Advertisement
E-Paper

রিল কি অ্যালকোহলের মতো প্রভাব ফেলতে পারে মস্তিষ্কে! কী বলছেন বিজ্ঞানীরা

তিয়ানজিন নর্মাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কিয়াং ওয়াংয়ের নেতৃত্বাধীন গবেষক দল একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, যাঁরা বেশি রিল দেখেন, তাঁদের মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড পাথওয়ে বা রিওয়ার্ড সার্কিট বেশি করে সক্রিয় হয়ে ওঠে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২৫ ০৮:৫৩
Study says reels have same effect on brain as alcohol

—প্রতীকী চিত্র।

সমাজমাধ্যমে রিল দেখে কেটে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। মনে হতে পারে, এতে কোনও ক্ষতি নেই। কিন্তু স্নায়ু বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন। বিভিন্ন গবেষণা বলছে, অ্যালকোহলের মধ্যে যতটা আসক্তি সৃষ্টিকারী জিনিস থাকে, এই রিলের মধ্যেও তা-ই থাকে। দীর্ঘ দিন ধরে তা দেখলে মনোযোগের সমস্যা হতে পারে। এমনকি, স্মৃতিশক্তি নষ্ট হতে পারে।

তিয়ানজিন নর্মাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কিয়াং ওয়াংয়ের নেতৃত্বাধীন গবেষক দল ‘নিউরোলমাজ’-এ একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, যাঁরা বেশি রিল দেখেন, তাঁদের মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড পাথওয়ে বা রিওয়ার্ড সার্কিট বেশি করে সক্রিয় হয়ে ওঠে। যেমনটা মদ্যপান করলে বা জুয়া খেললে হয়। প্রসঙ্গত, মস্তিষ্কের এই অংশ আনন্দ উপভোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।

অধ্যাপক ওয়াং বলেন, ‘‘ছোট ভিডিয়ো দেখার প্রতি আসক্তি গোটা বিশ্বের মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। চিনে নেট ব্যবহারকারীদের ৯৫.৫ শতাংশ এই ছোট ভিডিয়ো দেখেন। তাঁরা প্রতি দিন গড়ে ১৫১ মিনিট ব্যয় করেন রিল দেখে। এত বেশি সময় রিল দেখলে শুধু যে মনোযোগ, ঘুম, মানসিক স্বাস্থ্য নষ্ট হয়, তা নয়, সেই সঙ্গে অবসাদের সম্ভাবনা তৈরি হয়।’’ ওয়াংয়ের মতে, ছোট দৈর্ঘ্যের ভিডিয়ো দেখলে স্বল্পমেয়াদী স্মৃতি নষ্ট হতে পারে।

ডোপামিন হরমোন হল গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটার। যখন আমরা কিছু অর্জন করি, কোনও ভাল খাবার খাই বা প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটাই, তখন এই ডোপামিন রাসায়নিক আমাদের মনটা ভাল করে দেয়। পুরস্কার স্বরূপ এটা করে ডোপামিন। কিন্তু আসক্তি বিপদ ডেকে আনতে পারে। এই ‘পুরস্কৃত’ করার প্রক্রিয়াটি ভেঙে দিতে পারে আসক্তি। কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, যখন অ্যালকোহল সেবন, অনলাইন গেম খেলা বা রিল দেখার মাত্রা বেড়ে যায়, তখন ডোপামিন ক্ষরণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে উন্মাদনা তৈরি হয়। তাঁদের কথায়, যত বেশি ডোপামিন ক্ষরণ হয়, তত বেশি স্নায়ু-সংযোগ তৈরি হয়। সে ক্ষেত্রে ওই ‘পুরস্কৃত’ করার প্রক্রিয়াটি ভেঙে যায়। তখন আসক্তি আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে। বার বার ওই জিনিসটি করেত ইচ্ছা করে।

মস্তিষ্কে আসলে কী হয়?

মনোযোগ, আত্মনিয়ন্ত্রণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য দায়ী হল মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স। ২৬-২৭ বছর বয়স পর্যন্ত এই অংশ পরিণত (ডেভলপ) হয়। বার বার সমাজমাধ্যমে বিভিন্ন কন্টেন্ট দেখলে এই প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স অতিমাত্রায় ব্যবহার করে ফেলি। এ রকম চলতে থাকলে এই অংশ সঙ্কুচিত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে রোজের কার্যকলাপ ব্যাহত হয়।

রাতে শোওয়ার সময়ে রিল দেখলে ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাস বিরক্ত হতে পারে। এই হিপ্পোক্যাম্পাস স্মৃতি ধরে রাখা এবং স্থানিক নেভিগেশনের জন্য প্রয়োজনীয়। সে কারণে যাঁরা বেশি রিল দেখেন, তাঁদের অনেকেই অভিযোগ করেন, যে কিছু মনে রাখতে পারছেন না।

অ্যালকোহল এবং তামাক মস্তিষ্কের উপরে নিউরোটক্সিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। রিল কতটা ক্ষতি করতে পারে তা এখনও পরিমাপ করতে সমর্থ হননি বিজ্ঞানীরা। তারা মনে করছেন, রিলও ডোপামিন ক্ষরণ বৃদ্ধি করে। তার জেরে মস্তিষ্কের ‘পুরস্কৃত’ করার প্রক্রিয়া নষ্ট হয়। বিশেষত, যে মস্তিষ্ক এখনও পরিণত হয়নি, তার উপর এই ছোট ভিডিয়ো খারাপ প্রভাব তৈরি করতে পারে। তামাক বা অ্যালকোহলের মতো মস্তিষ্কের রাসায়নিক ক্ষতি (কেমিক্যাল ব্রেন ড্যামেজ) না করলেও দীর্ঘদিন ধরে রিল দেখলে মনসংযোগ নষ্ট হতে পারে।

reel video Alchohol Brain Damage
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy