মহালায়ার আগের রাত্রে যেন ঘুম কিছুতেই আসতে চায় না কিছুতেই। পর দিন ভোরের আলো ভাল করে ফোটার আগেই উঠে পড়তে হবে যে! তার পর পরিবারের সকলে জড়ো হয়ে সেই চেনা সুরের ছন্দে ভেসে যাওয়া। সেই মন কেমনের সুর, যা বছরের অন্য কোনও দিন তেমন শোনা যায় না। একই সুর, একই কথা, একই কন্ঠ। তবু বছরের পর বছর এমন ভাবে মায়া ছড়ায় কী ভাবে, কে জানে! 'মহিষাসুরমর্দ্দিনী'র শেষ ভাগে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠ যেন গায়ে শিহরণ জাগায়, অজান্তেই কখন যেন জলে ভরে ওঠে চোখের দু’কোণ।
মহালয়া দিন তো অশ্রুপাতেরই বটে। সে দিন যে স্মরণের দিন, শ্রদ্ধার দিন, তর্পণের দিন। পিতৃপক্ষের শেষে দেবীপক্ষের শুরুর এ দিনেই তো আবারও সবাই ফিরে যান তাঁদের কাছে, যাঁদের হারিয়েছেন জীবনের পথে চিরকালের জন্য। তাঁদের জন্য গিয়ে দাঁড়ান গঙ্গার তীরে।
রবিবার, তর্পণ সেড়ে বাড়িতে ফিরেই বসবে জলখাবারের আসর। ছুটির দিনে ভাল-মন্দ না খেলেই নয়। জলখাবারে সাধারণ লুচি-তরকারি নয়, বিশেষ দিনের ভোজেও থাকতে হবে বিশেষ ছোঁয়া। বিপ্রদাস মুখোপাধ্যায়ের লেখা প্রাচীন বই ‘মিষ্টান্ন-পাক’-এ উল্লেখ আছে মাধুপুরির। বাঙলি হেঁশেলে যদিও এখন আর তেমন ভাবে এই পদ বানানো হয় না। মহালয়ার দিন পুরনো দিনের হারিয়ে যাওয়া সেই রান্না দিয়েই হতে পারে পেটপুজো। সঙ্গে আলু-নারকেলের ঘণ্ট আর মিছরির সাদা পায়েস। আহা, পুজোর শুরুতেই এমন ভোজ পেলে আর কী-ই বা চাইতে পারে মন!
মাধুপুরি
উপকরণ:
ময়দা: ১ কেজি
ঘি: ৩০০ গ্রাম
চিনি: ২৫০ গ্রাম
জয়িত্রী: ১টি
গোটা গোলমরিচ: আধ চামচ
বড় এলাচ: ২ টি
লবঙ্গ: ৬ টি
তেল পরিমাণ মতো
প্রণালী:
শিলে অথবা হামানদিস্তেয় চিনি এবং অন্যান্য শুকনো মশলা মিহি করে পিষে নিন। এ বার ময়দায় ঘি দিয়ে ময়ান দিয়ে ভাল করে মেখে ভেজা কাপড়ে ৩০ মিনিট ঢেকে রেখে দিন। তার পর লেচি বানিয়ে চিনির পুর ভরে লুচি বেলে নিন। তেল গরম করে ভেজে তুলে নিন।
আলু নারকেল ঘন্ট
উপকরণ:
আলু: ২৫০ গ্রাম
নারকেল কোরা: আধ কাপ
আদা, কাঁচালঙ্কা বাটা: ১ টেবিল চামচ
গরমমশলা গুঁড়ো: আধ চা চামচ
পাঁচফোড়ন: আধ চা চামচ
তেজপাতা: ১টি
শুকনো লঙ্কা: ২টি
চেরা কাঁচালঙ্কা: ২টি
নুন, চিনি: স্বাদমতো
প্রণালী:
আলু সেদ্ধ করে নিয়ে চৌকো করে কেটে নিন। তেলে পাঁচফোড়ন, শুকনো লঙ্কা, তেজপাতা দিয়ে সুবাস ছড়ালে আলু দিয়ে একটু ভেজে নিন। আলু ভাজা ভাজা হয়ে এলে তাতে নারকেল কোরা, আদা-লঙ্কা বাটা, নুন, চিনি দিয়ে কষিয়ে নিন। হালকা মজে এলে জলের ছিটে দিয়ে আঁচ কম করে ঢেকে রান্না করে নিন মিনিট দশেক। শেষে চেরা কাঁচালঙ্কা, ঘি আর গরমমশলা ছড়িয়ে গ্যাসের আঁচ বন্ধ করে নিন।
মিছরির সাদা পায়েস
উপকরণ:
দুধ: ২ লিটার
খোয়া ক্ষীর: ২০০ গ্রাম
চাল: ১০০ গ্রাম
এলাচগুঁড়ো: আধ চা চামচ
কিশমিশ: ৩ টেবিল চামচ
মিছরি: ২৫০ গ্রাম
প্রণালী:
দুধ জ্বাল দিয়ে প্রায় দেড় লিটার হয়ে গেলে তাতে চাল দিয়ে ফুটতে নিন। চাল সেদ্ধ হয়ে গেলে খোয়া ক্ষীর কুরিয়ে আর মিছরি দিয়ে আবার জ্বাল দিন বেশ কিছু ক্ষণ। ক্রমাগত কাঠের হাতা দিয়ে নাড়তে হয় পায়েস। ঘন হয়ে মোটা পরত আসলে বুঝতে হবে, পায়েস হয়ে এসেছে। শেষে কিশমিশ আর এলাচগুঁড়ো মিশিয়ে আঁচ বন্ধ করে দিন।