Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Science

ক্লাসে কোন আলো পেলে অঙ্কে বেশি মার্কস পেতে পারে স্কুলের ছাত্ররা?

রবীন্দ্রনাথের গাছতলার স্কুলও বোধহয় পুরোপুরি নির্ভুল ছিল না! শান্তিনিকেতনের সেই স্কুলে সম্ভবত সব কিছু ঠিকঠাক চলতো না! বোধহয় ঠিকঠাক আলো ‘জ্বলতো’ না! পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভালো ফলাফলে আলো ফেলতে পারে আলোই। আর ঠিক যেমনটা দরকার, সেই রকম আলো না পেলে আমার-আপনার সন্তানদের ভবিষ্যতটা হয়ে যেতে পারে একেবারেই অন্ধকার।

এই আলোয় কী ভাবেই বা মন বসে পরীক্ষার্থীদের?

এই আলোয় কী ভাবেই বা মন বসে পরীক্ষার্থীদের?

সুজয় চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৬ ১৫:১৮
Share: Save:

রবীন্দ্রনাথের গাছতলার স্কুলও বোধহয় পুরোপুরি নির্ভুল ছিল না! শান্তিনিকেতনের সেই স্কুলে সম্ভবত সব কিছু ঠিকঠাক চলতো না! বোধহয় ঠিকঠাক আলো ‘জ্বলতো’ না!

পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভালো ফলাফলে আলো ফেলতে পারে আলোই। আর ঠিক যেমনটা দরকার, সেই রকম আলো না পেলে আমার-আপনার সন্তানদের ভবিষ্যতটা হয়ে যেতে পারে একেবারেই অন্ধকার। কারণ, কার কেমন মেধা, কার কতটা যোগ্যতা, বিতর্ক থাকলেও, তা মাপার একমাত্র্ ‘হাতিয়ার’ পরীক্ষার মার্কশিট। প্রায় সব ক্ষেত্রেই। আর সেই মার্কশিটকে ‘মার্কস’ দিতে পারে ক্লাসরুম ও পরীক্ষার ঘরের যথাযথ আলো। যা এই রাজ্যের স্কুল, কলেজগুলোতে তো নেই-ই। ভারতের কোনও স্কুল, কলেজের ক্লাসরুম বা পরীক্ষার হলে আলোর এমন ব্যবস্থা কতটা রয়েছে, সে সম্পর্কে কোনও সরকারি তথ্যও নেই।

সাম্প্রতিক একটি গবেষণার এই সাড়াজাগানো ফলাফল গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। একেবারে আলোর কম্পাঙ্ক আর তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য মেপে-মেপে দেখিয়ে দিয়েছে, স্কুল, কলেজের পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে হলে কোন আলোয় ক্লাস করা উচিত। কোন আলো বেশি ভালো পিরিয়ডের অবসরে। কোন আলোয় ইন্ডোর গেমস খেলা ভালো স্কুল, কলেজের ছেলেমেয়েদের। সাড়াজাগানো গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে বিজ্ঞান-জার্নাল ‘অপটিক এক্সপ্রেস’-এ। যার অন্যতম সহযোগী গবেষক এক জন বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী। যাঁর নামেও রয়েছে আলো। আলোকণা মুখোপাধ্যায়। দক্ষিণ কোরিয়ার ‘কোরিয়া অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’-র আলোকবিদ্যার (অপটিক্স) অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর।

কোন আলো রোম্যান্সের আবহ গড়ে তোলে, কোন আলো আমাদের শরীর ও মনের উদ্দীপনা বাড়ায়, এত দিন এ ব্যাপারে আমাদের কিছু প্রাথমিক ধারণা ছিল।গবেষকদের অভিনবত্ব, তাঁরা দেখালেন, ছাত্রছাত্রীদের মার্কশিটে আলো ফেলে কোন আলো।


ফ্লুরোসেন্ট আলো (বাঁ দিকে) এবং এলইডি আলো (ডান দিকে)

গবেষণা কী জানিয়েছে?

মূল গবেষক ‘কোরিয়া অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’-র আলোকবিদ্যার (অপটিক্স) প্রফেসর, বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী হেয়ং-জিয়ং সুক তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছেন, ‘‘আমরা দেখেছি, ডায়নামিক এলইডি আলোতেই ক্সাসরুমে বেশি মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনো করতে পারে ছাত্রছাত্রীরা। মুখস্থ করতে পারে তাড়াতাড়ি। পড়াটা মনে রাখতে পারে বেশি সময় ধরে। সাধারণ সূর্যালোক বা স্কুল, কলেজের স্বাভাবিক আলোয় যা অতটা সহজে হয় না।’’


ভুল আলোয় পড়াশুনো: পশ্চিম এশিয়ার দেশে।


ভুল আলোয় পড়াশুনো: ডেনমার্কে।

ক্লাসরুমে বা পরীক্ষার হলে যথাযথ আলো যে আলো ফেলতে পারে ছাত্রছাত্রীদের পারফরম্যান্সে, সে ব্যাপারে কী ভাবে নিশ্চিত হলেন গবেষকরা?

জন্মসূত্রে কলকাতার মেয়ে হয়েও স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত বিদেশে পড়াশুনো করা আলোকণা বলছেন, ‘‘একই মেধার, একই বয়স, সমান সুস্থতা, একই শারীরিক সক্ষমতা, সমান পারিবারিক পরিবেশ ও বিগত পরীক্ষাগুলোর ফলাফলে সম মানের ৫৪টি ছাত্রছাত্রীর ওপর আমরা গবেষণাটি চালিয়েছি। যারা সকলেই স্কুলে ফোর্থ গ্রেডের (ক্লাস সেভেন) ছাত্রছাত্রী। ওদের আমরা অঙ্কের পরীক্ষায় বসিয়েছিলাম। বিগত পরীক্ষাগুলোর ফলাফলে ওই ৫৪টি ছাত্রছাত্রীরই অঙ্কের মার্কস বেশ ভালো ছিল। ওদের পরীক্ষায় বসানো হয়েছিল দু’টি ঘরে। একটি ঘরে ছিল ‘ডায়নামিক এলইডি লাইট’। পরীক্ষার অন্য হলটি আলোকিত করা ছিল ফ্লুরোসেন্ট আলোয়। ওই এলইডি আলোকে বিভিন্ন তাপমাত্রায় নানা রকমের আলোয় বদলে নেওয়া যায়। তাই তাকে বলা হয় ‘ডায়নামিক এলইডি লাইট’। আর সেটা যে পদ্ধতিতে করা হয়, তার নাম ‘কোরিলেটেড কালার টেম্পারেচার (সিসিটি)। ওই লাইটিংয়ের ক্ষেত্রে সাড়ে তিন হাজার ডিগ্রি কেলভিন তাপমাত্রার আলোকে বলা হয় ‘গরম’ আলো। যা দেখতে হয় হলদেটে সাদা। মাঝারি মানের আলোর তাপমাত্রা ৫ হাজার ডিগ্রি কেলভিন। এটাকে বলা হয় ‘নিউট্রাল’ আলো। আর সাড়ে ৬ হাজার ডিগ্রি কেলভিনের আলোকে বলা হয় ‘ঠান্ডা’ আলো। যা দেখতে নীলাভ সাদা। অনেকটা সূর্যালোকের মতো। কিন্তু পুরোপুরি সূর্যালোক নয়।


ভুল আলোয় পড়াশুনো: আফ্রিকার দেশে-দেশে।


ভুল আলোয় পড়াশুনো: আরব দেশগুলিতে।

আমরা দেখেছি, পরীক্ষার যে হলে এলইডি আলো ছিল, সেখানকার ছাত্রছাত্রীরাই ভুল না করার ব্যাপারে বেশি সতর্ক ছিল। তারাই অঙ্কে বেশি মার্কস পেয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার মার্কশিট সবচেয়ে ভালো হয়েছে, যখন তারা পরীক্ষা দিয়েছে সা্ড়ে ৬ হাজার ডিগ্রি কেলভিন তাপমাত্রার এলইডি আলোয়। নীলাভ সাদা আলোয়। ক্লাসরুমে পড়ায় মনোযোগ আর তাড়াতাড়ি মুখস্থ করা ও তা বেশি ক্ষণ মনে রাখার ক্ষেত্রেও নীলাভ সাদা আলোই বড় ভূমিকা নিয়েছে। দেখা গিয়েছে, পিরিয়ডের অবসরে ছাত্রছাত্রীরা অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে হলদেটে সাদা এলইডি আলোয়। মানে সাড়ে তিন হাজার ডিগ্রি কেলভিন তাপমাত্রার আলো। শুধুই লিখিত পরীক্ষা নয়, পরে নেওয়া ছাত্রছাত্রীদের মৌখিক পরীক্ষাতেও গবেষণার ফলাফলের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। দেখা গিয়েছে, ক্লাসে রোজ পড়াশোনার জন্য ৫ হাজার ডিগ্রি কেলভিনের এলইডি আলোই সবচেয়ে ভালো। সেরা।’’

ডায়নামিক এলইডি আলো: অঙ্কে ভালোর আলো (ডান দিকে)।


আরও পড়ুন- ‘কৃষ্ণগহ্বর অত কালো নয়’! প্রমাণ হল, হকিংই ঠিক

ছবি সৌজন্যে: ‘কোরিয়া অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’, দক্ষিণ কোরিয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE