাররা শিকারির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে সমস্ত টাকা তুলে নিজেদের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে নেয়। প্রতারকরা চুরির টাকা কখনও নিজেদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করে না। এরা গ্রামের গরিব বাসিন্দাদের সচিত্র পরিচয়পত্র জোগাড় করে তাঁদের নামে নিজেরাই বিভিন্ন ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলে। পরে সে-সব অ্যাকাউন্টের এটিএমকার্ড নিজেদের কাছে রেখে দেয়। প্রতারণার টাকা এরা ওই সব গরিব গ্রামবাসীর অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে, পরে এটিএম কার্ডের মাধ্যমে তুলে নেয়। যাদের অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করা হয়, তাদেরও এরা টাকার ভাগ দেয়। প্রতারণার টাকা অপরাধীরা নিজেদের নামের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে না, কারণ তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমেই খোঁজ করে, লুঠ হওয়া টাকা কোন অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে। সে ক্ষেত্রে অপরাধী সাব্যস্ত হয় সেই গরিব গ্রামবাসী, যাঁদের নামে দোষীরা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণার টাকা ট্রান্সফার করছে এবং বখরা দিচ্ছে। ফলে আসল অপরাধীদের ধরা পড়ার সম্ভাবনা থাকে না। সাইবার প্রতারকরা খুবই বিপজ্জনক হয়, বলে গ্রামের গরিব মানুষেরা ভয়ে মুখ খোলেন না। তাঁরাই শাস্তি পান।

তবে আজকাল প্রতারণার ধরন বদলেছে। দুষ্কৃতীরা এখন মোবাইলের সিমকার্ড, আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের কেওয়াইসি (নো ইয়োর কাস্টমার) আপডেট করার কথা বলে লোক ঠকাচ্ছে। যেমন, শিকারিরা মানুষের মোবাইলে ফোন করে জানাচ্ছে তাঁর কেওয়াইসি আপডেট না থাকায় তাঁর আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটি সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে। যদি তিনি চান, তবে ফোনেই কেওয়াইসি আপডেট করিয়ে নিতে পারেন। তা হলেই সিমকার্ড বা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন চালু হয়ে যাবে। টার্গেট যদি এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়, তবে তাকে তার মোবাইলে গুগল প্লে-স্টোর থেকে ‘কুইক ভিউয়ার’ বা ‘অ্যানিডেস্ক’ অ্যাপ্লিকেশনটি আপলোড করতে বলে অপরাধীরা। এটি আপলোড করার পরে এদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ বা ২০ টাকার রিচার্জ করতে বলে। টার্গেট সেটি করার সঙ্গে সঙ্গেই অপরাধীরা টার্গেটের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সমস্ত তথ্য হাতে পেয়ে যায়। নিমেষের মধ্যেই টার্গেটের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট মরুভূমি হয়ে যায়।

করমাটাঁড়ে কেমন করে গজিয়ে উঠেছিল এই প্রতারণা চক্র? গ্রামের যুবকেরা কী ভাবে জড়িয়ে পড়ল এই কারবারে? কী ভাবেই বা দেশের নানা প্রান্তের মানুষজনকে এরা ঠকাতে শুরু করল? এ সব জানতে হলে যেতে হবে করমাটাঁড়ে। তবে গ্রামে অপরিচিত কাউকে ঘোরাফেরা করতে দেখলে প্রতারকরা সন্দেহের চোখে দেখে। এরা যদি ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারে যে সাইবার-প্রতারণার বিষয়ে কেউ খোঁজখবর করতে এসেছে, তা হলে মারাত্মক বিপদের মুখে পড়তে হবে। যাই হোক, আসানসোল থেকে চিত্তরঞ্জন রোড ধরে প্রায় ২২ কিমি পথ এগোলে পৌঁছনো যাবে পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তের আধা-শহর রূপনারায়ণপুরে। এখান থেকে বিহার রোড ধরে পূর্ব রেলের মেন লাইনের ধার ঘেঁষে পশ্চিম দিক বরাবর প্রায় ৫৭ কিমি এগোলেই বিদ্যাসাগর স্টেশন। স্টেশনের বাঁ পাশে একফালি রাস্তা উত্তর দিকে চলে গিয়েছে। দোকান-বাজার ঘিঞ্জি গলি ডিঙিয়ে পাঁচশো মিটার এগোলেই বিদ্যাসাগরের সাধের নন্দনকানন। স্থানীয়রাই জায়গাটি চিনিয়ে দেন। নন্দনকানন থেকে আরও কিছুটা ভিতরে প্রতারকদের মহল্লা। প্রায় বস্তির মতো চেহারার পল্লির যেখানে সেখানে মাটির ঘর, কিন্তু ভাল করে লক্ষ করলে দেখতে পাওয়া যায় মাটির বাড়ির পিছনে পেল্লাই বাড়ি উঠেছে। বাড়ির সামনে কাচের দরজায় সেন্সর। রিমোট টিপলে সে দরজা খোলা-বন্ধ হয়। এক সময় দিন-এনে-দিন-খাওয়া পরিবারগুলির সদস্যরা সকলেই এখন কোটিপতি। বিশাল বাড়ি, দামি গাড়ি, জীবনযাপন সবই রাজকীয়।

এলাকায় প্রায় দু’লক্ষ বাসিন্দার বসবাস। সকলে প্রতারণাচক্রের সঙ্গে জড়িত নন। যাঁরা সৎ পথে রোজগার করেন তাঁদের দিনকাল ফেরেনি বলে জানালেন এলাকার বাসিন্দা, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার নেতা প্রকাশ মণ্ডল। এখানে মণ্ডল পদবিরই সংখ্যাধিক্য।

কবে, কী ভাবে গড়ে ওঠে এখানকার প্রতারণাচক্র? প্রকাশবাবুর কথায়, জামতাড়া জেলাসদর থেকে মাত্র ১৪ কিমি দূরের গ্রাম করমাটাঁড় বরাবরই অর্থনৈতিক ভাবে অনুন্নত। প্রায় দশ বছর আগে এলাকার কিছু বেকার যুবক গ্রাম ছেড়ে ভিন্‌রাজ্যে চাকরি করতে গিয়েছিল। এরা প্রথম মোবাইল ফোন রিচার্জ করিয়ে টাকা না মেটানোর বিদ্যে শিখেছিল। পরে রপ্ত করেছিল কী ভাবে অন্যের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের টাকা নিজেদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা যায়। তার পর দিন যত এগিয়েছে, তত এরা নিজেদের আধুনিক করে তুলেছে। জানা গেল, প্রতারণাচক্রের সঙ্গে জড়িতরা সকলেই স্কুল ও কলেজছুট। পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৮টি রাজ্যের বিভিন্ন থানার পুলিশ অন্তত ৬৩ বার করমাটাঁড় থানায় তদন্তের স্বার্থে এসেছে। এখনও পর্যন্ত শতাধিক প্রতারক গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশ আধিকারিকের কাছ থেকেই জানা গেল, গ্রেফতার হওয়া করমাটাঁড়ের সাইবার-প্রতারকরা এখন অনেকেই আর নিজেরা সরাসরি প্রতারণার কাজ করে না, কিন্তু প্রশিক্ষণকেন্দ্র খুলে নতুনদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। সম্প্রতি এ রকম কয়েকজন প্রশিক্ষককে জামতাড়া পুলিশ গ্রেফতার করে এই কারবারের কথা বিশদে জানতে পেরেছে। পুলিশের হাতে ধৃত প্রশিক্ষকেরা স্বীকার করেছে, ঝাড়খণ্ডের এই মানভূম অঞ্চল অর্থনৈতিক ভাবে খুবই অনুন্নত। শিল্প নেই, কৃষি হয় না, চাকরি মেলে না। পরিবার ছেড়ে অন্যত্র চাকরি করতে যাওয়ার সুযোগ যাঁদের আছে, তাঁরা কোনও ভাবে অর্থের সংস্থান করতে পারেন। কিন্তু যাঁদের সে সুযোগ নেই, তাঁদের গ্রামের বাড়িতে অনাহারে দিন কাটে। এই অবস্থায় মাসে অন্তত ১২ হাজার টাকা রোজগারের ব্যবস্থা করে দিতে গড়ে তোলা হয়েছে এ-সব সাইবার-প্রতারণা প্রশিক্ষণকেন্দ্র। ১৫ দিনের একটি ক্র্যাশ কোর্সের জন্য খরচ সাত থেকে দশ হাজার টাকা। করমাটাঁড় জামতাড়া ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের যুবকরা এখানে প্রশিক্ষণ নিতে আসে। প্রশিক্ষণ নিতে আসা অন্য রাজ্যের যুবকদের তালিকায় সম্প্রতি সংযোজিত পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলার সীমান্ত শহরগুলিও।

সাইবার-অপরাধীদের এই ক্রমবর্ধমান দৌরাত্ম্যে চিন্তিত বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা সমিতির সদস্যরা। সমিতির সহ-অধ্যক্ষ বিদ্রোহ মিত্র জানালেন, “প্রতি বছর দূরদূরান্তের ভ্রমণার্থীরা বিদ্যাসাগরের নন্দনকাননে বেড়াতে আসেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বিদেশ থেকেও আসেন। করমাটাঁড়ের সাইবার-অপরাধ সম্পর্কে তাঁরা অবগতও আছেন। তাই এখানে আসার আগে তাঁরা বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা সমিতির সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিস্থিতি সম্বন্ধে জেনেবুঝে নেন।”

নন্দনকানন-পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে যে সাইবার-অপরাধীদের ডেরা রয়েছে, তা সেখানে গেলেই বোঝা যায়। এই প্রসঙ্গে বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা সমিতির প্রাক্তন সম্পাদক বিশ্বনাথ দেব জানালেন, সম্প্রতি নন্দনকাননের জলের পাম্প-সহ কিছু মূল্যবান সম্পদ চুরি গিয়েছে। এর পর থেকে তাঁরা আরও সতর্ক। নন্দনকাননে বেড়াতে আসা ভ্রমণার্থীদেরও সদা সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। তাঁর আক্ষেপ, বিদ্যাসাগরের স্মৃতিবিজড়িত করমাটাঁড়ের এই নিরাপত্তাহীনতা দেশের শিক্ষিত সমাজের কলঙ্ক। এক সময় যাঁরা নিয়মিত এখানে বেড়াতে আসতেন, তাঁরা মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা সমিতির সহ-অধ্যক্ষ বিদ্রোহ মিত্র জানালেন, “তিন দশক আগেও করমাটাঁড়ের এমন দশা ছিল না। মাঝেসাঝে চুরি-ছিনতাই হলেও তা ভ্রমণার্থীদের পক্ষে খুব একটা আতঙ্কের ছিল না। কিন্তু সাইবার-অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে চলায় বিদ্যাসাগরের এই পুণ্যভূমি এখন বস্তুত স্বকীয়তা হারাতে বসেছে।” তাঁদের আক্ষেপ, হয়তো সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যে দিন এখান থেকে মুছে যাবে বিদ্যাসাগরের নাম, পুণ্যভূমি নয়, সাইবার-অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য হিসেবেই দেশের মানচিত্রে জায়গা করে নেবে এই অঞ্চল। এই দুঃস্বপ্নই বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা সমিতির সদস্যদের প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়ায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jamtara Ishwarchandra Vidyasagar Cyber Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE