Advertisement
E-Paper

পেঁয়াজ-রসুন ছাড়া সাত্ত্বিক খাবার কতখানি সুস্বাদু হতে পারে? পুরনো রান্না চাপড়ঘণ্ট খেলে বুঝবেন!

ডাল বেটে তৈরি করা চ্যাপ্টা বড়াকে বলা হয় ‘চাপড়’। সেই চাপড় আর নানা মরসুমি সব্জি দিয়ে তৈরি এই তরকারিতে নামমাত্র মশলাতেও দারুণ স্বাদ হয়।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৫ ১৮:১৭

ছবি : শর্মিষ্ঠা পাল (কুকপ্যাড)

বাংলার হেঁশেলে লুকিয়ে আছে নানা রকমের রান্নাবান্নার প্রণালী। তার এক একটির সঙ্গে আবার জুড়ে এক এক ধরনের গল্পও। তেমনই এক গল্প বলছে, মৎস্যপ্রেমী বাংলায় কিছু অতি স্বাদু নিরামিষ খাবারের জন্ম হয়েছিল বাঙালি বিধবাদের সৌজন্যে। অল্পবয়সে যাঁদের খাওয়াদাওয়ায় কড়া নিয়মের বেড়া বসিয়েছিল সমাজ। কিন্তু সুস্বাদু খাবার খাওয়ার ইচ্ছায় রাশ টানতে পারেনি। ফলে পেঁয়াজ, রসুন, মুসুর ডাল, মাছ-মাংস-ডিম, গরম মশলাহীন হেঁশেলে তৈরি হয়েছিল, এক অন্য রকমের স্বাদের সন্ধান। সেখান থেকেই তৈরি হয়েছিল ঘণ্ট, চচ্চড়ি, বাটিচচ্চড়ি, ছেঁচকির মতো রন্ধনপ্রণালী। যা নামমাত্র মশলায় মনে দাগ কেটে যাওয়া স্বাদ তৈরি করতে পারে।

আবার একটি গল্প বলছে, সে কালে অবস্থাপন্ন বাঙালি বাড়িতে ওড়িয়া রাঁধুনি রাখার চল ছিল। ফলে বাঙালি রান্নায় বিশেষ করে নিরামিষ খাবারে ওড়িশার রন্ধনপ্রণালীর প্রভাব মেশে। এই মতের অনুসারীরা মনে করেন বাঙালি রান্নায় ডাঁটা, মুলো, ওলের ব্যবহার কিংবা রান্নায় শুকনো লঙ্কা আর গোটা সর্ষের ফোড়ন, মেথি, হিং, নারকেলের ব্যবহারও এসেছে ওড়িশার রন্ধনপ্রণালী থেকে প্রভাবিত হয়েই। তবে ঘটনা যা-ই হোক, এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই যে, হালকা মশলায় অল্প উপকরণে বাঙালির রান্নায় যে সমস্ত নিরামিষ রান্না রয়েছে, তা মুখে দিলে মাছ-মাংসের কথাও ভুলে যেতে হয়। তেমনই এক রান্না হল চাপড়ঘণ্ট।

ডাল বেটে তৈরি করা চ্যাপ্টা বড়াকে বলা হয় ‘চাপড়’। সেই চাপড় আর নানা মরসুমি সব্জি দিয়ে তৈরি এই তরকারিতে ফোড়ন বলতে শুকনো লঙ্কা, পাঁচফোড়ন আর তেজপাতা। আর মশলা হল আদা এবং সর্ষে-পোস্ত বাটা। তাতেই এই রান্নার যা স্বাদ হয়, তাতে গরম ভাতে আর অন্য কোনও তরকারি না হলেও চলবে। ঝঞ্ঝাটহীন এই রান্না যে কোনও দিন বাড়িতে বানিয়ে দেখতে পারেন আপনিও।

যা যা লাগবে

১ কাপ মটর ডাল

১ কাপ মুগ ডাল

৩ গাঁট মতো আদা

৬টি কাঁচালঙ্কা চেরা

২টি আলু

৩টি পটল

২টি ঝিঙে

২টি করোলা বা কাঁকরোল

১০০ গ্রাম কুমড়ো

১টি ছোট বেগুন

২টি শুকনো লঙ্কা

১ চা চামচ পাঁচফোড়ন

২টি তেজপাতা

১ টেবিল চামচ সর্ষে

২ টেবিল চামচ পোস্ত

২ টেবিল চামচ ঘি

আধ কাপ সর্ষের তেল

২ কাপ গরম জল

স্বাদ মতো নুন এবং চিনি

কী ভাবে বানাবেন?

সমস্ত সব্জি ভাল ভাবে ধুয়ে টুকরো করে কেটে নিন। সর্ষে এবং পোস্ত সামান্য নুন দিয়ে বেটে নিন। মটর ডাল এবং মুগ ডাল ভাল ভাবে ধুয়ে ভিজিয়ে রাখুন অন্তত ঘণ্টা চারেক।

ভোজানো ডাল এক গাঁট আদা, দু’টি কাঁচালঙ্কা সামান্য নুন দিয়ে বেটে নিন। এই বাটা খুব মিহি হবে না। সামান্য দানা দানা রাখতে হবে। এ বার কড়াইয়ে সর্ষের তেল গরম করে তাতে ওই মিশ্রণ দিয়ে একটি চ্যাপ্টা আকৃতির বড়া বানিয়ে তেলে ছাড়ুন। এগুলিই চাপড়। লালচে রং ধরলে চাপড়গুলি তুলে নিন। ছুরি দিয়ে অর্ধেক করে কেটে এক পাশে সরিয়ে রাখুন।

ওই কড়াইয়েই তেলে তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা এবং পাঁচফোড়ন দিয়ে সুগন্ধ বেরোলে দিন চেরা কাঁচা লঙ্কা এবং বাকি আদা বাটা। কয়েক সেকেন্ড নাড়াচাড়া করে প্রথমে দিন টুকরো করে কেটে নেওয়া আলু। খানিক ক্ষণ নাড়াচাড়া করার পরে একে একে দিন কাঁকরোল/ করলা, পটল কুমড়ো, ঝিঙে, বেগুন। ভাল ভাবে ভাজুন। নুন দিয়ে আর এক বার নাড়াচাড়া করে নিয়ে ২ কাপ গরম জল ঢেলে চাপা দিয়ে রাখুন মিনিট তিনেক। জল ফুটে উঠলে উপরে দিন সর্ষে-পোস্ত বাটা, সামান্য চিনি এবং ভেঙে রাখা চাপড়।

মশলায় পুরোটা ভাল ভাবে নাড়াচাড়া করে নিয়ে উপরে ঘি ছড়িয়ে নামিয়ে নিন। মাখোমাখো হলে নামিয়ে নিন। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

Traditional bengali recipe Bengali Recipe Chapor Ghonto
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy