হঠাৎ করে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, এক বছর আগে অমুক দিনে কী করেছিলেন, উত্তর দিতে পারবেন? না পারাটাই স্বাভাবিক। তবে পৃথিবীতে এমন মানুষও রয়েছেন, যাঁরা নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনের অতীতের এমন খুঁটিনাটি তথ্য গড়গড় করে বলে দিতে পারেন। সম্প্রতি এমনই এক ‘বিস্ময় কিশোরী’র খোঁজ মিলেছে। স্বাভাবিক ভাবে তাকে নিয়ে কৌতূহলও বৃদ্ধি পেয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে। বর্তমানে প্যারিসের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই কিশোরীকে নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে।
অতীতের সব ঘটনার কথা মানুষের মনে গেঁথে থাকে না। সাধারণত খুব স্মরণীয় কোনও দিন বা ঘটনা ছা়ড়া অতীতের কথা হুবহু মনে রাখা কঠিন। অতীতের স্মৃতি অনেকটা হাতের মুঠোয় ধরে রাখা বালির মতো। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বালিই সেখানে ধরা যায়। তার চেয়ে বেশি ধরে রাখার চেষ্টা করলে, আঙুলের ফাঁকফোকর দিয়ে অতিরিক্ত বালি বেরিয়ে যায়। স্মৃতিও সে রকমই। তবে এমন মানুষও আছেন, যাঁদের মস্তিষ্ক থেকে অতিরিক্ত স্মৃতি হারিয়ে যায় না। সব স্মৃতিকেই আকড়ে ধরে রাখতে পারেন তাঁরা।
সম্প্রতি এমনই এক কিশোরীর স্মৃতিশক্তির উপর গবেষণা চালাচ্ছেন প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। গবেষণার স্বার্থে তাঁর নাম গোপন রাখা হয়েছে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, সাধারণ মানুষের তুলনায় অতীতের অনেক বেশি ঘটনার কথা হুবহু মনে রাখতে পারে এই কিশোরী। না, এটি কোনও বিশেষ শক্তি নয়। এর নেপথ্যে রয়েছে এক বিরল মানসিক অবস্থা, হাইপারথাইমেসিয়া। গোটা পৃথিবীতে ১০০ জনেরও কম মানুষের মধ্যে এই বিরল মানসিক অবস্থা দেখা যায়। তাঁরা নিজেদের জীবনের প্রায় প্রতিটি ঘটনাই নির্দিষ্ট তারিখ-সহ হুবহু বর্ণনা দিতে পারেন।
ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিশারদেরা (নিউরোবায়োলজিস্ট) ২০০৬ সালে প্রথম এক মহিলার হাইপারথাইমেসিয়ার খোঁজ পান। তার পর থেকে এ নিয়ে গবেষণা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা সম্প্রতি এই ‘বিস্ময়’ কিশোরীর খোঁজ পেয়েছেন। তার পর থেকেই তাঁর স্মৃতি নিয়ে পরীক্ষানিরিক্ষা শুরু করেছেন গবেষকেরা। কিশোরী অতীতের স্মৃতি যে ভাবে হুবহু বলে দিতে পারছে, তা এক ধরনের মানসিক ‘টাইম ট্রাভেল’ বলে ব্যাখ্যা করছেন গবেষকেরা।
গবেষকদের দাবি, স্মৃতির সমুদ্রে ডুব দিয়ে পূর্বের কোনও ঘটনাকে পুনরায় অনুভব করতে পারে কিশোরী। ওই কিশোরী গবেষকদের জানিয়েছে, খুব ছোটবেলা থেকেই অতীতের স্মৃতিগুলিকে পুনরায় ঘুরে দেখতে পারে সে। আট বছর বয়সে বন্ধুদের কাছে এই বিশেষ ‘ক্ষমতা’র কথা বলেছিল কিশোরী। কিন্তু তখন কেউই তাকে বিশ্বাস করেনি। সে বানিয়ে বানিয়ে কথা বলছে বলে মনে করেছিল বন্ধুরা। তত দিনে ওই কিশোরীও বুঝে গিয়েছিল, তার মস্তিষ্ক অস্বাভাবিক ভাবে কাজ করে। তাই বিষয়টি অদ্ভুত দেখাতে পারে ভেবে দীর্ঘ দিন আর কাউকে কিছু বলেনি। এর পরে ১৬ বছর বয়সে বাড়িতে এ বিষয়ে জানায় সে এবং ১৭ বছর বয়সে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষণায় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।
আরও পড়ুন:
কিশোরীর দাবি, তার স্মৃতির আধারে কিছু কাল্পনিক ঘর রয়েছে। যখনই কোনও পুরনো স্মৃতিতে ডুব দিতে হয়, তখন কিশোরী পৌঁছে যায় সাদা রঙের একটি কাল্পনিক ঘরে। যে স্মৃতিগুলির সঙ্গে বিভিন্ন আবেগ জড়িয়ে রয়েছে, তা এই সাদা ঘরটিতেই গচ্ছিত রয়েছে। এই স্মৃতিগুলি মনে করতে কম সময় লাগে তার। আবার যে স্মৃতিগুলির সঙ্গে কোনও আবেগ জড়িত নেই, সেগুলি মনে রাখতে কিছুটা বেশি সময় লাগে। ওই কিশোরী এগুলিকে বলেন ‘ব্ল্যাক মেমোরি’। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, এক মাস আগের কোনও ঘটনার ক্ষেত্রে দিন ক্ষণ নির্দিষ্ট ভাবে বলে দিতে পারে কিশোরী। আবার দু’বছর আগের ঘটনার ক্ষেত্রে কোন মাসের ঘটনা, তা বলে দিতে পারে সে। তবে অনেক পুরনো ঘটনাগুলির ক্ষেত্রে শুধু সালটির কথাই নির্দিষ্ট ভাবে বলতে পারে সে। শুধু অতীত নয়, ভবিষ্যতেরও কিছু ঘটনা কিশোরী দেখতে পায় বলে দাবি করেছে। তবে এর সপক্ষে কোনও প্রমাণিত তথ্য মেলেনি।