Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Science News

চাঁদের মাটিতে প্রথম পা দেবেন কোনও মহিলা, থাকবেন সাত দিন

প্রথম পদার্পণের ৫২ বছর পর ২০২৪ সালে আবার চাঁদের মাটিতে হাঁটবেন দু’জন মানুষ। এক মহিলা ও এক জন পুরুষ মহাকাশচারী। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে।

ছবি সৌজন্যে: নাসা।

ছবি সৌজন্যে: নাসা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১২:৩৫
Share: Save:

চাঁদে এই প্রথম পা পড়বে কোনও মহিলার। আর চার বছর পর।

প্রথম পদার্পণের ৫৫ বছর পর ২০২৪ সালে আবার চাঁদের মাটিতে হাঁটবেন দু’জন মানুষ। এক মহিলা ও এক জন পুরুষ মহাকাশচারী। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে।

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার চিফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জিম ব্রিডেনস্টাইন সোমবার আনুষ্ঠানিক ভাবে এই ঘোষণা করেছেন। ১৯৬৯-এ প্রথম সভ্যতার পায়ের ছাপ পড়েছিল চাঁদের বুকে। হেঁটেছিলেন তিন মার্কিন মহাকাশচারী।

‘ওয়ান স্মল স্টেপ ফর আ ম্যান, ওয়ান জায়ান্ট লিপ ফর ম্যানকাইন্ড’

দু’-এক কদম এগনোর পর চাঁদের মাটি থেকেই নিল আর্মস্ট্রংকে বলতে শোনা গিয়েছিল ‘‘দ্যাট্‌স ওয়ান স্মল স্টেপ ফর আ ম্যান, ওয়ান জায়ান্ট লিপ ফর ম্যানকাইন্ড (এক জন মানুষের এই ছোট একটা পদক্ষপই গোটা মানবসভ্যতার বিরাট উল্লম্ফন)’’।

চাঁদের মাটিতে নিল আর্মস্ট্রং। ১৯৬৯-এ।

চাঁদে এ বার টানা ৭ দিন

ব্রিডেনস্টাইন গত কাল জানিয়েছেন, ৫৫বছর আগে নিল আর্মস্ট্রং, মাইকেল কলিন্স আর এডুইন (বাজ) অল়ড্রিনের মতো খুব অল্প সময়ের জন্য এ বার চাঁদের বুকে পা পড়বে না মানুষের। এ বার টানা সাত দিন ধরে চাঁদের মাটিতে হাঁটাহাঁটি, নুড়ি-পাথর কুড়োনো ও নানা ধরনের গবেষণা চালাবেন দুই মহাকাশচারী। আর এক দশকের মধ্যে লাল গ্রহ মঙ্গলের বুকে মানুষের পদার্পণের জন্য জরুরি প্রাথমিক গবেষণা ও প্রস্তুতি শুরু হবে চাঁদের মাটিতে এ বারের পদার্পণ থেকেই। তার পর মহাকাশযানে চেপে পৃথিবীতে ফিরে আসবেন দুই মহাকাশচারী।

চাঁদে পদার্পণের জন্য কোন দুই মহাকাশচারীকে বেছে নেওয়া হয়েছে সেইসব নামধাম অবশ্য এখনও জানায়নি নাসা। শুধুই খোলসা করেছে তাদের আসন্ন চন্দ্রাভিযান ‘আর্টেমিস মিশন’-এর প্রথম পর্যায়ের পরিকল্পনা।

পৃথিবী থেকে চাঁদে যেতে আর্মস্ট্রংদের লেগেছিল তিন দিন| প্রযুক্তি এগিয়ে গিয়েছে অনেকটাই| তাই এ বার আড়াই দিনেই পা ছোঁয়ানো যাবে চাঁদের মাটিতে|

চাঁদে সভ্যতার প্রথম পদার্পণ। ১৯৬৯-এ।

কাজে লাগবে আমাদের অর্থনীতিতেও

নাসার প্রশাসনিক প্রধান ব্রিডেনস্টাইন বলেছেন, ‘‘আমাদের আসন্ন আর্টেমিস মিশন নিয়ে কংগ্রেসের দুই কক্ষেরই সার্বিক অনুমোদন আমরা পেয়ে গিয়েছি। চাঁদ আবার আমেরিকার নাগালে পৌঁছতে চলছে এই একুশ শতকে। এবার আমরা চাঁদে যাচ্ছি বহু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, পৃথিবীতে তাদের অর্থনৈতিক সুফল পাওয়ার লক্ষ্যে। এই ভাবে পরবর্তী প্রজন্মকেও আমরা অনুপ্রাণিত করতে চাইছি। চাইছি লাল গ্রহে মানুষের প্রথম পদার্পণের জন্য প্রয়োজনীয় চাঁদে যাবতীয় পরীক্ষানিরীক্ষা, গবেষণার গতি বাড়াতে।’’

তৈরি ওরিয়ন, এসএলএস

নাসার তরফে জানানো হয়েছে, ৫৫ বছর পর চাঁদে দ্বিতীয় বার মানুষের পদার্পণের জন্য নাসার অত্যন্ত শক্তিশালী ‘স্পেস লঞ্চ সিস্টেম (এসএলএস)’ ও মহাকাশযান ‘ওরিয়ন (আদত উচ্চারণ ওর‌্যায়ন)’ তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ওরিয়নের চারটি ইঞ্জিনকে পরখ করে দেখার কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে। আগামী মাসেই ওই ইঞ্জিনগুলির ‘হট ফায়ার টেস্ট’ (প্রচণ্ড তাপমাত্রাতেও সেগুলি যাতে গলে না যায়) হবে।

চাঁদের মাটিতে এডুইন (বাজ) অল়ড্রিন। ১৯৬৯-এ।

হট ফায়ার টেস্টের পরেই ওরিয়ন মহাকাশযানের ‘কোর স্টেজ’টি (ভিতরের অংশ) পাঠানো হবে ফ্লোরিডায় নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারে। তাকে মহাকাশযানের মূল অংশের সঙ্গে জোড়া হবে।

আর্টেমিস-১ থেকে আর্টেমিস-৪: ধাপে ধাপে

তার পর এসএলএস এবং ওরিয়নকে পরীক্ষামূলক ভাবে একই সঙ্গে পাঠানো হবে চাঁদের কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করতে। মহাকাশচারীদের জন্য লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম ঠিকঠাক ভাবে কাজ করছে কি না, সেটাও অন্যতম লক্ষ্য হবে সেই সব পরীক্ষানিরীক্ষার। এটাই আর্টেমিস মিশনের একেবারে প্রাথমিক ধাপ। ‘আর্টেমিস-১’। যা চাঁদের কক্ষপথে পাঠানো হবে আগামী বছর। সেই অভিযানে কোনও মহাকাশচারী থাকবেন না। তার দু’বছর পর ২০২৩-এ হবে ‘আর্টেমিস-২’ মিশন। তাতে মহাকাশযানে থাকবেন এক মহাকাশচারী। তবে তিনি মহাকাশযান থেকে বেরবেন না।

চাঁদের মাটিতে নিল আর্মস্ট্রং। ১৯৬৯-এ।

২০২১ থেকেই শুরু যাওয়া-আসা

ব্রিডেনস্টাইন জানিয়েছেন, আর্টেমিস-২ অভিযানে চাঁদের কক্ষপথে এসএলএস রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ওরিয়ন মহাকাশযানটি চালাবেন এক পাইলট মহাকাশচারী।

পরবর্তী আর্টেমিস-৩ অভিযানে হবে ওরিয়ন মহাকাশযান থেকে চাঁদের মাটিতে নামার পরীক্ষানিরীক্ষা। এই সব পরীক্ষানিরীক্ষা চালানোর প্রস্তুতি হিসাবে ২০২১ থেকেই বছরে দু’বার করে চাঁদের কক্ষপথে থাকা মহাকাশযানে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পাঠাতে শুরু করবে নাসা।

আর আর্টেমিস-৪ অভিযান থেকে চাঁদের কক্ষপথে আমাদের একটা স্থায়ী আস্তানা গড়ে তুলবে নাসা। এখনকার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের মতো। ফারাকটা এখানেই যে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন রয়েছে পৃথিবী থেকে মাত্র ৩৭০ কিলোমিটার উপরে। আর আর্টেমিসের সেই আস্তানা থাকবে আড়াই লক্ষ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে থাকা চাঁদের কক্ষপথে। সেটাই হবে চাঁদে আমাদের ‘বেস ক্যাম্প’।

ছবি সৌজন্যে: নাসা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE