Advertisement
E-Paper

কত ক্যালোরি? ফলে কামড় দিলেই বলে দেবে নেকলেস!

পেটে পড়েনি। সবে কামড় দিয়েছেন বা চিবোচ্ছেন। বা গলায় রয়েছে। সেই অবস্থাতেই জেনে নিতে চান, একটা আপেল কামড়িয়ে কতটা ক্যালোরি নিলেন আপনার শরীরে?

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৬ ১৬:৩৩
এই সেই ‘নেকলেসে’র প্রোটো-টাইপ।

এই সেই ‘নেকলেসে’র প্রোটো-টাইপ।

পেটে পড়েনি। সবে কামড় দিয়েছেন বা চিবোচ্ছেন। বা গলায় রয়েছে।

সেই অবস্থাতেই জেনে নিতে চান, একটা আপেল কামড়িয়ে কতটা ক্যালোরি নিলেন আপনার শরীরে?

যদি বেশি ক্যালোরি নিয়ে ফেলেন, তা হলে আর তখনই প্লেটে রাখা গাজরটা তুলে কামড়াবেন না, তাই তো?

সব সময় ক্যালোরি মেপে-টেপে যাঁদের খেতে হয়, সেই ডায়াবেটিস, ওবেসিটি বা বদহজমের রোগীদের তো এমন ‘খবর’ পাওয়াটা খুবই জরুরি। সে ভাবেই খাওয়াদাওয়া করতে পারবেন। কী খাব, কোনটা কোনটা খাব আর তা কতটা খাব, এত সব জানার জন্য আর বার বার ডাক্তারের দরজায় ছোটাছুটি করতে হবে না।

জানার জন্য গলায় শুধু একটা ‘ঘন্টি’ বাঁধতে হবে। ‘নেকলেস’। যা সব সময়- হাঁটা-চলা, ঘোরাফেরার সময় আমাকে আপনাকে গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে। অফিসে টিফিন বা বাড়িতে ভাত খাওয়ার সময়। শেষ দুপুরে ফল খাওয়ার সময়। লাঞ্চ বা ডিনারের পর দই খাওয়ার সময়।

আরও পড়ুন- ডেঙ্গির ‘ভূত’ তাড়ানোর আসল ‘ওঝা’ হতে পারে আমাদের জিন!

এ বার ডেঙ্গির টিকাও বেরিয়ে গেল!

সদ্য উদ্ভাবিত ওই ‘নেকলেস’টির নাম- ‘অটো-ডায়েট্রি’। যেটি বানিয়েছেন চিনের বাফালো বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপিউটার বিজ্ঞানী ওয়েনইয়াও শু’র নেতৃত্বে একটি গবেষকদল। তাঁদের এই নতুন উদ্ভাবনের খবরটি বেরিয়েছে ‘আইইইই-সেন্সর্স’ জার্নালে।

‘অটো-ডায়েট্রি: আ ওয়্যারেব্‌ল অ্যাকাউস্টিক সেন্সর সিস্টেম ফর ফুড ইনটেক রেকগনিশান ইন ডেলি লাইফ’ শীর্ষক ওই নিবন্ধে লেখা হয়েছে, আপেল, গাজর আর জামরুল যে শুধুই স্বাদে একে অন্যের চেয়ে আলাদা, তা-ই নয়। তাদের দাঁতে কাটার শব্দটাও আলাদা আলাদা। তার মানে, আপেল দাঁতে কাটলে যে শব্দটা হয়, গাজর কামড়ালে সেই শব্দটা হয় না। পেয়ারা কামড়ানোর শব্দটা আবার একেবারেই অন্য রকম। আবার জামরুল কামড়ানোর শব্দটা বাকি ফলগুলোর মতো নয়। ওই আলাদা আলাদা শব্দ চিনে বা তাদের কম্পাঙ্ক মেপেই এ বার আমার আপনার গলায় ঝোলানো ‘নেকলেস’ সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেবে, কত ক্যালোরির খাবার দাঁতে কেটেছি বা চিবিয়েছি। অথবা গলায় নিয়েছি।

বিভিন্ন পানীয়, ফল, হরেক রকমের খাবার খেলে বা কামড়ালে-চিবোলে কেমন কেমন শব্দ হয়, তা নিয়ে তাঁর গবেষণাগারে একটি ‘লাইব্রেরি’ বানিয়েছেন শু। সেখানে প্রতিটি ফল, খাবারদাবার আর পানীয়ের হরেক কিসিমের শব্দ নিয়ে সেই ‘লাইব্রেরি’তে একটি ‘ক্যাটালগ’ বানিয়েছেন গবেষকরা।

কী ভাবে কাজ করবে ওই ‘নেকলেস’টি?

শু’র সহযোগী গবেষক, বাফালো বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক নৈঋত মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এগুলোকে বলা হয় ‘ওয়্যারেব্‌ল ডিভাইজ’। ‘অটো-ডায়েট্রি’র মতো চরিত্রের ‘ওয়্যারেব্‌ল ডিভাইজ’ আরও আছে। যেমন- ‘ফিটবিট’। কিন্তু সেগুলো পেটে (পড়ুন, পাকস্থলী) যাওয়ার পর যে পরিপাক হয়, তা থেকে তৈরি হয় প্রচুর তাপশক্তির। সেই তাপশক্তি মাপার ইউনিটই হল ক্যালোরি। সেই তাপশক্তি বিভিন্ন রকমের শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকমের কাজ করিয়ে নেয়। নানা রকমের রাসায়নিক বিক্রিয়া করিয়ে নেয়। ডায়াবেটিসের মতো রোগের ক্ষেত্রে ডাক্তাররা রোগীদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালোরির খাবার খেতে বলেন। বাজারে চালু ‘ওয়্যারেব্‌ল ডিভাইজ’গুলো শুধু সেই পাকস্থলীতে পৌঁছনো খাবার থেকে তৈরি হওয়া ক্যালোরির পরিমাণই মাপতে পারে। কিন্তু, তার আগে সেই ফল বা খাবার যখন আমি আপনি দাঁতে কাটছি, চিবোচ্ছি, বা তা সবে গলায় পৌঁছেছে, তখন কিন্তু কতটা ক্যালোরি আমাদের শরীরে ঢুকল, তা জানতে পারি না। ‘অটো-ডায়েট্রি’ সেই কাজটাই করবে। আর সেই কাজটা সে করবে আপেল, পেয়ারা, জামরুল, গাজরের মতো বিভিন্ন ফল আর খাবার দাঁতে কাটার হরেক রকমের শব্দের বাছ-বিচার করে। তাই ‘অটো-ডায়েট্রি’ পাকস্থলীতে নয়, কোনও খাবার থেকে কতটা ক্যালোরি আমাদের শরীরে ঢুকল, তা গলাতেই মাপতে পারবে। সে খাবার হজম হওয়ার আগেই। এখনও পর্যন্ত এই ধরনের যন্ত্র কেউ বানাননি।’’

যন্ত্রটিকে দেখতে কেমন?

নৈঋতের কথায়, ‘‘একেবারে সাদমাটা নেকলেসের মতোই। যদিও তা ততটা সাদামাটা নয়। ওই ‘নেকলেসে’ রয়েছে খুব ছোট্ট্ একটা মাইক্রোফোন। একটা জিপার পুলের মতো দেখতে। ফল বা খাবার দাঁতে কাটলে বা চিবোলে যে শব্দ হয়, ওই মাইক্রোফোন তা রেকর্ড করে। ব্লু-টুথের মাধ্যমে সেই বিভিন্ন কম্পাঙ্কের শব্দকে পাঠানো হবে স্মার্টফোনে। সেখানেই রয়েছে সেই ‘লাইব্রেরি’, কোন কোন ফল বা খাবার দাঁতে কাটলে বা চিবোলে কেমন কেমন শব্দ হয়, তার সবিস্তার তালিকা। মাইক্রোফোন থেকে যে কম্পাঙ্কের শব্দ ব্লু-টুথের মাধ্যমে আমার আপনার স্মার্টফোনে এসে পৌঁছবে, তার ‘গুণ বিচার’ করে স্মার্টফোন জানিয়ে দেবে, যে ফল বা খাবার আমরা দাঁতে কেটেছি বা চিবিয়েছি, তার থেকে কতটা ক্যালোরি আমাদের শরীরে ঢুকল।’’

পরীক্ষাটা কী ভাবে করা হয়েছে?

নৈঋত বলছেন, ‘’১৩ থেকে ৪৯ বছর বয়সের এক হাজার পুরুষ ও মহিলাকে জল আর ৬ রকমের ফল- আপেল, গাজর, পটেটো চিপ্‌স, কুকিজ, বাদাম আর আখরোট দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো গলায় থাকার সময় কম করে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই কোন ফল দাঁতে কাটা হয়েছে বা জল খাওয়া হয়েছে কি না, তা নির্ভুল ভাবে বলে দিতে পেরেছে ‘অটো-ডায়েট্রি’।

ওই যন্ত্রে আমার আপনার সুবিধাটা কী হবে?

প্রকাশিত নিবন্ধ জানাচ্ছে, যাঁরা সুগারের রোগী (ডায়াবেটিস) বা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা (ওবেসিটি) অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য বা হজমের সমস্যায় (বাওয়েল ডিসঅর্ডার) ভুগছেন, তাঁরা এই সদ্য উদ্ভাবিত যন্ত্রের মাধ্যমে কোনও খাবার দাঁতে কেটেই জেনে যাবেন, কতটা ক্যালোরি তাঁর শরীরে ঢুকল। সে ক্ষেত্রে তিনি যদি দেখেন, বেশি ক্যালোরি-ইনটেক হয়ে গিয়েছে, তা হলে তিনি পরের দফায় আপেল বা গাজরে কামড় দেওয়ার আগে বারদু’য়েক ভাববেন।

নতুন যন্ত্রের সীমাবদ্ধতা কী কী?

নতুন যন্ত্র ‘অটো-ডায়েট্রি’-র এখনও পর্যন্ত কিছু কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে।

সেগুলো কী?

নৈঋত জানাচ্ছেন, বিভিন্ন ফল বা খাবার খাওয়ার শব্দের বাছ-বিচার করার ক্ষেত্রে এখনও কিছুটা সমস্যা রয়েছে ‘অটো-ডায়েট্রি’-র। তা কর্নফ্লেক্স আর ফ্রস্টেড কর্নফ্লেক্স খাওয়ার শব্দের ফারাকটা এখনও বুঝে উঠতে পারছে না। ফারাক ধরতে পারছে না চিকেন আর মাটন স্যুপের মধ্যে। দু’টি আলাদা স্যুপ ওই যন্ত্রের কাছে শুধুই ‘স্যুপ’। এমনকী, লঙ্কা আর স্যুপের মধ্যেও ফারাকটা এখনও পর্যন্ত বুঝে উঠতে পারছে না ‘অটো-ডায়েট্রি’। ওই অসুবিধা দূর করতে একটি ‘বায়ো-মনিটারিং ডিভাইজ’ বানানো হচ্ছে।’

যাতে আমাদের বলতে না হয়, ‘এ মণিহার আমায় নাহি সাজে’!

ছবি সৌজন্য: চিনের বাফালো বিশ্ববিদ্যালয়।

calorie intake auto-diatry
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy