Advertisement
E-Paper

দুর্গাপুজো মানেই বছরশেষে মেয়ের ঘরে ফেরার পালা, বিজয়ার মিষ্টিতে লুকিয়ে মায়ের হাতের চেনা গন্ধ

পুজো মানে খানিক সময় বার করে সেই ছোটবেলার কাছে ফিরে যাওয়া। যেখানে পুজোর হাজার তোড়জোড়ের শেষে সময় করে সকালে মায়ের পুজোর ভোগ সাজায় যে হাত, সে হাতই খানিক অবসরে অভ্যস্ত ব্যস্ততায় ভেজে তোলে নিমকি, গজা, গড়ে তোলে নিটোল গোল গুড়ের নাড়ু, নকশা তোলা নারকোলের ছাপা।

সায়ন্তনী মহাপাত্র

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৫৮
Dashami special desserts recipes you can make for Durga puja

ছবি: শাটারস্টক।

আজকাল মেঘে মেঘে কবে যে বর্ষা গড়িয়ে শরৎ আসে বোঝাই দায়। তবুও ক্ষণিক বৃষ্টির ফাঁকে আকাশে যখন নীল আভা লাগে, সন্ধ্যার ভেজা মাটির গন্ধে যখন আবছা ভেসে আসে শিউলি ফুলের গন্ধ, তখন খুব কেজো মানুষের মনও উন্মনা হয় বইকি। সে রাস্তার হাতে টানা রিকশাওয়ালাই হোন কিংবা প্রযুক্তি কর্মী, পুজো মানে শহর ঘুরে ঘরে ফেরার হাতছানি। মায়ের পুজো মানে বছর শেষে নিজের মায়ের কাছে ফেরা।

ঘরে ফেরার সংজ্ঞা তবু সময়ের সঙ্গে ভীষণ বদলে যায়। পেয়ে হারানো ছোটবেলায় উঁকি দিলে হাতে পড়ে থাকে কেবল কিছু মায়ার বাঁধন আর স্মৃতি। ছোটবেলার সেই আস্ত বাড়িখানা যখন তার ভেতরে বাস করা মানুষজন সমেত ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যায়, তখন পুজোর সময় তার ঠিকানা খুঁজে আমাদের সকলের যাত্রা শুরু হয় ভিতরপানে।

পুজো মানে খানিক সময় বের করে সেই ছোটোবেলাটার কাছে ফিরে যাওয়া যেখানে পুজোর হাজার তোড়জোড়ের শেষে সময় করে সকালে মায়ের পুজোর ভোগ সাজায় যে হাত, সে হাতই খানিক অবসরে অভ্যস্ত ব্যস্ততায় ভেজে তোলে নিমকি, গজা, গড়ে তোলে নিটোল গোল গুড়ের নাড়ু, নকশা তোলা নারকোলের ছাপা। সবই আদতে পুজোশেষের আয়োজন। স্বল্প আয়াসের, অল্প আয়োজনের সে সব সান্ধ্য ভোগের আয়োজন পুজোর ছুটিতে দিনভর মাঠে ঘটে খেলে বেড়ানো তাঁদের ঘরের ছোট্ট ছোট্ট দুর্গা, গণেশ আর কার্তিকদের জন্য।

সে স্বাদের ভাগ এক কালে পেয়েছেন তৃণাও। তাঁদেরও একখান বাড়ি ছিল। বাঁশবনের মাটির ঘোরানো রাস্তা পেরিয়ে হলুদ রঙের দুই মহলা সেই বাড়িতে এক দিন তাঁরও পথ চেয়ে অপেক্ষায় থাকতো কোনও উতলা মুখ। পুজোর ব্যস্ততার দিনে ঘরে ফিরলে তার উতল মুখে স্বস্তির ছায়া আলো হয়ে জ্বলে উঠত। ধূপ, ধূনো, নতুন জামা, পায়েসপাতা, নাড়ু আর নিমকির গন্ধে ভরা সেই ছোটবেল, সেই রুপোলি চুলের রেখাকাটা মুখের সঙ্গে কবেই যেন নিঃসীমে লীন হয়ে গিয়েছে। তবু পুজোর এই ক'দিন সেই ছেলেবেলার কাছে ফিরে যেতে বড্ড আকুতি হয় বিদেশ বিভুঁয়ে পড়ে থাকা এই মেয়ের।

কমবয়সের তৃণার মত, মাঝবয়সের তৃণা এখন আর শিকাগোর শহরতলিতে শরতের আকাশ, মাঠের মাঝে কাশের মতো ঘাসফুল খুঁজে বেড়ান না। তবুও দেশে যখন শরতের আভাস আসে, ধানের মাঠে আনন্দের ঢেউ তোলে হিম বাতাস, তখন বহু দূরের দেশে তৃণার বুকের মাঝে ঘাই দিয়ে ওঠে পুরনো স্মৃতি, পুরনো গন্ধ। এ দেশের শরতের এই কুয়াশামাখা সন্ধেগুলোয় খুব বাড়ি যেতে ইচ্ছে করে তাঁর। অসহায় আকুতিতে নিজের মনেই মাঝে মাঝে বিড়বিড় করে বলে ওঠেন, "বাড়ি যাব, বাড়ি যাব..." কিন্তু সেই বাড়িতে ফেরার রাস্তা তিনি কিছুতেই খুঁজে পান না।

মনশ্চক্ষে তৃণা কেবল দেখেন, বাঁশবনের বাঁক পেরিয়ে এক সাঁঝবাতি জ্বলা বাড়ি, বচ্ছরকার পার্বণের দিনে সেখানে এক উমা আজ বাড়ি ফিরছে, তার মায়ের অপেক্ষাক্লান্ত মুখে আজ হাজার বাতির রোশনাই, তাঁর হলুদ ছোপা আঁচল থেকে ভেসে আসছে প্রশ্রয়, স্বস্তি আর ছোটবেলার গন্ধ। হাত দিয়ে না-ই বা পেল ছুঁতে, শুধু ভিতরপানে, মনের মাঝে, এই পেয়ে হারানো ঘর-বাড়ি নিয়েই তৃণার আজকের ভাল থাকার আশ্রয়।

Dashami special desserts recipes you can make for Durga puja

ছবি : সায়ন্তনী মহাপাত্র।

পায়েসপাতা দিয়ে আতা ফুল গজা

উপকরণ:

পায়েসপাতা বা পান্দান লিফ : ৬ টি

ময়দা : ১ কাপ

সাদা তেল: ৩ টেবিল চামচ

নুন: এক চিমটে

চিনি : ১ কাপ

জল : ১/২ কাপ

ভাজার জন্য পর্যাপ্ত সাদা তেল

Dashami special desserts recipes you can make for Durga puja

ছবি : সায়ন্তনী মহাপাত্র।

প্রণালী:

পায়েসপাতা মিক্সিতে দিন। তাতে ১/৪ কাপ জল দিয়ে ভাল করে বেটে নিন। ছেঁকে জলটা আলাদা করে নিন।

ময়দায় তেলের ময়ান আর নুন মিশিয়ে নিন , এ বারে একটু একটু করে পায়েসপাতা বাটার জলটা দিয়ে মেখে নিন। বড় করে রুটির মতো বেলে, ছুরির সাহায্যে ১/২ ইঞ্চি চৌকো টুকরো করে কেটে নিন। উল্টো দু’দিকের কোণের মাথা দু’টি আঙুল দিয়ে চেপে দিন। অন্য দু'টি কোণের উল্টো দিকে একই ভাবে আঙুল দিয়ে চেপে দিন। এই রকম করে সবগুলি গড়া হলে ডুবো তেলে ভেজে তুলুন। অন্য পাত্রে চিনি আর জল দিয়ে দুই তারের পাক তৈরি করুন। ভাজা গজাগুলি দিয়ে নেড়েচেড়ে থালায় ঢেলে নিন। শুকিয়ে চিনি শক্ত হলে কৌটোয় ভরে তুলে রাখুন।

এলোঝেলো

উপকরণ:

ময়দা : দেড় কাপ

সাদা তেল: ৪ টেবিল চামচ

নুন: এক চিমটে

কালোজিরে: ১/২ চামচ

চিনি : ১ কাপ

জল : ১/২ কাপ

এলাচগুঁড়ো এক চিমটি

ভাজার জন্য পর্যাপ্ত সাদা তেল

Dashami special desserts recipes you can make for Durga puja

ছবি : সায়ন্তনী মহাপাত্র।

পদ্ধতি:

ময়দায় তেলের ময়ান, কালোজিরে আর নুন মিশিয়ে মিশিয়ে নিন, একটু একটু করে জল দিয়ে খানিক শক্ত করে মাখুন। এর থেকে লেচি কেটে ছোট ছোট লুচির মতো বেলে নিন। ছুরি দিয়ে জায়গায় জায়গায় চিরে দিন যাতে ভাজার সময় ফুলে না ওঠে। এ বার যে কোনও একটি ধার থেকে হালকা ছোট ছোট পাখার ভাঁজ দিন। দু’দিকের অংশটা আঙুল দিয়ে চেপে গোল করে দিন যাতে খুলে না যায়। সব ক’টা গড়া হলে ডুবো তেলে ভেজে নিন। অন্য পাত্রে চিনি আর জল দিয়ে দুই তারের পাক তৈরি করুন। এতে এলাচগুঁড়ো দিয়ে ভাজা এলোঝেলোগুলি দিয়ে নেড়েচেড়ে থালায় ঢেলে নিন। শুকিয়ে চিনি শক্ত হলে কৌটোয় ভরে তুলে রাখুন।

নারকেলের তক্তি

উপকরণ:

কচি নারকেল: ২টি

চিনি: ১/২ কাপ

খোয়া ক্ষীর বা মিল্ক পাউডার: ৪ টেবিল চামচ

এলাচগুঁড়ো: এক চিমটে

সামান্য পেস্তার গুঁড়ো সাজানোর জন্য

ঘি : ১ চামচ

পদ্ধতি:

নারকেলের মালার চোখটা ফুটো করে জল বের করে নিন। এ বার পুরো নারকেলটা মাইক্রোওয়েভ করুন ১ মিনিটের জন্য। মাইক্রোওয়েভ না থাকলে গ্যাসের আগুনে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে একটু গরম করে নিন। এ বার ভারী কিছু দিয়ে হালকা আঘাত করলেই দেখবেন, পুরো নারকেলটা বেরিয়ে আসবে। এই গোটা নারকেলের গায়ের বাদামি ভাগটা ভাল করে ছাড়িয়ে নিয়ে, সাদা অংশটা কুরিয়ে বেটে নিন। কড়াইতে নারকেলবাটা, গুঁড়ো খোয়া আর চিনি দিয়ে নরম আঁচে পাক দিন যত ক্ষণ না মিশ্রণটা কড়াইয়ের গা থেকে ছেড়ে আসে।

সন্দেশের ছাঁচে ঘি মাখিয়ে এক চিমটে পেস্তাগুঁড়ো দিয়ে নারকেল বাটার মিশ্রণ চেপে চেপে ছাপ তুলে নিন। এটা একটু গরম অবস্থাতেই করবেন, তা হলে ভাল আকার পাবেন।


Puja Special 2025 Durga Puja Food Bengali Dessert Recipe
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy