যতই হোক, বাবা-মায়ের মন। চিন্তা একটু থাকেই। এত দূরে মহাকাশবাসী ছেলে। কিন্তু আজ অনেকটাই মন হালকা লাগছে প্রবীণ দম্পতির। আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র (আইএসএস) থেকে মা-বাবাকে ভিডিয়ো কল করেছিলেন ভারতীয় নভশ্চর শুভাংশু শুক্ল। ছেলের গর্বে গর্বিত মা আশা শুক্ল বললেন, ‘‘ও কোথায় শুচ্ছে, কী খাচ্ছে, সব জানিয়েছে।’’ দেখিয়েছেন সূর্যোদয়ও।
মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে কেমন দেখাবে, সূর্যোদয়ই বা কেমন দেখতে লাগবে, তা নিয়ে বহু প্রশ্ন ছিল শুভাংশুর কৌতূহলী মনে। মা-বাবাকেও ব্যাপারটা দেখানোর সাধ ছিল তাঁর। ল্যাপটপ থেকে ভিডিয়ো কল করে মা-বাবা-বোনকে দেখিয়েছেন সেই মহাজাগতিক দৃশ্য। শুভাংশুর বাবা শম্ভুদয়াল শুক্ল বলেন, ‘‘এমন সূর্যোদয়ের তুলনা হয় না। পাহাড়-চুড়ো থেকে নয়, বিমান থেকে নয়, পৃথিবী থেকে বহু বহু মাইল দূরের সূর্যোদয়। মহাকাশ কেন্দ্রের জানলা থেকে সূর্যোদয় কেমন দেখতে লাগে, সেটা আমাদের দেখাতে চেয়েছিল ও। শুধু তো একটা দৃশ্য নয়, এটা একটা মুহূর্ত, যা মনে করিয়ে দেয় ও কত দূর পৌঁছে গিয়েছে, কী কী অর্জন করেছে। আর এত দূর থেকেও আমরা একে অন্যের সঙ্গে জুড়ে রয়েছি।’’
লখনউয়ের ছেলে মহাকাশ কেন্দ্র ঘুরিয়ে দেখান মা-বাবা-বোনকে। বোন শুচি মিশ্র বলেন, ‘‘অসাধারণ, মোহিত হয়ে যাওয়ার মতো। পৃথিবীর বৃত্তাকার দিগন্তরেখা, তার ঔজ্জ্বল্য, ওই গভীর গাঢ় নীল রঙ, কেউ না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবে না।’’
বাড়ির সকলকে নিজের গবেষণার কথাও জানান শুভাংশু। একসঙ্গে একগুচ্ছ গবেষণা করছেন ভারতীয় নভশ্চর। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ‘টার্ডিগ্রেডস’। পৃথিবী থেকে এই আনুবীক্ষণিক সামুদ্রিক প্রাণীটিকে নিয়ে গিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এদের ‘এক্সট্রিমোফাইল’ বলা হয়। এরা গভীর সমুদ্রে অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে বাঁচতে পারে। মহাকাশের প্রায় ভরশূন্য পরিবেশে এদের জীবনধারনের রসায়ন কেমন হবে, তা পরীক্ষা করে দেখছেন শুভাংশুরা। এর পাশাপাশি ‘মায়োজেনেসিস’ পরীক্ষাও করছেন তাঁরা। মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে মানুষের মাংসপেশির কী পরিবর্তন হয়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এই গবেষণায়। এ ছাড়া, মাইক্রোঅ্যালগি (ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র শৈবাল) ও সায়ানোব্যাক্টিরিয়া (সালোকসংশ্লেষে সক্ষম ব্যাক্টিরিয়া) মহাকাশে কেমন আচরণ করে, তা-ও দেখা যাচ্ছে।
বিজ্ঞানীদের দাবি, দীর্ঘ মহাকাশ অভিযানে অভিযাত্রীদের খাবারের জোগান, প্রয়োজনীয় পুষ্টি সুনিশ্চিত করা, সর্বোপরি প্রতিকূলতার মধ্যে জীবনধারনের উপায় খুঁজে বার করতে সাহায্য করবে এই গবেষণা।
পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকা আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রটি একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন মানুষের বাসযোগ্য কৃত্রিম উপগ্রহ। এর ভিতরে রয়েছে নানা চোখধাঁধাঁনো যন্ত্রপাতি। শুভাংশুদের অভিযানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ মানুষ-যন্ত্র ‘আলাপচারিতা’। মহাকাশে ডিজিটাল জীবন কী ভাবে সহজ করা যায়, সে নিয়েও গবেষণা করা হচ্ছে। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো জানিয়েছে, ভবিষ্যতের অভিযানের কথা মাথায় রেখে মহাকাশে জীবগত ও প্রযুক্তিগত প্রতিবন্ধকতা কী ভাবে সামলানো যায়, তার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে পুরোদমে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)