উপকরণ: পটোল ২৩টি, ঘি ৪ টেবিল চামচ, মোরব্বা ২৫০ গ্রাম (কমলালেবু, কুমড়ো মিঠাই, আদা), পোলাওয়ের চাল ২৫০ গ্রাম, জল ১ লিটার, বাদাম ১২০ গ্রাম, পেস্তা ৩০ গ্রাম, কিশমিশ ১৫০ গ্রাম, দুধ ১/৪ লিটার, চিনি ২৫০ গ্রাম, বড় কাগজিলেবু ২টি, জাফরান ৭০০-৮০০ মিলিগ্রাম, গরমমশলা গুঁড়ো এক চিমটি।
প্রণালী: বীজ ফেলে সাতটি পটোল কুচিয়ে নিন। বাকি পটোল খোসা ছাড়িয়ে বীজ বার করে নিন। মোরব্বা, বাদাম, পেস্তা কুচি করে নিন। আধ লিটার জলে পটোল কুচি সিদ্ধ করুন। ছ’-সাত মিনিট পরে গোটা পটোলও ছেড়ে দিন। কয়েক মিনিট সিদ্ধ করে, নামিয়ে, জল নিংড়ে নিন। পটোল কুচির মধ্যে ৩০ গ্রাম করে কিশমিশ, বাদাম ও ৬০ গ্রাম মোরব্বা মেশান। গোটা পটোলের মধ্যে পুর ভরে সুতো জড়িয়ে নিন। দেড় কাপ জলে দারচিনি, এলাচ, লবঙ্গ দিয়ে আঁচে বসান। চিনি ঢেলে গলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। একটি লেবুর রস দিন। তাতে পটোলের দোলমা, বাদাম, কিশমিশ, মোরব্বা, অর্ধেক জাফরান, অল্প গরমমশলা গুঁড়ো দিয়ে ঢাকা দিন। রস ঘন হলে নামিয়ে আর একটি লেবুর রস দিন। অন্য দিকে ঘি গরম করে তেজপাতা, এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ দিন। তাতে কিশমিশ দিন। কিছুটা কিশমিশ তুলে নিন। বাকি কিশমিশের উপরে এলাচ ও ভিজিয়ে রাখা চাল দিন। চাল নেড়ে বাদাম-পেস্তা দিন। ভাজা হলে দুধ ও জল দিয়ে ঢাকা দিন। জল ফুটলে বাকি জাফরান দিন। তিন-চার মিনিট অন্তর নাড়ুন। ভাত নরম হলে ৪ চামচ চিনির শিরা দিয়ে নেড়ে নামিয়ে নিন। গভীর পাত্রে বাদাম-পেস্তা-কিশমিশ-মোরব্বা রাখুন। তার উপরে পোলাও দিন। উপরে দোলমা, রস ও মোরব্বা সাজান। একই ভাবে স্তর সাজান। কোফতার সঙ্গে পরিবেশন করুন।
রেসিপি: আমিষ ও নিরামিষ আহার (প্রথম খণ্ড), প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী (রেসিপি সংক্ষিপ্ত, বানান পরিবর্তিত)
বিপ্রদাস মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘পরিমিত জল, মাংস ও মসলাদি দ্বারা সিদ্ধ করিলে, সেই জলকে আপযূষ বা অাখ্নি কহিয়া থাকে। আখ্নির দোষ-গুণে পোলাও-এর আস্বাদন ভাল হয়।’’ স্বাদ ছাড়াও রয়ে যায় গন্ধের প্রসঙ্গ। তার জন্য ‘সৌরভবিশিষ্ট পুষ্প কিংবা আতর, গোলাপ-জল ও মৃগনাভি’ ব্যবহার করাই ছিল দস্তুর। ‘পাক-প্রণালী’তে মেলে বেল, জুঁই, গোলাপ, চামেলির পোলাওয়ের কথা। পোলাও রান্নার শেষের দিকে ঢাকনা খুলে ফুলের পাপড়ি উপরে সাজিয়ে দিতে হয়। দমে চড়াতে হয় হাঁড়ি। ফুলের সুবাস টেনে নেয় পোলাও। পোলাওয়ে পড়ত আনারস, কমলালেবু, আপেল, তেঁতুল, বেগুন, শালগম, গাজর, ধনে শাক, কড়াইশুঁটি, পাকা আম, ডুমুর... আবার সোনা মুগ দিয়ে মোকশ্বর পোলাও, বাটা মশলার পোলাও, শুলফা শাকের মোসব্বৎ পোলাও ছিল। নিরামিষের মধ্যে ছানার পোলাও, সর মালাই পোলাও, রাজভোগ পোলাওয়ের নাম না করলেই নয়। যাঁরা এখন রসগোল্লার কেক বা কোর্মা তৈরি করেন, তাঁরা মিহিদানা, কুন্দনের পোলাও শুনলে অবাক হলেও হতে পারেন। নিরামিষ ও আমিষ পলান্ন ছাড়াও ছিল হরেক ধরন। যেমন খেচরান্ন, হেমান্ন, চোলাও। পোলাওয়ের মতো খেতে হলেও হেমান্নের উপকরণের সংখ্যা ছিল কম। আবার খিচুড়ি ও পোলাওয়ের নানা উপকরণ নিয়ে রান্না করে তৈরি হত খেচর-পলান্ন। মুসলমান শাসনের সময় থেকেই জনপ্রিয় হতে শুরু করে গুরুপাক লোকমা পলান্ন। খাদ্যরসিক রাজা রামমোহন রায়ের নামে উৎসর্গ করা হয়েছে পটোল, মোরব্বা দিয়ে তৈরি মিঠা দোলমা বা রামমোহন দোলমা পোলাও। স্বাদ ও রাজকীয় উপকরণে সে পোলাও একেবারে আলাদা। মিছরি, আতপ চাল, খোবানি, সাবু মিলেমিশে দ্বারকানাথ ফির্নি পোলাও বা দ্বারকানাথ মতিহার অনন্য। ভারতবর্ষে নানা সময়ে রাজত্ব করেছে নানা বংশ। ফলে মিলেমিশে গিয়েছে খাবারের চলও। ইহুদি, খয়বরি জেরবিরিয়ান, জবরী, কসেলি, নরগেসি, নাগরঙ্গ পোলাও তার উজ্জ্বল প্রমাণ। হিন্দুস্থানি বা মুর্শিদাবাদি মাহী পোলাওয়ের সঙ্গে যেমন জড়িয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গে মুর্শিদকুলি খাঁ-র আগমনের গল্প। আমিষ পোলাওয়ে যোগ করা হত মাংস, চিংড়ি, কাঁকড়া, মাছ। মাছের কোফতা পোলাও, মুরগি পিশপ্যাশ, সিরাজি পোলাও সে রকমই।