Advertisement
E-Paper

আধুনিক মানুষের সঙ্গে যৌনমিলনই নিয়ানডারথালদের বিলুপ্তির কারণ? প্রবল সম্ভাবনা দেখছে নতুন গবেষণা

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ৪৫ থেকে ৫০ হাজার বছর আগে আজকের মানুষ (হোমো স্যাপিয়েন্স) এবং নিয়ানডারথালদের মধ্যে প্রজনন ঘটেছিল। প্রায় ৪১ হাজার বছর আগে নিয়ানডারথালেরা বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে তাঁদের ডিএনএ এখনও কিছু মানুষের মধ্যে রয়ে গিয়েছে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৫৯
What played parts in demise of Neanderthal, scientists find

পৃথিবী থেকে কী ভাবে বিলুপ্তি ঘটল নিয়ানডারথাল প্রজাতির, বিজ্ঞানীরা গবেষণায় তার উত্তর পেলেন। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

নিয়ানডারথাল প্রজাতি কী ভাবে বিলুপ্ত হল পৃথিবী থেকে? নেপথ্যে কী আজকের আধুনিক মানুষ! বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই বিলুপ্তির নেপথ্যে আধুনিক মানবের হাত থাকলেও তারা নিয়ানডারথালদের হত্যা করেনি। যুদ্ধের মাধ্যমেও সেই প্রজাতি নির্মূল করেনি। নতুন একটি গবেষণা বলছে, দুই প্রজাতির জীবের মধ্যে প্রজনন ঘটার ফলে যে মিশ্র (হাইব্রিড) প্রজাতি তৈরি হয়, সেই প্রজাতির মায়েদের মধ্যে গর্ভপাতের ঝুঁকি ছিল খুব বেশি। তার অন্যতম কারণ, জিনগত বৈষম্য। বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করছেন, গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার কারণে ক্রমে বিলুপ্ত হয়ে থাকতে পারে নিয়ানডারথালেরা।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ৪৫ থেকে ৫০ হাজার বছর আগে আজকের মানুষ (হোমো স্যাপিয়েন্স) এবং নিয়ানডারথালদের মধ্যে প্রজনন ঘটেছিল। প্রায় ৪১ হাজার বছর আগে নিয়ানডারথালেরা বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে তাঁদের ডিএনএ এখনও কিছু মানুষের মধ্যে রয়ে গিয়েছে। বিশেষত যাঁদের পূর্বপুরুষ আফ্রিকার নন, তাঁদের কারও কারও মধ্যে এই নিয়ানডারথালের ডিএনএ রয়েছে বলেই মনে করেন বিজ্ঞানীরা। তবে অদ্ভুত ভাবে আজকের আধুনিক মানুষের মাইটোকনড্রিয়ার (কোষের শক্তিঘর) ডিএনএ নিয়ানডারথালের থেকে আসেনি। এই ধরনের ডিএনএ বহন করে ডিম্বাণুর কোষ, শুক্রাণুর নয়। ফলে মনে করা হয়, এই ডিএনএ মায়ের মাধ্যমেই আসে।

সুইৎজ়ারল্যান্ডের জ়ুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্যাট্রিক এপেনবার্জার মনে করেন, যে সব মহিলার বাবা এবং মায়ের মধ্যে এক জন ছিলেন নিয়ানডারথাল এবং এক জন হোমো স্যাপিয়েন্স (আধুনিক মানুষ), তাঁদের গর্ভপাতের ঝুঁকি ছিল খুব বেশি। এর কারণ ওই মায়েদের জিন এবং তাঁদের গর্ভস্থ ভ্রূণের মধ্যে অমিল।

বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, আধুনিক মানুষ এবং নিয়ানডারথালদের মধ্যে যে পিয়েজ়ো১ (পিআইইজ়েডও১) প্রোটিন ছিল, তা ভিন্ন। রক্তে অক্সিজেন জোগাতে এই প্রোটিন খুব কার্যকরী ভূমিকা নেয়। দুই প্রজাতির মানবের ডিএনএতে এই পিয়েজ়ো১-এর পার্থক্য কী, তা খুঁজে বার করার চেষ্টা করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই দুই প্রোটিন কী ভাবে পরস্পরের সঙ্গে মিলে যাওয়ার চেষ্টা করত, তা-ও দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। দুই প্রজাতির মানবের লোহিত রক্তকণিকার কোষ গবেষণা করে দেখেছেন তাঁরা। রাসায়নিক উত্তেজক প্রয়োগ করলে নিয়ানডারথালদের লোহিত রক্তকণিকার কোষে কী পরিবর্তন হয়, তা-ও গবেষণা করে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, আধুনিক মানুষের তুলনায় নিয়ানডারথালদের লোহিত রক্তকণিকার কোষ অনেক বেশি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। তাই যার অভিভাবক আধুনিক মানুষ (ভি২) এবং নিয়ানডারথাল (ভি১), তার রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি ছিল বলেই মনে করেন বিজ্ঞানীরা। আধুনিক মানুষ এবং নিয়ানডারথালের প্রজননের ফলে যে ভ্রূণ তৈরি হয়েছিল, তা নিজে শক্তিশালী বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। সমস্যা হয় তার পরের প্রজন্মের। সেই ভ্রূণ যখন মা হয়, তখন হয় বিপত্তি। যে মিশ্র মা ভি১ এবং ভি২ উভয়ের জিনই বহন করছিলেন, তার শরীরে রক্তের লোহিতকণিকা অনেক বেশি অক্সিজেন শোষণ করতে পারে। এ দিকে তিনি যে ভ্রূণ ধারণ করেছিলেন, তার লোহিতকণা তা পারে না। বিজ্ঞানীরা আরও মনে করেন, ওই মিশ্র মহিলার প্লাসেন্টায় কম অক্সিজেন পৌঁছোতো। এর ফলে ভ্রূণের বৃদ্ধি ব্যাহত হত। বিজ্ঞানীদের মতে, সে কারণে গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি ছিল খুব বেশি। তাই নিয়ানডারথালেরা ক্রমেই বিলুপ্ত হয়েছে।

ডেনমার্কের কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লরিতস স্কোভ জানান, নিয়ানডারথালদের বিলুপ্তির কারণ এই একটাই নয়, আরও রয়েছে। তাঁর মতে, জলবায়ুর পরিবর্তন, আধুনিক মানবের উদ্ভব, নতুন ধরনের অসুখ, জিনগত সমস্যার কারণে বিলুপ্ত হয়েছে নিয়ানডারথাল। তা ছাড়া তারা সংখ্যায়ও খুব কম ছিল। সে কারণে তারা ক্রমে বিলুপ্ত হয়ে যায়।

Neanderthal Neanderthal Period
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy