বাঙালির পুজো মানে কব্জি ডুবিয়ে আমিষ ভক্ষণ। কষিয়ে রাঁধা মাছ-মাংস ছাড়া পুজোর খানাপিনা জমে না। নয়না আফরোজ কলকাতার গড়িয়াহাট অঞ্চলের মেয়ে। এখন ঢাকা নিবাসী হলেও জানেন এ পার বাংলার মানুষ দুর্গাপুজোর পাঁচটা দিন খাবারের থালায় কী চান। তাই তাঁর পুজোর মেনু কার্ড থাকছে খাস দুটি ব্যঞ্জন। যা ছাড়া দুর্গাপুজোর খাওয়াদাওয়া সম্পূর্ণই হতে পারে না।
বাংলা জুড়ে রেস্তরাঁয় রেস্তরাঁয় এই সময় পুজোর মেনু। তবে তার সঙ্গে পুজোর ভিড়ও। বাংলার শেফ বা রন্ধনশিল্পীরা তাই আনন্দবাজার ডট কমে বলে দিচ্ছেন তাঁদের রেস্তরাঁর পুজো স্পেশ্যাল রেসিপি। সেই সব খাবার খোদ শেফের কাছ থেকে শিখে নিয়ে বানিয়ে ফেলুন বাড়িতেই।
কলকাতার কন্যা এবং বাংলাদেশের বউমা রন্ধনশিল্পী নয়না নিজে সরাসরি কোনও রেস্তোরাঁর সঙ্গে যুক্ত না হলেও মিশেলিন তালিকাভুক্ত রেস্তোরাঁয় গিয়ে রান্না শিখিয়ে এসেছেন। দুর্গাপুজোর নিজের রান্নাঘরে তিনি তৈরি করলেন দু’টি পাঁঠার মাংস এবং কাতলা মাছের রেসিপি। তবে পুজোয় বঙ্গবাসীকে চেনা খাবারের অচেনা স্বাদ পাওয়ানোই নয়নার লক্ষ। তাই দু’টি খাবারেই তিনি ঘটিয়েছেন ফিউশন।
আনারসি কাতলা
উৎসবে কাতলা মাছের কালিয়া, দই কাতলা, কাতলা রেজালা ইত্যাদি খেতেই অভ্যস্ত বাংলার মাছপ্রেমীরা । নয়নাকে পুজোর রেসিপির কথা বলতে তিনি বললেন, “এই সময়ে আনারস ভাল পাওয়া যাচ্ছে। আর কাতলা খেতে তো বেশির ভাগ মাছপ্রেমীই ভালবাসেন। ওই দুটো দিয়েই কিছু বানাবো।” সেই ভাবনারই ফসল আনারসি কাতলা। টক-ঝাল-মিষ্টি এই মাছ খেতে যেমন ভাল বানানোও তেমনি সোজা।
উপকরণ:
২টি তেজপাতা
৩ গাঁট মাপের দারচিনি
৪টি ছোট এলাচ
১/২ কাপ পেঁয়াজ কুচি
১ চা চামচ আদা রসুন বাটা
১ টেবিল চামচ বেরেস্তা বাটা
১ চা চামচ জিরে গুঁড়ো
১ চা চামচ ধনে গুঁড়ো
১/২ চা চামচ ভাজা জিরে গুঁড়ো
১ চিমটি চিনি
১ কাপ আনারসের শাঁস
১ চা চামচ কাঁচা লঙ্কা বাটা
১ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
১ চা চামচ লাল লঙ্কা গুঁড়ো
স্বাদমতো নুন
২ টেবিল চামচ তেল
১ চা চামচ ঘি
প্রণালী:
হলুদগুঁড়ো, লাল লঙ্কাগুঁড়ো, ভাজা জিরেগুঁড়ো এবং নুন দিয়ে কাতলা মাছের টুকরোগুলো ম্যারিনেট করুন। ১০-১৫ মিনিট রেখে তার পরে কড়াইয়ে ভেজে তুলে রাখুন।
ওই তেলেই প্রয়োজনমতো তেল মিশিয়ে গরম করে তাতে দিন তেজপাতা, দারচিনি এবং ছোট এলাচ। সুগন্ধ বের হলে কুচানো পেঁয়াজ দিয়ে ভাজুন।
পেঁয়াজের রং বাদামি হলে হলুদ, লঙ্কা, জিরে এবং ধনে গুঁড়ো, আদা-রসুন বাটা এবং ভাজা পেঁয়াজ বাটা দিয়ে মশলা কষান। দরকার হলে সামান্য জলের ছিটে দিন।
তেল ছেড়ে এলে ওর মধ্যে দিন আনারসের শাঁস এবং কাঁচা লঙ্কা বাটা। সামান্য নাড়াচাড়া করে এক কাপ গরম জল দিয়ে ফুটতে দিন।
ফুটে উঠলে ভাজা মাছ গুলো ওর মধ্যে দিয়ে চাপা দিয়ে রান্না হতে দিন। মিনিট তিনেক পরে ঢাকনা খুলে এক চিমটি চিনি, কাঁচা লঙ্কা কুঁচি এবং ঘি দিন। আরও এক মিনিট রান্না হতে দিন। তার পরে আঁচ বন্ধ করুন।
একটি সুন্দর পাত্রে মাছগুলো রেখে আনারসের টুকরো দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
আরও পড়ুন:
নারকেলি পাঁঠার মাংস
পুজোয় অন্তত একটা দিন কষা মাংস আর পোলাও খেতে চাওয়া বাঙালিকে পাঁঠার মাংস না খাইয়ে ছাড়বেন না নয়না। তবে তিনি বললেন, ‘‘চেনা রান্না নয়, এ বার পুজোয় একটু অন্যরকম পাঁঠার মাংস খাওয়াবো। এমন মাংস যাতে চেনা মালাইকারির স্বাদও পাওয়া যাবে।’’ যেমন কথা তেমন কাজ। নয়না পাঁঠার মাংস কষালেন বটে, তবে কষানোটা হল নারকেল দুধ দিয়ে। স্বাদ কেমন হল? তা জানতে বরং সপ্তমীর দুপুরে নিজেই বানিয়ে দেখে নিন।
উপকরণ
১ কেজি পাঁঠার মাংস
৪টি পেঁয়াজ কুচি
১ টেবিল চামচ আদা বাটা
১ চা চামচ রসুন বাটা
১ টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়ো
১ টেবিল চামচ লাল লঙ্কা গুঁড়ো
১ চা চামচ জিরে গুঁড়ো
১ চা চামচ ধনে গুঁড়ো
১ টেবিল চামচ গরম মশলা গুঁড়ো
৬টি তেজপাতা
৪টি শুকনো লঙ্কা
২ টেবিল চামচ নারকেল বাটা
৩ কাপ নারকেল দুধ
২ চা চামচ ভাজা জিরা গুঁড়ো
১/২ চা চামচ জায়ফলের গুঁড়ো
৮টি কাঁচা লঙ্কা
স্বাদমতো নুন
১ টেবিল চামচ সর্ষের তেল
২ টেবিল চামচ সাদা তেল
২ টেবিল চামচ ঘি
প্রণালী:
মাংস ধুয়ে জল ঝরিয়ে নিন। এর পরে কুচনো পেঁয়াজ, আদা বাটা, রসুন বাটা, হলুদগুঁড়ো, লাল লঙ্কা গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, গরম মশলা গুঁড়ো এবং অর্ধেক নারকেল বাটা দিয়ে কমপক্ষে এক ঘন্টা ম্যারিনেট করুন।
কড়াইয়ে তেল গরম করে তেজপাতা এবং শুকনো লাল লঙ্কা দিন। সুগন্ধ বের হলে ম্যারিনেট করা মাংস দিয়ে দিন। স্বাদমতো নুন দিয়ে কষান।
মশলা ভালোভাবে মিশে যাওয়া পর্যন্ত নাড়তে থাকুন।তেল ছেড়ে এলে বাকি নারকেল বাটা যোগ করুন এবং ১৫ মিনিট ধরে ধীরে ধীরে রান্না করুন।
খেয়াল রাখবেন যাতে মাংস প্যানে বা কড়াইয়ে লেগে না যায়। এর পরে নারকেল দুধ দিয়ে ঢাকা চাপা দিয়ে তত ক্ষণ রান্না করুন যত ক্ষণ না মাংস নরম হয়ে যায়।
মাংস নরম হলে, ভাজা জিরে গুঁড়ো, জায়ফল গুঁড়ো, কাঁচা লঙ্কা কুচি এবং ঘি ছড়িয়ে আঁচ বন্ধ করে দিন।