Advertisement
E-Paper

ঘরশত্রু হলে নিজের অংশও গিলে খেয়ে নেয় কোষ

বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী...। সে শত্রু বাইরের হোক বা ঘরের। মানবদেহের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার এই গোপন রহস্যটির সন্ধান দিয়েই এ বছর চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল জিতলেন জাপানের জীববিজ্ঞানী ইউশিনোরি ওহসুমি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:০৪
ইউশিনোরি ওহসুমি

ইউশিনোরি ওহসুমি

বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী...। সে শত্রু বাইরের হোক বা ঘরের। মানবদেহের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার এই গোপন রহস্যটির সন্ধান দিয়েই এ বছর চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল জিতলেন জাপানের জীববিজ্ঞানী ইউশিনোরি ওহসুমি।

ব্যাপারটা এমন, যে কোনও রোগজীবাণু হানা দিলে বা শরীর গড়বড় করলে (টাইপ টু ডায়াবেটিস থেকে ক্যানসার বা অ্যালঝাইমার্স রোগের ক্ষেত্রে), মানুষের শরীরের প্রতিটি কোষের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় হয়ে ওঠে। নিরন্তর যুদ্ধ করে চলে সে, যতক্ষণ না শত্রু-নিধন হচ্ছে। প্রয়োজনে নিজেরই শরীরের আক্রান্ত অংশটিকে সমূলে শেষ করে দিতেও পিছপা হয় না সে। যুদ্ধের এই অন্তিম পদ্ধতিটির নাম ‘অটোফ্যাগি’। গ্রিক শব্দটির অর্থ ‘আত্মভূক’ বা নিজেকে গিলে ফেলা। অটোফ্যাগি ও তার পিছনে থাকা ১৫টি জিনের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন ‘টোকিও ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’র এমেরিটাস অধ্যাপক ইউশিনোরি ওহসুমি। আর সেটাই তাঁকে এনে দিল চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল।

মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে গবেষণা অবশ্য শুরু হয়েছে দীর্ঘদিন আগে। শুধু তা-ই নয়, পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রত্যেকটা ধাপই চমকে দেওয়ার মতো। ১৯৬০ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথম লক্ষ করেন, একটি কোষ তার নিজের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাওয়া ক্ষতিকর অংশগুলোকে ধ্বংস করতে পারে। প্রথমে সে ওই অংশগুলোকে পর্দা দিয়ে ঘিরে ফেলে। তখন সেটা একটা ব্যাগের চেহারা নেয়। শেষে ওই ব্যাগে ভর্তি অকেজো অংশগুলো পাঠিয়ে দেওয়া হয় কোষের ‘রিসাইক্লিং কম্পার্টমেন্ট’-এ। যাকে বলে লাইসোজোম। নষ্ট হয়ে যাওয়া অংশগুলোকে স্রেফ গিলে ফেলে কোষের বিশেষ ঘরটি।

লাইসোজোম নামে এই কোষ-অঙ্গাণুটি আবিষ্কারের জন্য ১৯৭৪ সালে নোবেল পেয়েছিলেন বেলজিয়ামের বিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ান ডু ড্যুভ। গবেষণা অবশ্য চলতে থাকে। দেখা যায়, একটু-আধটু অংশ নয়, প্রয়োজনে কোষের ভিতরে বিগড়ে যাওয়া গোটা কোনও অঙ্গাণুকেও গিলে ফেলতে পারে লাইসোজোম।

এর পর সত্তর থেকে আশির দশকে ‘প্রোটিয়েজোম’ নিয়ে মেতে ওঠে বিজ্ঞানীমহল। ব্যাপারটা একই। কী ভাবে নিজেরই প্রয়োজনে (রোগের হাত থেকে বাঁচতে) ক্ষতিগ্রস্ত প্রোটিনকে বিনষ্ট করে দিতে পারে এক-একটি কোষ। এ ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক ভাবে সাড়া ফেলে দেয় গবেষণাটি। ২০০৪ সালে চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেল ঝুলিতে পোরেন তিন বিজ্ঞানী— অ্যারন সিচেনোভার, আব্রাম হেরশকো ও আরউইন রোজ।

কোষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে ওহসুমি কাজ শুরু করেন ১৯৮৮ সালে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বেছে নেন ইস্ট। প্রথমে অবশ্য বেশ ঝক্কি পোহাতে হয়েছিল তাঁকে। কারণ ইস্ট কোষ আকারে খুব ছোট। অণুবীক্ষণ যন্ত্রে এর ভিতরের গঠন বুঝে ওঠাও বেশ কষ্টসাধ্য। গবেষণার শুরুতে অবশ্য হতাশ হতে হয় ওহসুমিকে। সন্দেহ দানা বাঁধে, এদের কোষে কি তবে অটোফ্যাগি হয় না?

কিন্তু কোষগুলোকে ‘অভুক্ত’ রাখতেই তার নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় হয়ে ওঠে। আর তখনই শুরু হয় অটোফ্যাগোসোম। পরবর্তী কালে তিনি এর সঙ্গে যুক্ত ১৫টি জিনকেও চিহ্নিত করেন। ব্যাখ্যা করেন তাদের চরিত্র। ১৯৯২ সালে বিজ্ঞান-বিষয়ক গবেষণাপত্রে প্রকাশিত হয় ওহসুমির কাজ।

জাপানের ফুকুওকা শহরে ১৯৪৫ সালে জন্ম ওহসুমির। পড়াশোনা সে দেশেই। মাঝে পিএইচডির জন্য নিউ ইয়র্ক পাড়ি দিয়েছিলেন। ’৭৭ সালে ফের জাপানে ফিরে আসেন। তার পর অধ্যাপনা, গবেষণা, আবিষ্কার— সবই নিজের দেশে। নোবেল পকেটে পুরতে অবশ্য বেশ ক’টা বছর লেগে গেল ৭১ বছর বয়সী প্রবীণ বিজ্ঞানীর। তাতে কী! ‘‘এর থেকে গর্বের আর কী হতে পারে,’’ বলছেন ওহসুমি। আর তার জন্য ২৪ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষাও বড়ই মধুর।

Yoshinori Ohsumi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy