ভুয়ো চিকিৎসক বা ভুয়ো পুলিশকর্মী ধরা পড়ার কথা প্রায়শই শোনা যায়। তাই বলে ভুয়ো মহাকাশচারী! এমনটাও হয়? প্রায় সাড়ে তিন দশক আগে এমনই ঘটনা ঘটেছিল আমেরিকায়। বস্টন থেকে ধরা পড়েছিলেন এক ভুয়ো মহাকাশচারী। গ্রেফতারও হয়েছিলেন।
ঘটনাটি ১৯৮৯ সালের। বস্টনের বাসিন্দা রবার্ট হান্ট নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। আমেরিকার নৌসেনার যুদ্ধবিমানের অবসরপ্রাপ্ত পাইলট বলে তিনি নিজের পরিচয় দিতেন। শুধু তা-ই নয়, আমেরিকার নভোযান ‘অ্যাটলান্টিস’-এর মহাকাশচারী বলেও তিনি নিজের পরিচয় দেন। বিভিন্ন আলোচনাচক্রে তিনি দাবি করতেন, আমেরিকার প্রতিরক্ষা দফতরের এক গোপন অভিযানে পাঠানো হয়েছিল তাঁকে। ওই মহাকাশচারী পরিচয়েই এক তরুণীর সঙ্গে আলাপ জমান রবার্ট। সেই থেকেই প্রেম এবং বিয়েও করেন দু’জনে। পরে জানা যায়, গোটাটাই ভুয়ো। আদৌ তিনি কোনও মহাকাশচারী নন। রবার্ট গ্রেফতার হওয়ার আগে পর্যন্ত তাঁর এই ভুয়ো পরিচয়ের কথা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি স্ত্রী।
মহাকাশচারীর ভুয়ো পরিচয়ে বস্টনে বেশ নামডাকও অর্জন করে ফেলেছিলেন তিনি। বিভিন্ন আলোচনাচক্রে বক্তৃতার জন্য অতিথি হিসাবে ডাকা হত তাঁকে। আমন্ত্রণ পেয়ে পৌঁছে যেতেন রবার্টও। সেখানে মনগড়া বিভিন্ন গল্প বলতেন। তবে একটু কঠিন কোনও প্রশ্ন করা হলেই, তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেন রবার্ট। কখনও অজুহাত দিতেন, এ সব গোপন তথ্য, প্রকাশ্যে বলা যাবে না। কখনও আবার উত্তর এড়ানোর জন্য দাবি করতেন, হয়তো শ্রোতাদের মধ্যে কোনও ‘রাশিয়ান’ লুকিয়ে থাকতে পারেন। তাই এ সব বিষয়ে তিনি মন্তব্য করবেন না। তাতে শ্রোতাদের কারও কারও মনে সন্দেহ জাগলেও, সম্মাননীয় অতিথি এবং একজন ‘মহাকাশচারী’র দিকে আঙুল তোলার সাহস জুগিয়ে উঠতে পারতেন না।
আরও পড়ুন:
এ ভাবেই চলছিল রবার্টের। যেখানেই বক্তৃতা করতেন যেতেন, নাসার মহাকাশচারীদের একটি পোশাক পরে যেতেন। যাতে নিজেকে আরও বেশি করে মহাকাশচারী বলে বোঝাতে পারেন। ১৯৮৯ সালের জানুয়ারি প্রথম তাঁর দিকে সন্দেহের দৃষ্টি যায় পুলিশের। ওই সময় ম্যাসাচুসেট্স প্রদেশের এক পুলিশ আধিকারিক অ্যান্ড্রু পালোম্বো খবর পান, আমেরিকার নৌসেনার পোশাকে নাসার এক মহাকাশচারী নাকি বস্টনের লোগান বিমানবন্দরের কর্মীর বাড়িতে গিয়েছিলেন। ওই সন্দেহভাজন ব্যক্তি বিমানবন্দরের কর্মীর ১৮ বছর বয়সি ছেলেকে নৌসেনার যোগ দেওয়ানোর জন্য রাজি করিয়েছিলেন। ওই উর্দিধারী ‘মহাকাশচারী’ দাবি করেন, তাঁর সঙ্গে পেন্টাগনের উঁচু তলায় যোগাযোগ রয়েছে। বিমানবন্দরের ওই কর্মীর থেকে চার হাজার ডলারও তিনি দাবি করেছিলেন বলে অভিযোগ।
তদন্ত চলাকালীন আমেরিকার নৌসেনার ‘ইনভেস্টিগেটিভ সার্ভিস কমান্ড’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন পালোম্বো। সেখান থেকে জানানো হয়, ১৯৭৯ সালে দু’মাসের জন্য নৌসেনায় কর্মরত ছিলেন রবার্ট। পরে তাঁর বস্টনের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। বাড়িতে তল্লাশির সময় উদ্ধার হয়, বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম, বিমানের একটি জাম্পস্যুট, নাসার একটি হেলমেট এবং পুলিশের একটি ব্যাজ। জিনিসপত্র চুরির অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তদন্তে জানা যায়, সামরিক বাহিনীর উর্দিটি রবার্ট উত্তর ক্যালিফর্নিয়ায় সামরিক বাহিনীর এক ঘাঁটি থেকে জোগাড় করেছিলেন। কিন্তু নাসার জাম্পস্যুটটি তিনি কোথা থেকে পেলেন, তা স্পষ্ট নয়। নাসা থেকে জানানো হয়েছিল, ওই সময়ে নাসার একটি প্রদর্শনী থাকে কিছু সামগ্রী চুরি হয়েছিল। তবে রবার্টের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া নাসার সামগ্রী সেই তালিকায় ছিল না।