সারা ভারতে নানা নামে প্রচলিত ভাইফোঁটার উৎসব। পশ্চিমবঙ্গে যা ভাইফোঁটা, উত্তর ভারতে তা ‘ভাইদুজ’, নেপালে ‘ভাইটিকা’, বিহারে ‘ভাইদুতিয়া’, গুজরাতে আবার ‘ভাইবিছিয়া’। দুর্গাপুজো, কালীপুজোর পরে এই দিনটার জন্যই বছরভর অপেক্ষায় থাকেন বোনেরা। ভাইয়ের কপালে চন্দন, কাজল বা ঘিয়ের ফোঁটা দিয়ে মঙ্গল কামনা, তার পর সবাই মিলে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া! তার আনন্দই আলাদা!
ভাইফোঁটার ভোজ মানেই তাতে থাকবে রকমারি খাবার। সকাল থেকেই শুরু হয় খাওয়াদাওয়ার পর্ব। সকালে ফোঁটা সেরে লুচি, আলুদম, পায়েস, মিষ্টি সাজিয়ে দেওয়া হয় ভাইয়ের উদ্দেশে। তার পর শুরু হয় দুপুরের খাওয়ার প্রস্তুতি। ভাইয়ের জন্য পঞ্চব্যঞ্জন না রাঁধলে আবার বোনের মন খুঁতখুঁত করে। প্রতি বছর সব বোনেদের মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরপাক খায়, এ বছর নতুন কী পরিবেশন করা যায় ভাইয়ের ভোজের থালায়। ভাত, ডাল, পাঁচ রকম ভাজা, চিংড়ির মালাইকারি, মটন কষার বাইরে ভাইফোঁটা স্পেশ্যাল মেনুতে কী কী রাখতে পারেন, দেখে নিন এক ঝলকে।
শুরুতেই চমক
নারকেলি ভাত
একটি ননস্টিক কড়াইয়ে আগে থেকে ধুয়ে রাখা বাসমতী চাল দিয়ে দিন। এ বার চালের পরিমাণের ঠিক দ্বিগুণ পরিমাণ নারকেল দুধ আর জলের মিশ্রণ মিশিয়ে দিন। এ বার একে একে মিশিয়ে দিন গোলমরিচগুঁড়ো, বেশ খানিকটা নারকেলকোরা আর স্বাদমতো নুন। এ বার কড়াইটি গ্যাসে চড়ান। আঁচ বাড়িয়ে ফুটতে দিন। মিনিট দুয়েক পর আরও খানিকটা জল দিয়ে আঁচ কমিয়ে মিনিট দশেক ঢাকা দিয়ে রান্না করুন। ভাত সেদ্ধ হয়ে গেলে উপর থেকে খানিকটা চিনি ছড়িয়ে নাড়াচাড়া করে দিন। তৈরি হয়ে যাবে নারকেলি ভাত।
ভাজাভুজিতে জমবে ভোজ
এঁচোড়ের কাটলেট
প্রথমে নুন, হলুদ দিয়ে এঁচোড় আর আলু সেদ্ধ করে নিন। তার পর ভাল করে জল ঝরিয়ে ভাল করে মেখে নিন। এ বার কড়াইয়ে তেল সামান্য গরম করে তাতে গরমমশলা গুঁড়ো দিয়ে আদা বাটা মিশিয়ে দিন। আদার কাঁচা গন্ধ চলে গেলে তাতে হলুদ, জিরে আর লঙ্কার গুঁড়ো দিয়ে ভাল করে কষিয়ে নিন। মশলা থেকে তেল ছেড়ে এলে এঁচোড় আর আলুর মিশ্রণ দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি শক্ত হয়ে এলে একে একে লেবুর রস, গরমমশলা গুঁড়ো, ভাজা মশলার গুঁড়ো, স্বাদ মতো চিনি দিয়ে আরও কিছু ক্ষণ নাড়াচাড়া করুন। এ বার কড়াই থেকে নামিয়ে মিশ্রণটি ঠান্ডা হতে দিন। তার পর মিশ্রণটি থেকে ছোট ছোট মণ্ড বানিয়ে কাটলেটের আকার দিন। এ বার ময়দা আর জল দিয়ে বানানো ঘন মিশ্রণে ডুবিয়ে কাটলেটের গায়ে বিস্কুটের গুঁড়ো মাখিয়ে নিন। ডোবা তেলে ভেজে কাসুন্দির সঙ্গে পরিবেশন করুন এঁচোড়ের কাটলেট।
চিংড়ির শিক কবাব
চিংড়ি মাছগুলি ভাল করে পরিষ্কার করে নিন, মাথা ফেলার প্রয়োজন নেই। এ বার কড়াইয়ে সামান্য তেল দিয়ে মাছগুলি ভেজে নিন। এ বার একটি মিক্সিতে মাছগুলি নিয়ে সামান্য জল দিয়ে বেটে নিন। একটি বড় বাটিতে চিংড়ি মাছ বাটা, ভিজিয়ে জল ঝরানো পাউরুটি, ভাজা পেঁয়াজ, ধনেপাতা, আদা-রসুন বাটা, নুন, হলুদ, জিরে গুঁড়ো, লেবুর রস আর সামান্য তেল দিয়ে মেখে নিন। গোটা মিশ্রণটি ফ্রিজে এক ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এর পর শিকের মধ্যে মাছের মিশ্রণটিকে ভাল করে মুড়ে দিন। ভাল করে দু’দিক মুড়িয়ে গ্রিল করে নিন কবাবগুলি। মাঝে মাখন মাখিয়ে নিতে হবে। যত ক্ষণ না শিকে গাঁথা পুরো মিশ্রণটি সেদ্ধ হয়ে রান্না হয়ে যাচ্ছে, তত ক্ষণ গ্রিল করুন। এর পর লেবুর রস ছড়িয়ে পরিবেশন করুন চিংড়ির শিক কবাব।
সঙ্গে থাকুক আমিষের বাহার
চিংড়ি বিউলির ডাল
বিউলির ডাল ভেজে নিন। ভাজা বিউলির ডাল ভাল করে ধুয়ে নিয়ে নুন, হলুদ দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। এ বার কড়াইতে সর্ষের তেল গরম করে চিংড়িমাছগুলি নুন-হলুদ দিয়ে ভেজে নিন। সেই তেলেই মৌরি ও শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে পেঁয়াজকুচি, আদা-রসুন বাটা, কাঁচালঙ্কা ও টোম্যাটো দিয়ে ভাল করে কষিয়ে নিন। মশলা থেকে তেল ছেড়ে এলে তাতে সব রকম গুঁড়ো মশলা দিয়ে আরও কিছু ক্ষণ নাড়াচাড়া করুন। শেষে ভাজা চিংড়িগুলি মিশিয়ে দিন। তার পর সেদ্ধ করে রাখা ডাল দিয়ে ভাল করে নাড়াচাড়া করুন। স্বাদ মতো নুন-চিনি দিয়ে কড়াই ঢেকে দিন। মিনিট পনেরো পর ঢাকা খুলে দেখুন। ডাল ঘন হয়ে এলে গরমমশলার গুঁড়ো ছড়িয়ে গ্যাসের আঁচ বন্ধ করে দিন।
বাদামি পমফ্রেট
মাছের আকার বড় হলে দুই বা তিন টুকরো করে কেটে নিতে পারেন। এ বার মাছগুলি ভাল করে ধুয়ে নিয়ে মাছের মধ্যে নুন, লেবুর রস, আর আদা-রসুন বাটা দিয়ে ভাল করে মেখে মিনিট পনেরো রেখে দিন। একটি মিক্সারে চিনেবাদাম গুঁড়ো করে নিন। এ বার সেই গুঁড়োর মধ্যে টক দই আর কাঁচালঙ্কা মিশিয়ে ভাল করে বেটে নিন। এ বার ননস্টিক পাত্রে তেল গরম করে মাছগুলি লালচে করে ভেজে নিন। মাছগুলি তুলে নিয়ে সেই তেলে রসুনকুচি ফোড়ন দিয়ে হালকা ভেজে নিন। এ বার কড়াইয়ে বাদাম বাটার মিশ্রণটি দিয়ে ভাল করে কষিয়ে নিন। মশলা ভাল করে কষে গেলে সামান্য জল দিয়ে ফুটতে দিন। এ বার ঝোল ফুটে উঠলে মাছগুলি দিয়ে মিনিট পাঁচেক ঢাকা দিয়ে রাখুন। শেষে ক্রিম আর ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে গ্যাসের আঁচ বন্ধ করে নিন।
মটন সুখা
একটি পাত্রে মাংস নিয়ে তার সঙ্গে লেবুর রস, হলুদ, দই ও নুন মাখিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন ৩-৪ ঘণ্টা। এ বার শুকনো খোলায় ভেজে রাখুন শুকনো লঙ্কা, জিরে, ধনে, লবঙ্গ, মেথি, গোলমরিচ। ভেজে রাখা গোটা মশলা মিক্সিতে গুঁড়ো করে নিন। এ বার কড়াইতে ঘি গরম করে চিনি দিয়ে দিন। খানিক ক্ষণ নেড়েচেড়ে তাতে রসুনবাটা দিয়ে দিন। তার পর মাংস আর বেটে রাখা মশলা দিয়ে ভাল করে কষিয়ে নিন। মশলা থেকে তেল ছেড়ে এলে তেঁতুলের ক্বাথ দিয়ে দিন। কষানোর সময় অল্প অল্প করে গরম জল দিতে পারেন। মাংস সেদ্ধ হয়ে এলে গরমমশলা গুঁড়ো দিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিলেই তৈরি হয়ে য়াবো মটন সুখা।
কুচ মিঠা হো যায়ে
কফি শ্রীখণ্ড
জল ঝরানো টক দইয়ের সঙ্গে কফির গুঁড়ো, মিল্ক চকোলেট পাউডার আর পরিমাণ মতো চিনির গুঁড়ো ভাল করে মিশিয়ে নিন। এ বার মাটির ভাঁড় কিংবা কাচের বাটিতে মিশ্রণটি ঢেলে তার উপরে খানিকটা চকো চিপ্স ছড়িয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। চেনা মিষ্টির বাইরে এই কফি শ্রীখণ্ড ভাইয়ের মন জয় করবেই।
ডাবের পায়েস
একটি বড় শাঁসযুক্ত ডাব নিয়ে জলটা বার করে রাখুন। এ বার শাঁসটা বার করে মিক্সিতে ঘুরিয়ে নিন। খুব বেশি মিহি করার প্রয়োজন নেই। দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করে নিন। এর পর আগে থেকে জ্বাল দিয়ে রাখা দুধের মধ্যে গোলাপজল, চিনি, কনডেন্স্ড মিল্ক মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন। মিশ্রণটি ফুটে ঘন হয়ে এলে তাতে আগে থেকে মেখে রাখা ছানা দিয়ে অল্প আঁচে নাড়তে থাকুন। এর পর ডাবের শাঁস দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। পায়েস ঠান্ডা হয়ে এলে উপর থেকে পেস্তা, কাজু ছড়িয়ে দিন।